=====================
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর,
তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর এবং
সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম
হতে পার”। [হাজ্জঃ৭৭]
জেনে নিই ইসলামী সংস্কৃতির কয়েকটি এর দিক:
১. কথা-বার্তায় নম্রতা ও ভদ্রতাঃ কথা-
বার্তায় নম্রতা-ভদ্রতা বজায় রাখা ইসলামী
সমাজের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কারণ,মানুষের কথা-বার্তা দ্বারা এ বিষয়টি
নির্ধারণ করা হয় কে ভাল এবং কে মন্দ?তাই
নম্রভাবে কথা বলার ব্যাপারে বলা হয়েছে,
এমন কিছু লোক রযেছে যাদের পার্থিব
জীবনের কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করবে।
[বাকারাঃ২০৪]
আমি তার অনুসারীদের অন্তরে স্থাপন করেছি
নম্রতা ও দয়া। [হাদীদঃ২৭]
২. সালাম আদান-প্রদানঃ এক মুসলমান ভাইয়ের
সাথে অন্য কোন মুসলমান ভাইয়ের সাক্ষাৎ
হলে তাকে সালাম প্রদান এবং মুসাফার মাধ্যমে
সাক্ষাৎ করা হল ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম
প্রধান বৈশিষ্ট্য।এ ব্যাপারে কুরআনে বলা
হয়েছে,
তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে
তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে
উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল।
[নিসঃ৮৪]
রাসুল (সাঃ) বলেন, হে মানবগণ তোমরা
পরস্পরে সালামের প্রচলন কর, গরীব
অসহায়দের খাবার দাও, আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষা
কর, আর মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন জেগে
নামাজ আদায় কর। তবেই তোমরা সহজে ও
নিরাপদে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে।
৩. অহংকার না করাঃ অহংকার করা একটি
মস্তবড় অন্যায়।শয়তান অহংকারের দ্বারা
সীমালঙ্ঘণ করেছিল।তাই মুসলমানের
সাংস্কৃতিক জীবন এমন হবে যে,সে অহংকারকে
বর্জন করে মধ্যমনীতি অবলম্বণ করবে।এ
ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,
পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না।[বনী-
ঈসরাইলঃ৩৭]
অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না
এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না।
নিশ্চয় আল্লাহ্ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে
পছন্দ করেন না [লুকমানঃ১৮]
নিশ্চিতই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।
[নহলঃ২৩]
আল্লাহ বলেন, “ অহংকার হল আমার চাদর।
তোমরা আমার চাদর নিয়ে টানাটানি করবে না।”
৪. দৃষ্টিকে নত করাঃ যিনা-ব্যভিচার বিস্তারের
অন্যতম প্রধান কারণ হল দৃষ্টিকে এদিক-
সেদিক করা।কেউ যদি সত্যিকার্থে ইসলামী
জীবন-যাপন করে তাহলে সে যেদিকে সেদিকে
তার নজরকে নিক্ষেপ করবে না সে সর্বদা তার
নিজের দৃষ্টিকে নত করে চলবে। আল্লাহ পাক
এ ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ করেন,
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত
রাখে [নূরঃ৩০]
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে নত রাখে [নূরঃ৩১]
রাসূল(সাঃ) বলেন,
মানুষের চক্ষুদ্বের যিনা হয় আর তা করে
দৃষ্টিপারে দ্বারা।[বুখারী]
হে আলী একবার দৃষ্টি পড়ে যাবার পর পুনরায়
দৃষ্টি ফেলবে না।প্রথম্বার দেখতে পার।
দ্বীতিয়বার নয়।[আবূ দাউদ]
৫. বৈরাগ্য জীবন-যাপন না করাঃ ইসলামী
সংস্কৃতির এটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে,এই ধর্মে
বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই।ইসলাম
