শহরের একজন ছাত্র যে সুযোগ-সুবিধা
পায়, গ্রামের ছাত্র তা পায় না। তবে
ইন্টারনেট মোটামুটি সব জায়গায়
সহজপ্রাপ্য হয়েছে এবং হচ্ছে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে শহরের সেই
শিক্ষার্থীর পড়াশোনার বিষয়বস্তু
যদি গ্রামের শিক্ষার্থীর কাছে
পৌঁছানো যায়, তবে একই মানের
শিক্ষা পেতে পারে সবাই।
এডুটিউবের শুরুটা সে ভাবনা থেকেই
বলে জানালেন এম এ মুবিন খান। ই-
শিক্ষা বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল
এডুটিউবের চেয়ারম্যান এবং
ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
পোর্টালটির উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ
পরিকল্পনা নিয়ে ২ এপ্রিল রাজধানীর
গুলশানে পোর্টালটি নিয়ে কথা হয়
মুবিন খান ও এডুটিউবের হেড অব
কমার্শিয়াল অপারেশনস শারমিন
মাহজাবিনের সঙ্গে। www.edutubebd.com
ঠিকানার ওয়েব পোর্টালটি চালু
হয়েছে ২৯ মার্চ। ভিডিও, ছবি,
প্রেজেন্টেশন, নোট আর
অ্যানিমেশনে স্কুল–কলেজের পাঠ্য
বিষয়গুলো রয়েছে এতে।
শুরুটা যেভাবে
একদিন এডুটিউবের কথা শুরু করেছিলেন
শারমিন মাহজাবিন। ইউটিউবে যেমন
সব ধরনের ভিডিও থাকে, এডুটিউবে
থাকবে শুধু শিক্ষা-বিষয়ক কনটেন্ট,
যেগুলো হবে ভিডিও, ছবি বা
অ্যানিমেশন। এমন প্রস্তাব থেকে মুবিন
খান আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন। এরপর এক
বছর অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলে,
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়। শিক্ষা-বিষয়ক পোর্টাল
বলেই নামটা এডুটিউব দেওয়া হয়েছে
বলে জানান শারমিন। শিক্ষক-
শিক্ষার্থীদের নিয়ে চমৎকার এক
সামাজিক নেটওয়ার্ক হবে এডুটিউব।
তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ
নেই। মুবিন খান বলেন, ‘আমাদের
বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এক প্যানেল সব
কনটেন্ট পরীক্ষা করে দেখে বিষয়বস্তুর
মান নিয়ন্ত্রণের কাজ করবেন। তবে এই
কাজটি যেন দ্রুততার সঙ্গে করা হয়, সে
দিকেও খেয়াল রাখা হবে।’ ইতিমধ্যে
মাননিয়ন্ত্রণের জন্য বিদেশি এক
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলেও
জানান তিনি।
ওয়েব পোর্টালটি এখন যদিও অনেকটাই
পরিণত, তবে আগামী এক বছর দেশের
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
কাজ করে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা
তাঁদের। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেন
বিরক্ত না হন তাই ওয়েবসাইটটিতে
আপাতত কোনো বিজ্ঞাপন নেওয়া
হচ্ছে না। তবে যেকোনো কিছুর
স্থায়িত্বের জন্য আর্থিক মডেল থাকা
জরুরি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে
মুবিন খান বলেন, ‘এখান থেকে আয়
করার কোনো ইচ্ছা আপাতত আমাদের
নেই। মানুষ যেন উপকৃত হয় সেটাই
আমাদের ইচ্ছা। শুধু ডেস্কটপ না,
ইতিমধ্যে পোর্টালটির মোবাইল
সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। সহজে
ব্যবহার করার জন্য অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ
বানানো হয়েছে।’ শারমিন
মাহজাবিন জানান, খুব শিগগির
আইফোনের জন্য আইওএস অ্যাপও প্রকাশ
করা হবে। মুবিন খান বলেন, ‘প্লেস্টোর
বলেন আর ইউটিউব, ওরা কিন্তু আপনার
কনটেন্ট প্রমোট করবে না। আমরা এই
কাজটি করব।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আগামী এক বছরে ঢাকা শহরের সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে চ্যানেল
খোলার পরিকল্পনা এডুটিউবের। অন্তত
ঢাকার শিক্ষকেরা যেন অ্যাকাউন্ট
খুলে তাঁদের নোটগুলো সবার সঙ্গে
ভাগাভাগি করেন, সে চেষ্টা করা।
তবে আগামী পাঁচ বছরে তিনটি ধাপে
পরিকল্পনা অনুযায়ী এডুটিউব এগিয়ে
মাহজাবিন। প্রথম ধাপের কাজটা
চলছে এখন। দেশের সব স্কুল এডুটিউবের
আওতায় এনে তাদের চ্যানেলে অন্তত
প্রতিবছরের প্রশ্ন হালনাগাদ করার
ইচ্ছাও আছে উদ্যোক্তাদের। দ্বিতীয়
ধাপে বিষয়বস্তু তৈরিতে সহায়ক কিছু
সফটওয়্যার ওয়েব পোর্টালটিতে যোগ
করা হবে। এর মধ্যে কথা থেকে লেখা
(স্পিচ-টু-টেক্সট), স্বয়ংক্রিয় অনুবাদক, এক
ফরম্যাট থেকে অন্য ফরম্যাটে
রূপান্তরের সুবিধা থাকবে। তৃতীয়
ধাপে চেষ্টা করা হবে এমন কোনো
ডিজিটাল যন্ত্র শিক্ষার্থীদের হাতে
তুলে দেওয়ার, যাতে একই সঙ্গে সব
পাঠ্য বিষয়বস্তু থাকবে। শিক্ষার্থীরা
চাইলেই যেন যেকোনো সময়
যেকোনো বিষয়বস্তু দেখতে পারে।
বিশেষ কোনো নেটওয়ার্কে বিশেষ
কোনো ওয়েবসাইট বিনা মূল্যে
ব্যবহারের সুবিধা ইতিমধ্যে পাওয়া
যাচ্ছে।
ব্যবহারের নিয়ম
এডুটিউব ব্যবহার করতে হলে প্রথমে
নিবন্ধন করতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী,
অভিভাবক এবং অন্যান্য—এই চারটি
বিভাগে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ
আছে। এরপর নিজের প্রোফাইল তৈরি
করতে হবে। নিজের পছন্দের বিষয়বস্তু
নিজের প্রোফাইলে মাই লাইব্রেরি
অংশে সাজিয়ে রাখা যাবে।
চাইলে যেকোনো ফরম্যাটে বিষয়বস্তু
আপলোড করা যাবে।