আসসালামুআলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন।
অনেক অমুসলিমের মুখে শুনে থাকবেন যে ইসলামে উটের মুত্র পান করা বৈধ রয়েছে এবং অনেকে পান করে। আসুন আজ আমরা হাদীসের মাধ্যমে এ সর্ম্পকে ব্যাখ্যা করবো। ধৈর্য্যসহকারে প্রত্যেকটি লাইন না পড়লে আপনার বুঝতে ভুল হতে পারে তাই প্রত্যেকটি লাইন ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
হাদীসটি জেনে নেইঃ-
আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ….. আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আটজনের একটি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলামের উপর বাই’আত করল। অতঃপর মাদীনার আবহাওয়া তাদের প্রতিকূল হওয়ায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে গমন করে উটের মূত্র এবং দুগ্ধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী- হ্যাঁ। এরপর তারা বের হয়ে গেলে এবং এর (উটের) মূত্র ও দুগ্ধ পান করল। এতে তারা সুস্থ হয়ে গেল্ অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে গেলে। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তারা তাদেরকে পাকড়াও করে নিয়ে এল। তাদের প্রতি নির্দেশ জারি করা হল। তখন তাদের হাত-পা কৰ্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলা। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল।
এটির ব্যাখ্যাঃ-
প্রথমে আমরা জেনে নেই রাসুল(সাঃ) রোগ মুক্তির জন্য সাধারণত কি ধরনের উপকরন ব্যাবহার করতে বলেছেন-
রাসুল(সাঃ) বলেনঃ-
হুসায়ন (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে রোগমুক্তির ব্যবস্থা নিহিত আছে। মধু পান করা ও ব্যবহার করা, শিঙ্গা লাগান এবং আগুন (তপ্ত লৌহ) দিয়ে দাগ লাগানো। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে দাগ লাগাতে নিষেধ করছি। হাদীসটি “মারফূ”। কুম্মী হাদীসটি লায়স, মুজাহিদ, ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺴَﻞِ ﻭَﺍﻟْﺤَﺠْﻢِ শব্দে বর্ননা করেছেন।(বুখারী)
আল্লাহ্ বলেনঃ-
অর্থ: “হে নবী আপনি বলে দিন, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর আহার্যের মধ্যে মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশ্ত ছাড়া
আর কোনো বস্তু হারাম পাইনি। এগুলো অপবিত্র ও হারাম। আর যেই প্রাণী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করা হয়েছে তাও হারাম। তবে অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী
না হয়ে একান্ত নিরুপায় হিসেবে কিছু গ্রহণ করে, তাহলে নিশ্চয় তোমার রব (তার ব্যাপারে) ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আনআম, আয়াত ১৪৫)
প্রশ্ন হচ্ছে – পশুর মল মুত্র খাওয়া কি
জায়েজ?
না, কখনোই না!!
পশুর পেশাব পান করা হারাম। আর হারাম বস্ত্ত খাদ্য হ’তে পারে না। জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ) কে ঔষধ হিসাবে মদ ব্যবহারের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, এটা কখনোই
রোগের প্রতিষেধক নয়। বরং তা রোগ সৃষ্টিকারী (মুসলিম হা/১৯৮৪, মিশকাত হা/৩৬৪২)।
তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি উক্ত পেশাব ব্যতীত রোগের কোন ঔষধ পাওয়া না যায়, তবে বাধ্যগত অবস্থায় তা গ্রহণ করা যাবে (আন‘আম ৬/১১৯)।
এই হাদিস ও আয়াত থেকে বুঝা গেল যে হালাল খাবার খেতে হবে আর হারাম পরিত্যাগ করতে হবে। তবে বিপদে পরলে এবং একেবারেই নিরুপায় হয়ে গেলে উপরোক্ত হারাম বস্তুসমূও আংশিক কেবলমাত্র অপরিহার্য্য ক্ষেত্রে
ব্যবহারে অনুমতি দেয়া হয়েছে। ‘নির্দেশ’ নয়। এবার যদি উল্লেখিত হাদিসের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাই-
ক্বাতাদাহ রহঃ হতে বর্নিত যে, আনাস রাঃ তাদেরকে বলেছেন, উকল এবং উরাইনাহ গোত্রের কতিপয় লোক মাদীনাতে রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে কালেমা পড়ে ইসলাম
গ্রহণ করল। এর পর তারা নাবী সাঃ কে বলল, হে
আল্লাহর নাবী! আমরা দুগ্ধ পানে বেঁচে থাকি, আমরা কৃষক নই। তারা মাদিনার আবহাওয়া নিজেদের জন্য অনুকূল বলে মনে করল না। তাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে একজন রাখাল সহ কতগুলো উট নিয়ে মাদিনার বাইরে যেতে এবং ওইগুলোর দুধ ও প্রস্রাব পান করার নির্দেশ দিলেন।
তারা তা পান করল ও সুস্থ হল। তারা যাত্রা করে হাররা এর নিকট পৌঁছে ইসলাম ত্যাগ করে আবার কাফির হয়ে গেল
