আসসালামু আলাইকুম
আশা করি আপনারা সকলে অনেক ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করবো। যেটা আপনারা কম খরচে বাসায় বসে নিজেই মাত্র ১-২ ঘন্টার মধ্য তৈরি করে নিতে পারবেন। ট্রিকবিডিতে অনেকদিন ধরেই ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট নিয়ে কোনো পোস্ট হয় না। তাই ভাবলাম আপনাদের জন্য একটা স্বল্প মূল্যর ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট নিয়ে আর্টিকেল লিখি।
আজকে আমি আপনাদের জন্য ময়লা থেকে বিদুৎ উৎপাদন করার পদ্ধতির জন্য একটা ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করবো। আমি চেষ্টা করবো একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রজেক্টটা ভালো মতো বুঝানোর। তাও যদি কোনো যায়গা বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে কমেন্ট করবেন, আমি আবার সেটা বুঝাই দিবো।
১. সোলার প্যানেল : এটা কয়টা লাগবে তার কোনো লিমিটেশন নাই। আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনারা কিনতে পারবেন। তবে এই প্রজেক্ট যেহেতু স্বল্প মূল্যর তাই, আমি এখানে ২ টা সোলার প্যানেল ইউজ করবো। প্রতিটার দাম প্রায় ১৫০ টাকা।
২. একটি খাচা : এই খাচাতে আমরা আবর্জনা পুড়াবো। চেষ্টা করবেন এই খাচা যেন একটু শক্তিশালী হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আগুনে পুড়ে যেতে পারে। একটা খাচার খরচ পড়তে পারে ১০০ থেকে ২০০ টাকা (ছোট গুলো)
৩. তার : বেশি লাগবে না। ২০-৩০ টাকার তার হলেই আরো তার বেচে যাবে।
৪. একটা কাঠ বোর্ড : এটাকে বেস হিসেবে ব্যবহার করবো। এটা একটু বড় সাইজের নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটা অনেকের বাসাতে আগে থেকেই পাবেন। তবে যদি না থাকে তাহলে এখানে কাঠের যায়গা মোটা কাগজ গুলো (প্র্যাকটিকাল খাতার উপরের কভার এর মতো) ব্যবহার করতে পারেন।
৫. ছোট দুইটা কাঠ : এটা খাচাকে একটু উপরে স্ট্যান্ড করতে সাহায্য করবে। এটা আপনারা কাঠ এর যায়গায় স্টিল ও ইউজ করতে পারেন।
৬. একটা এলইডি লাইট : এটা অনেকের কাছে আগে থেকেই থাকে, তবে এটা না থাকলে কিনে নিবেন ২০-৩০ টাকা নিবে।
৭. একটা সুইচ : ৫ বা ১০ টাকা লাগবে।
দেখুন প্রজেক্ট তৈরি করতে আপনারা চাইলে কম বেশি টাকা খরচ করতে পারেন জিনিসপত্র কেনার সময়। আপনি যদি বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে চান তাহলে আপনাকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে সোলার প্যানেল কেনার সময়। আমি আপাতত এই প্রজেক্ট তৈরির সময় জাস্ট ৪৫০ টাকা খরচ করেছি। ২ টা সোলার প্যানেল নিয়েছে ৩৫০ টাকা। এলইডি বাল্ব লাগছে ৩০ টাকা আর একটা সুইচ লাগছে ১০ টাকা।
এই টোটাল ৩৮০ টাকা। বাকি ৭০ টাকার আমি গ্লু গান স্টিক কিনেছিলাম। (গ্লু গান লাগবে প্রজেক্টকে সঠিকভাবে প্রেজেন্ট করার জন্য সাজানোর সময়। এটা আপনারা যে যার নিজের মতো ডিজাইন করবেন। আমি আপনাদের মূল ডায়াগ্রাম নিচে দেখাবো।
এখানে ময়লা ও আবর্জনা বলতে সে সমস্ত জিনিস বুঝানো হচ্ছে যেগুলো আগুনে পুড়তে পারে এমন আবর্জনা। যেমন অব্যবহৃত কাগজ, গাছের শুকনা পাতা, কাঠ, শুকনা শাক-সবজি, টিস্যু, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি।
