গুগল যখনই অ্যান্ড্রয়েড আপডেট রিলিজ করে তখন আমরা প্রায় সবাই সেই আপডেট পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। কোনো কোনো ফোনে তো আপডেট পাওয়া যায় ১ মাস বা ২ মাস পরে আবার অনেক ফোনে ১ বছর অপেক্ষা করার পরেও কোনো আপডেট পাওয়া যায় না। কিন্তু কেনো? ঠিক আছে! চিন্তা করার কিছু নাই। এই পোস্ট টি পড়তে থাকুন এবং আজ আপনি জেনে যাবেন যে আপনার ফোনে কেন আপডেট আসে না। অ্যান্ড্রয়েড আপডেট প্রসেস কীভাবে কাজ করে? এবং কীভাবে আপনি সবসময় আপনার ফোনে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ইন্সটল করবেন।
অ্যান্ড্রয়েড আপডেট সংক্রান্ত কিছু তথ্য
গুগল প্রায় প্রতি বছর অ্যান্ড্রয়েড এর একটি নতুন ভার্সন রিলিজ করে। যেমন গত বছরের সর্বশেষ ভার্সন ছিল অ্যান্ড্রয়েড মার্সম্যালো এবং এই বছর প্রিভিউ ভার্সন রিলিজ করেছে অ্যান্ড্রয়েড এন। এখন এই সর্বশেষ পরিপূর্ণ আপডেট অ্যান্ড্রয়েড মার্সম্যালো আপনার ফোনে আসবে কিনা বা কেন আসবেনা সেই বিষয়ে কিছু কথা বলে নেওয়া যাক। দেখুন গুগল যখনই কোন আপডেট রিলিজ করে তখন তারা সবসময় টার্গেট করে তাদের নেক্সাস ফোন এর উপর। যেমন এবারের গুগলের নেক্সাস ফোন ছিল “নেক্সাস ৫ এক্স” এবং “নেক্সাস ৬ পি”। এখন গুগল এই দুইটি ফোনের জন্য বিশেষ ভাবে অপ্টিমাইজ করে অ্যান্ড্রয়েড মার্সম্যালো রিলিজ করেছে। তাছাড়াও এর আগের নেক্সাস ফোন ছিল “নেক্সাস ৬” এবং “নেক্সাস ৫”। এই দুইটি ফোনের কথা চিন্তা করেও গুগল মার্সম্যালো তৈরি করে। তো গুগল এর কাছে মোট ৪ টি ফোন ছিল যার জন্য তাদের মার্সম্যালো বানাবার ছিল। এবং অ্যান্ড্রয়েড টিম অনেক সহজেই এই চারটি ফোনের জন্য মার্সম্যালো তৈরি করে। আপনারা যারা “নেক্সাস ৫ এক্স” এবং “নেক্সাস ৬ পি” ব্যবহার করছেন তারা তো মার্সম্যালো ব্যবহার করছেনই এবং সাথে সাথে “নেক্সাস ৬” এবং “নেক্সাস ৫” ব্যবহারকারী গনরাও মার্সম্যালো আপডেট পেয়ে গেছেন।
অন্য কোম্পানির ফোন গুলো কি দোষ করলো? কেন আপডেট পায় না?
তো এই তো ছিল গুগল এর নেক্সাস এর কথা। এবার চলুন কথা বলা যাক স্যামসাং, সনি, এইচটিসি সহ অন্য কোম্পানির ফোন গুলোর বিষয়ে। দেখুন গুগল বাদে অন্য কোম্পানি যারা তাদের ফোনের ওএস হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে তারা কেউই স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে না। স্টক অ্যান্ড্রয়েড হলো সেটি যেটি গুগল আসল ভাবে তৈরি করে। যেটা নেক্সাস ফোনে দেখা যায়। কিন্তু যখন গুগল তার স্টক অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন ফোন কোম্পানিকে প্রদান করে তখন কোম্পানি গুলো সেই অ্যান্ড্রয়েডকে কাস্টম করে নিজের মতো করে করে নেয়।
একটি নেক্সাস ফোনের ডায়ালার, অ্যাপ ড্রয়ার, থিম দেখতে যেরকম হয়, স্যামসাং বা এইচটিসি এর লে-আউট হয় সম্পূর্ণই আলাদা। অনেক সময় এরা অ্যান্ড্রয়েডকে এতোটাই কাস্টম করে যে সেটা কোন ভার্সনের অ্যান্ড্রয়েড তা বোঝার বুদ্ধিই থাকেনা। যেমন আপনি যদি স্যামসাং ফোন ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনি লে-আউট এর দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েড মার্সম্যালো বা অ্যান্ড্রয়েড ললিপপ এর ভেতর তেমন কোন পার্থক্য খুঁজে পাবেন না।