আবির্ভাবের পুর্বে খ্রিষ্টান ধর্মসহ বিভিন্ন
ধর্মে সন্ন্যাসবাদকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে
বিবেচনা করা হত।কিন্তু ইসলাম তা সমূলে
উৎখাত করে দেয়।
আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন
করেছে । [হাদীদঃ২৭]
মুহাম্মদ(সাঃ) ঘোষণা দিলেন, “ ইসলামে কোন
বৈরাগ্যবাদ নেই।”
ইসলাম কেবলমাত্র নির্জনে ইবাদত বন্দেগীর
নাম নয়।ইসলাম এমন এক ধর্ম যেখানে ইবদত
বন্দেগীর পাশাপাশি হালাল রুজির অণ্বেষণের
কথা বলা হয়।আল্লাহ বলেন,
“অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে
ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহ তালাশ
কর” [জুমুয়াঃ১০]
৬. অনর্থ-কথা বার্তা থেকে বিরত থাকা এবং
যাবানের হিফাযত করাঃ মানুষ সবচেয়ে বেশী ভুল
করে তার যবানের দ্বারা।এর দ্বারা সে অপরকে
কষ্ট দেয়।মানুষ যেন এ কাজ থেকে বিরত থাকে
এরজন্য অনর্থক কথা-বার্তা থেকে বিরত
থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আল্লাহ পাক
বলেন,
যারা অনর্থক কথা-বার্তা বলা থাকে বিরত
থাকে। [বনী-ঈসরাইলঃ৩৭]
যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন
মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।
[ফুরকানঃ৭২]
তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ
করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
[কাসাসঃ৫৫]
রাসূল(সাঃ)বলেন,
“ঐ ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান যার মুখ এবং হাত
থেকে অন্য কোন মুসলমান নিরাপদ থাকে।”
“যে ব্যক্তি তার মুখ এবং লজ্জাস্থানের
হিফাযত করবে আমি তার ব্যাপারে জান্নাতের
দায়িত্ব নিচ্ছি।”
৭. পবিত্রতা অর্জন করাঃ ইসলাম
পবিত্রতাময়ী জীবনকে ভালবাসে আর এজন্য
পবিত্রা অর্জন করাকে সংস্কৃতির একটি অংশ
হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে,
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা
থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।
[বাকারাঃ২২২]
আপন পোশাক পবিত্র করুন। [মুদ্দাসসিরঃ৪]
রাসূল(সাঃ) বলেন,
“আল্লাহ পবিত্র ,তাই তিনি পবিত্রতাকে
ভালবাসেন।তাই তোমরা পবিত্র
থাকবে।” [তিরমিযী]
প্রকৃতপক্ষে,পাক-পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহর
কাছে কিছু বিশেষ ইবাদত যেমন নামায,কুরআন
তিলওয়াত গ্রহণযোগ্য হবে না।তাই ইসলাম
পবিত্রতাকে ঈমানের একটি অংগ হিসেবে
ঘোষণা দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের জন্য
উযু,ফরয গোসল,মিসওয়াক ইত্যাদি ব্যাপারে
বিধান দিয়েছে।
৮. নিয়ম মোতাবেক পবিত্রতা অর্জন করাঃ
বাথরুমে যাওয়ার পূর্বে “ আল্লহুম্মা ইন্নী
আউযুবিকা মিনাল খুবসী ওয়াল খাবাইস” পড়ে
বাম পা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।অন্যদিকে
বাথরুম করে ডান পা দিইয়ে বের হতে হয় এবং
এই দুআ পড়তে হয় আল্লাহুম্মা ইন্নী যারনী
মিনান নার”।
বদ্ব পানিতে পায়খানা-পেশাব করা সম্পূর্ণভাবে
নিষিদ্ব।কারণ এই পানিতে কেউ পরবর্তীতে
গোসুল করতে গেলে তার দেহ নাপাক হয়ে যাবে
এবং তার সেই পানির দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের
রোগ সৃষ্টি হতে পারে। মুহাম্মদ(সাঃ) সুস্পষ্ট
ভাষা বলে দিয়েছেন, “ বদ্ব পানিতে তোমরা
পেশাব করে তার ভিতর কেউ গোসল কর না।”
কিবলার প্রতি সম্মান রক্ষার্থে তিনি আরও
বলেছেন, “ তোমরা কেউ পায়খানা করার সময়
কিবলার দিক বা তার বিপরীত দিক হয়ে বস
না।” [দারিমী]
