Site icon Trickbd.com

Android Root সম্পর্কে মেগা টিউন। না দেখলে বিশাল মিস।

Unnamed

রুট (ROOT), অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা
প্রায়ই শুনে থাকবেন এই শব্দটি । বিভিন্ন
সাইটে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরনের
ধারনা রয়েছে । তবে আজকে আমার
প্রাথমিক ধারনা আপনাদের সামনে তুলে
ধরার চেষ্টা করছি । অনেক অ্যান্ড্রয়েড
ডিভাইস ব্যবহারকারীরাই রুট কী এই
প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন না ।
অনেকে মনে করেন রুট করার মাধ্যমে
ডিভাইসের পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স
পাওয়া সম্ভব, আর তাই অনেকেই রুট
করতে আগ্রহী হয়ে পড়েন । কিন্তু রুট
করার পর দেখা যায় তাদের ডিভাইসের
পারফরম্যান্স আগের মতোই রয়ে যায় বা
আগের চেয়ে খারাপ হয়ে পরে । তারা
হতাশ হয়ে পড়েন এ অবস্থা দেখে । কিন্তু
তাদের মাঝে অজানাই থেকে যায় যে রুট
করার আসল সার্থকতা কোথায় । আজকের
আমি আমার এই লেখার মাধ্যমে
আপনাদের সামনে রুট করার কারন , কেন
করবেন , রুট করার উপকারিতা এবং
অপকারিতা তুলে ধরার চেষ্টা করব । এবং
আমার ধারনা আপনাদের মনে রুট বিষয়টি
নিয়ে আর কোন সন্দেহ মুলক ধারনা
থাকবে না ।
► রুট ব্যাপারটা আসলে কী?
╚» রুট শব্দটি এসেছে লিনাক্স
অপারেটিং সিস্টেম থেকে । লিনাক্স
ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাদের রুট
প্রিভিলেজ বা সুপারইউজার পারমিশন
আছে তাদেরকে রুট ইউজার বলা হয় ।
সবচেয়ে সহজ শব্দে বলা যায় , রুট হচ্ছে
অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা প্রশাসক যদিও এর
বাংলা অর্থ গাছের শিকড় । রুট হচ্ছে
একটি পারমিশন বা অনুমতি । এই অনুমতি
থাকলে ব্যবহারকারী তার নিজের
ডিভাইসে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন ।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে
ব্যবহারকারী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর
প্রিভিলেজ ছাড়া সিস্টেম ফাইলগুলো
নিয়ে কাজ করতে পারেননা ,
লিনাক্সেও তেমনি রুট পারমিশন প্রাপ্ত
ইউজার ছাড়া সিস্টেম
অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজগুলো করা
সম্ভব হয়ে উঠে না । যার লিনাক্স-চালিত
কম্পিউটার বা সার্ভারে সব কিছু করার
অনুমতি রয়েছে, তাকেই আমরা রুট ইউজার
বলে থাকি । অনেক সময় একে আমরা
সুপার ইউজার বলেও সম্বোধন করা হয়ে
থাকে ।
► অ্যান্ড্রয়েড এবং লিনাক্স এর মধ্যে
সামঞ্জস্য কোথায় ?
╚» আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে
কেন আমি আন্ড্রয়েড নিয়ে কথা বলতে
বলতে লিনাক্স এর কথা তুলে নিয়ে
আসলাম । আসলে এন্ড্রয়েড তৈরি হয়েছে
লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম
মুল ভিত্তি থেকে ।
► লিনাক্স এ ইউজার পারমিশন আমরা খুব
সহজে পেয়ে থাকি কিন্তু আমরা
এন্ড্রয়েডে পারি না কেন?
╚» সাধারনত লিনাক্স অপারেটিং
সিস্টেম আমরা ইন্সটল করতে পারি তার
তাই আমরা ইউজার পারমিশন কোড
আমরা জেনে থাকি । কিন্তু আন্দ্রয়েড
মোবাইল আমরা বাজার থেকে ক্রয় করে
থাকি এবং তার অপারেটিং সিস্টেম
সিস্টেম ইন্সটল ডিভাইস প্রস্তুতকারক
করে থাকে । ডিভাইস প্রস্তুতকারক যখন
মোবাইলের মধ্যে অপারেটিং সিস্টেম
ইন্সটল করে তখন তাদের হাতে এই ইউজার
পারমিশন কোড থেকে যায় । আর তাই
আমাদের হাতে সেই ইউজার পারমিশন
থাকে না । এখন আপনার প্রশ্ন আসতে
পারে কেন আমাদেরকে এই ইউজার
পারমিশন কোড দেওয়া হয় না । আসলে
ডিভাইস প্রস্তুতকারক মোবাইলের
সুরক্ষা এবং নিরপ্ততার জন্য
আমাদেরকে এই কোড দিয়ে থাকে না ।
কিন্তু তাই বলে এই নয় যে আমরা ইউজার
পারমিশন কোড পাব না । আমরা ডিভাইস
প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে আমরা এই
কোড সংগ্রহ করে এন্ডয়েড মোবাইলের

