সারা বিশ্বে প্রতি বছর মারা যায় প্রায় পাঁচ কোটি ৫০ লাখ মানুষ, যাদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ থেকে যায় অজানা। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এ কাজের জন্য পাওয়া যায় না ভালো চিকিৎসক। আবার অনেক মৃত্যুর ঘটনা থেকে যায় অনিবন্ধিত। মৃত্যুসনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) দেয়ার সময় আনুমানিক একটি কারণ ধরে নেয়া হয়।
তবে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যালান লোপেজ জানান, একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যথার্থভাবে পরিচালনা করতে দেশটির নাগরিকদের মৃত্যুর কারণ জানা অত্যাবশ্যক। আর এ কারণেই সমস্যাটি সমাধানে লোপেজ এবং তার সহকর্মীরা মিলে তৈরি করেছন একটি অ্যাপস, যা কোনো চিকিৎসকের চেয়েও সঠিকভাবে মৃত্যুর কারণ জানাতে পারে। স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে অ্যাপসটি চালাতে। মৃত্যুসনদও প্রদান করতে পারে এই অ্যাপস।
মৃত্যুর কারণ জানতে মৃতব্যক্তির বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের কাছে তার সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এরপর সেগুলো অ্যাপসটিতে প্রবেশ করানো হয়। তথ্যগুলো একটি কম্পিউটারে আপলোড করার পর তা গাণিতিকি পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এসব কাজ শেষ হলেই মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণগুলোর একটি তালিকা দেবে অ্যাপসটি।
লোপেজ বলেন, ‘আমি মাত্র কয়েকদিন আগে মিয়ানমার থেকে এসেছি। সেখানে প্রতিমাসে গ্রামের ধাত্রীরা শিশুদের মৃত্যুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে মৃত্যুর তথ্য ডাকযোগে পাঠায়। এর পরিবর্তে এখন তারা ট্যাবলেট ব্যবহার করে সঠিক তথ্যটি পাঠাতে পারবে।’
অ্যাপসটি তৈরির জন্য ২০০৫ সালে কাজ শুরু করে লোপেজ এবং তার সহকর্মীরা। আর তাদের এ কাজে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বিল গেটসের মানবহিতৈষী সংগঠন ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। গণিতের অ্যালগরিদম পদ্ধতিতে কাজ করে এই অ্যাপস। এটাকে বলা হয় ‘রোগ নির্ণয়কারী অ্যালগরিদম’। আর এ পদ্ধততিটি তৈরিতে ভারত, মেক্সিকো, তানজানিয়া এবং ফিলিপাইন থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে লোপেজের দল।
দেশগুলোর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে তারা ১২ হাজার ৫০০ রোগের ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন। এরমধ্যে তারা প্রাপ্ত বয়স্কদের মৃত্যুর ৩৪টি কারণ এবং শিশুদের মৃত্যুর ২১টি কারণ শনাক্ত করেন। রোগীদের কাছ প্রাপ্ত তথ্যগুলো নিয়ে তারা প্রশ্নমালা তৈরি করেন। এছাড়া একই কাজে লোপেজের দল ১০০ জন মৃতব্যক্তির পরিবারের সাক্ষাৎকার নেন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অ্যাপসটিকে মৃত্যুর কারণ শনাক্তে সহায়তা করবে।
আশা করা হচ্ছে, ২০১৭ সালের মধ্যে অন্তত ২০টি দেশে পাওয়া যাবে অ্যাপসটি। লোপেজ আশা করেন, এটি বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে।