বর্তমানে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় কাজের স্থান হচ্ছে Fiverr Marketplace । ফাইবার মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের সার্ভিস অফারের মাধ্যমে পোস্ট করেন, যাকে গিগ বলা হয়ে থাকে । এইসকল গিগ সর্বনিম্ন পাঁচ ডলার থেকে শুরু করে ২০০ ডলার পর্যন্ত Sale হয় । ফাইবারে আগেই ফ্রিল্যান্সাররা গিগ বানিয়ে রাখেন এবং ক্লায়েন্ট/বায়াররা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেই গিগ কিনে থাকেন ।
ফাইবারে মূলত সব ধরনের কাজ পাওয়া যায় । আপনি যেকোনো একটি সেক্টরে কাজ শিখেই এখানে কাজ করতে পারবেন । যারা মার্কেটপ্লেসে একেবারে নতুন তাদের জন্য কাজ পেতে একটু কষ্টসাধ্য হলেও ধৈর্য নিয়ে থাকতে পারলে তারাও সফল হতে পারবেন ।
Online Marketing, Video and Animation Creating, Professional Article Writing, Image Sketch, Digital Marketing, Logo Design, Web Development, Programming, Graphics Design ইত্যাদি ।
ফাইবারে Profile তৈরি করতে হলে সেখানে প্রথমে আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট করতে হবে । একাউন্ট খোলার জন্য একটি Email এ্যাড্রেস লাগবে । একাউন্ট নিশ্চিত করার জন্য Email verification করতে হয় । অ্যাকাউন্ট করার সময় Sign up ফর্মে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হয় । একাউন্ট নিশ্চিত হয়ে গেলে Profileটি সুন্দরভাবে তৈরি করতে হয় । আপনি যে বিষয়ে দক্ষ, সেই বিষয়ের ওপর ১৫০-৩০০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণ লিখতে হয় ।
এরপর আপনি ক্লায়েন্ট/বায়ারের সাথে যে ভাষায় কথা বলবেন অথবা যোগাযোগ করবেন সেই Language সিলেক্ট করে দিতে পারবেন । ইউজার Profile কমপ্লিট হয়ে গেলে সার্ভিস গিগ তৈরী করতে হয় । গিগ তৈরীর জন্য অন্যের গিগ গুলো দেখে আইডিয়া নেওয়া যেতে পারে কিন্তু কপি করা চলবে না । এতে আপনি Copyright claim-এর আওতায় পড়তে পারেন । অন্যের গিগ গুলোর বর্ণনা দেখলে আপনি অনেক কিছুর সম্পর্কে ধারনা পাবেন ।
গিগ হলো অফার কৃত বিশেষ একটি সার্ভিস । প্রথম অবস্থায় একটা গিগ বায়ার/ক্লায়েন্টের কাছে ৫ ডলারে Sale করা যায় । গিগটি তৈরীর সময় যে শর্ত সেই অনুসারে বায়ার/ক্লায়েন্টের কাজ সম্পন্ন করতে হবে । গিগগুলোকে আকর্ষণীয় করার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কেননা গিগ আকর্ষণীয় করতে পারলে আপনার চাহিদা বেশি হবে । নিম্নে গিগ আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়াবলী আলোচনা করা হলো…………
সুন্দর একটি গিগ Title থাকলে আপনার অফারটি ক্লায়েন্ট/বায়ারদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে । কোন ধরনের সার্ভিস দেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয় গিগ Title দ্বারা । সে কারণেই গিগের টাইটেলটি আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করুন । যাতে যে কেউ Title-টা দেখলেই ভেতরে গিয়ে পড়তে আগ্রহী হবেন । টাইটেলে অবশ্যই সার্চের সম্ভাব্য Keyword ব্যবহার করুন । গিগ Title-এ একই শব্দ একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ।
গিগের এর উপর ভিত্তি করে Category নির্বাচন করতে হবে । Category অবশ্যই গিগ-এর সাথে মিল থাকতে হবে । ক্যাটাগরি দেওয়া হলে Sub-Category নির্বাচন করতে হবে ।
