প্রথমে টেকযেডবিডির সাথে থাকার জন্য আন্তরিক শুভকামণা থাকল। সবাই দেখছেন টেকযেডবিডিতে কিছু কেটাগরির পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই নতুন কেটাগরিতে ওয়েবমাস্টার হোম পেইজে আনা হয়েছে। এর কারণ আমাদের এই সাইট একটি শিক্ষ্যনীয় ওয়েবমাস্টার সাইট বানাতে চাচ্ছি। এরই ধারা বাহিকগতায় আজ আমি আপনাদের সাথে ডোমাইন হোস্টিং নিয়ে বিস্তারিত একটা আলোচনা করব এতে আশাকরি এবিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাবেন।

ডোমেইন কি? = > ধরা যাক আমি ওয়েবসাইট তৈরি করলাম। এখন এই ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য ভিজিটরদের একটা ঠিকানা জানতে হবে। আর এই ঠিকানাটাই হচ্ছে ডোমেইন নেম। ডোমেইন নেমই আমার ওয়েবসাইটকে অন্য ওয়েবসাইট থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করবে। তাই ডোমেইন নেম হয় ইউনিক, যা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।

——————————–

হোস্টিং কি? => ধরা যাক আমি কয়েকটা এইচটিএমএল পেজ দিয়ে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করলাম। এখন সেগুলো অনলাইনে রাখতে হবে তে ভিজিটররা সেগুলো যখন খুশি চাইলেই দেখতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই আমি জানিনা তারা কে কখন আমার সাইটে আসবে। সুতরাং আমার ঐ উপরোক্ত পেজগুলো এমন একটা কম্পিউটারে(বা সার্ভারে) রাখতে হবে যেটা ২৪ ঘন্টাই অনলাইনে থাকবে। ২৪ ঘন্টা অনলাইনে রাখার জন্য দরকার হবে ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ, হাই স্পীডের ইন্টারনেট লাইন (কমপক্ষে ১০০ এমবিপিএস। বাংলাদেশের ঠেলাগাড়ি মার্কা ২৫-৩০ কিলোবাইট কোন কাজেই আসবে না), নিরাপত্তা ইত্যাদি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে একটা ওয়েবসাইট চালাতে এত খরচ লাগবে, এত ঝামেলা করা লাগবে? উত্তর হবে “না”। কিছু মানুষ আছে যারা উপরোক্ত কাজগুলো নিজেরাই করে দিবে। অনলাইনে এরাই আপনার- আমার ফাইলগুলো যত্নের সাথে রাখবে। আর যারা এই ফাইলগুলো রাখবে তাদের বলে হোস্ট। আর তারা যে সার্ভিসটা দিচ্ছে সেটাই হচ্ছে হোস্টিং সার্ভিস।

———————————

হোস্টিং এর প্রকারভেদ => হোস্টিং তিনপ্রকারের হয়ে থাকে

১. শেয়ার্ড হোস্টিং

২. ভিপিএস

৩. ডেডিকেটেট সার্ভার

—————–

১. শেয়ার্ড হোস্টিং: => হোস্টিং কোম্পানীগুলো সাধারণত যে হোস্টিং এর অফার করে থাকে তাই হচ্ছে শেয়ার্ড হোস্টিং। আমি এখানে নিজের ইচ্ছেমত কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারব না। হোস্টিং কোম্পানী আমাকে যা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে দেয় তাই আমাকে ব্যবহার করতে হবে। শেয়ার্ড হোস্টিং কি রকম হয় তা একটা উদাহরণ দিলে পরিস্কার হবে।

একটি সিম্পল প্যাকেজের উদাহরণঃ Web Space: 200MB Bandwidth: 1000MB E-mail Accounts: 10 MySQL Database s: 10 FTP Accounts: 5 Addon Domains: 5 Sub-Domains: 5 এবার দেখা যাক কোনটা কি কাজে লাগে।

Web Space: এটা হচ্ছে অনলাইনে আমার স্টোরেজের পরিমাণ। যেমন উপরের উদাহরণে দেয়া আছে ওয়েব স্পেস এর পরিমাণ ২০০ মেগা। এখন এই ২০০ মেগার মাঝেই আমাকে আমার সব ফাইল রাখতে হবে। আমি আমার ইচ্ছামত ফাইল রাখতে ও ডিলেট করতে পারবেন। কিন্তু তার সর্বোচ্চ সীমা হবে ২০০ মেগা।

