Assalamualikumসবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

আজকে আমি আপনাদের মাঝে কোরআনে আলো এ পর্বে যমযম কূপ ও কাবা ঘর নির্মাণের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চলে আসলাম ।

যমযম কূপ ও কাবা ঘর নির্মাণের ঘটনা

হযরত  ইবনে  আব্বাস (রাঃ) বলেন,নবী  করীম (ছাঃ)  বলেছেন,‘ইসমাঈলের মাকে আল্লাহ রহম করুন! যদি তিনি বাঁধ না দিয়ে বা কোষে ভরে পানি মশকে জমা না করে যমযমকে ঐভাবে ছেড়ে দিতেন,তবে উহা একটি কূপ না হয়ে প্রবাহমান ঝর্ণায় পরিণত হ’ত’। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি পান করলেন এবং তার পুত্রকে দুধ পান করালেন।

ফেরেশতা তাকে (হাযেরা) বললেন,‘আপনি ধ্বংসের ভয় করবেন না। কারণ এখানে রয়েছে  আল্লাহর ঘর। এ শিশুটি এবং তার পিতা দু’জনে মিলে এখানে ঘর নির্মাণ করবে এবং আল্লাহ তাঁর  আপনজনকে ধ্বংস করবেন না’। ঐ সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি যমীন থেকে টিলার মত উঁচু  ছিল। বন্যা আসার ফলে তার ডানে বামে ভেঙ্গে যাচিছল। এরপর হাযেরা এভাবেই এখানে দিন যাপন করতে থাকেন।

অতঃপর এক সময় ‘জুরহুম’ গোত্রের একদল লোক তাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিল অথবা রাবী বলেন ‘জুরহুম’ পরিবারের কিছু লোক ‘কাদা’ নামক উঁচু ভূমির পথ ধরে এদিকে আসছিল। তারা মক্কার নীচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং একঝাঁক পাখিকে চক্রাকারে উড়তে দেখতে পেল । তখন তারা বলল,নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ হয়ে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোন পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দু’জন লোক সেখানে পাঠালো। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে সকলকে পানির সংবাদ দিল। সংবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হ’ল। রাবী বলেন, ইসমাঈল (আঃ)-এর মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাঁকে বলল,আমরা আপনার  নিকটবর্তী স্থানে বসবাস  করতে  চাই।  আপনি  আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি? তিনি জবাব দিলেন,হ্যা। তবে,এ পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা হ্যা বলে তাদের মত প্রকাশ করল।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,এ ঘটনা হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর মাকে মানুষের সাহচর্যে থাকার সুযোগ করে দিল। অতঃপর তারা সেখানে বসতি  স্থাপন  করল  এবং  তাদের  পরিবার-পরিজনের  নিকটও  সংবাদ পাঠাল। তারপর  তারাও  এসে  তাদের  সাথে  বসবাস  করতে  লাগল। অবশেষে সেখানে তাদেরও কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হ’ল। আর ইসমাঈল (আঃ)ও যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের কাছ থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পদার্পণ   করে তিনি তাদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। অতঃপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন,তখন তারা তাদেরই একটি মেয়ের সাথে ইসমাঈল (আঃ)-এর বিবাহ দিলেন।ইতিমধ্যে হাযেরা মারা গেলেন।ইসমাঈলের বিবাহের পর ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু তিনি ইসমাঈল (আঃ)-কে পেলেন না।তিনি ইসমাঈল(আঃ)-এর স্ত্রীর নিকট তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলেন। পুত্রবধূ বলল, ‘তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। অতঃপর তিনি তাদের জীবিকা ও অবস্থা জানতে চাইলেন। তখন ইসমাঈলের স্ত্রী দুর্দশার অভিযোগ করে বলল,আমরা অতি দূরবস্থায়, অতি টানাটানি ও খুব কষ্টে আছি’। এ কথা শুনে ইবরাহীম (আঃ) বললেন,‘তোমার স্বামী বাড়ী আসলে আমার সালাম দিয়ে তার ঘরের চৌকাঠ বদলিয়ে নিতে বলবে’।

এরপর যখন হযরত ইসমাঈল(আঃ) বাড়ী আসলেন,তখন যেন তিনি কিছু আঁচ করতে পারলেন। তিনি বললেন, তোমার নিকট কোন ব্যক্তি এসেছিল কি?স্ত্রী বলল,হ্যা। আমাদের নিকট এরূপ একজন বৃদ্ধ এসেছিলেন এবং আমাকে আপনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি তাকে আপনার খবর দেই। তিনি আমাদের জীবন-জীবিকা কিভাবে চলছে তা জিজ্ঞেস করেন। তখন আমি তাকে বলি,আমরা খুব কষ্টে ও অভাবে আছি। ইসমাঈল (আঃ) বললেন, তিনি কি তোমাকে কোন বিষয়ের অছিয়ত করেছেন? তিনি বললেন,হ্যা। তিনি তার সালাম আপনাকে দেয়ার নিদের্শ প্রদান করেছেন এবং বলেছেন,তোমার দরজার চৌকাঠ পরিবতর্ন করে নিও। ইসমাঈল  (আঃ)  বললেন,‘উনি  আমার  পিতা। তিনি  আমাকে তোমাকে      পৃথক   করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।তুমি তোমার আপনজনদের কাছে চলে যাও’। অতঃপর তিনি তাকে তালাক দিয়ে অপর একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন।

অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) এদের থেকে আল্লাহ যতদিন চাইলেন ততদিন দূরে থাকলেন। অতঃপর তিনি আবার তাদের দেখতে আসলেন। এবারেও তিনি পুত্রকে দেখতে পেলেন না। পুত্রবধূকে তার পুত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তর দিলেন,তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) বললেন,তোমরা কেমন আছ? অতঃপর তিনি তাদের জীবন যাপন ও অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তিনি বললেন,আমরা ভাল ও সচছল আছি এবং তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। ইবরাহীম (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন,‘তোমাদের প্রধান খাদ্য কি? সে বলল,গোশত। তিনি আবার বললেন,‘তোমাদের পানীয় কি?সে বলল,পানি।ইবরাহীম (আঃ) দো‘আ করলেন,‘হে আল্লাহ্‌! তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দিন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,তাদের জন্য তখন শস্য ছিল না। যদি থাকত তাহলে তিনি তাতে বরকত দানের জন্য দো‘আ করতেন। রাবী বলেন,মক্কা ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ শুধু পানি ও গোশত দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারে না। কেননা শুধু গোশত ও পানি জীবন যাপনের অনুকলূ হ’তে পারে না।

ইবরাহীম (আঃ) বললেন,‘তোমার স্বামী ঘরে ফিরে আসলে আমার সালাম দিয়ে তার ঘরের চৌকাঠ ঠিক রাখার কথা বলবে’। অতঃপর ইসমাঈল (আঃ) বাড়ী এসে বললেন, তোমাদের  নিকট কেউ এসেছিলেন কি?স্ত্রী বলল,হ্যা। একজন সুন্দর চেহারার বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং সে তাঁর প্রশংসা করল,তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। অতঃপর তিনি আমার নিকট আমাদের জীবন যাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাঁ কে জানিয়েছি যে,আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল (আঃ) বললেন, তিনি কি তোমাকে কোন বিষয়ের অছিয়ত করে গেছেন? সে বলল,হ্যা। তিনি আপনার প্রতি সালাম  জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,আপনি যেন আপনার ঘরের চৌকাঠ ঠিক রাখেন।  ইসমাঈল (আঃ) বললেন,ইনি আমার পিতা,আর তুমিআমার ঘরের চৌকাঠ। তিনি আমাকে  তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখার নিদের্শ দিয়েছেন।

আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইবরাহীম (আঃ) বহুদিন পর এসে দেখেন তার পুত্র যমযম কূপের নিকটে  একটি বড় গাছের নীচে বসে তীর মেরামত করছেন। পিতাকে দেখে তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর পিতা ছেলের সাথে বা ছেলে পিতার সাথে সাক্ষাৎ হ’লে যেমন করে থাকে তাঁরা উভয়ে তাই করলেন। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) বললেন,‘হে ইসমাঈল! আল্লাহ আমাকে একটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল (আঃ) বললেন,আপনার প্রভু আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করুন। তিনি বললেন, তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে? ইসমাঈল বললেন,আমি আপনাকে  সাহায্য  করব।  ইবরাহীম  (আঃ)  বললেন,আল্লাহ  এখানে  আমাকে একটি ঘর নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। একথা বলে তিনি উঁচু  টিলাটির দিকে ইঙ্গিত করলেন যে,  এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে। তখনি বাপ-বেটা কা‘বাঘরের দেয়াল তুলতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল (আঃ) পাথর আনতেন,আর ইবরাহীম (আঃ) নির্মাণ করতেন। পরিশেষে যখন দেওয়াল উঁচু হয়ে গেল,তখন ইসমাঈল (আঃ) (মাকবামে ইবরাহীম নামক) পাথরটি আনলেন এবং যথাস্থানে রাখলেন। ইবরাহীম (আঃ) তার উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর ইসমাঈল (আঃ) তাকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তারা উভয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ করলেন যে,‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ কাজ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাত’ (বাকবারাহ ১২৭)। তাঁরা উভয়ে আবার কা‘বাঘর তৈরি করতে থাকেন এবং কা‘বাঘরের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে এ দো‘আ করতে থাকেন,‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের পক্ষ থেকে কবলুকরুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন’

(বাকবারাহ ১২৭; ছহীহ বুখারী হা/৩৩৬৪ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, অনুচেছদ-৯)

আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি সকলের ভালো লেগেছ। অসাধারণ একটি ইসলামিক কাহিনী।

আমাদের ফেসবুক group এ জয়েন হতে পারেন এখানে প্রতিদিন ইসলামিক সম্পর্কে পোষ্ট করা হয় কোরআনের আলো

??পোষ্টি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। এবং লাইক দিবেন ??

Leave a Reply