টাইটান’ ছিল গ্রিক পুরাণের সৃষ্টির
দেবতা। এই দেবতার কাজই ছিল শুধু সৃষ্টি
করা। তার নামানুসারে এই জাহাজের
নাম রাখা হয়েছিল ‘টাইটানিক’। এটি
আসলে জাহাজটির সংক্ষিপ্ত নাম। এর
পুরো নাম ছিল ‘আর এম এস টাইটানিক’।
‘আর এম এস’ এর অর্থ হচ্ছে ‘রয়্যাল মেল
স্টিমার’। অর্থাৎ পুরো জাহাজটির নাম
ছিল ‘রয়্যাল মেল স্টিমার টাইটানিক’।
১৫ এপ্রিল ১৯১২ টাইটানিক হিমশৈলের
(আইসবার্গের) সঙ্গে সংঘর্ষে ডুবে যায়।
ওই সময়ের সবচেয়ে বৃহৎ আধুনিক ও
বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ।
টাইটানিক জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু
হয় ১৯০৭ সালে। একটানা পাঁচ বছর কাজ
করে ১৯১২ সালে জাহাজটির কাজ শেষ
হয়। হল্যান্ডের ‘হোয়াইট স্টার লাইন’ এই
জাহাজটি নির্মাণ করেন। ৬০ হাজার টন
ওজন এবং ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট
জাহাজটি নির্মাণ করতে সে সময় খরচ
হয়েছিল ৭৫ লাখ ডলার।
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদাম্পটন
থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা শুরু
করে টাইটানিক। সে সময় টাইটানিকে
মোট যাত্রী ছিল ২ হাজার ২০০ জন এবং
কয়েক’ কর্মী। শুরুতেই মাত্র চার ফুটের
জন্য ‘এসএসসিটি অব নিউইয়র্ক’
জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সমর্থ
হয়।
৭৭নটিক্যাল মাইল এগিয়ে শেরবুর্গ
থেকে ২৭৪ জন যাত্রী তুলে নেয়। ১১
এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায়
আয়ারল্যান্ডের কর্ক পোতাশ্রয় থেকে
জাহাজে ওঠেন ১১৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর
এবং সাতজন দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী।
ব্রিটেন থেকে আটলান্টিক মহাসাগর
পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় যাওয়া খুবই
বিপজ্জনক ছিল। ছোটখাটো জাহাজের
পক্ষে বলা চলে জীবন বাজি রেখে
যাত্রা করা।
কেননা, হঠাৎ সামুদ্রিক ঝড়-
জলোচ্ছ্বাসে পড়ার আশংকা সবসময়ই
ছিল। তারপরও এত যাত্রী সমুদ্রের
রোমাঞ্চকর এই ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য
টাইটানিকের যাত্রী হয়েছিল।
টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীর ভাড়া ছিল
৩ হাজার ১০০ ডলার। আর তৃতীয় শ্রেণীর
ভাড়া ছিল ৩২ ডলার।
১৪ এপ্রিল দুপুর দুইটার দিকে ‘Amerika’

