মানবসভ্যতার বিকাশ মূলত পানিকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বেশিরভাগই নদী অথবা সমুদ্র তীরে গড়ে উঠেছে। আবার এই পানিই গিলে নিয়েছে প্রাচীন অনেক শহর, বন্দর। তার কোনো কোনোটির খোঁজ পেয়েছেন গবেষক, অভিযাত্রীরা। কোনোটি এখনও অজানাই রয়ে গেছে। আজ তোমাদের এমনই কয়েকটি শহরের গল্প শোনাবো।

হেরাক্লিয়নঃ
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ২০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে সাগরের জলে ডুবে থাকা এক শহরের নাম হেরাক্লিয়ন। এটি থনিস নামেও পরিচিত। খৃষ্টপূর্ব ১২শ বছরেরও আগে অর্থাৎ প্রায় ৩২০০ বছর আগে ছিল এ শহরের অস্তিত্ব।তখন এটি পানির নিচে ছিল না। ডাঙাতেই ছিল এ শহর। পরে সমুদ্র এটিকে গ্রাস করে নেয়। সেটি প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা।

২০০১ সালে ফরাসি প্রত্নতাত্বিক ফ্র্যাঙ্ক গুডি ও তার দল শহরটির খোঁজ পান। তারা মূলত ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের একটি রণতরী বা যুদ্ধ জাহাজের খোঁজ করছিলেন। ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ন এই রণতরী থেকে ব্যাটল অফ দ্যা নাইল নামের যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।

সাগর জলে হারিয়ে যাওয়া এ নগরীর কথা অবশ্য অনেক ইতিহাসবিদই লিখে গেছেন। বিশেষ করে গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরাডোটাস, ডাইয়োডোরাস এবং স্ট্রাবোর লেখায় শহরটির উল্লেখ আছে।

হেরোডোটাসের বর্ণনা অনুসারে ট্রয়ের রানী হেলেন তার বন্ধু প্যারিসের সঙ্গে হেরাক্লেয়নে ভ্রমণ করতে এসেছিলেন।

তবে ইতিহাসের সূত্র ধরে শহরটিকে খুঁজে বের করার খুব যে তাগিদ ছিল, এমন নয়। ২০০১ সালে রণতরী খুঁজতে এসে আলেক্সান্দ্রিয়ার কাছে পানির নিচে কিছু গুপ্তধন, ভাস্কর্যের ভাঙ্গা অংশের খোঁজ পান ফরাসি প্রশ্নতাত্ত্বিক দলটি। সে সূত্র ধরে পরে খুঁজে পাওয়া যায় শহরের আরও অনেক নিদর্শন।

প্রথমে সাগরের তলে পলিমাটি চাপা পড়ে থাকা পাথরের বিশাল সব ভাস্কর্যের ধ্বংসাবশেষ পানির উপরিভাগে আনা হয়। তারপর সেগুলো তুলে আনা হয় তীরে।

সাগরতলে পলি ও কাদায় প্রায় ডুবে যাওয়া ভাস্কর্য
প্রথম আবিষ্কারের ১২ বছর পর মানুষের সামনে উন্মোচিত হয় হেরাক্লেয়নের অমুল্য সব নিদর্শন। এসব নির্দশনের মাঝে আছে মিশরীয় দেবী আইসিস, দেবতা হাপি এবং নাম না জানা এক ফারাও এর মূর্তি ।

শত শত বছর ধরে শহরটি পানির নিচে। এ সময়ে সমুদ্রে জমা হয়েছে হাজার হাজার টন পলি, কাদা। আর এ পলি-কাদায় ঢেকে গেছে শহরটির অনেক নির্দশন। কোনো কোনো নিদর্শনের খোঁজ হয়তো কোনোদিনই পাওয়া যাবে না।

কাদার নিচে চাপা পড়ে থাকলেও অনেক মূর্তি মোটামুটি অক্ষত ছিল। পানির নিচ থেকে উদ্ধার করা গেছে ১৬টি বিশাল আকৃতির মূর্তি। এছাড়া আরও পাওয়া গেছে মিশরের অন্যান্য দেব-দেবীর ছোট আকৃতির শত শত মূর্তি। এই মূর্তিগুলো ছিলো আমুন-গেরেব একটি মন্দিরে।আর এ মন্দিরে নীলনদের রাণী হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ক্লিওপেট্রা।

সমুদ্রগর্ভে বিলীন হেরাক্লিয়নের একটি নিদর্শন

এই আমুন-গেরেব মন্দিরের অনেকগুলো শবাধার পাওয়া গেছে, যাদের মাঝে ছিলো বলি দেওয়া বিভিন্ন প্রাণীর মমি করা দেহ। এদেরকে উৎসর্গ করা হয়েছিলো মিশরের সবচাইতে উচ্চ পর্যায়ের দেবতা আমুন-গেরেব এর উদ্দেশ্যে । ধর্মীয় প্রতীক সম্বলিত অনেক অ্যামিউলেট বা অলংকারও পাওয়া যায় যাতে আইসিস, ওসিরিস এবং হোরাসের মতো দেব-দেবীর প্রতিকৃতি দেখা যায়। এসব অ্যামিউলেট শুধুমাত্র ওই এলাকার অধিবাসীদের জন্য নয় বরং সেখানে আসা দর্শনার্থী এবং ব্যাবসায়িদের জন্যেও তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ।

