আগেই বলে রাখি আলোচনাটা অনেক ডিপ হবে । মানে, অনেক কিছু থাকবে । আশা করি হাতে সময় নিয়ে পড়বেন । সময় না থাকলে সেভ করে রাখেন পরে সময় বের করে পড়বেন । ঠিক আছে? চলুন এবার শুরু করা যাকঃ
আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কেন “ফ্রিল্যান্সিং কেন করবেন? বা করছেন?” তাহলে আপনার উত্তর কি হবে?
এখানে আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে তাহলে আমি আমার মত করেন উত্তর দেই । আমার উত্তর গুলো এই ভাবে প্রদান করি ।
- নিজের স্বাধীনতায় কাজ করা যায় ।
- নিজের পছন্দ মতো কাজ করা যায় ।
- নিজের দেশে এবং বিদেশে দক্ষ জনবলের অনেক চাহিদা রয়েছে ।
- অনেক ভালো আয় করা যেতে পারে ।
- নিজের পারিশ্রমিক নিজেই নির্ধারন করতে পারবেন ।
- কোনও নির্দিষ্ট ডিগ্রি বা অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হয় না ।
- পার্ট টাইম অথবা ফুল টাইম দুই ভাবেই কাজ করতে পারবেন ।
- নিজেই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কোম্পানি বা এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা যায় ।
আপনি হয়তো জেনে গেছেন ফ্রিল্যান্সার কে?
যারা জানেন না তাদের জন্য একটু বলি, ফ্রিল্যান্সার হলো একজন ব্যক্তি যে তার সার্ভিস প্রদান করে থাকেন । জ্ঞান এবং দক্ষতার জন্য পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। জেনারেলী, একজন ফ্রিলান্সার স্বাধীনভাবে কাজ করেন । আচ্ছা এখন চলেন আলোচনা করি আপনি কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন?
আপনি কি ফ্রিলান্সার হতে চান?
অনেকেই মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং মানে একপ্রকার জব কিন্তু আসলে তা না। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মুক্তভাবে জবের একটি মাধ্যম। ইচ্ছা হলে কাজ করবো, ইচ্ছা না হলে করবোনা, বিষয়টা অনেকটাই এরকম। মনে করুন, আপনি গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ খুব ভালো করেন। কিন্তু আপনি চাচ্ছেন না কোনো একটি কোম্পানীতে ধরাবাঁধা সময়ের জব করতে। তাহলে আপনি বেছে নিতে পারেন মুক্তভাবে কাজ করার মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং। তেমনি একজন ফটোগ্রাফার অধিকাংশ সময়েই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তার যখন ভালো লাগে এবং ভালো সুযোগ পান তখন তিনি কাজ করতে যান। আবার একজন গায়ক চাইলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারেন। কারন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। ভালো লাগলে গান গেতে যান, ভালো না লাগলে যান না। ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে মজার বিষয়ই এটা যে আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছা মতো সময়ে কাজ করতে পারেন, কাজের প্রেশার বেশি হলে কাজ না করেও থাকতে পারেন। আশা করি কনসেপ্ট ক্লিয়ার 😉
এখন আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, আচ্ছা ভাই এই ফ্রিল্যান্সিং আসলে কাদের জন্য? বা এই জাতীয় প্রশ্ন করে তাহলে আমার উত্তর হবেঃ
ফ্রিল্যান্সিং কাদের জন্য?
- যাদের গতানুগতিক ৯ টা – ৫ টা অফিস করতে ভালো লাগেনা।
- যাদের সরকারি-বেসরকারি বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জব ভালো লাগে না।
- যারা নিজের স্কিল সম্পূর্ণ নিজের মতো করে ব্যবহার করতে চায়।
- যাদের ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষা সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে এবং তা নিয়মিত ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।
- যারা বিদেশী ক্লায়েন্ট বা বিদেশীদের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।
- যারা নিজের বাসায় বসে, নিজের সময়মতো কাজ করতে ইচ্ছুক।
- যারা পড়াশুনা এবং জবের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য কিছু করতে ইচ্ছুক।
- যাদের সারাজীবন সৎ পথে অতিবাহিত করার ইচ্ছা এবং মানষিকতা আছে।
- যাদের প্রতিনিয়ত নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে।
- যাদের নতুন নতুন বিষয় প্রতিনিয়ত শেখার ইচ্ছা আছে।
- যাদের অসম্ভব ধৈর্য আছে এবং ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত লেগে থাকার প্রবণতা আছে।
উত্তরটা নিজের মত দেওয়া । আপনি চাইলে উত্তর আপনার ইচ্ছা মত দিতে পারেন । যাইহোক এখন আলোচনা করবো “ফ্রিল্যান্সার হওয়ার আগে যা জানা গুরুত্বপূর্ণ” । হ্যাঁ, এটা জানা অবশ্যই আপনার জানা দরকার ।
আগে নিজেকে জানুন। আপনার কি ভালো লাগে, ভালো লাগার মাত্রা কতটুকু।
- আপনি কি বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক? যদি জেনে না থাকেন, তাহলে বিশেষজ্ঞ এবং এই সেক্টরে কাজ করছে এমন কারো পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- আপনার ধৈর্যের সীমা জানুন।
- আপনি কি ফলাফল প্রাপ্তি পর্যন্ত ধৈর্য ধারন করতে পারবেন?