নামের একটি জাহাজ থেকে রেডিওর
মাধ্যমে টাইটানিক জাহাজকে জানায়
তাদের যাত্রাপথে সামনে বড় একটি
আইসবার্গ রয়েছে। শুধু তাই নয়
পরবর্তীতে ‘Mesaba’ নামের আরও একটি
জাহাজ থেকে এই একই ধরনের
সতর্কবার্তা পাঠানো হয় টাইটানিকে।
এ সময় টাইটানিকের রেডিও
যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন জ্যাক
পিলিপস ও হ্যারল্ড ব্রিজ। দু’বারই
তাদের দুজনের কাছে এই
সতর্কবার্তাকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়।
তাই তারা এই সতর্কবার্তা
টাইটানিকের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে
পাঠাননি। টাইটানিক দুর্ঘটনার মাত্র ৪০
মিনিট আগে Californian সিপের রেডিও
অপারেটর টাইটানিকের সাথে
যোগাযোগ করে আইসবার্গটি সম্পর্কে
বলতে চেয়েছিল।
কিন্তু টাইটানিকের রেডিও অপারেটর
ক্লান্ত জ্যাক পিলিপস
রাগান্বিতভাবে বলে, আমি কেইপ
রেসের সাথে কাজে ব্যস্ত এবং লাইন
কেটে দেয়। ফলে Californian সিপের
রেডিও অপারেটর তার ওয়ার্লেস বন্ধ
করে ঘুমাতে চলে যায়। বলা চলে তাদের
এই হেয়ালিপনার কারণেই ডুবেছে
টাইটানিক।
টাইটানিক যখন দুর্ঘটনাস্থলের প্রায়
কাছাকাছি চলে আসে। তখনই জাহাজের
ক্যাপ্টেন সামনে আইসবার্গের সংকেত
পান। আইসবার্গ হলো সাগরের বুকে
ভাসতে থাকা বিশাল বিশাল সব
বরফখণ্ড। এগুলোর সবচেয়ে ভয়ংকর
ব্যাপার হলো, এগুলোর মাত্রই আট
ভাগের এক ভাগ জলের উপরে থাকে।
মানে, এর বড়ো অংশটাই দেখা যায় না।
তখন তিনি জাহাজের গতি সামান্য
দক্ষিণ দিকে ফিরিয়ে নেন। সে সময়
টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষণকারীরা
সরাসরি টাইটানিকের সামনে সেই
আইসবার্গটি দেখতে পায় কিন্তু তখন
অনেক দেরি হয়ে গেছে। টাইটানিকের
ফার্স্ট অফিসার মুর্ডক আকস্মিকভাবে
বামে মোড় নেয়ার অর্ডার দেন এবং
জাহাজটিকে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে চালনা
করতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন।
টাইটানিককে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এর ডানদিক আইসবার্গের সাথে প্রচণ্ড
ঘষা খেয়ে চলতে থাকে। ফলে
টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশজুড়ে
চিড় দেখা দেয়। টাইটানিক জাহাজটি
যেই স্থানে ডুবেছিল সেই স্থানের নাম
হলো ‘গ্রেট ব্যাংকস অফ
নিউফাউন্ডল্যান্ড’। টাইটানিক সর্বোচ্চ
চারটি পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে
ভেসে থাকতে পারতো।
কিন্তু জলপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ৫টি
কম্পার্টমেন্ট। এছাড়া পানি
প্রতিরোধের জন্য ১২টি গেট ছিল।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এমন জায়গায়
জাহাজটির ধাক্কা লাগে যে, সবগুলো
গেটের জল প্রতিরোধ বিকল হয়ে যায়।
জল ভারে আস্তে আস্তে পানিতে
তলিয়ে যেতে থাকে টাইটানিক।
রাত ২টা থেকে ২টা ২০ মিনিটের মধ্যে
টাইটানিকের সম্পূর্ণ অংশ
আটলান্টিকের বুকে তলিয়ে যায়। ডুবে
যাওয়ার শেষ মুহূর্তে জাহাজের
বৈদ্যুতিক সংযোগ বিকল হয়ে যায়।
টাইটানিক যখন সমুদ্রের বুকে তলিয়ে
যায় ঠিক তার এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর
রাত ৪টা ১০ মিনিটে সেখানে আসে ‘দি
কারপাথিয়া’ নামের একটি জাহাজ।
যারা সমুদ্রের বুকে ভেসে
বেড়াচ্ছিলেন তাদেরকে উদ্ধার করে
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিউইয়র্কে
চলে যায়।
দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৫ সালে যন্ত্রচালিত
অনুসন্ধান শুরু করে একদল বিজ্ঞানী।
রবার্ট বালার্ড নামক ফরাসি
বিজ্ঞানী টাইটানিককে খুঁজে বের
করেন। ১৯৮৫ সালে এর অবস্থান সম্পর্কে
ধারণা পাওয়া যায়। আনসিংকেবল
টাইটানিক এখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২
হাজার ৬০০ ফুট নিচে আটলান্টিকের
তলদেশে স্থির হয়ে আছে।
দ্বিখণ্ডিত জাহাজটির দুটো টুকরো ১৯৭০
ফুট দূরে অবস্থান করছে। টাইটানিকের
সম্মুখভাগ সমুদ্রতলে ৬০ ফুট মাটির
গভীরে প্রোথিত। ১৪ জুলাই ১৯৮৬, ঘটনার
৭৪ বছর পর টাইটানিক পুনরাবিষ্কৃত হয়।

Download Batman VS Superman full movie in 3gp, mp4 & PC AVI

Leave a Reply