জমিদার বাড়ি রহস্য
পর্ব ৫
আর,এন, ইফতি
®©®©®©®©®©®©
ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে গেলেন রিওর কথা শুনে।
কারন একজন মৃত মানুষ কিভাবে তার
নিজের খুনের গোয়েন্দা এপায়েন্ট করেন?
এবার রিও হেসে দিয়ে সব বুঝিয়ে বলল।
তারপর ভদ্রমহিলা আমাদের নিয়ে গেলেন বাড়ির ভিতরে।
বেশ বড় সড় একটা ওয়েটিং রুমে নিয়ে বসানো হল আমাদের।
অনেক পরি পাটি করে সাজানো ঘর টা।
অভিজাত্যের কোন কমতি নেই বাড়িতে।
সোফার উপর নকশা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটাই স্পস্ট জমিদারিত্বর চাপ আছে।
বেশ কিছু বুদ্ধ মুর্তি আছে।
একটি একুরিয়াম আছে।
বেশ হলুদ কালারের মাছও আছে সেখানে।
এক পাশে বিকট আকৃতির একটা চেয়ার আছে।
হয়ত এটাই জমইদারের সৃতি।
সোফাই বসা একজন ভদ্রলোক।
বিয়স আনুমানিক ৪০+ হবে।
সাদা সার্ট, প্যান্ট পরিহিত।
উচ্চতা আমার মত মানে ৫.৯”। গঠন বেশ গোল গাল।
তবে ভদ্রমহিলার মত
চোখে ওতটা শোক প্রকাশ পাচ্ছে না।
আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মহিলা বললেনঃ এনি আমার স্বামি মিস্টার জহির।
গভমেন্ট কলেজের ইতিহাস প্রভাশক।
রিও সালাম দিয়ে বললঃ আমি জানি।
আসলে মিসেস জোহান সবার কথায় আমাকে বলেছিলেন।
আপনার ভাইকে একটু ডাকবেন প্লিজ?
_________ ভদ্রমহিলা উঠে গেলেন।
জহির সাহেবের সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম।
তার স্ত্রীর নাম এলিনা।
একটু পরে একটা কাজের মহিলা কিছু চা, নাস্তা
নিয়ে আসল।
খেতে খেতে আমি বললামঃআসলে মিস্টার জহির, আপনার কি জানা আছে এই বাড়িতে নাকি ভুত দেখা যেত?
ভেবেছিলাম ভদ্রলোক হয়ত আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিবেন।
কিন্তু না।
তিনি আমার কথা সিরিয়াস ভাবে নিলেন।
এবং বললেনঃআমি ভুত প্রেত বিশ্বাস করতাম না।
কিন্তু শ্বাশুড়িকে শেষ ছয় মাস
ভয় পেতে দেখে বিষয়টা আমার কাছে একটু আজব লাগে।
তাই আমি প্লান করি এইবাড়িতে কিছু দিন কাটাবো।
তারপর দেখব কি হয়।
কিন্তু সত্যিই যে ভুত বলে কিছু
আছে সেটা বলব না।
তবে অতিপ্রাকৃতিক বলে কিছু
একটা আছে এই বাড়িতে।
_ মানে? বলল রিও
_আমি সেদিন রাতে খেয়ে অপেক্ষা করছি।
এমন সময় ডাকা ডাকির শব্দে
পেলায় ।
ভাল করে শুনতেই বুঝলাম দারোয়ান মালিকে ডাকছে এবং সেটা ভয়ার্ত ভাবে।
তাই উঠে বের হলাম।
গিয়ে শুনলাম দারোয়ান নাকি
গুদাম ঘরের পাশে
বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছে।
তাই আমিও এগিয়ে গেলাম।
বিশ্বাস করতে পারবেন না, মিস্টার রিও।
গুদাম ঘরে যাওয়ার আগ প্রযন্ত এ গর্জন আমরা শুনেছি।
কিন্তু ঘরে যেতে সব স্বাভাবিক।
সারা ফুল বাগান তন্ন তন্ন খোজার পরেও কিছু পায়নি।
এর পর অরো অনেক বার
নাকি দারোয়ান আর মালি মিলে এ শব্দ শুনেছে।
ইভেন আশে পাশের লোক গুলোও নাকি বাঘটাকে কয়েক বার দেখেছে বলে শোনা গেছে।
_অহ। তাহলেতো ঘটনাটা জটিল।
তা আপনার কি মনে হয়?
