আতঙ্কের আরেক নাম “জিকা
ভাইরাস”….!
বর্তমান বিশ্বে আতঙ্কের আরেক নাম
“জিকা ভাইরাস”। সম্প্রতিতে বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাস নিয়ে
সতর্কতা জারি করেছে। এ ভাইরাসটি
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং তাতে ৩০
থেকে ৪০ লাখ লোক আক্রান্ত হতে
পারে। ভারত, পাকিস্তানে এই
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া
গেলেও বাংলাদেশ এখনো এ থেকে
মুক্ত। তবে প্রতিবেশী দেশ হওয়ায়
বাংলাদেশকেও বিশেষভাবে সতর্ক
থাকতে হবে। আর এই “জিকা ভাইরাস”
সম্পর্কে ১৫টি তথ্য নিয়ে লিখছি
১.’জিকা’ নামকরণের ইতিহাস
‘জিকা’ নামটি নেওয়া হয়েছে
উগান্ডার জিকা বন থেকে। ১৯৪৭
সালে হলুদ জ্বর নিয়ে গবেষণার সময়
বিজ্ঞানীরা জিকা বনে একটি
খাঁচায় একটি বানর রাখে। পরে
বানরটি জ্বরে পড়লে তার দেহে একটি
সংক্রামক এজেন্টের উপস্থিতি শনাক্ত
করা হয়। ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয়
জিকা ভাইরাস। এরপর ১৯৫৪ সালে
নাইজেরিয়ায় এক মানুষের দেহে এই
ভাইরাস পাওয়া যায়।
২. জিকা ভাইরাস কী?
পশ্চিম গোলার্ধের গ্রীষ্মমণ্ডলীয়
এলাকায় একটি ভাইরাস জিকা।
ইয়েলো ফিভার, ওয়েস্ট নাইল,
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু যে গোত্রের
সদস্য, জিকা ভাইরাসও একই গোত্রের
অন্তর্ভুক্ত একটি ফ্লাভিভাইরাস। যা
অনেকটা ডেঙ্গুর মতো হলেও তার
চেয়ে হালকা প্রভাব ফেলে দেহে।
৩. কিভাবে ভাইরাসটি ছড়ায়?
এডিস মশার মাধ্যমে দ্রুত এ ভাইরাসটি
ছড়ায়। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে এমন
কোনো রোগীকে এডিস মশা
কামড়ানোর মধ্য দিয়ে এর স্থানান্তর
হয়। পরে ওই মশাটি অন্য ব্যক্তিদের কামড়
দিলে তা ছড়াতে থাকে। এরপর ওই
ব্যক্তিদের মাধ্যমেই ভাইরাসটির
বিস্তার ঘটতে থাকে।
৪. কিভাবে বুঝব জিকা ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়েছি কি না?
সংক্রামিত ব্যক্তিদের শরীরে
ভাইরাসটির সামান্য উপসর্গ দেখা
যায়। যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, র্যাশ এবং
চোখ গোলাপি রঙ ধারণ করা।
প্রকৃতপক্ষে শতকরা ৮০ শতাংশ
সংক্রামিত ব্যক্তিই আঁচ করতে পারেন
না যে তাদের শরীরে ভাইরাসটি
রয়েছে। এসব কারণে ভাইরাসটি নির্ণয়
করা কঠিন আর এ সুযোগে ভাইরাসটি
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আপনার
রোগটি হয়েছে বলে সন্দেহ হলে
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. ভাইরাসটি কাদের ক্ষেএে
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর?