তিনি ইস্তিনজা ডান হাতের পরিবর্তে বাম হাত
দিয়ে ঢিলা কিংবা পানির সাহায্যে ইসতিঞ্জা
করার ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
৯. বড়দের প্রতি সম্মান এবং ছোটদের প্রতি
স্নেহঃ ইসলাম বড়দের প্রতি সম্মান এবং
ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা প্রদর্শনের কথা
বলে।যে বড়দের প্রতি সম্মান এবং ছোটদের
প্রতি স্নেহ করবে না,তার কবীরা গুনাহ হবে
বলে ইসলাম ঘোষণা প্রদান করেছে।তাই রাসূল
(সাঃ) বলেন,
“যে বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং
ছোটদের প্রতি স্নেহ করে না সে আমার
উম্মাতের অন্তর্ভূক্ত নয়।”
১০. পানাহারের বিশেষ নিয়মাবলীঃ ইসলাম
ধর্ম মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যপক পরিবর্তন
আনয়ন করেন।জাহিলিয়াতের যুগে মদ্যপান করা
ছিল একটি অন্যতম প্রধান ভোগ্যবস্তু।
তাছাড়া তারা তারা আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যান্য
দেব-দেবীর নামে বিভিন্ন পশুর যবাই করে তা
তারা ভক্ষণ করত।কিন্তু ইসলামী বিধান তা
একেবারে রহিত করে দেয়।নেশাজাতীয় বস্তুকে
আগেই হারাম ঘোষণা করা হয়। কোন কোন
খাদ্য মুসলিম সমাজের জন্য জায়েয হবে সে
ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, আমি কোন হারাম
খাদ্য পাই না কোন খাওয়াকারীর জন্যে, যা সে
খায়; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা
শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ
করা জন্তু যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে
উৎসর্গ করা হয়”। [আনআমঃ১৪৫]
পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাওয়ার কথা ইসলামে বলা
হয়।তাছাড়া ইসলাম খাদ্য ভক্ষণ করার নিয়ম-
কানূন আরব দেশের সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক
এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল।তাছাড়া মেঝেতে
বসে খাওয়া, শুয়ে না খাওয়া,ডান হাত দিয়ে
খাওয়া,খাবার পূর্বে বিসমিল্লাহীর রহমানির
রাহিম পড়া,লাল দস্তরখানার উপর পানাহার
করা,ধীরে ধীরে আহার করা,পানি করার সময় তিন
নিঃশ্বাসে পান করা এবং আহার ও পান করা
শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা ইত্যাদি সবকিছুই
ইসলামী সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১১. পোশকের অবস্থাঃ মুসলিম নর-নারীর
পোশাক কেমন হবে তার দিক নির্দেশনা
ইসলাম প্রদান করেছে।প্রথমত তার সমগ্র
সতরকে ঢাকতে হবে এমন পোশাক পরিধান
করতে হবে।মহিলাদের মুখ-মুন্ডল ও হাতের
কব্জি ছাড়া প্রত্যেক অংগ-প্রত্যংগ ঢেকে
রাখতে হবে।পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে কাপড়
পরিধান করা সম্পূর্ণরুপ হারাম।এ ব্যাপারে
হাদীসে এসেছে যে,য পুরুষ টাখনুর নীচে কাপড়
পরিধান করবে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহ
অয়াক তার দিকে চোখ তুলে তাকাবেন না। নারী-
পুরুষ যেকারও পোশাক এমন হওয়া যাবে না যার
দ্বারা তার দেহ দেখা যায় অর্থাৎ, তার পোশাক
পাতলা হওয়া যাবে না।তার পোশাক-পরিচ্ছেদ
এমন হওয়া যাবে না যার দ্বারা তার দেহের
আকার-আকৃতি নিরুপন করা যায়।তার
পোশাককে সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে হবে এবং
তা শীত-গ্রীষ্ম সকল ঋতুতে পরিধানের জন্য
প্রযোজ্য হতে হবে।ইসলামী পোশাক-
পরিচ্ছেদ বিদেশী ভাব-ধারা সম্পন্ন হওয়া যাবে
না।রাসূল(সাঃ) এ ব্যাপারে বলেছেন, “ যারা
যেকোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য রক্ষা চলবে তারা
