বর্তমানে এমন কোন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল যার কাছে একটি স্মার্টফোন নেই। আর এই স্মার্ট ফোনকে কাজে লাগিয়ে অনেকে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলছেন, আর এই ছবিগুলো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার দের ও হার মানায়। এ বিষয়ে কে মাথায় রেখে আজকের আর্টিকেলে আমরা সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফির দশটি টিপস নিয়ে এসেছি, যা জানার পরে আপনার ফটোগ্রাফিতে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা এবং আপনি হয়ে উঠবেন অ্যান্ড্রয়েড ফটোগ্রাফিতে আরো দক্ষ। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক টিপস গুলো।
১. অটো মুড সম্পর্কে জানুন
আপনার ফোনের অটো মুড কিভাবে কাজ করে তা আপনার জানা থাকলে তা আপনাকে ভালো ছবি তুলতে সহায়তা করবে। আপনার ফোনটি কখন হাই আইসো ব্যবহার করছে কিংবা শাটার স্পিড লং হচ্ছে তা আপনি সময় নিয়ে লক্ষ্য করুন। এই উপায়টি আপনাকে অটো মোড সম্পর্কে আরো জানতে সাহায্য করবে, এবং আপনি অটোমোড সম্পর্কে আরো ভালো জানতে পারবেন এবং প্রয়োজনে আপনার সেটিং থেকে বিভিন্ন ডিফল্ট অপশন ব্যবহার করতে পারবেন।
২. সেটিং এর ডিফল্ট অপশন টি চেক করুন
অটো মোডে ভালো ছবি উঠলেও তা সব সময় ফলপ্রসূ হয় না, বিশেষ করে ঘরের ভিতরে এবং মেঘাচ্ছন্ন দিনে অটো মোড দিয়ে ভালো ছবি তোলা সম্ভব হয় না, শুধু আপনার এন্ড্রয়েড ফোনটি দিয়ে নয় মার্কেটের বেস্ট ক্যামেরাটি দিও এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান কি?এমন সমস্যার সম্মুখীন হলে আপনাকে সবার প্রথমেই অটো মোড থেকে মেনুয়্যাল মোডে চলে যেতে হবে। সেখানেই আপনি ইচ্ছামত ব্রাইটনেস অথবা ডার্কনেস অথবা আপনার যেটা বেশি মনে হচ্ছে তা আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারবেন।
যেমন ধরতে গেলে আপনি যদি মনে করেন এখন হোয়াইট ব্যালেন্স টা হয়তো অফ করা আছে তাহলে আপনি সহজেই তা অন করে নিতে পারবেন এবং আপনার ছবির কোয়ালিটি আরো সুন্দর করতে পারবেন। এছাড়াও মেনুয়াল অপশনে আপনি খুব সহজেই আই এস ও এবং সাটারস্পিড চেঞ্জ করতে পারবেন। আপনি ঠিক করতে পারবেন আপনার ছবিতে কি পরিমাণ মোশন ব্লার থাকবে কি পরিমান গ্ৰেন থাকবে ইত্যাদি, সাধারণত শাটার স্পিড ১/৩০এর খানিকটা কম দিয়ে আপনি ভালো ছবি তুলতে পারেন, এর পাশাপাশি আই এস ও ৮০০ এর উপরে ভালো ছবি ধারণে সাহায্য করে কেননা এই আই এস ও তে স্মার্টফোনের ক্যামেরা গুলো ভালো আলো ধারণ করতে পারে।
এছাড়াও এখানে আছে এইচ ডি আর মোড, যা আপনার ছবিকে আরও প্রাণবন্ত এবং বাস্তবিক করে উপস্থাপন করে। এই মোডের সাহায্যে আপনি সহজেই আপনার ছবিকে আরও জীবন্ত করে তুলতে পারেন। আর এ এইচ ডি আর মোড আপনি আপনার সেটিং বার থেকে খুব সহজেই চালু করে নিতে পারেন।
৩. হাত স্থির রাখার চেষ্টা করুন