ইউজার পারমিশন পেতে পারি । উদাহরণ
হিসেবে আমি বলতে চাই সনি , Lenovo এর
মত ব্রান্ড এর মোবাইল যখন ব্যবহার করি
তখন আমরা তার ইউজার পারমিশন
পাওয়ার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে
বুটলডার আনলক কোড সংগ্রহ করে থাকি ।
এই বুটলডার আনলক রুট পারমিশন পাওয়ার
একটি অংশ ।
► আন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এক
হওয়া সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল
ভিন্ন রকম এর কারন কি ?
╚» আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে
পারে যে যতগুলো মোবাইল প্রস্তুতকারক
প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের সবার ভিন্ন
ভিন্ন লুক এর অপারেটিং হয়ে থাকে ।
অপারেটিং সিস্টেমের মূল ভিত্তিটা
এক হলেও একেক কোম্পানি একেকভাবে
একে সাজাতে বা কাস্টোমাইজ করতে
পারেন । এই জন্যই সনির একটি
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইউজার
ইন্টারফেসের সঙ্গে এইচটিসির একটি
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ইন্টারফেসের
মধ্যে খুব কমই মিল পাওয়া যায়।
► আন্ড্রয়েড মোবাইলে কেন রুট করা
থাকে না ?
╚» মোবাইল প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান যখন
তাদের মোবাইল গুলো বাজারজাত করে
তখন মোবাইল গুলোতে রুট পারমিশন
দেওয়া হয় না । কারন হল রুট পারমিট করা
থাকলে আপনি তখন আপনার মোবাইলে
যে কোন কিছু করতে পারবেন । আপনি
মোবাইলের রুট ফোল্ডাররে যেতে
পারবেন ( মোবাইলের অপারেটিং
সিস্টেম ফোল্ডার ) । আপনি যে কোন
ফাইল ডিলিট , এডিট করতে পারবেন ।
আপনার মোবাইলে যখন রুট পারমিট করা
থাকবে তখন আপনি কোন ফাইল ডিলিট
বা সরিয়ে নিলে আপনাকে কোন
ওয়ার্নিং দিবে না । আপনি হয়ত মনে
করছেন এই ফাইল গুলো আপনার কোন
প্রয়োজনে আসবে না আর তাই আপনি
ফাইল গুলো ডিলিট করে দিয়েছেন ।
হয়তো আপনি কাস্টমাইজ করতে গিয়ে বা
রম ইন্সটল করতে গিয়ে ভুল করে ফোন
ব্রিক করে ফেলেছেন । এতে কিছুক্ষণ পর
দেখতে পারলেন যে আপনার মোবাইল
আর চালু হচ্ছে না । আপনি তখন আপনার
মোবাইল প্রস্তুত কারকে দোষারোপ
করতে থাকবেন । যদি রুট না থাকতো
তাহলে আপনি ফাইল গুলো ডিলিট এডিট
তো দুরের কথা আপনি আই ফোল্ডারটি
খুজে পেতেন না । ফোন প্রস্তুতকারক
আপনাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিলেও
এই সব পারমিশন তারা তাদের
সুবিধার্থে দেয় না । এটা করা হয়
আপনার ভালোর জন্যই ।
► কেন আপনি আপনার আন্ড্রয়েড
ডিভাইসটি রুট করবেন?
╚» আপনি তখনি রুট করার চিন্তা করবেন
যখন আপনার মোবাইলে সব ধরনের সুযোগ
ব্যবহার করতে পারছেন না , আপনার
মোবাইল আপনাকে কোন সীমার মধ্যে
বেধে রেখেছে । যারা একদমই নতুন এই
বিষয় ভালভাবে কিছু জানেন না তারা
তাদের মোবাইল রুট করার চিন্তা
কিছুদিন পর করার সিদ্ধান্ত নিবেন ।
তার কারন আপনি আগে ভাল করে বুঝে
নিন কেন আপনি রুট করবেন , এবং রুট
করার পর আসলেই আপনার উপকার হবে
কি না । অনেকে না বুঝে রুট করে অনেক
সমস্যায় পড়তে হয়েছে । তাই আমি
তাদের উদ্দেশ্যে বলছি সাবধানতার
মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল রুট করুন