এখন এই কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড তৈরি করতে কোম্পানি গুলোকে অনেক মেহনত করতে হয়। গুগল যখন তার স্টক অ্যান্ড্রয়েড আপডেট কোম্পানি গুলোকে প্রদান করে তখন তারা সেই অ্যান্ড্রয়েড এ অনেক কিছু যোগ করে দেয়। যেমন অ্যাপ আইকন পরিবর্তন করে দেয়, ডায়ালার পরিবর্তন করে দেয়, অ্যাপ ড্রয়ার পরিবর্তন করে দেয় ইত্যাদি যাতে আপনার মনে হয় যে আপনি সেই কোম্পানির ফোন ব্যবহার করছেন। এই কাস্টম প্রসেস এ কোম্পানি গুলোর কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। কেনোনা অ্যান্ড্রয়েড এ এতগুলো পরিবর্তন আনা অবশ্যই সময় সাপেক্ষ্য। এই জন্যই গুগল অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড আপডেট রিলিজ করার পরে ২-৩ মাস পর আপনার ফোনে সেই আপডেট পাওয়া যায়। আবার সেই আপডেট শুধু পাওয়া যায় কোম্পানির ফ্ল্যাগ শিপ ফোন গুলোতে। অর্থাৎ ঐ কোম্পানির দামী ফোন গুলোর জন্য শুধু সেই কোম্পানিটি আপডেট তৈরি করে প্রদান করার চিন্তা করে। এখানে যদি স্যামসাং এর কথা বলি তাহলে স্যামসাং শুধু তার দামী ফোন গুলো যেমন গ্যালাক্সি এস ৬ ও এস ৬ এজ এ অ্যান্ড্রয়েড মার্সম্যালো আপডেট দেওয়ার কথা বলেছে। আবার যদি এলজি এর কথা ভাবি তবে তারা শুধু এলজি জি৪ বা জি৩ এর কথা চিন্তা করছে। এভাবে সকল ফোন কোম্পানি গুলো তাদের ভালো ফোন গুলোকে আপডেট দেওয়ার জন্য টার্গেট করে।
এখন মনে করুন কোম্পানি গুলো যদি তাদের সব ফোন গুলোকে আপডেট দেয়ার চেষ্টা করে তবে আপডেট দিতে আরো বেশি সময় লেগে যেতে পারে। বাজারে স্যামসাং, এলজি, সনি ইত্যাদির ৬ হাজার থেকে শুরু করে ৬০-৭০ হাজার টাকার পর্যন্ত ফোন রয়েছে। অনেক সময় বাজেট ফোন গুলোর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড্রয়েড আপডেট এর জন্য উপযুক্ত হয়না। ফলে সকল ফোনে আপডেট দেওয়া সম্ভব হয়না। এখন আপনি যদি স্যামসাং এর কোন বাজেট ফোন কিনে থাকেন তবে আপনার আপডেট পাওয়ার ১০০% কোন সম্ভবনা নাই। যদি মধ্যম দামের কোন ফোন কিনে থাকেন তবে হয়তো একটি নতুন আপডেট পেতে পারেন, এর পরে যে আপডেট পাবেন না তা ১০০% নিশ্চিত। কেনোনা এরা শুধু তাদের বেশি দামের ফোন গুলোর উপরই টার্গেট করে নিয়মিত আপডেট দেওয়ার জন্য।
এখন যদি কথা বলি সিম্ফুনি, ওয়াল্টন কিংবা লাভা ফোন গুলোর সম্পর্কে তাহলে দেখুন এই কোম্পানি গুলো অনেক ছোট। এবং এরা সবসময় চেষ্টা করে দেশীয় বাজার ধরে রাখতে। এর উপর আমার তো মনে হয় প্রায় প্রতিদিন এক নতুন চাইনিজ কোম্পানি বাজারে আসছে তাদের ফোন নিয়ে। এই অবস্থায় এই কোম্পানি গুলো তাদের মান বজায় রাখতে তাদের কমদামী ফোন গুলোতেও অ্যান্ড্রয়েড আপডেট দিতে পারে। কিন্তু এদের ক্ষেত্রেও গল্পটা একই রকম। চাইনিজ কোম্পানি গুলোও স্টক অ্যান্ড্রয়েড থেকে কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড বানিয়ে তারপর তাদের ফোন গুলোর জন্য আপডেট প্রস্তুত করে। সেক্ষেত্রে আপডেট রিলিজ করার পরে চাইনিজ ফোন গুলোতেও আপডেট পেতে ২-৩ মাস লেগে যেতে পারে।
মটোরোলা এর ফোন গুলোতে কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড দেখতে পাওয়া যায় না। এরা স্টক অ্যান্ড্রয়েডই ব্যবহার করে। শুধু নিজেদের কিছু অ্যাপ প্রবেশ করিয়েই আপডেট রিলিজ করে ফেলে এদের ফোন এর জন্য। তো এই ক্ষেত্রে মটোরোলার কাছে নতুন আপডেট পাবলিশ করা অনেকটা সহজ। কিন্তু অন্য কোম্পানি গুলোর দিকে তাকালে, আপনি যে কোম্পানির কথাই বলুন না কেন এরা সবাই কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে। এখন আপডেট আসলে কোম্পানি গুলো নিজেরাই চিন্তায় পরে যায় যে এতো গুলো ফোন এর জন্য কীভাবে আপডেট তৈরি করবে।
কীভাবে আপনার ফোনে সবসময় অ্যান্ড্রয়েড আপডেট ভার্সন ব্যবহার করবেন?
সোজা বাংলায় বলতে আপনি যদি আপনার ফোনে সর্বদা লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড আপডেট ব্যবহার করতে চান তবে আপনার ফোনটিকে রুট করতে হবে। আপনার ফোনটির মডেল যদি জনপ্রিয় হয়ে থাকে তবে চিন্তা করার কোন কারন নাই, আপনি অফিসিয়াল ওটিএ আপডেট পাওয়ার আগেই এর কাস্টম রম পেয়ে যাবেন। যার মাধ্যমে আপনি অনেক সহজেই আপনার ফোনটিকে ফ্ল্যাশ করতে পারবেন। কোম্পানির অফিসিয়াল আপডেট আসার জন্য আপনাকে একদম অপেক্ষা করতে হবে না। এবং মাত্র ২-৩ ক্লিকে আপনি আপনার ফোনকে আপডেট করতে পারবেন।