গিগ Gallery-তে সার্ভিস সম্পর্কিত Image upload করতে হবে । Image ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন কাউকে হঠাৎ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, এমন কিছু Image ব্যবহার করা যেতে পারে । একটি কার্যকর Image হাজার বাক্যের থেকেও উত্তম । Image Size ৫ মেগাবাইট এর মধ্যে হতে হবে । গিগ Gallery-তে সর্বনিম্ন একটি এবং সর্বোচ্চ তিনটি Image ব্যবহার করা যাবে । ছবি গুলোর সাইজ প্রস্থ ৬৮২ Pixels এবং উচ্চতা ৪৫৯ Pixels হতে হবে । সুতরাং অফারের সাথে যে Image যুক্ত করবেন সেটি অবশ্যই গুরুত্বের সাথে বাছাই করুন ।
গিগ Description-এ সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লিখতে হবে । যাতে একজন ক্লায়েন্ট/ফায়ার Description পড়েই সার্ভিস সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পান এবং আকৃষ্ট হন । সার্ভিসের Description তারাই পড়বেন, যারা আপনার গিগ টাইটেল এবং ছবি দেখে আগ্রহী হওয়ার পর আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করবেন । সুতারাং Description-টি এমনভাবে লিখতে হবে যেন এটি পড়লে ক্লায়েন্ট/বায়ার সার্ভিসটি কেনার জন্য Order করেন । উপস্থাপনা যত ভালো হবে গিগ Sale হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে ।
সার্ভিস সম্পর্কিত Keyword Tag ব্যবহার করতে হবে । গিগ যে ধরনের কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, সেই ধরনের কাজের ওপর পাঁচটি Keyword নির্ধারণ করতে হবে এবং সর্বনিম্ন তিনটি Keyword ব্যবহার করতে হবে । Keyword রিসার্চ করে Tag ব্যবহার করা অত্যান্ত ভালো । এর ফলে ক্লায়েন্ট/বায়ার গিগটি সহজে খুঁজে পাবেন এবং Order পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকবে ।
যে সার্ভিসের ওপর ভিত্তি করে গিগ তৈরি করা হয়েছে প্রথমে চিন্তা করতে হবে যে এই সার্ভিসটি সম্পন্ন করতে কি পরিমাণ সময় লাগবে অথবা অন্যেরা একই সার্ভিস কতটুকু সময়ের মধ্যে Delivery দিচ্ছেন । Duration ১ থেকে ২৯ দিন পর্যন্ত দেওয়া যায় । ফাইবারে সাধারণত ১ থেকে ২ দিন Duration অথবা কাজের ধরন অনুযায়ী Duration দেওয়া হয় ।
ক্লায়েন্ট/বায়ার আপনার সার্ভিসটি নিতে হলে কি কি শর্ত পূরণ করতে হবে– FAQ অপশনে সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে । এখানে কাজ করার জন্য ক্লায়েন্ট/বায়ারের কাছ থেকে কি কি দরকার হবে তা উল্লেখ করতে হবে । যেমন- Images, usernames, passwords, content ইত্যাদি । বায়ারের কাছ থেকে সেলারের চাহিদা উল্লেখ করে দিতে হবে যাতে Delivery দেওয়ার সময় পরবর্তী সময়ে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয় অর্থাৎ Service টি নিতে হলে ক্লায়েন্ট/বায়ারের এই তথ্যগুলো প্রয়োজন ।
গিগ ভিডিও যুক্ত করলে সেটি Sale হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে যায় । ভিডিও অবশ্যই গিগ এর উপর ভিত্তি করে বানাতে হবে এবং অবশ্যই এক মিনিট অথবা তার কম সময়ের মধ্যে হতে হবে । একই ভিডিও একাধিক গিগে ব্যবহার করা যায় । তাহলে গিগ Sale-এর সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে যাবে । গিগে ভিডিও সংযুক্ত করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেটি প্রদর্শিত হয়ে থাকে । ভিডিও আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন । তবে পরপর তিনবার ভিডিও গিগ রিজেক্ট হলে আর কখনোই গিগে ভিডিও যুক্ত করা যাবে না ।
ফাইবারে একটি Topics এর উপর হাজার হাজার গিগ রয়েছে । এ কারণে ফাইবারে আপনার গিগটি খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না । কোন ক্লায়েন্ট/বায়ার ফাইবারে এসে তার প্রয়োজনীয় কোন Service-এর জন্য সার্চ করেন, তখন যে গিগ গুলো সার্চের প্রথম দিকে থাকে, সেখান থেকে ক্লায়েন্ট/বায়ার তার Service টি নিয়ে থাকেন ।