এ রোগটি সাধারণ মানুষের তেমন
ক্ষতি করে না। কয়েক দিন বিশ্রাম
করলেই তা সেরে যায়। শুধু গর্ভবতী
নারীদের আক্রান্ত হলেই শিশুর
মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
৬. গর্ভাবস্থার কোন পর্যায়ে জিকা
ভাইরাস বেশি বিপজ্জনক?
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যদি জিকা
ভাইরাস আক্রমণ করে তাহলে তা
বেশি বিপজ্জনক। এ সময় ভাইরাসটি
গর্ভস্থ শিশুর দেহে আক্রমণ করে এবং
শিশু মস্তিষ্কের ক্ষতি ও বিকলাঙ্গ
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৭. ভাইরাসটি শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি
করে কিভাবে?
গর্ভবতী নারীরা এ ভাইরাসে
আক্রান্ত হলে তা শিশুর মারাত্মক ক্ষতি
করে এবং শিশু বিকলাঙ্গ হওয়ার
আশঙ্কা থাকে। এ কারণেই জিকা
ভাইরাস বিশ্বের মনোযোগ টেনেছে।
এটির মূল কারণ মাইক্রোসেফালি
নামে একটি নিউরোলজিক্যাল
ডিসঅর্ডার ও ভাইরাসটির মধ্যে
যোগসূত্র। এর কারণে সদ্যজাত শিশুদের
মস্তিষ্ক স্বাভাবিক আকারের চেয়ে
ছোট হয়। এছাড়া এর কারণে শিশুদের
মাঝে বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেয়
এবং কখনো কখনো মৃত্যুও হতে পারে।
৮. কতটি দেশে এর সংক্রমণ ঘটেছে?
আমেরিকাজুড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫টি
দেশে ভাইরাসটি স্থানীয়ভাবে
সংক্রমিত হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে
বার্বাডোজ, বলিভিয়া, ব্রাজিল,
কেপ ভেরদে, কলম্বিয়া, ডোমিনিকান
রিপাবলিক, ইকুয়েডর, এল সালভাদর,
গুয়েতেমালা, গুইয়ানা, হাইতি,
হন্ডুরাস, মেক্সিকো, পানামা,
মারতিনিক, প্যারাগুয়ে, পুয়ের্তো
রিকো, সেন্ট মার্টিন, সুরিনাম,
সামোয়া, দ্য ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডস
ও ভেনেজুয়েলা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়
স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সিডিসি এ তথ্য
দিয়েছে।
৯. বিশ্বের কোন কোন দেশে গর্ভবতী
নারীদের জন্য এটি বিপজ্জনক?
বাংলাদেশে এ রোগটি আক্রমণের
সম্ভাবনা কতখানি?
বিশ্বের প্রায় দুই ডজনের কিছুটা বেশি
দেশে এ ভাইরাসটির আশঙ্কা রয়েছে।
এসব দেশের মধ্যে ক্যারিবিয়ান, মধ্র
আমেরিকান ও দক্ষিণ আমেরিকান দেশ
উল্লেখযোগ্য। এল সালভাদোর,
কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, ইকুয়েডরের মত দক্ষিণ
আমেরিকার দেশগুলি ২০১৮ সাল পর্যন্ত
মহিলাদের সন্তানধারণের পরিকল্পনা
বাতিল করতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা ‘হু’। তারা জানিয়েছে জিকা
ভাইরাস ‘বিস্ফোরণের মত ছড়িয়ে
পড়ছে।’ ভারতেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে
পড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি
করেছে ‘হু’। এ কারণে ভারত থেকে
বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে
জিকা ভাইরাসের।
১০. আমি গর্ভবতী এবং জিকা ভাইরাস
আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ করেছি। এখন কী
করা উচিত?
গর্ভবতী নারী এবং জিকা ভাইরাস
আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ করলে আপনার রক্ত
পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে
আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাও করতে হবে।
চিকিৎসক আপনার দেহের লক্ষণ
মিলিয়ে জিকা ভাইরাস হয়েছে কি
না, তা জানাবেন।
১১. জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হলে
শিশুরও পরীক্ষা করতে হবে কি?
জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হলে শিশুরও
পরীক্ষা করতে হতে পারে। তবে
এক্ষেত্রে মায়ের যদি জিকা ভাইরাস
আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের
অভিজ্ঞতা থাকে কিংবা অন্য
কোনোভাবে জিকা ভাইরাসে
আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে
শুধু তা হলেই শিশুর পরীক্ষা প্রয়োজন
হতে পারে।
১২. জিকা ভাইরাসের কোনো
চিকিৎসা আছে কি?
না। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে
কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এ
রোগটি সাধারণ মানুষের তেমন ক্ষতি
করে না। কয়েক দিন বিশ্রাম করলেই
তা সেরে যায়।
১৩. এর কী কোনো টিকা রয়েছে?
না। এখনও জিকা ভাইরাসের টিকা
আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এটি বানানোর
চেষ্টা করছেন গবেষকরা। এটি হাতে
আসতে এক দশক সময় লাগতে পারে।
১৪.কিভাবে নিরাপদ থাকবেন?
যেহেতু এখন পর্যন্ত এটি প্রতিরোধে
কোনো টিকা বা এর চিকিৎসায়
কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি তাই
সংক্রামিত অঞ্চল বা দেশগুলো ভ্রমণ
থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে
এটাই একমাত্র উপায় বলে
বিশেষজ্ঞদের মত।
১৫. আগেই ভাইরাসটি শনাক্ত হলেও
কেন তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া
হয়নি?
অতীতে জিকা ভাইরাস আক্রান্তদের
তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া
যায়নি। তাই ভাইরাসটির প্রতিরোধক
ওষুধ তৈরি করা হয়নি। এছাড়া
ভাইরাসটিকে তেমন ক্ষতিকর মনে না
হওয়ায় তার বিরুদ্ধে টিকাও আবিষ্কৃত
হয়নি। বর্তমানে এ ভাইরাসের ক্ষতিকর
দিক জানতে পারার পর এ ভাইরাসটি
প্রতিরোধে সতর্কতা জারি করা
হয়েছে।

2 thoughts on "আতংকের আরেক নাম জিকা ভাইরাস"

  1. Pankaj Contributor says:
    Thanks for this post.
  2. SHAKIL390 Contributor Post Creator says:
    welcome # pankaj

Leave a Reply