আমরা আসলে অনেক কারনে আন্ড্রয়েড
মোবাইল রুট করে থাকি । বর্তমানে কিছু
কিছু অ্যাপ্লিকেশান এখন বের হয়েছে
যা ব্যবহার করতে রুট পারমিটের
প্রয়োজন হয়ে পড়ে । কেউ কেউ
ওভারক্লকিং করার মাধ্যমে মোবাইলের
স্পীড বাড়ানোর জন্য রুট করে থাকেন ।
কেউ ডেভেলপারদের তৈরি ভিন্ন ভিন্ন
সাধের কাস্টম রম ব্যবহার করার জন্য ,
কেউ গেম খেলার জন্য । আরও অনেক
কারন আছে যেই কারনে রুট করা হয়ে
থাকে । এই কারন গুলো থেকে থাকলে রুট
করা আমি মনে করি ভাল । কিন্তু অকারন
অবশত রুট করে বিপদে পড়ার কোন
প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি না

রুট করার কিছু সুবিধা
╚» বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে
মোবাইলের অব্যবহৃত ফাইল, টেমপোরারি
ফাইল ইত্যাদি নিয়মিত মুছে ফোনের
গতি ঠিক রাখা । এছাড়াও মোবাইলের
পারফরমেন্স বাড়ানো যায় বলে আর
অনেক ভাবে । ওভারক্লকিং করা
সিপিইউ স্পিড স্বাভাবিক অবস্থায়
যতটা থাকে তারচেয়ে বেশি দ্রুত কাজ
করে । এর মাধ্যমে কোনো বিশেষ কাজে
প্রসেসরের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন
পড়লে তা করা যায় । যখন মোবাইল
এমনিতেই পড়ে থাকে, তখন সিপিইউ যেন
অযথা কাজ না করে যে জন্য এর কাজের
ক্ষমতা কমিয়ে আনা যায়
আন্ডারক্লকিং করে । এতে করে
ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো সম্ভব ।
এছাড়াও রুট করে কাস্টম রম ইন্সটল করার
সুবিধা রয়েছে । অনেক ডেভেলপার
বিভিন্ন জনপ্রিয় মোবাইলের জন্য
কাস্টম রম তৈরি করে থাকেন । এসব রম
ইন্সটল করে আপনি আপনার মোবাইলকে
সম্পূর্ণ নতুন একটি সেটের রূপ দিতে
পারবেন । আপনি সফটওয়্যার ব্যবহার করে
আপনার রাম এর স্পীড বাড়াতে পারবেন ,
প্রসেসরের স্পীড বাড়াতে পারবেন তবে
কোন হার্ডওয়্যার বা অন্যান্য কোন কিছু
বাড়াতে পারবেন না । আপনি ৮
মেগাপিক্সেল ক্যামেরাকে ১৬
মেগাপিক্সেল করতে পারবেন না । যেই
মোবাইলে NFC নেই তাতে তা সংযোগ
করতে পারবেন না । রুট শুধু মাত্র আপনার
অভ্যন্তরীণ পারফরম্যান্সে কাজে আসবে
, বাহ্যিক কোন পরিবর্তন নয় ।
রুট করার কিছু অসুবিধা
╚» সর্ব প্রথম মোবাইল রুট করার মাধ্যমে
আপনার ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে ।
তাই রুট করার আগে সাবধান । অবশ্য
অনেক মোবাইল আবার আনরুট করা যায় ।
আর মোবাইল আনরুট করা হলে তা
সার্ভিস সেন্টারে থাকা
টেকনিশিয়ানরা অনেক সময়ই ধরতে
পারেন না যে সেটটি রুট করা হয়েছিল
কি না । তবে কাস্টম রম থাকলে ধরা
খাওয়া বাধ্যতামূলক । অনেকে মোবাইল
ব্রিক নিয়ে অনেক কথাই বলেছে। এখন
কথা হল ব্রিক মানে কি ? ব্রিক অর্থ ইট ।
আর ফোন ব্রিক মানে আপনার
ডিভাইসকে ইটে রূপান্তরিত করা বা নষ্ট
হয়ে যাওয়া । অর্থাৎ আপনার মোবাইল
কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ।
রুট করা ও এর পরবর্তী বিভিন্ন কাজের
সময় যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় তাহলে
ফোনে স্থায়ী বা অস্থায়ী সমস্যা হতে
পারে । প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফোনটি
আনরুট অবস্থায় দেন যাতে আপনার
মোবাইলের কোন ক্ষতি না হয় । রুট করার
মাধ্যমে আপনি সেই নিশ্চয়তা ভেঙ্গে
ফেলছেন । এখন এর সম্পূর্ণ দায়ভার
আপনাকে গ্রহন করতে হবে । রুট করলে
দেখা যায় অনেক সময় অনেক ক্ষতিকারক
প্রোগ্রাম রুট করা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ
নিয়ে নিতে পারে । কিন্তু লক থাকা
অবস্থায় ব্যবহারকারী নিজেই রুট
অ্যাক্সেস পান না , তাই অন্য
প্রোগ্রামগুলোর রুট অ্যাক্সেস পাওয়ার
সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে ।
(সংগৃহীত)
পরিশেষে, রুট করবেন নিজ দায়িত্তে,
রিস্ক না নিতে চাইলে ভুলেও হাত
দিবেন না। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সাথে থাকবেন।