শুধু ধর্মীয় নিদর্শন নয়, হেরাক্লেয়নে পাওয়া গেছে ৬৪ টি জাহাজের ধ্বংসস্তূপ । যে কোনও এক স্থানে এতগুলো জাহাজ পাওয়ার নমুনা এই প্রথম। এ ছাড়াও পাওয়া যায় ৭০০টি নোঙর । প্রাচীন পৃথিবীর অর্থনীতির জন্যেও হেরাক্লিয়ন ছিলো গুরুত্বপূর্ণ । এখানে পাওয়া গেছে স্বর্ণ এবং সীসার মুদ্রা এবং এথেন্স থেকে আসা বাটখারা।

কন্সট্যান্টিনোপল, রোম এবং এথেন্স সহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করার জন্য তখন ভূমধ্যসাগর ব্যবহৃত হতো এবং গবেষকরা ধারণা করছেন সেখানকার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী ছিলো হেরাক্লেয়ন।

আর যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক জলপথের পাশাপাশি এখানে একটি কৃত্রিম খালও কাটা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়।

হেরাক্লেয়নের এই আবিষ্কার অতীতের অনেক রহস্য সমাধানে ভুমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। তার কারণ হলো এখানে পাওয়া গেছে এমন সব নিদর্শন যা খুবই ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত ছিলো । পাওয়া গেছে অক্ষত সব স্লেটের পুঁথি।

এমনি এক স্লেটের টুকরো থেকে এক সময়ে হায়ারোগ্লিফের পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো। হেরাক্লেয়ন থেকেও অনেক রহস্যের সমাধান পাওয়া যাবে বলে গবেষকদের আশা।

সিটি অব লায়নঃ
পানির নিচে সুন্দর সাদা মন্দির। পাশে সারি সারি দালান।সামনে পেছনে বাঁধানো রাস্তা। বর্তমানের অনেক শহরের মতোই এটি। পার্থক্য শুধু এক জায়গায়। অন্যসব শহর পৃথিবীর স্থলভাগে তথা ডাঙাতে হলেও, এ শহরটি রয়েছে পানির নিচে। শহরের নাম সিটি অব লায়ন।

মানুষের তৈরি শহর তাদের সৃষ্টি করা দুর্যোগে হারিয়ে যাওয়ার বড় উদাহরণ সিটি অব লায়ন। শহরটি প্রায় ১৩০০ বছর আগে হান সম্রাটদের আমলে তৈরি হয়েছিল। পাঁচটি বড় পাহাড় শহরটিকে ঘিরে ছিল। এসব পাহাড় লায়ন পাহাড় নামে পরিচিত। আর পাহাড়ের নামেই পরিচিতি পায় শহরটি- সিটি অব লায়ন।

চিনের পূর্বাঞ্চলের ঝিজিয়াং প্রদেশে ছিল এ শহর। প্রায় ৬২ টি ফুটবল মাঠের সমান এ শহর।

#১৯৫৯ সালে চিন সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি কৃত্রিম লেক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তার জন্য পাহাড়ে উপতক্যাগুলো ভরাট করে বাধঁ দেওয়া হয়। তাতে পানির নিচে তালিয়ে যায় পুরো শহর। পানির প্রায় ১৩০ ফুট নিচে অবস্থান করছে এ শহর। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও অক্ষত আছে এটি।

সিটি অফ লায়ন বা লায়ন সিটি বর্তমানে চিনের একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা দেখতে আসে পানির নিচের এই শহরের রহস্যময়তা। শান্ত লেকের জলে ডুবুরির পোশাকে ডুব দিয়ে দেখে আসে শহরের নানা নিদর্শন।

আলেকজান্দ্রিয়ায় ক্লিওপেট্রার প্রাসাদঃ
আলেকজান্দ্রিয়ায় আরও একটি শহর পাওয়া গেছে পানির নিচে। সেটি রাণী ক্লিওপেট্রার প্রাসাদ। মনে করা হয়, আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে ভূমিকম্পে প্রাসাদটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বেশ কিছু নির্দশ পেয়েছেন এখানে। এর মধ্যে আছে দেবি আইসিসিসের একটি মূর্তি।

পোর্ট রয়েলঃ

ক্যারিবিয়ান সাগরের একটি দ্বীপ দেশ জ্যামাইকা। এ দেশটির একটি ব্যস্ত বন্দর ছিল পোট রয়েল। শত শত জাহাজ ভিড়ত এ বন্দরে। এ বন্দর হয়ে নানা পণ্য চলে যেত ক্যারিবিয়ান অন্যান্য রাষ্ট্রে। বন্দরের এক পাশ থেকে জেলেরা নৌকা নিয়ে যেত সমুদ্রে মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে রয়েল পোর্ট ছিল দারুণ এক ব্যস্ত বন্দর।

#১৬৯২ সালে সাড়ে ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে মুহুর্তে বিলীন হয়ে যায় এ বন্দর। ধংস হয়ে যায় সব স্থাপনা মারা যায় বন্দরে বসবাসরত ২ হাজার মানুষ। ধংসস্তুপটি চলে যায় সমুদ্রগর্ভে।

বন্দরের যেটুকু বাকী আছে সেটিকে ইউনেস্কো বিশ্বঐত্যিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সুস্থ সংস্কৃতির, সচ্ছ ব্যবহার।
প্রকাশিত ও প্রচারেঃFuturebd24.Com
Plz Visit Vai…

6 thoughts on "পানির নিচে হারিয়ে যাওয়া কয়েকটি শহরের বিষ্ময়কর রহস্যের ইতিকথা. . !"

  1. Alex?? Contributor says:
    Full copy Post
  2. Abdus Salam Author says:
    Rana vai er mail ta kew den.
    1. AMBITIOUS Contributor says:
      ranapagla@gmail
  3. fakeSakib Contributor says:
    nice post

Leave a Reply