” ভাইবা পরীক্ষায় আপনার করণীয় ও বর্জনীয়”৷”ভাইবা পরীক্ষার প্রস্তুতি “৷ ” কিভাবে ভাইবা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন?” এসব প্রশ্নের উত্তর পাবেন আজকের আর্টিকলে৷
ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা কিংবা সাক্ষাৎকার—যে নামেই অভিহিত করা হােক না কেন, চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিষয়টি ভীতিকর কিছু নয়; বরং উত্তেজনাপূর্ণ উপভােগ্য অনুভূতি হতে পারে এবং সেটিই হওয়া উচিত। অহেতুক ভীতি নিয়ে ভাইভা বাের্ডে উপস্থিত হওয়া মানে সম্ভাবনার পথ বন্ধ করা।
প্রার্থী সবজান্তা হবেন কিংবা সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারবেন অথবা সব উত্তরই প্রশ্নকর্তার কাছে যথার্থ সন্তোষজনক বলে বিবেচিত হবে—এমন আশা করা পাগলামির নামান্তর। আবার মিথ্যা তথ্য প্রদান, অতিরিক্ত স্মার্টনেস, অতিমাত্রায় অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে কেউ কেউ মনে করেন যে প্রশ্নকর্তাকে বােকা , বানিয়েছি এমন ধারণা অবশ্যই পরিহার্য।
কারণ উত্তর শুনে বাের্ডের কেউ কোনাে ভুল ধরলেন না বলে মনে করার কারণ নেই যে, তাদের বােকা বানানাে সহজ। ভাইভার আগের রাতে প্রচুর পড়াশােনা ও রাতজাগা অনাবশ্যক। যেটুকু প্রস্তুতি দরকার, তা আগে থেকেই বারবার অনুশীলন করে সেরে রাখতে হবে৷ শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কাগজপত্র বা ফাইল এবং প্রয়ােজনীয় তথ্য গােছানাে বােকামির কাজ।
মূল কাগজপত্রের সেট, প্রতিলিপির সেট, ছবি, কলম, পেনসিল, সঠিকভাবে ফাইলে রাখা হয়েছে কি না, তা যাচাই করতেই হবে। মৌখিক পরীক্ষার শেষে মূল কাগজপত্র অবশ্যই ফেরত নিতে হবে যদি বাের্ড অনুমতি দেয়। যেটুকু পড়াশােনা আছে সেটুকুই যথেষ্ট। পরিধানের কাপড়চোপড় বা পােশাক শালীন ও মার্জিত হতে হবে। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য টাই অপরিহার্য হতে পারে। অনেকেই ট্রাই বাঁধতে পারেন—এমন দাবি করা যায় না। তবে টাই ব্যবহার করতে হলে ঠিকঠাক অবস্থানে সঠিকভাবে বাঁধাই উত্তম।
মেয়েদের জন্য শাড়ি উত্তম। তবে যেকোনাে সংযত শালীন এবং সাবলীল পােশাকে থাকার চেষ্টা করাই সংগত। বিশেষ রঙের পােশাক বা জুতা ব্যবহার করতেই হবে—এমন বাধ্যবাধকতা সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নেই। ভাইভা বাের্ডে কাপড়চোপড় বা পােশাকের দিকে বেশি মনােযােগ মূল প্রশ্নোত্তর পর্বে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। |
প্রার্থীর সহ্যশক্তি, মানসিক স্থিরতা, যুক্তির প্রাবল্য ইত্যাদিও কিন্তু ভাইভার অঙ্গ। আপনার মেজাজও পরীক্ষা করা হয় নানা ধরনের অনাবশ্যক প্রশ্ন বা মন্তব্য করে। ঘাবড়াবেন না। স্থিরভাবে প্রশ্ন বুঝে অল্প কথায় যুক্তিপূর্ণ উত্তর দিন। বিরক্ত হওয়া যাবে না।
প্রার্থীর মা কিংবা বাবা যদি শ্রমজীবী মজুর, কৃষক, দোকানি ইত্যাদিও হন, তবে তাঁদের সম্পর্কে যথাযথ পরিচিতি প্রদান আবশ্যক। ভুল করেও মিথ্যা পরিচয় দেবেন না। বাবা নৈশপ্রহরী কিংবা কোনাে অফিসের নিম্ন শ্রেণিভুক্ত কর্মচারী হলেও কখনাে বলবেন না যে তিনি জব করেন, স্টাফ ইত্যাদি। বরং সরাসরি পরিচয় দিয়ে উত্তর দেবেন, যাতে প্রশ্নকর্তাকে দ্বিতীয়বার এ বিষয়ে আর প্রশ্ন করে সঠিক তথ্য খুঁজতে না হয়।