সুন্দর ফটোগ্রাফির আরো একটি উপায় হল ক্যামেরা স্থির রাখা অবস্থায় ক্যাপচার করা। এর জন্য ফটো তোলার সময় আপনার হাত নারানো একদমই উচিত নয়, সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি কোন ফোন ট্রাইপড ইউজ করেন, কেননা ট্রাইপড গুলোতে ফোন লাগানো অবস্থায় আপনার ফোন সর্বোচ্চ স্থির থাকে যে কারনে ফটোগ্রাফির সময় ক্যামেরাও স্থির থাকে এবং সুন্দর ছবি ধারণ করা যায়।
৪. ডিজিটালি জুম কখনোই করা উচিত নয়
ভালো ছবি তোলার জন্য ব্যবহারকারীদের সবসময়ই এন্ড্রয়েড ফোনের ক্যামেরা দিয়ে জুম করার জন্য নিষেধ করা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই উপদেশটি আর খাটছে না কেননা আইফোন এক্স এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট 8 এর মত ফোন গুলোতে সেকেন্ডারি ক্যামেরায় 2x জুম অপশন দেওয়া থাকে, তাই 2x সম্বলিত এসব ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার না করার কোন প্রশ্নই উঠে না। বরং এসব ক্যামেরায় আরো ভালো কোয়ালিটির ফটোগ্রাফি করা সম্ভব।
কিন্তু যেসব ফোনে এসব জুমিং অপশন নেই সে সব ফোনে আমরা অটোমেটিক্যালি জুম না করার জন্য উপদেশ দিয়ে থাকি। কেননা এতে করে আপনার ছবির কোয়ালিটি এবং অন্যান্য গুনাগুন নষ্ট হয়। তাই সাধারণ ফোনের জন্য অটোমেটিক্যালি জুম না করাই ভালো। আর যদি আপনার ফোনে জুম লেন্স হয় তাহলে 1x অথবা 2x রেঞ্জের মধ্যেই অটোমেটিক্যালি জুমিং টা রাখা উচিত।
৫. একাধিক শট নিন
আমার যখন কোন কিছুর ফটো তুলব তখন একাধিক শট নেওয়া উচিত। কারন এতে আপনি পরবর্তী সময়ে অনেকগুলো ছবি থেকে আপনার পছন্দের ছবি সহজেই সিলেক্ট করতে পারবেন। তাছাড়াও একাধিক শট নিলে আপনার ফোনটি যদি অটো মোডে দেওয়া থাকে তাহলে প্রতিদিন শটই কিছু নতুনত্ব পরিলক্ষিত করতে পারবেন আর যা পরবর্তী সময়ে আপনার পছন্দের ছবিটি নির্বাচন করতে সাহায্য করবে। তাই যখনই আমরা কোন কিছু ছবি তুলব তখনই একাধিক শট নেওয়ার চেষ্টা করব।
৬. ছবি এডিট করা
আমরা সাধারণত সব সময় ভালো ছবি তুলতে পারি না, ছবি তুললে ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিটেইল ছবির মধ্যে ফুটে ওঠে না। আর এই মহা সমস্যার সমাধান করার জন্য আমরা ছবিকে এডিট করতে পারি। ফটো এডিটর এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার তোলা ছবির হোয়াইট নেস, ডার্কনেস, ছবির ব্লার, ডিটেলস ইত্যাদি নতুন রূপে আপনার ইচ্ছামত ঠিক করে নিতে পারবেন। তাই প্রত্যেক মোবাইল ফটো গ্রাফার এর একটি ভালো ফটো এডিটর ব্যবহার করা উচিত।
৭. RAW তে ক্যাপচার করুন
যারা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফই করেন RAW ফাইলে ফটো ক্যাপচার তাদের কাছে খুবই পরিচিত। সাধারণত ডিএসএলআর ব্যবহারকারীরা RAW ফাইলে ছবি ধারণ করে থাকে কিন্তু বর্তমান সময়ে আপনার হাতে থাকা এন্ড্রয়েড ফোন টির মাধ্যমেও আপনি এই ফাইলে ফটো ক্যাপচার করতে পারেন। সাধারণত JPG ফাইলে ফটোর কোয়ালিটি কিছুটা কমে যায় বিশেষ করে ব্রাইটনেস, ডার্কনেস সহ ফটো ডিটেল কিছুটা কম আসে। কিন্তু RAW ফাইল ফরমেট এ এমন কোন ঝামেলা নেই। এই ফরমেটে ছবির প্রত্যেকটি বিষয় সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়। যা পরবর্তীতে ইডিট করার সময় আপনাকে দারুন সহায়তা করে।