Bandwidth: ব্যান্ডউইডথ হচ্ছে একমাসে সর্বমোট ডাটা ট্রান্সফারের পরিমাণ। অনেকে ওয়েব স্পেস এর সাথে ব্যান্ডউইডথ কে গুলিয়ে ফেলেন। একটা উদাহরণ দিলেই আশা রাখি বিষয়টা বোঝা সহজ হবে। ধরা যাক আমি আমার সাইটে ১ মেগাবাইটের একটা ফাইল রাখলাম। এতে আমার ওয়েব স্পেস কমল ১ মেগাবাইট। এখন এই ফাইলটি ১০০ জন ব্যবহারকারী যদি একবার করে ডাউনলোড করে তবে আমার তবে আমার ব্যান্ডউইডথ খরচ হবে ১০০*১=১০০ মেগা। ১০০ জন ব্যবহারকারী যদি ২ বার করে ডাউনলোড করে তবে খরচ হবে ১০০*২=২০০ মেগা। সাইটের জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে ব্যান্ডউইডথ নেয়া উচিত।

E-mail Accounts: অনেক সময় এরকম ইমেইল ঠিকানা দেখা যায [email protected] । অর্থাৎ থার্ডপার্টি (ইয়াহু, জিমেইল, হটমেইল) ব্যবহার না করে আপনার নিজস্ব ডোমেইন এর আন্ডারে ইমেইল ঠিকানা। সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করবে এরকম একাউন্ট আমি কয়টা খুলতে পারব। যেমন উপরের উদাহরণ অনুসারে ইমেইল ঠিকানা খোলা যাবে ১০ টি।

MySQL Databases: ডাইনামিক সাইট (যেমন জুমলা, ওয়ার্ডপ্রেস, পানবিবি) তৈরি করার জন্য ডাটাবেজ ব্যবহার হয়। সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করে আমি কয়টি ডাটাবেস ব্যবহার করতে পারব।

FTP Accounts: ব্রাউজার ছাড়াও সাইটের ফাইলগুলো ম্যানেজ করা যায় এফটিপি ক্লায়েন্ট (ফাইলজিলা) এর মাধ্যমে।আমি কয়টি এরকম একাউন্ড খুলতে পারব তা সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করবে।

Sub-Domains: বিভিন্ন সময় আমরা দেখতে পাই একটি ডোমেন এর আন্ডারে অনেকগুলো সাইট। যেমন http://oliur.techzBD.cf ইত্যাদি। এগুলোকে বলে সাব- ডোমেইন। সর্বোচ্চ কয়টি সাবডোমেন ব্যবহার করতে পারব তা হোস্টিং কোম্পানী আমাকে নির্ধারন করে দিবে।

একটা সার্ভারে কয়েকশত থেকে কয়েকহাজার ওয়েবসাইট থাকতে পারে একটা শেয়ার্ড হোস্টিং এ। একগুলো সাইট একসাথে রাখার কারণ হচ্ছে সবগুলো সাইটে একই সময়ে হিট পড়ে না (লোড হয় না) [বাসায় ১০ জনের জন্য একটা বাথরুম ব্যবহারের মত]। তবে কোন সাইটে যদি যদি খুব বেশী পরিমাণ হিট পড়ে তখন শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে আর কাজ হয় না।

———-

ডেডিকেটেড সার্ভারঃ => [উপরের আলোচনার সূত্র ধরে] শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে যখন কাজ হয় না, সাইট স্ট্যাটিক এর বদলে যখন ডায়নামিক হয়, ডেটাবেস ব্যবহার করা হয়, সাইটের ভিজিটর কয়েক হাজার হলেই দরকার হয় নিজস্ব একটা সার্ভার। যা অন্য কেউ শেয়ার করবে না। সব রিসোর্স নিজস্ব। নিজস্ব পিসি যেমন হয়ঃ প্রসেসর কোর টু ডুয়ো, ৪ গিগা মেমোরি, ১ টেরা হার্ডডিস্ক এমনই হয়ে থাকে একটা ডেডিকেটেড সার্ভারের কনফিগ। সাথে থাকে তুখোড় স্পীডের নেট কানেকশন।

উদারহরণ টা দেখুনঃ
Processor————- Xeon Dual E3110 Hard Disk (SATA)– 500 GB Ram——————- 4 GB Bandwidth———— 10 TB IP Addresses———- 5 Uplink Connectivity- 100 Mbit