এবার আমরা মেইন কাজে চলে যাবো। এর জন্য প্রথমে সব জিনিস গুলো নিজের কাছে নিয়ে নিবেন। আমি নিচে আপনাদের কাছে কোন জিনিস গুলো কিভাবে এড করবেন, নিচে তার একটা ডায়াগ্রাম দিয়ে দিলাম।
এবার আসি কিভাবে কি করেছি তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাতে। নিচে তা দেওয়া হলো।
১. প্রথমে দুটি সোলার প্যানেলের পজিটিভ এবং নেগেটিভ একসাথে এড করবো। অর্থাৎ পজিটিভ দুটি তার একসাথে ও নেগেটিভ দুটি তার একসাথে এড করবেন।
২. সোলার প্যানেল থেকে যে পজিটিভ এবং নেগেটিভ তার পেলাম সেটাকে আমাদের লাইট কিংবা ফ্যান এর সাথে এড করতে হবে। তবে যেহেতু এটাতে খুব বেশি আমরা শক্তি পাবো না তাই আমরা এখানে লাইট ব্যবহার করবো।
৩. এর জন্য লাইটের পজিটিভ তার এবং সোলার প্যানলের পজিটিভ তার যুক্ত করবো। এবং সোলার প্যানেল এবং লাইটের নেগেটিভ তার সুইচের মাধ্যমে একসাথে যুক্ত করবো। নিচের ছবি দেখলে বুঝবেন।
৪. এবার খাচা টা স্ট্যান্ড দিয়ে একটু উপর পর্যন্ত দাড় করাবেন। নিচে ছবি দিলাম। (এখানে দেখুন খাচা আমি হাল্কা উপরে রেখেছি, এবং সোলার প্যানেল কোন পজিশনে রেখেছি।)
৫. এবার সোলার প্যানেল গুলো স্ট্যান্ডের সাহায্য খাচা থেকে ৫-৬ সেমি দূরে, দুইটা দাড় করাই দিবেন। এমন ভাবে দাড় করাবেন যেন আগুনের হিট টা সোলার প্যানেল অভযার্ভ করতে পারে। (উপরের পিকে দেখুন)
৬. এরপর বাকি প্রজেক্টটা নিজের মতো করে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে পারেন মন মতো। আমি আপনাদের দেখানোর জন্য যাস্ট একটু মোডিফাই করেছি। (নিচে পিক দিলাম, পিক উপর দিক থেকে তোলা।)
৭. এবার খাচায় কিছু ময়লা আবর্জনা (যেগুলো পুড়ানো যায়) দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিবেন। যত বেশি আগুনের তাপ হবে, তত বেশি পাওয়ার সাপ্লাই হবে।
বিদ্র: আগুন ব্যবহারে সতর্ক থাকবেন। বাসায় আগুন না ধরিয়ে খোলা স্থানে সতর্কতা অবলম্বন করবেন অবশ্যই।
আমরা যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো তার সেটা আমাদের ইন্সট্যান্ট খরচ করতে হবে যদি আমরা এই প্রজেক্ট উপরের নিয়মে বানাই। অর্থাৎ এই বিদ্যুৎ কোথাও স্টোরেজ থাকবে না। তবে আপনারা চাইলেই এই বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তবে আমার কাছে সময় না থাকায় আমি এড করিনি। তবে এটা করার জন্য আমি নিচে ডায়াগ্রাম করে বুঝাই দিচ্ছি।
এখানে আমরা একটা ব্যাটারি ব্যবহার করে সেই ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রাখবো। এই ব্যাটারি কিভাবে সংযোগ দিবেন তা উপরের ডায়াগ্রাম দেখেই আশা করছি বুঝে গেছেন।
মূলত সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া পজিটিভ এবং নেগেটিভ তারকে ব্যাটারির পজিটিভ এর সাথে সোলার প্যানেলের পজিটিভ তার ও নেগেটিভ তারের সাথে নেগেটিভ তার এড করে দিবেন। এর ফলে সোলারের থেকে পাওয়া পাওয়ার টা আপনাদের ব্যাটারিতে সংরক্ষণ হবে।
এই প্রজেক্ট থেকে ব্যাক আপ কতটুকু পাবেন সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন ব্যাটারিতে কতটুকু বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করতে পেরেছেন এবং সেটা কোন খাতে ব্যয় করছেন। যদি লাইট এ ব্যয় করেন তাহলে একটু বেশি ব্যাক আপ পাবেন। যদি ফ্যান বা মটরে ট্রাই করেন তবে স্বভাবতই কম পাবেন ব্যাক আপ। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে, আপনার উপর। আমি যে লাইট টা জ্বালাতে পেরেছি এই প্রজেক্ট তৈরির মাধ্যমে, তার একটা পিক দিলাম। আলো বেশ ভালোই দিবে, ব্যাটারি ফুল চার্জ করতে পারলে।