এবং নাবী সাঃ এর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গেলো। নাবী সাঃ এর কাছে এ খবর পৌঁছলে তিনি
তাদের খোঁজে তাদের পিছে লোক পাঠালেন। তাদেরকে আনা হলে, তিনি তাদের প্রতি কঠিন দণ্ডাদেশ প্রদান করলেন। সাহাবাগণ লৌহ শলাকা দিয়ে তাদের চোখ
তুলে দিলেন এবং তাদের হাত কেটে দিলেন। এরপর হাররার এক প্রান্তে তাদেরকে ফেলে রাখা হল। শেষ পর্যন্ত তাদের এ অবস্থায়ই মৃত্যু হল। ক্বাতাদাহ রাঃ বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছেছে যে, এ ঘটনার পর নাবী সাঃ প্রায়ই
লোকজনকে সাদাকাহ প্রদান করার জন্য উৎসাহ দিতেন এবং মুসলা থেকে বিরত রাখতেন।
(আধুনিক প্রকাশনী ৩৮৭২, ইসলামিক
ফাঊন্ডেশন ৩৮৭৫, তাওহীদ পাবলিকেশন
৪১৯২।)
কেউ কেউ বলেন যে ঘটনাটা কিসাস এর বিধান নাযিল হওয়ার পুর্বের।
(সহিহুল বুখারী)
যাইহোক, এঘটনা থেকে আমরা দেখি যে, উটের মূত্র পানের নির্দেশ রাসুল সাঃ এর সাহাবীদের উপর নয় । এবং ওই সকল লোকের অসুস্থতার কারনে চিকিৎসা হিসেবে তাদের উপযোগী তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা হিসেবেই নির্দেশ দিয়েছেন। লক্ষণীয় যে প্রথমত,মুহাম্মদ (সাঃ) যাদেরকে উটের দুধ ও
মূত্র (শুধু মূত্র নয়) পান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা আসলে মুসলিম ভানকারী মুনাফেক ছিল, যা পরে প্রমাণ হয়েছে। উটের দুধ ও মূত্র পান করার পর তারা সুস্থ হয়ে
উঠেছিল। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর তারা রাখাল বালককে নির্মমভাবে হত্যা করে উট নিয়ে পালিয়ে যায়। – একটি নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু লোককে (যারা আসলে মুনাফেক ছিল) মুহাম্মদ (সাঃ) উটের দুধ ও মূত্র পান করার
জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) কোথাও বলেননি যে মুসলিমদেরকে উটের মূত্র পান করতে হবে।
এরকম কোনো কথা হাদিসে লিখা থাকলে কিছু মুসলিম অন্তত লোক লজ্জার তোয়াক্কা না করে উটের মূত্র পান করতই। কিন্তু মুসলিমরা কোথাও উটের মূত্র পান করে না।
এই সাধারণ বোধটুকুও উটকো নাস্তিক ও গোমূত্র পানকারীদের নেই! হাদিস অনুযায়ী আসলে ভণ্ড-মুনাফেকদের উচিত উটের মূত্র পান করা! কেননা মুহাম্মদ (সাঃ) যাদেরকে উটের মূত্র পান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা আসলে ভণ্ড বা মুনাফেক ছিল। দ্বিতীয়ত, হাদিস অনুযায়ীই তারা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ফলে এই হাদিসের প্রথম অংশে বিশ্বাস করলে দ্বিতীয় অংশেও বিশ্বাস
করতে হবে। উটের দুধ ও মূত্র পান করে কেউ যদি সুস্থ হয় তাহলে এটি নিয়ে হাসি- তামাসা করাটাই তো বোকামী!
ব্যাপারে সার্বজনীন একটি বাণী আছে, “In honey there is a healing,” হাদিসে “In camel’s urine there is a healing” বলে কোন বাণী নেই বা মুসলিমদেরকে উটের মূত্র পান করার জন্য উপদেশও দেয়া হয়নি। অতএব যারা উটের মূত্র পান করে মাতাল হয়ে উপহাস-বিদ্রুপ করছে তারা নিজেদেরকেই বোকা বানিয়েছে! শেষ কথা হলো,
রাসুল(সাঃ) যা কিছুই করেছেন তা আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারেই করেছেন।আর তাই গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এই অনুমোদনেরও কিছু মাহাত্ম্য দেখতে পাই– আমরা জানি আধুনিক বহু ঔষধ হারাম উপকরণ থেকে তৈরি হচ্ছে। যেমন- ঔষধে এলকোহল, শুকরের শরীরের
উপাদান, সাপের বিষ, বিভিন্ন প্রাণীর বিষ্টা ইত্যাদি ব্যাবহৃত হচ্ছে বা এসব থেকেই তৈরি হচ্ছে।
রাসুল(সাঃ) এই অনুমোদন দিয়েছেন বলেই আজ মুসলমানরা নিঃসংকোচে এইসব জীবন রক্ষাকারী ঔষধ গ্রহণ করতে পারছে। অন্যথায় হারাম মনেকরে অনেকেই
মৃত্যুমুখে পতিত হত! আর এই উপকরণ গুলো থেকে যে ভবিষ্যৎকালে ঔষধ তৈরি হবে তা সর্বজ্ঞ আল্লাহ্ আগে
থেকেই জানতেন এটা কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।
এজন্যই ‘মেডিসিন হিসেবে’ উটের মুত্র ব্যবহার ও ‘থেরাপি’ নেয়ার জন্য যদি কেউ উটের মূত্রে আরোগ্য পান এবং বিজ্ঞান
তাকে সার্টিফাইড করে তাহলে তা অপারগতা হিসেবে ক্ষমাযোগ্য হতে পারে, যা উপরে প্রথমেই বলা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এটিকে খুবই সুখকর ও স্বাভাবিক বৈধ
কিংবা এটা খেতে হবে এমন কথা যদি কেউ হাদীস দ্বারা সার্টিফাইড করতে চায় তাহলে বুঝতে হবে সে নি:সন্দেহে
বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আল্লাহ্ এইসব অপপ্রচার থেকে আমাদের
হেফাজত করুন,আমিন।
7 thoughts on "মুসলিমদের কি উটের মুত খাওয়া জায়েজ আছে? আসুন জেনে নেই বিস্তারিত"