‘আব্দুল হাই/ করে খাই খাই/ এক্ষুণি
খেয়ে বলে/ কিছু খাই নাই।/ লাউ খায়
শিম খায়/ মুরগির ডিম খায়/ কাঁচা-
পাকা চুল খায়/ খেয়ে মাথা চুলকায়…।’
ছড়ার এই আব্দুল হাইয়ের স্বভাবে পেয়ে
বসেছে অনেককে। যা-ই দেখে, তা-ই
যেন খাওয়া চাই! প্রমাণ মেলে
অ্যামি শ্যাপিরো নামের এক
পুষ্টিবিদের দেওয়া তথ্যে!
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রিয়্যাল
নিউট্রিশন নামের এক প্রতিষ্ঠানের এই
পুষ্টিবিদ বলেন, অন্যান্য গাছের মতো
ক্যাকটাসও পুষ্টিগুণসম্পন্ন। ফলে
ক্যাকটাস খাওয়া যায় এবং শরীরের
জন্য তা দারুণ উপকারী। কেবল কি
উপকারী? ক্যাকটাসকে তো ‘সুপারফুডও’
বলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ!
কী আছে ক্যকটাসে
ক্যাকটাস, বাংলায় যেটা ফণীমনসা—
সারা গায়ে কাঁটাযুক্ত অদ্ভুতদর্শন এক
উদ্ভিদ। তবে এর ফুলের বাহার মোহনীয়
বটে। আর এই অদ্ভুতদর্শন ও মোহনীয় ফুলের
কারণেই ক্যাকটাস বেশ আদরণীয়। ঘর ও
বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এর
চাহিদাও কম নয়। এখন শোনা যাচ্ছে,
খাদ্য হিসেবেও এর আছে নানান
গুণাগুণ। বাইরে কাঁটা থাকলেও
ক্যাকটাসের ভেতরে বেশ রসাল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে আছে
উপকারী খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
উপাদান। ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রার
কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে লড়াই
চালানোর জন্য এটা কার্যকর। এর আঁশ ও

পেকটিন ব্যবহার করা হচ্ছে জ্যামের
‘জেলিং’ উপাদান হিসেবে।
অনেকটা ঘৃতকুমারীর রসের মতো।

অ্যামি শ্যাপিরোর কথায়, উচ্চমাত্রার
আঁশজাতীয় খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে
পেকটিন থাকে। এই পেকটিন রক্তের
অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
রাখে। এ ছাড়া রক্তচাপও কমিয়ে দেয়।

উচ্চমাত্রার আঁশ কার্বোহাইড্রেট হজম
করার টোটকা বলতে পারেন। আর
কার্বোহাইড্রেট হজম মানেই সেটা
চিনিতে রূপান্তর না হওয়া। এভাবেই
ক্যাকটাস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিসের মতো জটিল সমস্যা।
এতে ক্যালরির পরিমাণও খুব কম। ফলে
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ক্যাকটাস
হতে পারে ভালো ‘ওষুধ’। ওজন ঠিকঠাক
রাখতে দরকার উচ্চমাত্রার আঁশজাতীয়
খাবার, যেটাতে আবার ক্যালরির
পরিমাণ থাকবে কম। তাই ক্যাকটাসকে
এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দশে দশই
দিচ্ছেন!

ভিটামিনের কথায় আসা যাক।
ক্যাকটাসে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’-র
কমতি নেই। বুঝতেই পারছেন, এই দুটি
খাদ্য উপাদান আপনার ত্বক ও কোষ
ভালো রাখার অন্যতম নিয়ামক। খনিজ
উপাদানের বেলায় বলা হচ্ছে,
ক্যাকটাসে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেশিয়াম ও সোডিয়াম আছে,
তা আপনার মাংসপেশির ব্যথা,
কোষের কাজকারবার ঠিকঠাক রাখে।
আর এতে পানির পরিমাণও
অনেকখানি, সহজেই অনুমেয় পানির
অভাব দূর করতেও এটা পটু। এত কিছুর
মিশেলে ক্যাকটাস খুব কার্যকর
মাথাধরার মতো সমস্যার বেলায়। এক

গ্লাস ক্যাকটাসের জুস তাই হতে পারে
মাথাধরার ওষুধ।
ক্যাকটাস কিভাবে খাওয়া যায়
এ ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই
ক্যাকটাসের কাঁটার মতোই মনে
খোঁচা দিচ্ছে—এটা উপাদেয় তো?
উত্তর হলো, সবার কাছে ভালো না-ও
লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে,
এটা অনেকটা শসার মতো, সঙ্গে
খানিকটা তিতকুটে স্বাদও আছে। এ
কারণেই খালি ক্যাকটাস খাওয়া সহজ
নয়। তাহলে কী উপায়? ক্যাকটাস
উদ্ভিদটির পুরোটাই খাওয়া হয় না। এর
পাতা, ফুল, কাণ্ড ও ফলই খাওয়ার যোগ্য।
বিভিন্ন উপায়ে এসব অংশ পেটে
চালান করা যায়। সেদ্ধ করে নিতে
পারেন, রান্নাও করা যায়, এমনকি
গ্রিল করলেও মন্দ লাগবে না। জুসের
মতো করে ব্লেন্ড করে নিলেও দিব্যি
পান করা সম্ভব। সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি
হলো ঘন জুসের সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া।
ব্লেন্ড করুন, অন্য যেকোনো ফলের ঘুন
জুসের মিলিয়ে আরামসে পান করুন।
তবে যত্রতত্র বেড়ে ওঠা ক্যাকটাস না
খাওয়াই ভালো। তারও আগে
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূত্র: ডেইলি মেইল অনলাইন

Leave a Reply