যেসব গিগে Review বেশি থাকে এবং যে সকল গিগে ভিজিটর বেশি ঢুকেছে, সেগুলোকেই সার্চের প্রথম দিকে দেখা যায় । এক্ষেত্রে গিগটিকে কিছুটা Optimize করলে সফলতা পাওয়া যাবে ।
১। ৬০-৮০ ওয়ার্ডের মধ্যে গিগ Title লিখতে হবে ।
২। টাইটেলে মূল Keyword প্রথমে রাখতে হবে ।
৩। মূল কিওয়ার্ডটি গিগ Description-এ সর্বনিম্ন তিনবার থাকলে ভালো হয় ।
৪। ট্যাগ লেখার সময় Long tail keywords ব্যবহার করার চেষ্টা করুন ।
৫। গিগ ভিডিও যোগ করলে এটি Sale হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণে বেড়ে যায় ।
গিগটিকে Optimize করার পর এটিকে মার্কেটিং করলে ভালো ক্রেতা পাওয়া যাবে । সেজন্য Social Media Marketing, Forum Posting, Blog Commenting, Video Marketing & Guest Posting করতে পারেন । সব একসাথে করতে পারলে দ্রুত ভাল ফলাফল পাবেন । সম্ভব না হলে যেকোনো একটি সঠিকভাবে করুন । তাতে দেখবেন এক সপ্তাহের মধ্যেই আয় শুরু হয়ে গেছে ।
আপনার অ্যাকাউন্ট যদি একমাস একটিভ থাকে এবং আপনি যদি ফাইবারে দশটি গিগ Sale করেন এবং আপনার যদি ভালো Review থাকে, তাহলে ফাইবার কমিউনিটি আপনার একাউন্ট কে “Level-1” নিয়ে নেবে । তারা আপনার একাউন্টে একটি Level-1 এর ব্যাচ দেবে । ক্লায়েন্ট/বায়ারের কাজের পরিবর্তন যেন না হয় । কাজ পাওয়ার পর সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে ক্লায়েন্ট/বায়ারের কাজের Document পাঠিয়ে দেবেন ।
মনে রাখবেন, ক্লায়েন্ট/বায়ার যদি কাজে সন্তুষ্ট না হন তবে সেই কাজের টাকা পাওয়া যাবে না । অতএব শতভাগ সঠিক ভাবে কাজ করতে হবে । যদি ফাইবারে ৫০ টি গিগ Sale করতে পারেন এবং আপনার যদি ভালো Review থাকে তাহলে ফাইবার কমিউনিটি আপনার একাউন্টকে “Level-2” এ নিয়ে নেবে । তারা আপনার একাউন্টে একটি Level-2 এর ব্যাচ লাগিয়ে দেবে ।
ক্লায়েন্ট/ বায়ারকে দ্রুত Response করার চেষ্টা করুন । অ্যাকাউন্ট যদি চার মাস একটিভ থাকে এবং যদি ফাইবারে ২৫০ টি গিগ সেল করেন এবং ভালো Review থাকে তাহলে ফাইবার কমিউনিটি আপনার একাউন্টটিকে “Top Level” এ নিয়ে যাবে । তারা আপনার একাউন্টে একটি Top Level-এর ব্যাচ দেবে ।
Top Level-এ অনেক বেশি কাজ পাওয়া যায় এবং প্রতিটি কাজের মূল্য অনেক বেশি নির্ধারণ করে দেওয়া যায় । ফাইবারে কাজ করলে প্রথমদিকে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে । কেননা ফাইবার মার্কেটপ্লেসে প্রথম দিকে নতুন অবস্থায় আপনার গিগ খুব কম Sale হতে পারে । আপনি যখন এখানে সফলতার সাথে একটির পর একটি লেভেল অতিক্রম করবেন, তখন গিগ Sale করা খুবই সহজ হয়ে যাবে ।
ফাইবারে প্রতি ৫ Dollar এক ডলার চার্জ হিসাবে কেটে নেওয়া হয় অর্থাৎ আপনি যদি পাঁচ Dollar আয় করেন তাহলে চার ডলার পাবেন । প্রতিটি কাজ Complete ঘোষণা করার ১৫ দিন পর টাকা Withdraw করা যাবে । বাংলাদেশে Pioneer debit card-এর মাধ্যমে ফাইবার থেকে আয় করা অর্থ সরাসরি ATM বুথের মাধ্যমে উঠানো যায় । প্রতিবার ট্রানজেকশনে ৩.১৫ ডলার চার্জ কাটবে তারা । এছাড়া ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে Dollar Withdraw-এর সুবিধা চালু হয়েছে ।
** কাজের Order পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ জমা দিতে না পারলে একাউন্ট Suspend হয়ে যেতে পারে ।
** অন্যের গিগ থেকে Copy করে নিজের গিগ তৈরি করলে সেই Account copyright-এর আওতায় Suspend হয়ে যেতে পারে ।
** একটা PayPal account কিংবা Pioneer account-এ একাধিক ফাইবার র্এগেজসটকাউন্ট এ যুক্ত থাকলে এর জন্য সমস্যা হতে পারে ।
আজ এতটুকু সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। খোদা হাফেজ।