আপনার শ্বাশুড়িকে কি মানুষ মেরেছে না কি বাঘে মেরেছে?রিওর এমন প্রশ্নের জবাবে জহির বললেনঃসেটা আমি বলতে পারব না।
বাট পুলিশ আছে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে যাবে।
আমি যা জানি সেটাই বললাম।
_______ এমন সময় একজন ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন।
বয়স আন্দাজ ৪৩ এর কোঠায়।
বেশ শক্ত সামার্থ লোক।
দেখে বোঝা যাচ্ছিল ডিফেন্সে
কর্ম রত আছেন।
বুঝলাম এটাই মিসেস জোহানের একমাত্র জিবিত ছেলে।
তিনি প্রথমে সোফাই বসলেন তারপর রিওর দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে থেকে বললেনঃহ্যা মিস্টার রিও।
কিভাবে হেল্প করতে পারি?
_আসলে আপাতত আপনার নাম টা জানার ইচ্ছা ছিল।(রিও)
_আমি, আমিন জোহান।
_আপনি কি এখানে প্রায়ই আসেন?
_ দেখুন। ছুটি হয়ে ওঠে না।
আর হলেও স্ত্রী ছেলে_মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে ওভাবে আর আসা হয় না।
_লাস্ট কত দিন আগে এসেছিলেন?
_এই ধরুন বছর দুই আগে।

যদিও এর আগে বছর একবার আসা হত।
কিন্তু এখন আর সময় হয়ে ওঠে না।
_হুম। কিন্তু আপনার আম্মাকে একা রেখে?
_আসলে তাকে অনেক বার আমার সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছি।
কিন্তু তিনি রাজি হননি।
_ওকে। আপনি কি জানেন আপনাদের বাড়িতে ভুতের একটা আতংক ছিল।
_আসলে ভুতে বিশ্বাস আমার কোন কালেই নেই।
হ্যা। অবশ্য আম্মার কাছে
শুনেছিলাম।
কিন্তু যা বিশ্বাস করিনা।
ওটা নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিল না।
_আপনি আপনার পুর্ব পুরুষের ইতিহাস জানেন?
_বাবা মায়ের কাছে যেটা শুনেছি।
ওটার বাইরে আর কিছু জানি না।
_আপনি কি জানেন, আপনার পুর্ব পুরুষের লেখা কিছু ডাইরি থেকে জানা যায় আপনাদের
বাড়িতে গুপ্ত ধন লুকিয়ে রাখা আছে?
_বাবা_মা বলেছে।
কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা।
কারন ডাইরিতে নাকি ওটার স্পস্ট কোন উল্লেখ করা হয়নি।
শুধু ধারনা করা হয়েছে।
_আপনি কি কখনো ডাইরিটা পড়েছেন?
_আসলে আমার ইচ্ছা জাগেনি।
কারন মায়ের সম্পদের লোভ আমার ছিল না।
কেননা যদিও আপনি আমার পুর্ব পুরুষের কথা বলেছেন তাই বলছি, ওটা আমার পুর্ব পুরুষ না।
আমার মায়ের পুর্ব পুরুষ।
আমার বাবা কর্নেল ছিলেন।
কোন ভাবে বাবা মায়ের পরিচয় হয়।
তারপর তাদের বিয়ে হয়।
আমার পৈত্রিক ভিটা সিলেটে।
তাই আমি সেখানেই থাকি।
_কিন্তু সে ডাইরিটা কোথায় আছে আপনি কি কিছু জানেন?
_আমি যত দুর জানি সেটা মায়ের কাছেই থাকত।
তবে …………………
_হ্যা বলুন।
_গত দুই দিন আগে আম্মা আমাকে কল দিয়ে বলেছিলেন
আমি যেন একবার আসি।
_কারন কিছু কি উল্লেখ করেছিলেন?
_আমায় কয়েকটা জিনিস দিবে
বলেছলেন।
তবে যখন বললেন সেটা ডাইরি।
তখন আর ইচ্ছা জাগেনি।
কেননা এই সম্পদকে আমি ঘৃনা করি।
_কারনটা কি বলা যাবে?
_হ্যা। এই সম্পদের জন্য আম্মা কোন দিন এই বাড়ি ছেড়ে যাননি।
তাই বাবার সাথে শেষ দিকে
তার সম্পর্ক ভাল যায় নি।
কেননা বাবা থাকতেন ছিলেটে আর আম্মা এখানে।
_হুম। কি মনে হয়?
আপনার আম্মাকে কে খুন করতে পারে?
_আজব। আমি সেটা জানব কি করে?
_ধারনা দিতে পারেন তো?