- আপনি কি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা কাজ শেখার পিছনে ব্যয় করতে পারবেন?
- আপনার কি নতুন নতুন বিষয় শেখার প্রতি আগ্রহ আছে?
- আপনি কি অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ এবং কাজ করা, এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত?
ভালো ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য যে সকল বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজনঃ
- নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করাঃ নিজেকে একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই আপনাকে কাজ শেখা এবং করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। সে সময়সূচী এমনভাবে মানতে হবে যেনো অন্য কোনো কিছু আপনাকে বায়াসড করতে না পারে।
- কঠোর পরিশ্রম করার মানষিকতাঃ ফ্রিল্যান্সিং জগতে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কাজ শেখা থেকে শুরু করা কাজ করা, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সব পর্যায়েই আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাই সেভাবেই নিজেকে তৈরি করুন।
- শেষ পর্যন্ত লেগে থাকাঃ ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে আপনি কখনোই বলতে পারবেন না সাফল্য কখন ধরা দিবে। তাই কাজ পাওয়ার জন্য আপনাকে ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করা এবং শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে হবে।
- কম্পিউটার এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতাঃ অবশ্যই আপনাকে বেসিক কম্পিউটার জানতে হবে এবং বিদেশী ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার জন্য ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের জন্য সাবলিল হতে হবে।
- অর্থ নাকি দক্ষতা উন্নয়নঃ শুরু থেকেই অর্থের পিছনে না ছুটে নিজের দক্ষতা উন্নয়নে মনোনিবেশ করা উচিত। দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে অর্থই আপনার পিছনে ছুটবে। তাই ধৈর্য ধরুন।
- প্রোফাইল তৈরি করাঃ একজন ভালো মানের ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে একটি ভালো প্রোফাইল তৈরি করা। কারন আপনি ক্লায়েন্ট এর কাছে পৌঁছাতে পারবেন না কিন্তু আপনার প্রোফাইলটিই আপনার হয়ে কাজ করবে। তাই প্রোফাইল এর মান বৃদ্ধির প্রতি মনোনিবেশ করুন।
- ব্রান্ডিং করুনঃ আমেরিকার একজন ক্লায়েন্ট কিন্তু আপনাকে চিনে না বা জানে না। তাকে চেনানো এবং জানানোর জন্যই আপনার নিজের ব্র্যান্ডিং করতে হবে। বিভিন্ন স্যোশাল সাইটগুলোতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করুন, নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরুন।
যাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং নয় 😉
- যারা শর্টকাটে সাফল্য পেতে চায়।
- যারা অল্প কাজ শিখেই আয় করতে চান।
- যাদের নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগ নেই।
- যারা মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং মানেই ঘরে বসেই মাস শেষে ৫০/৬০ হাজার টাকা আয় করা।
- যারা মনে করেন ৩/৪ মাসের একটি কোর্স করলেই মেন্টর সব শিখিয়ে দিবেন এবং পরবর্তীতে আর কিছু শেখা লাগবে না।
- যারা ভাবেন, “কিছুদিন দেখি, পরে শিখে নিবো নে”।
- যারা নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট পরিমান সময় দিতে পারবেন না।
- যাদের পরিশ্রম করার মানষিকতা এবং সামর্থ্য নেই।
- যারা অল্প পরিশ্রমে বেশী আয় করতে চান। (নাসের আহমেদ লিমন ভাই)
যদি কিছু জানার থাকে কমেন্ট বক্সে লিখুন । আশা করি উত্তর পাবেন ।
আবার পরবর্তিতে লিখব সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন, ঘরে থাকুন । নিরাপদে থাকুন, পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকুন, ২০সেকেন্ড ধরে হাত ধৌত করেন, মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন । মাস্ক ব্যবহার করেন । কারো সাথে মিশবেন না । সব নিয়ম কানুন মেনে চলুন ।
আতঙ্কিত হবেন না । সর্তক থাকুন । আল্লাহ্ হাফেজ ।
লেখাঃ এম এইচ মামুন ।
প্রথম প্রকাশিতঃ Mamuns Blog এ
9 thoughts on "কিভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং একদম ব্যাসিক থেকে প্রোফেশনাল পর্ব ০৬"