আমি অনেক অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের তাদের স্মার্টফোনে বিভিন্ন রকম অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে দেখেছি। অনেকে আবার একটি স্মার্টফোনেই একের অধিক অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকেন, কেন তা অবশ্য আমার জানা নেই। হয়ত নিরাপত্তার বিষয়ে সেই ব্যবহারকারীরা কিছুটা বেশিই সচেতন। যারা ব্যবহার করেন তারাতো করেনই, যারা করেন না তাদের একটা বড় অংশই বলা চলে বেশ সংশয়ের মধ্যে থাকেন। কেননা যারা সাধারণ ব্যবহারকারীরা আছেন এবং যারা প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুটা কম জানেন তারা সতর্কতাও যেমন চান তেমন আদৌ দরকার আছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়েও দোটানায় থাকেন। তাই আজকের এই লেখাটি লিখতে বসা। আশা করছি অনেকেই তাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই লেখাটিতে। তাহলে চলুন, ভূমিকা ছেড়ে এখন মূল বিষয় শুরু করা যাক। আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়, ‘অ্যান্ড্রয়েডের জন্য অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম কতটা প্রয়োজনীয়?’
অ্যান্ড্রয়েডের ভাইরাস মূলত কী?
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সমৃদ্ধ ডিভাইসগুলোতে আদৌ অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামের প্রয়োজন আছে কিনা জানার আগে প্রথমে আমাদের জানা উচিৎ এই অ্যান্ড্রয়েডের ভাইরাসগুলো সম্পর্কে। এরও আগে আমাদের জানা উচিৎ, ভাইরাস সম্পর্কে।
একটি ভাইরাস হচ্ছে এমন একটি ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম যা আমাদের কম্পিউটার বা অন্যন্য ডিভাইসগুলোতে ডিভাইসগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে চেষ্টা করে। বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের মূলত বিভিন্ন কাজ থেকে থাকে। যেমন কিছু ভাইরাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে অন্যের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য বা অন্যের একটি ডিভাইস নষ্ট বা ম্যালফাংশন করানোর জন্য। যেহেতু বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মটি বহুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং বেশিরভাগ মানুষ এই অপারেটিং সিস্টেম সমৃদ্ধ ডিভাইস ব্যবহার করছে তাই ধীরে ধীরে এই প্লাটফর্মটিও পড়ছে হুমকির মুখে।
বর্তমানে মাঝে মাঝেই প্রযুক্তি সম্পর্কিত পত্রিকার পাতায় বা টেক সাইটগুলোতে আমরা অ্যান্ড্রয়েডের মারাত্নক সব ম্যালওয়্যার এর খবর পাচ্ছি এবং এই খবরগুলো থেকে একটি বিষয় বেশ স্পষ্টই বোঝা যায় এবং তা হচ্ছে এই ম্যালওয়্যারগুলো ধীরে ধীরে হচ্ছে আরও শক্তিশালী।
অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যারগুলো কীভাবে ডিভাইসে প্রবেশ করে
এই ম্যালওয়্যারগুলোর মূল লক্ষ্য মূলত গুগল প্লে স্টোর কেননা প্রায় সকল ব্যবহারকারীই এই মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের স্মার্টফোনে বিভিন্ন ধরণের অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করে থাকে। তবে গুগল প্লে স্টোরে রয়েছে কয়েক ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা ভেদ করে ম্যালওয়্যারযুক্ত অ্যাপলিকেশন গুগল প্লে স্টোরে আসতে পারেনা, তবুও এসব নিরাপত্তা ধাপগুলো টপকেও কিছু কিছু ক্ষতিকর অ্যাপলিকেশন হয়ত ঠিকই ঢুকে বসে আছে গুগল প্লে স্টোরে, তবে এরকমটি হলেও তা সংখ্যায় এখনও বেশ নগণ্য।
গুগল প্লে স্টোর ছাড়াই মূলত এই ক্ষতিকর অ্যাপলিকেশনগুলো আমাদের ডিভাইসে আমরা ইন্সটল করে থাকি যেমন থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোরগুলো। এছাড়াও, ইমেইলের অ্যাটাচমেন্ট এমনকি এমএমএস এর মাধ্যমেও এই ম্যালওয়্যারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার স্মার্টফোনে প্রবেশ করতে সক্ষম। এছাড়া ফেক অ্যাপলিকেশন, ফিশিং স্ক্যামস এবং বিভিন্ন ধরণের এপিকেতো রয়েছেই।
কেমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন?
প্রথমেই বলেছি, বিভিন্ন ধরণের ম্যালওয়্যার বিভিন্ন রকম কাজ করে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এটি শুধুমাত্র আপনার স্মার্টফোনে বিভিন্ন অ্যাড পপ-আপ করতে পারে যা কিছুটা বিরক্তিকর হলেও ক্ষতিকর নয়। অন্য ম্যালওয়্যারগুলো হয়ত আপনার ক্রেডিট কার্ডের ডিটেইল হাতিয়ে নিতে পারে অথবা আপনার ডিভাইসের অন্যান্য অ্যাপলিকেশনগুলোকে ইমিটেট করতে পারে। কিছু কিছু ম্যালওয়্যার এমনও আছে যা কিছুক্ষণ পর পর আপনার স্মার্টফোন থেকে একটি করে টেক্সট মেসেজ বা এমএমএস প্রেরণ করে যা হয়ত আপনার একেবারে ক্ষতি করবেনা তবে আপনি খেয়াল না করলে এভাবেই আপনার ক্ষতি করতেই থাকবে যা একসময় হয়ত একটি বিশাল অংকে পরিণত হবে।

কীভাবে জানবেন আপনার ডিভাইস অ্যাফেক্টেড কি না?