আপনারা জানেন আমাদের জন্য সবথেকে ক্ষতিকর গ্যাস হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। আবর্জনা পুড়ানোর সময় এই গ্যাস উৎপন্ন হবেই তা রোধ করার আপাতত কোনো সিস্টেম নেই। তবে আমি একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতেছি যে কিভাবে এই কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ কমানো যায় এই প্রজেক্ট করার সময়। যদি আমি এই প্রজেক্ট এ সাক্সেস হই তাহলে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
তবে বর্তমানে কয়েকটা উপায় ফলো করে কিছুটা কার্বন ডাই অক্সাইড রোধ করা যেতে পারে। যেমন:
১. এমন পদার্থ না পোড়ানো যেটাতে বেশি ক্ষতিকর গ্যাস থাকবে।
২. একসাথে বেশি বেশি করে না পুড়িয়ে কিছুটা সময় নিয়ে কাজ করে ব্যাটারিতে পাওয়ার সংরক্ষণ করা।
৩. বেশি বেশি গাছ লাগানো।
ইত্যাদি উপায়ে আমরা কিছুটা এই গ্যাসের পরিমাণ কমাতে পারবো। তবে আমি যে প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতেছি তা সফল হলে ইনশাআল্লাহ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার দিবো।
তো এই ছিলো আজকের পোস্ট। অনেকদিন ট্রিকবিডিতে কোনো ইলেক্ট্রিক ক্যাটাগরিতে কোনো পোস্ট না হওয়াতে আপনাদের জন্য কম বাজেটে একটি ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট নিয়ে আসলাম। আপনারা যদি কোনো সাইন্স ফেস্ট এ অংশ নিতে চান এবং কম বাজেট এ কিছু বানাতে চান তাহলে এটা একটা ভালো অপশন হতে পারে। আশা করবো আপনাদের ভালো লাগবে। যদি কোথাও বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি রিপ্লেতে সেগুলোর রিপ্লে দিবো অবশ্যই। আজকে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
You must be logged in to post a comment.
Good post
😂😂 moyla theke ki, jekono alo thekei to hobe
যে কোনো আলো থেকে সম্ভব নয়। যখন সূর্যের আলোর ফোটন কণা সোলার প্যানেলের উপর পড়ে তখন সেটা বিদ্যুৎ এ রুপান্তর হয়। অর্থাৎ এতে তাপের প্রভাব নেই। যখন আমরা আগুন জ্বালাই তখন সেখান থেকেও ফোটন কণা নির্গত হয় (যদিও তা সূর্যের তুলনায় অনেক কম) । এই ফোটন কণা ব্যবহার করেই সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখাইছি আমি। যত বেশি আগুণ জ্বলবে ততবেশি ফোটন কণা উৎপন্ন হবে, তত বেশি বিদ্যুৎ জেনেরেট হবে।
এখন কথা হলো এখানে তাহলে ময়লা আবর্জনা কেন আনলাম। এখন আপনি তো আপনার কাজের জিনিসপত্র আর পুড়িয়ে ফেলবেন না। পুড়াবেন তো সেই ময়লা আবর্জনা কিংবা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই। তাই এখানে এটা ব্যবহার করছি। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
এবার বলি যেকোনো আলোর কথা। যেকোনো আলো থেকে এটা সম্ভব বা। এটা নির্ভর করবে ফোটন ঘনত্ব, আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও তীব্রতা এর উপর। যদি কোনো আলোর এই ৩ টা বেশি থাকে তাহলে সেটা থেকে সম্ভব কিন্তু সব আলোতে এই ৩ টা পাবেন না।
Kintu vai apnar post overrated hoise🤮