নিজের পছন্দমত হার্ডওয়ার, নেটওয়ার্ক স্পিড, ব্যান্ডউউডথের উপর নির্ভর করে একটা ডেডিকেটেড সার্ভারের জন্য প্রতি মাসে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার ডলার খরচ হতে পারে। এর পরে আবার অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য সফটওয়ার ইনস্টল, নিয়মিত সেগুলো ম্যানেজমেন্ট করার ব্যাপারও আছে। ম্যানেজেমেন্টের উপর ভিত্তি করে ডেডিকেটেড সার্ভার দুই ধরনের। ১. ম্যানেজড হোস্টিং ২. আন ম্যানেজড হোস্টিং ম্যানেজড হোস্টিঃ হোস্টিং কোম্পানি নিজেই যদি সব অপারেটিং সিস্টেম/সফটওয়্যার ইনস্টল প্লাস দেখাশোনার কাজ করে তবে সেটাকে বলে ম্যানেজড হোস্টিং। তবে এই ম্যানেজ কিন্তু হোস্টিং কোম্পানী বিনা পয়সায় করে দিবে না। ম্যানেজ করার জন্য হোস্টিং কোম্পানীকে ৫০ ডলার থেকে শুরু করে কয়েকশত ডলার পর্যন্ত দিতে হতে পারে। আন-ম্যানেজড হোস্টিং: আর এই সফটওয়্যার ইনস্টল প্লাস দেখাশোনার কাজ যদি নিজেকেই সব করতে হয় তাকে বলা হয় আনম্যানেজড হোস্টিং।

——–

ভিপিএসঃ => [উপরের আলোচনার সূত্র ধরে] খরচের অংক দেখেই বুঝতে পারা যায় যে ডেডিকেটেড সার্ভার সবার জন্য নয়। শেয়ার্ড হোস্টিং যেমন সবচেয়ে নিচু স্তরের তেমনি ডেডিকেটেড সার্ভার সবচেয়ে উচুমানের। এর মাঝামাঝি আছে ভিপিএস। VPS = Virtual Private Server। একটা ফিজিক্যাল সার্ভারকে ভার্চুয়ালাইজেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ভার্চুয়াল কন্টেইনার বা স্লাইস বা নোড তৈরী করা হয়। একেকটা স্লাইস/নোড একেকটা ইন্ডিপেন্ডেট ডেডিকেটেড সার্ভারের মত কাজ করে। এই সব স্লাইসে/ নোড সব ধরনের কাজই করা যাবে, সিস্টেম বুঝবেনা সত্যিকারের ফিজিক্যাল হার্ডওয়্যার নাকি ভার্চুয়াল মেশিন-এ চলছে। এইভাবেই কম্পিউটারে উচ্চগতিসম্পন্ন প্রসেসর এবং জাহাজভর্তি মেমরী এবং ডিস্ক যোগ করে একটা মেশিনেই ১৫-২০ টা ভিপিএস ভাড়া দেয় কোম্পানীগুলো। যারা নিজের পিসিতে ভার্চুয়াল বক্স চালিয়েছেন তারা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন ভিপিএস এর ব্যাপারটা। ধরুন, মূল পিসি হচ্ছে আপনার ডেডিকেটেড সার্ভার। ভার্চুয়াল বক্সের মাধ্যমে ইনস্টল করা বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমগুলো হচ্ছে একেকটা ভিপিএস।

একটা ভিপিএস এর কনফিগঃ Dedicated CPU Power 2.00 Disk Storage, 20 GB Data Transfer 2000, Dedicated Memory 512 MB, Dedicated IP Addresses 2

একটা ভিপিএস এর মাসিক ভাড়া ৫ ডলার থেকে শুরু করে ১০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। মাঝে মাঝে ১ ডলারেও ভিপিএস ভাড়া পাওয়া যায়। লজিক্যালী ভাগ করা হয় কিভাবেঃ ডেডিকেটেড সার্ভারের সব হার্ডওয়্যারের তো আর সমানভাবে ভাগ করা যায় না, তাই আনুপাতিক হারে ভাগে করা হয়। যেমন মূল সার্ভারে মেমোরি(র্যাম) আছে ৪ গিগা। আমি ২ গিগা নিলাম। বাকী ২ জন এক গিগা করে দুই গিগা নিল। যেহেতু আমি মেমোরী বেশী কিনেছি তাই আমি বেশী সময় ধরে সিপিইউ (প্রসেসর) ব্যবহার করতে পারব। হার্ডওয়্যারের এই ভাগাভাগি আবার দুইটি টেকনিকে করা হয়।

প্রথম প্রকাশঃ টেকযেডবিডি

5 thoughts on "ডোমাইন ও হোস্টিং সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা"

  1. shehab Contributor says:
    ভাই আপনার ফোন নাম্বারটা দিবেন প্লিজ
    1. Oliur Rahman Contributor Post Creator says:
      বেশি প্রয়োজন হলে ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারেন
    2. shehab Contributor says:
      ফেইসবুক আইডি লিংকটা দেন
    3. Oliur Rahman Contributor Post Creator says:
  2. jani na Contributor says:
    Valoy bujiausen but porar somoi nai

Leave a Reply