৮. অধিক আলোর ব্যবস্থা করুন
ফটোগ্রাফির সম্পূর্ণ ব্যপারটিই আলোর খেলা। তাই আপনার চিহ্নিত বস্তুটি দিকে পর্যাপ্ত পরিমান আলো আছে কিনা তা খেয়াল করতে হবে। কিন্তু আমাদের চিহ্নিত বস্তুর দিকে আমরা সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা করতে পারি না, তখন যদি আপনি আপনার ফোনের ক্যামেরার আই এস ও ২০০ বা তার কিছু কম রেখে ছবি তোলেন তাহলে আপনার ছবি কম আলোতেও ক্লিয়ার দেখা যাবে। কিন্তু ভালো ফটোগ্রাফির জন্য কম আলো পরিহার করতে হবে, যত সম্ভব আপনার চিহ্নিত বস্তুর দিকে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. গুগল ক্যামেরা অ্যাপ
অ্যান্ড্রয়েড ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি কার্যকর টিপস হতে পারে গুগল ক্যামেরা অ্যাপ। গুগল পিক্সেল ফোনের কথা হয়তো কমবেশি আমরা সকলেই শুনেছি, এই ফোন গুলোর ক্যামেরা অপেক্ষাকৃত ভালো হয়, এ ফোন গুলোতে গুগলের নিজস্ব সকল অ্যাপস দেওয়া থাকে বিশেষ করে এর ক্যামেরার মধ্যেও গুগলের নিজস্ব অ্যাপস দেওয়া হয়ে থাকে যার দরুন এর ফটোগ্রাফি কোয়ালিটি আরো উন্নত হয়। আপনার ফোনটি গুগলের না হলও আপনি গুগলের ক্যামেরা অ্যাপস টি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে আপনার ক্যামেরার কোয়ালিটি সামান্য হলেও উন্নত হবে। আপনি এর সকল মুড সহ এইডিআর মুড ও ব্যবহার করে দেখতে পারবেন এবং আরো সুন্দর ছবি তুলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন।
১০. কখন পোর্ট্রেট মোড ব্যবহার করা উচিত তা সম্পর্কে জানুন
শেষ টিপসটি হচ্ছে পোর্ট্রেট মোড বিষয়ক, আর এ বিষয়টি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পোট্রেট মুড গুলো ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার বা বোকেহ অনুকরণ করার চেষ্টা করে। অনেক ফোনে এ কাজটি অতিরিক্ত সেন্সরের মাধ্যমে হয়, যদিও গুগল পিক্সেল 2 এর মত ফোনে বোকে স্মার্ট এজেন্ট অতিরিক্ত কিছু ছাড়াই এ মোড এর কার্যাবলী অনায়াসে করতে পারে। সাধারণত আপনার অবজেক্ট এর পিছনে অতিরিক্ত অংশগুলো ব্লার করার জন্য পোট্রেইট মুডের এর তুলনা নেই। যখনই আপনার অতিরিক্ত অংশ ব্লার করার প্রয়োজন হবে তখনই আপনি পোর্ট্রেট মোড ব্যবহার করতে পারেন। আর সব সময় যে পোর্ট্রেট মোড দিয়ে ছবি তুলতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি আপনার আশেপাশের পরিবেশ দেখুন, আলোর পর্যাপ্ততা সহ সকল কিছু লক্ষ্য করুন তারপরে মোড নির্বাচন করুন।
আশা করা যায় এই কয়টি টিপস আপনাদের ফটোগ্রাফিতে আরো সহায়তা করবে এবং আরো সুন্দর সুন্দর ছবি উপহার দেয়ার জন্য উৎসাহিত করবে। ধন্যবাদ।