_আসলে দেখুন। আমি এখানে থাকতাম না।
মায়ের সম্পর্ক কার সাথে ভাল ছিল।
আর কার সাথে মন্দ ছিল
সে কথা আমি জানি না।
_আপনাদের বাড়িতে চাকর বাকর কয় জন?
_চার জন।
_তার কত দিন ধরে আছে এখানে?
_আমি যত দুর জানি, দারোয়ান আছেন বছর পচিশের মত।
মালি দুই জন আর রান্নার মহিলা আছে বেশ ১০ বছরের মত।
_ধন্যবাদ আপনাকে বিরক্ত করলাম।
_না। ঠিক আছে।
_______ এবার আমার দিকে তাকিয়ে রিও বললঃচল প্রফেসর। আমাদের যেতে হবে।
আমি উঠে পড়লাম।
বের হয়ে দেখলাম মালিদুই জন আর কাজের মহিলাটার
কথা বলল রিও।
এর পর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে
একটা বাজার গোছের জায়গায়
থামলাম আমরা।
এমন সময় দেখলাম শিস দিতে দিতে
অরন্য এগিয়ে এল।
রিও বললঃকি খবর?
_একদম খাসা ভুতের গল্প শুনেছি স্যার ;বলল অরন্য।
_কেমন ভুত?
_বাঘিনি ভুত স্যার।
_এর মাঝেই রটে গেল?
_না, স্যার। বেশ ছয়মাস হল।
তবে কেউ নিজের চোখে বাঘ দেখেছে বলে মনে হল না।
তবে ডাক শুনেছে এমন
অনেকেই আছে স্যার।
_দারুন। আর কিছু পেলে?
_হ্যা স্যার।
_কি পেলে বল?
_অভিশাপের কথা শুনেছি।
_what?
_yeah sir, কাহিনি হল এই ভিকটিমের বাবাকে নিয়ে ।
_কেমন কাহিনি?
_ভিকটিমের বাবা আর এক চাচা ছিলেন।
দুই ভায়ের মাঝে সম্পর্ক নাকি তেমন ভাল ছিল না।
কারন ছোট ভাইছিল একটু নরম স্বভাবের।
তাই সবার সাথে মিশত।
রাস্তার মজুরেরাও নাকি তার বন্ধু ছিল।
কিন্তু বড় ভাই পুরোই উল্টা ছিল।
দুই ভায়ের বনাবনি হত না।
ছোট ভাই একদিন নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
যদিও অনেকেই বলে ছোট ভাইকে খুন করা হয়েছিল।
কিন্তু খুনের কোন ভিত্তি নেই।
সেই থেকে নাকি এই বাড়ির উপর অভিশাপ আছে।
কেউ বলে বড় ভাই ছোট ভাইকে খুন করেছে।
আবার কেউ বলে ছোট ভাইকে মারার ভয় দেখিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
তবে আবার কেউ কেউ বলেছে, ছোট ভাইকে নাকি
কয়েক বার বরিশাল এ দেখা গেছে প্রায় দশ বছর পর।
তবে এ কথা সত্যি যে, ছোট ভাই কোন দিন ফিরে আসেনি এই বাড়িতে।
সবই ভিত্তি হিন ধারনা স্যার।
_গুড। অরন্য।
carry on. তুমি একদিন সফল গোয়েন্দা হতে পারবে।
চল। এবার বাসায় যাওয়া যাক।
বাসায় ফিরে শুয়ে পড়তে হল।
কারন খোড়া পা নিয়ে আজ
অনেক বেশি পরিশ্রম করা হয়ে গেছে।
ব্যাথায় পা টন টন করছিল।
রিও এসে বললঃইমন কে বেশি দরকার ছিল মামা এখানে।
_কেন অরন্যকে দিয়ে তো ভালই হল কাজ।(আমি)
_ভালই হয়েছে বাট ভাল নয়।
ভালই আর ভাল দুটা আলাদা জিনিস।
তারপর দেখলাম ভাগিনা আমার আনা পেপার গুলো বেশ মনযোগ দিয়ে পড়ে
ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললঃযতসব আজাইরা সাংবাদিক।
_কি হল ভাগিনা?
_দেখেছো। ক্রাইম রিপোর্ট করেছে নাকি ভুতের কাহিনি
লিখেছে?