মজার বিষয় হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি বুঝতে পারবেন না যে আপনার স্মার্টফোনটি কোন প্রকার ম্যালওয়্যার দিয়ে অ্যাফেক্টেড হয়েছে কি না। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি আপনার ক্রেডিট কার্ড আপনার স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত করেন এবং অহেতুক আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ক্রেডিট খরচ হতে থাকে তবে আপনার সতর্ক হওয়া উচিৎ। ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা?! আমার স্মার্টফোন ভালো আছে কিনা আমি তাও জানব না? হ্যাঁ! তাই। কেননা, একজন হ্যাকার নিশ্চয়ই এতটা বোকা নয় যে আপনাকে জানিয়েই আপনার ক্ষতি করবে।
এমনকি আপনি এবিষয়ে একটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইন্সটল করে সেটার সাহায্যে স্ক্যান করেও খুব একটা ভালো ফলাফল পাবেন না। তবে স্বস্তির কথা হচ্ছে, বড় বড় ক্ষতিকর ম্যালওয়ারগুলোর প্যাচও দ্রুতই বের হয় এবং আপনার স্মার্টফোনটি যদি রেগুলার ওটিএ বা এফওটিএ পেয়ে থাকে তবে ম্যালওয়্যার থেকে মুক্ত থাকবে।
অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপলিকেশনগুলো মূলত কী?
আপনার স্মার্টফোনে অস্বাভাবিক বা ক্ষতিকর কিছু স্ক্যান করে ডিটেক্ট এবং মুছে ফেলতে যে প্রোগ্রামটি সাহায্য করে থাকে তাই অ্যাটিভাইরাস প্রোগ্রাম। আপনি গুগল স্টোরে খুঁজলেই হয়ত একশরও বেশি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম পাবেন।
কম্পিউটারে যেমন একটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম কাজ করে থাকে ঠিক একই ভাবে অ্যান্ড্রয়েডেও একটি অ্যান্টিভাইরাস একই অপারেশন করে থাকে। তবে কম্পিউটারের অ্যান্টিভাইরাসের মত স্মার্টফোনের অ্যান্টিভাইরাসগুলো হার্মফুল বিহেভিয়র ডিটেক্ট করার পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলেনা। এই কাজটি আপনাকে করতে হবে ম্যানুয়ালি বা নিজে থেকেই।
অ্যান্টিভাইরাসের খরচ কেমন?
এটা নির্ভর করে ফিচারের উপর মূলত। প্রতিটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামেরই মূলত দুটি ভ্যারিয়েন্ট থাকে – পেইড এবং ফ্রি। ফ্রি ভার্সনে যে ফিচারগুলো থাকে মূলত সেগুলো দিয়েই কাজ হয়ে যায় কেননা পেইড ভার্সনগুলোতেও কোর ফিচারগুলো সেই একই থাকে শুধুমাত্র তার সাথে যুক্ত হয় কিছু বাড়তি ফিচার, যেমন – রিমোট লক এবং ওয়াইপ, ব্যাক-আপ অপশন, অ্যাড ব্লকিং এবং ইত্যাদি।
সিকিউরিটি অ্যাপ ইন্সটল করবেন না করবেন না?
সংক্ষেপে -‘দরকার নেই!’ কেননা, বেশিরভাগ অ্যাপলিকেশনই কাজ করে থাকে ম্যালওয়্যার দ্বারা আপনার স্মার্টফোনটি ইনফেক্টেড হবার পর আর তখন কিছু ক্ষতিও আপনার হয়ে যেতে পারে। তাই, সিকিউরিটি অ্যাপলিকেশনের উপর নির্ভর না করে আপনি আপনার কমন সেন্সকে কাজে লাগান। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আপনি নিজেই ৯৯ শতাংশ ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচতে পারবেন, যেমন –
গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলো/ইন্সটল করুন।
যহেতু গুগল প্লে স্টোরেও ম্যালিসিয়াস অ্যাপলিকেশন আছে সেক্ষেত্রে রিভিউ দেখুন।
একটি অ্যাপলিকেশন ইন্সটল করার সময় এগুলো কি কি অ্যাপ পারমিশন চাচ্ছে খেয়াল করুন, যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই অ্যাপ পারমিশন চেয়ে থাকে তবে হতে পারে এটি একটি ক্ষতিকর অ্যাপলিকেশন।
থার্ড-পার্টি অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
নিয়মিত আপনার স্মার্টফোনটি আপডেট করুন।
ব্যাস, সামান্য এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে এমনিতেই আপনি থাকবেন সুরক্ষিত। তাই বাড়তি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করে শুধু শুধু স্মার্টফোনে জঞ্জাল ভরার দরকার কি? তবে এরপরও যদি আপনার সংশয় থেকে থাকে তবে বলব করে রাখুন একটি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপলিকেশন ইন্সটল, না হলে পরবর্তিতে আমাকে দোষারোপ করতে পারেন!
শেষ কথা – চিরন্তন একটি সত্যি হচ্ছে, হ্যাকার বা চোররা তাদের সাধ্যমত আপনার নিরাপত্তা ভাংগতে চেষ্টা করবে, হয়ত কিছুটা দ্রুত বা দেরীতে তবে তারা তাদের রাস্তা খুঁজে বের করবেই। তাই পরবর্তিতে সুরক্ষার চিন্তায় না থেকে আমার মতে এখন থেকেই সতর্ক থাকা ভালো, নয় কি?

Leave a Reply