যেন সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত”।
অন্যান্য ধর্মের প্রতীকী পোশাক ইসলাম
ধর্মে জায়েয নেই।মেয়েদের জন্য পুরুষের
পোশাক অন্যদিকে পুরুষের জন্য মেয়েদের
পোশাক সম্পূর্ণরুপে হারাম।পুরুষদের জন্য
রেশমী পোশাক পরিধান করা হারাম।
১২. বিলাসী জীবন বিরোধীঃ পবিত্র কুরআনে
একথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে যে,
“সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত
ছিল”। [বাকারাঃ২১৩]
এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,
মুসলিম জাতির ভিতর কোন ধরনের
বর্ণবৈষম্য থাকা উচিৎ নয়।ধনী-গরীবের
ভেদাভেদের মাধ্যমে কেউ কারও উপর
শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বিলাসবহুল জীবন-
যাপ্ন করতে পারবে না।ইসলামের প্রথম চার
খলীফা সকলের সামনে সেই নজীর স্থাপন করে
গিয়েছেন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সকলের সমান।
তাদের জীবনে বিলাসিকতার ছায়া বিন্দুমাত্র ঠাই
পায় নাই এবং তারা সকলে অত্যন্ত সাধারণভাবে
জীবন-যাপন করত।
১৩. লজ্জাশীলতাঃ ইসলাম ধর্ম যেহেতু
মানবতার ধর্ম তাই ইহা মানবীয় অন্যতম মূল
চারিত্রক গুণাবলী লজ্জাশীলতার প্রতি
বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করে।ইহা ইসলামী
সংস্কৃতি ও সভ্যতার অন্যতম ধারক ও বাহক।
রাসূল(সাঃ)মানুষের ভিতর বেহায়াপনা দূরীকরণে
এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।তিনি
সকলকে পায়খানা-প্রস্রাব অত্যন্ত
গোপনীয়াতার সাথে আদায় করার ব্যাপারে
নির্দেশ দিতেন।তিনি গুপ্তাঙ্গের গোপনীয়াতা
রক্ষা করে তার স্ত্রীদের সংযম করতেন।।
এছাড়া কুরআনে বলা হয়েছে,
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত
রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত
করে।” [নূরঃ৩১]
রাসূল(সাঃ) বলেন,
“লজ্জশীলতা ঈমানের একটি অঙ্গ।”
“লজ্জাশীলতা মানুষের জীবনকে
সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।”
১৪. ঐক্যবদ্ব জীবন-যাপনঃ ইসলাম মানুষকে
পরস্পরের সাথে বিবাদকে বর্জন করে
একতাবদ্বভাবে জীবন-যাপন করার প্রতি
বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করে।এটিও ইসলামী
সংস্কৃতির একটি অন্যতম কল্যাণকর নিদর্শন।
আল্লাহ বলেন,
“তোমরা সকলে আল্লাহর রিযীককে সুদৃঢ়
হস্তে ধারণ কর; পরসপর বিচ্ছিন্ন হয়ো
না।” [ইমরানঃ১০২]
“তোমরা পরসপরে বিবাদে লিপ্ত হইও
না।” [আনফালঃ৪৬]
১৫. হাচি-হাই তোলার নিয়াবলীঃ ইসলাম ধর্ম
এমন এক ধর্ম যেখানে হাচি দেওয়া হাই
তোলার ব্যাপারে কিছু নিয়ম-নীতি দেওয়া
হয়েছে।কেউ হাই দিলে সে হাত দিয়ে মুখ ঢাকবে
এবং লাহাওলাওয়ালা কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ পাঠ
করবেন এবং হাচি দেওয়ার পর কেউ
আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবেন এবং তা শুনে
অন্য ভাই বলবেন ইয়ারহামুকুল্লাহ আর তা শুনে
হাচিদাতা ইয়াদিমুমুল্লাহ বলবে।এতি হল একটি
ইসলামী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য।
১৬. শিষ্টাচারঃ আচার-আচরনে শিষ্টাচার রক্ষা
করে চলা ইসলামী সংস্কৃতির একটি অন্যতম
বৈশিষ্ট্য।কারও ঘরে প্রবেশ করার সময়
যেকোন মুমিন বান্দাকে যথার্থ শিষ্টাচার রক্ষা
করে চলতে হবে।এ ব্যাপারে কুরআনে বলা
হয়েছে,
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত
অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত
আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম
না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে
তোমরা স্মরণ রাখ। যদি তোমরা গৃহে কাউকে
না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত
সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদেরকে
বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে”।
[নূরঃ২৭-২৮]
রাসূল(সাঃ)মায়ের ঘরে প্রবেশ করার জন্য
অনুমতি নিতে বলেছিলেন।তখন এক সাহাবী
(রাঃ)তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে,মায়ের ঘরে
প্রবেশ করতে কেন অনুমতি লাগবে?তখন তিনি
বললেন, “ তুমি চাও কখনও তোমার মাকে
উলংগ হিসেবে দেখতে।” তখন সেই সাহাবী
বললেন, “ না।” তখন রাসূল(সাঃ)তাকে অনুমতি
নিয়ে মায়ের ঘরে প্রবেশ করার কারণ এভাবে
বুঝিয়ে বললেন।
১৭.সৌন্দর্যকে রক্ষা করাঃ ইসলামী
সংস্কৃতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল সকল
কিছুর ব্যাপারে সৌন্দর্য রক্ষা করে চলা।
রাসূল(সাঃ) বলেন, “ আল্লাহ নিজেও সুন্দর এবং
তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন।” তাই পোশাক-
পরিচ্ছেদ,আসবাব-পত্র ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে
সৌন্দর্য রক্ষা করা ইসলামের সংস্কৃতি
হিসেবে একটি অপরিহার্য কর্তব্য।
১৮. জ্ঞানচর্চ্চাঃ আরব সমাজে যে অশ্লীল
কাব্যচর্চার যে বিকাস ঘটেছিল মুহাম্মদ(সাঃ)
এর মাধ্যমে তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়।তিনি
মানুষকে কুরআন-হাদীস ভিত্তিক জ্ঞানচর্চ্চার
প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।
জ্ঞানচর্চ্চার ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “ কবর
থেকে দোলনা পর্যন্ত জ্ঞানার্জন কর।”
“জ্ঞানীদের কালি শহীদদের রক্তের চেয়ে
উত্তম।”
“কেউ যদি ইলেমের একটি অধ্যায় অর্জন করে
তাহলে সে তার উপর আমল করুক বা না করুক
আল্লাহ পাক তার আমলনামায় এক হাজার
রাকাআত নফল ইবাদতের সওয়াব দিবেন।”
১৯. বাদন্যতাঃ ইসলাম ধনী-গরীবের দুরুত্বকে
কমিয়ে আনে।তাই ধনীদেরকে নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে যাকাত,উশর,খারাজ,সাদকাহ ইত্যাদির
মাধ্যমে গরীবদের সাহায্য করতে বলে।এ
ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে,
“এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের
হক ছিল।” [যারিয়াতঃ১৯]
রাসূল(সাঃ)বলেন, “ দানশীল ব্যক্তিআল্লাহর
নিকটবর্তী,জান্নাতের নিকটবর্তী এবং
জাহান্নামের দূরবর্তী।”
২০. ক্ষমাশীলতা,মহানুভতা ও সহানুভূতিশীল
হওয়াঃ ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম মূল ভিত্তি
হল এই যে,তাকে ক্ষমাশীল হতে হবে।কেউ যদি
কারও উপর যুলুম করে তাহলে তার ব্যাপারে
প্রতিশোধ না নিয়ে সে তাকে ক্ষমা করে দিবে।
আল্লাহ বলেন
“সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা
উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে
ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ
বন্ধু”।[হামীম-সিজদাহঃ৩৪]
“ক্ষমা করে দেওয়া তাকওয়ার
নিকটবর্তী।”[বাকারাঃ২২৬]
যেকোন অবস্থায় একে অপরের প্রতি সহনশীল
হবে এই বিষয়টি ইসলামী সংস্কৃতির একটি
অন্যতম মুল বৈশিষ্ট্য।রাসূল(সাঃ)বলেন,
“সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন।আল্লাহর
কাছে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে আপনজনের
প্রতি দয়া করে”।
– collected
6 thoughts on "আসুন ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা করি [সংগৃহীত পোস্ট]"