আসসালামুয়ালিকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
সম্মানিত দ্বিনি ভাইয়েরা আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আজকে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় ব্যক্তি যায়েদ ইবনে হারেস (রা) এর জীবনী নিয়ে
সামান্য কিছু আলোচনা করবে ইনশাআল্লাহ।
আসুন আমরা শুরুতেই জেনে নিন কিভাবে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের প্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলেন।
* যায়েদ ইবনে হারেস (রা) তিনি যখন ছোট ছিলেন
তার বয়স যখন আট বছর তিনি তখন তার মায়ের সাথে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। পথিমধ্যে কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী তাদেরকে আক্রমণ করে বসে, এবং তাকে ধরে নিয়ে উকাজের বাজারে গোলাম হিসাবে বিক্রি করে দেয়।
আর ঘটনায়ক্রমে হযরত খাদিজা রাঃ আনহু এর ভাতিজা হাকিম ইবনে হিশাম উকাজের বাজার থেকে
বেশ কয়েকটি গোলাম ক্রয় করেন আনেন। তার মধ্য থেকে যায়েদ ইবনে হারেসা (রা).ও ছিল। হাকিম ইবনে হিযাম যখন উকাজের বাজার হতে মক্কায় ফিরে আসে
তখন হযরত খাদিযা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার সাথে দেখা করতে যায়। তখন হাকিম ইবনে হিযাম হযরত খাদিজা রাঃ কে লক্ষ্য করে বলেন হে আমার ফুপু আমি আজ উকাজের বাজার হতে বেশকিছু গোলাম ক্রয় করে
এনেছি। এই গোলামদের মধ্যে হতে আপনার যেটা কে পছন্দ হবে সেটাই আপনার জন্য উপহার। হযরত খাদিজা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সবগুলো গোলাম থেকে হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রা) কে বাছাই করে নিলেন। কেননা তাকে দেখতেই খুবই শান্ত ও ভদ্র মনে হচ্ছিল। অতঃপর যখন হযরত খাদিজা রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। তখন তিনি যায়েদ ইবনে হারেসা কে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চপুদ্দ করে দিলেন। যায়েদ ইবনে হারেসা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু ৮ বছরে ছোট বালক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তত্ত্বাবধানে পালিত হতে লাগলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম তাকে আদর-যত্ন করে লালন পালন করতে লাগলেন। অপরদিকে জাহিদের পরিবার

তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে খুবই খুঁজা খুঁজি করতে লাগলেন এবং তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না। অতঃপর হজের মৌসুমে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে জায়েদের গোত্রের লোক মক্কায় আগমন করল।
তারা যখন মক্কা আসলো তখন যায়েদ সাথে তাদের সাক্ষাত হয়ে গেল, তারা যায়েদ তাকে চিনল জায়েদ তাদেরকে ছিনল। অতঃপর তারা হজ্ব শেষ করে বাড়ি ফিরে গেল এবং গিয়ে যয়েদের বাবাকে বলল আমরা যায়েদ এর সন্ধান পেয়েছি, সে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তত্ত্বাবধানে আছে। এই কথা শুনা মাত্রই তারা বাবা তার ভাই কায়াব কে নিয়ে মক্কায় দিকে রওনা হলো।
তারা তাদের সন্তানকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে অনেক টাকা পয়সা ও সঙ্গে করে নিয়ে আসলো। তারা মক্কায় গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করল। এবং বলতে লাগল হে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান আপনারা হচ্ছেন পবিত্র আরব ভূমির সন্তান। আপনারা আল্লাহর ঘরের প্রতিবেশী। আমরা শুনেছি আমাদের সন্তান আপনার কাছে আছে। আমরা তাকে মুক্ত করে নিয়ে যেতে এসেছি। যত টাকা লাগে আমরা দিব। আমরা আশা করছি আপনি অনুগ্রহ করে তাঁকে মুক্ত করে দিবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের সন্তানকে? তারা বলল আপনার গোলাম যায়েদ ই হচ্ছে আমাদের সন্তান। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আচ্চা ঠিক আছে তার আগে আমরা একমত হই আমি আপনাদের সামনে যায়েদকে ডাকব
এবং সে যদি আপনাদের সাথে চলে যেতে চায় তাহলে ঠিক আছে মুক্তির লাগবেনা। আর যদি সে আমাকে ছেড়ে যদি না দিতে চায় তাহলে আপনারা তাকে নিয়ে যেতে পারবেন না। এই কথা শুনেই মাত্রই তারা বলল আমরা আপনার সাথে একমত। আপনি আমাদের প্রতি ইনছাফ পূর্ণ ফায়সালা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ কে ডাকলেন এবং আগন্ত ব্যক্তিদের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন এরা কারা?
এবং যায়েদ উত্তর দিল একজন হচ্ছে আমার পিতা আরেকজন হচ্ছে আমার চাচা। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ কে বলল এরা তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছে চাইলে তুমি এদের সাথে চলে যেতে পারো। না হয় আমার সাথে থাকতে পারো। এই কথা শুনে মাত্রই ছোট বালক যায়েদ নির্দ্বিধায় বলে উঠলো হে আমার মনিব আমি আপনাকে ছাড়া কোথাও যাবো না।
একথা শুনে যায়েদের বাবা রাগান্বিত ভাবে বলে উঠলো
ধ্বংস তোমার জীবন তুমি তোমার বাবা-মাকে ছেড়ে এই গোলামী কি পছন্দ করে নিলে।তখন যায়েদ বলল হে আমার বাবা আমি আমার মনিবকে এত ভালো পেয়েছি তাকে ছাড়া আমি কথাও যাবোনা। আমি সারাজীবন তার সাথে থাকবো। যায়েদ এর এই কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে তাকে কাবা পাঙ্গনের নিয়ে গেলেন। এবং তিনি কাবার সামনে হাজরে আসওয়াদের পাশে দাড়িয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিতে লাগলেন হে কোরাইশ সম্প্রদায় তোমরা সাক্ষী থাক আজ থেকে যায়েদ আমার ই সন্তান। সে আমার উত্তরাধিকারী হবে আমিও তার উত্তরাধিকারী হব। এ দৃশ্যটি জায়েদের বাবা ও চাচা স্বচক্ষে দেখল । এবং তারা এ দৃশ্যটা দেখে আনন্দিত হলো এবং তাদের মন ভরে গেল। এবং তারা যায়েদ কে রেখে বাড়িতে ফিরে গেল।ঐ দিনের পর থেকে লোকেরা যায়েদ কে যায়েদ ইবনে মোহাম্মদ বলে বলতে লাগলো।
অতঃপর ইসলাম যখন ফালাক পুত্রের প্রথাকে রোহিত করল। তোমরা তাদেরকে তাদের পিতার নামে ডাকো।
এরপর থেকে তাকে আবারো যায়েদ ইবনে হারেসা বলে ডাকতে লাগল। তিনি যখন পিতামাতার আত্মীয়-স্বজন সবকিছুর থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন । তিনি হয়তো সেদিন জানতেন না যে তিনি কত বড় সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। তিনি যাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন তাকে গোটা মানবজাতির জন্য রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। এভাবে কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে গেল।
এবং কিছুদিন পর আল্লাহ তাআলা তার নবীকে নবুওয়ত দান করলেন। এরপর থেকে তিনি ইসলামের দাওয়াতকে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পৌঁছে দিলেন। এবং যায়েদ ইবনে হারেসা যেসকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে যারা সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছে। এই সৌভাগ্য হয়েছে উত্তম সৌভাগ্য আর কি হতে পারে?
যায়েদ ইবনে হারেসা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমনি বাড়াবে ভালোবাসতেন
ঠিক তেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও তাকে ভালোবাসত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দেখে
আনন্দিত হতেন। এমন একটি আনন্দের মুহূর্ত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন:
একবার যায়েদ ইবনে হারেসা রাদিয়াল্লাহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের সাথে সাক্ষাৎ করতে মদিনা আসেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবস্ত্র অবস্থায় ছিলেন অথৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটি কাপড় দ্বারা ডাকা ছিল। এমন অবস্থায় যায়েদ দরজায় আওয়াজ দিলেন।যায়েদর আওয়াজ শুনামাত্রই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ অবস্থায় দরজার দিকে ছুটে গেলেন। এবং তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন।
Post টা না পড়তে মন চাইলে ভিডিও টা দেখতে পারেন

Or download করতে পারেন
download link
আল্লাহ হাফেজ সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময় trickbd এর সাথে থাকবেন।

2 thoughts on "সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী || পর্ব-১ || হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)"

  1. Mahfuj Contributor says:
    wow nice post
    1. Md Yousuf Ctg Author Post Creator says:
      Thanks bro

Leave a Reply