মুখ গােমড়া করে থাকবেন না। প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে ভুলবেন না। উত্তর না জানা থাকলে। সময় নষ্ট না করে সরি বলুন। আমতা আমতা করে এমন ভাব দেখাবেন। যে আপনি জানেন অথচ পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না। | ইংরেজিতে আপনাকে প্রশ্ন করা হলে ওই ভাষাতেই উত্তর দিন। বাংলায় উত্তর দিতে চাইলে অনুমতি নিন।
বাংলায় উত্তর দেওয়ার সময় So, but ইত্যাদি অনাবশ্যক ইংরেজি শব্দ বলে প্রশ্নকর্তার বিরক্তি বাড়াবেন না । সহজ ভাষায় উত্তর দিন সংক্ষেপে। কথা বাড়ালে ওই বাড়তি কথা থেকে প্রশ্ন করে আপনাকে। ঘায়েল করা হতে পারে। নিজ এলাকা সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান রাখুন।
বাংলাদেশের সংবিধান, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, বিখ্যাত মানুষ, নদ-নদী, পরিবেশ ও দেশের মানচিত্র বিষয়ে জেনে রাখুন। দেশ ও বিদেশের চলতি ঘটনাবলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন। দেশ বা আন্তর্জাতিক সমস্যায় আপনার কাছে সমাধানের যুক্তি চাওয়া হতে পারে। বঙ্গাব্দের মাস, ঋতু, বার এবং তারিখ বিষয়ে জ্ঞান রাখুন। নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
কেউ কেউ অষ্টম-নবম শ্রেণিতে পড়া বিষয়ের প্রশ্নে বলে ফেলেন— অনেক দিন আগে পড়া, ভুলে গেছি। এ অজুহাত আপনার ক্ষতিসাধনে যথেষ্ট। কিছু কবির কবিতার লাইন, বইয়ের নাম, সংগীতের লাইন সম্পর্কে জানতে চেয়েও প্রশ্ন করা হয়। বানান বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
ভাইভা বাের্ডে প্রবেশ করা থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত আপনাকে সতর্ক, প্রফুল্ল, আত্মবিশ্বাসী এবং চটপটে থাকতে হবে। ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৩-৪টি উত্তরও যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলেও ঘাবড়াবেন না, ঘামবেন না, মন খারাপ করে মনে মনে হা-হুতাশ করবেন না।
বাের্ডে আপনার জ্ঞানের পরীক্ষা ছাড়াও চলা, বলা, উপস্থাপনাশৈলী, ভাষার মাধুর্য, যুক্তির সবলতা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখমুখ, অঙ্গভঙ্গি, চিন্তার স্থিরতা ও উত্তরদানের কৌশল-সবই লক্ষ করা হয়। ঘেমে ওঠা নয়, রেগে যাওয়া নয়, স্মিত হাসি দূরে রাখা নয়, মনােবল হারানাে নয়, কোনাে মতাদর্শ বা মানুষ সম্পর্কে ঘৃণা বা অবজ্ঞা প্রদর্শন নয়—যেটুকু পারবেন, সেটুকুই যথেষ্ট। কেউ ১৩টি সঠিক উত্তর দিয়েও চাকরি পায় না, আবার কেউ ৩টি সাবলীল উত্তর দিয়েও বেশি নম্বর পেয়ে যেতে পারেন অবলীলায়।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় শোক দিবস রচনা pdf
যিনি ঘাবড়ে যাবেন, তার জন্য ভাইভা বাের্ড অনুকম্পা দেখাবে না। আপনি কর্মক্ষেত্রে কেমন হবেন, সেটি নির্ধারণ করাই ভাইভা বাের্ডের কাজ৷ জ্ঞান ও মেধার সঙ্গে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ পর্যবেক্ষণও বাের্ডের লক্ষ্য।। আরেকটি বিষয়ে জেনে রাখুন বিসিএসের মতাে পরীক্ষায় কারও করুণা ভিক্ষা করা, তদবিরপত্র আনা বা কাউকে ধরাধরি করে কোনাে কাজ হয় না, বরং ক্ষতিই হতে পারে।
আপনার অবস্থান কোথায়, তা ফাইনাল রেজাল্টের আগে কেউ জানে না। আপনার অবস্থান শুধু আপনার যােগ্যতা ও মেধার ওপর নির্ভরশীল, কারও করুণার ওপর নয়। সুতরাং নির্ভয়ে নিজেকে প্রস্তুত করুন, সফলতা আসবে। আশা করছি আজকের আর্টিকল ” ভাইবা পরীক্ষায় আপনার করণীয় ও বর্জনীয়” খুব ভালো লেগেছে! ” ভাইবা পরীক্ষায় আপনার করণীয় ও বর্জনীয়”৷
শিক্ষামূলক ব্লগ আর্টিকেল পড়তে চাইলে ভিজিট করুনঃ Bongoguide
2 thoughts on "ভাইবা পরীক্ষা কিভাবে নেয়া হয়"