যতসব ফালতু।
এই বিজ্ঞানের যুগে ভুতে খুন করেছে।
আর অভিশাপ।
আরে আল্লাহ। অভিশাপ থাকতে পারে।
আর তার জন্য মানুষ খুন হতে পারে সেটা অস্বাভাবিক নয়।
তাই বলে খুনি তো খুনি।
তাকে ধরতে হবে।
কিন্তু তাই বলে খুনের সমাধান না করে অভিশাপের ইতিহাস
উদ্ধার করে কি লাভ পাচ্ছে এরা।
_ছেড়ে দাও ভাগিনা গ্রামের মানুষ।
কত কিছুইতো এরা বিশ্বাস করে।
দেখলে না bcs পাওয়া প্রভাশক সাহেবও নাকি বাঘের গর্জন শুনেছেন।
______ রেগে মেগে আগুন হয়ে রিও চিতকার করে বলে উঠলঃসেটা আর পারছি কোথায় মামা?
যখন, যখন দেখছি আমার জন্ম ভুমিতে একটা খুন হয়েছে।
আর সেটা নিয়ে সবাই উপহাস করছে।
ভুত ভুত করে বিনেদন নিচ্ছে।
ইভেন ভিকটিমের বাড়ির একটা লোকও সত্য কথা বলছে না।
বাড়ির চাকর বাকর থেকে শুরু
করে ভিকটিমের ছেলে মেয়ে প্রযন্ত সবাই ডাহা মিথ্যা কথা বললে চলছে।
তখন কাকে ছেড়ে দেব প্রফেসর।
কাকে ছেড়ে দেব।
_মিথ্যা কথা বলছে সবাই মানে কি?
_আরে খুন হয়ে ১১ টাও ওরা বলে ২টাই।
চাকর বলে বাঘ দেখা গেছে
ফুল বাগানের পাশে।
জহির বলে গূদাম ঘরে।
কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে সেটা বুঝিনা।
_তাহলে কেসটা ছেড়ে দেও।
_আমি জিবনে এত বড় বড় রহস্যর সমাধান করলাম।
আর আজ নিজের হোম ডিস্টিকে এসে হাল ছেড়ে দেব?
আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার মত মানুষ নয়।
একবার যখন এসেছি তখন ভুতের গুস্টির পিন্ডি না দিয়ে যাচ্ছি না।
_______ এমন সময় একটা গ্লাস ভাংগার শব্দ হল।
সাথে সাথে আমার ক্রেসটাতে আওয়াজ হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।।
রিও আমাকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে নিচে ফেলে দিয়ে নিজে সটাং ফ্লোরে শুয়ে পড়ে বললঃ বুলেট।বেডের নিচ চলে যাও প্রফেসর। আমি না বলা প্রযন্ত বের হবে না।
আর তোমার পকেটে দেখ
মোবাইল আছে।
বাবা কে কল দিয়ে বল আমাদের উপর আক্রমন হয়েছে।
রিও এবার নিজের কোর্টের পকেট থেকে বন্দুক বের করে
আমাদের রুমের বাল্বে গুলি করে সারা ঘর অন্ধ কার করে দিল।
আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল গিয়ে দেখি আমার সামনে পড়ে রয়েছে
একটি বুলেট।
ভয়ে গা শিউরে উঠলঃকারন,আর একটু হলে ভাগিনার লাশ নিয়ে আজ আমার ফিরতে হত।
সাজ্ঞ হত রিও, দ্যা প্রাইভেট ডিটেকটিভের লাইফ স্টোরি।
চলবে……..?
Like My Facebook Fan Page

13 thoughts on "জমিদার বাড়ি রহস্য পর্ব ৫"

  1. Shafiq Jr Author says:
    ei post er sbkicu baka holo kivabe
    1. Alamin200 Author says:
      ইটালি স্টাইল।
  2. Alamin200 Author says:
    আর কয়টা আছে ভাই।
  3. Ovik Tawhid Contributor says:
    Awesome bro…☺☺☺
  4. Md Abdullah Contributor says:
    যত পড়ি তত ভালো লাগে.. তবে আর তস্ সইচে নাহ্! প্লিজ টিউনার তাড়াতাড়ি শেষ করলে ভালো হয়
  5. Nakib abrar Contributor says:
    অচাম.. তাড়াতাড়ি পরের পাঠ গুলো দেন প্লিজ
  6. Mahin Islam Contributor says:
    অনেক সুন্দর,,এতো দেরি করে পর্ব গুলো দিলে ভালো লাগেনা,,,তাড়াতাড়ি বাকি পর্ব গুলো দিন
  7. azizulhaque Contributor says:
    Rana vai please see my post and publish it.
  8. DH SAJIB Author says:
    ei story ke pdf banabo tai taratari post koren
  9. কি পরের পোষ্ট দেন?

Leave a Reply