বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনকে আমরা সবাই চিনি। বলা হয়, অন্ধকারের অমানিশা দূর করে তিনিই প্রথম আমাদের ঘরে ঘরে জ্বেলে দিয়েছিলেন বৈদ্যুতিক বাতির আলো। কিন্তু তিনি হয়তো জানতেন না, এই বাতি শুধু ঘর আলোকিত করার কাজেই নয়, বরং একদিন তথ্য সম্প্রচারের কাজেও ব্যবহৃত হবে। হ্যাঁ পাঠক, এলইডি তথা লাইট এমিটিং ডায়োড (যে ডায়োড থেকে আলো নির্গত হয়) বাতি ব্যবহার করে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে তথ্য (ডেটা) আদান–প্রদান করা যাবে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এমনকি হাতের মুঠোফোনটিতেও। নতুন এই প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাই-ফাই’, যা তারহীন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের চেয়েও ১০০ গুণ দ্রুতগতিতে তথ্যের আদান-প্রদান করবে।
২০১১ সালে স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের বিজ্ঞানী হ্যারল্ড হ্যাস সর্বপ্রথম ‘লাই-ফাই’ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। এতে দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গকে অতি দ্রুতগতির যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দ্রুতগতির সিগন্যাল বাতি যেমন খুব দ্রুত অন-অফ হয়ে সংকেত প্রেরণ করে, ঠিক তেমনি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বাইনারি কোডের ভাষায় তথ্য প্রেরণ করা যায়। পরীক্ষণে দেখা গেছে, এই প্রযুক্তিতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২২৪ গিগাবাইট পর্যন্ত তথ্য প্রেরণ করা যায়, যেখানে ওয়াই-ফাইয়ের সর্বোচ্চ গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ মেগাবাইট।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে হ্যাস জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি বাতির সঙ্গে একটি করে ছোট মাইক্রোচিপ লাগিয়ে দিলেই এটা আলো দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারবিহীন তথ্য সম্প্রচারের কাজটাও করবে।’ তিনি এটাও জানান যে বাতির অন-অফ হওয়ার কাজটা এত দ্রুত হবে যে তা আলাদা করে শনাক্ত করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব এবং এটা চোখের জন্যও বিরক্তিকর হবে না।
ইতিমধ্যেই নতুন এই লাই-ফাই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হতে শুরু করেছে। এই যেমন, ওয়াল্ট ডিজনি তৈরি করতে শুরু করেছে এমন কিছু পুতুল, যা লাই-ফাই প্রযুক্তিতে কাজ করবে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে প্রতি মাসে ২৪.৩ এক্সাবাইট ডেটার প্রয়োজন হবে, যা কি না বর্তমান তারবিহীন সংযোগের দ্বারা জোগান দেওয়া অসম্ভব। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির এই বাড়তি চাপ কমাতে লাই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
লাই-ফাই প্রযুক্তিতে যেমন অনেক সুবিধা আছে, তেমনি আছে কিছু সীমাবদ্ধতা। যেমন, আলো কোনো দেয়াল ভেদ করে যেতে পারে না। তাই আলোর মাধ্যমে সম্প্রচারিত তথ্যও (ডেটা) অনেক বেশি নিরাপদ থাকে। আবার এটাও ঠিক যে ঘরটি ত্যাগ করলেই গ্রাহক ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এটা এই প্রযুক্তির একটা সীমাবদ্ধতা। এটুকু কাটিয়ে ওঠা গেলে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ওয়াই-ফাইয়ের তুলনায় লাই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা আরও অনেক বেশি লাভবান হতে পারি।