Site icon Trickbd.com

রুট কি ? রুট করলে কি লাভ হয় ? রুট পরবর্তী করণীয় এবং রুটের সুবিধা পাওয়ার জন্য কয়েকটি এপসের নাম

 

হাই সবাই কেমন আছেন আমি সোহাগ রানা আজকে রুট কি ? রুট করলে কি লাভ হয় ? রুট পরবর্তী করণীয় এবং রুটের সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ।

রুট আসলে কী ??

রুট শব্দটি এসেছে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম থেকে । লিনাক্স ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাদের রুট প্রিভিলেজ বা সুপারইউজার পারমিশন আছে তাদেরকে রুট ইউজার বলা হয় । সবচেয়ে সহজ শব্দে বলা যায় , রুট হচ্ছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা প্রশাসক যদিও এর বাংলা অর্থ গাছের শিকড় । রুট হচ্ছে একটি পারমিশন বা অনুমতি । এই অনুমতি থাকলে ব্যবহারকারী তার নিজের ডিভাইসে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন । উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারকারী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রিভিলেজ ছাড়া সিস্টেম ফাইলগুলো নিয়ে কাজ করতে পারেননা , লিনাক্সেও তেমনি রুট পারমিশন প্রাপ্ত ইউজার ছাড়া সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজগুলো করা সম্ভব হয়ে উঠে না । যার লিনাক্স-চালিত কম্পিউটার বা সার্ভারে সব কিছু করার অনুমতি রয়েছে, তাকেই আমরা রুট ইউজার বলে থাকি । অনেক সময় একে আমরা সুপার ইউজার বলেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে ।

অ্যান্ড্রয়েড এবং লিনাক্স এর মধ্যে সামঞ্জস্য কোথায় ?
এন্ড্রয়েড তৈরি হয়েছে লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম মুল ভিত্তি থেকে ।

রুট করার যত সুবিধাঃ এন্ড্রয়েড ডিভাইস রুট করলে অতিরিক্ত কি কি সুবিধা পাবো? রুট করা কতটুকু ঝুকিপূর্ণ? রুট করার পর করণীয় কি? নতুন এন্ড্রয়েড ইউজারদের খুব কমন প্রশ্ন এগুলো। সহজ ভাষায় তাদের এসকল জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার জন্যই আমার এই পোস্ট। এখন আমি সহজ ভাষায় রুট করার সুবিধা/অসুবিধা/ঝুকি এবং রুট করার পর করণীয় নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রথমেই আসুন জানি- রুট কেন করবো?
রুট করবেন, কারন-

১। এন্ড্রয়েডে অনেক প্রিমিয়াম এপস/গেমস আছে যেগুলো ফ্রি ব্যবহার করা যায় না, পয়সা দিয়ে কিনতে হয়। কিন্তু আপনি যদি রুট ইউজার হন তাহলে আপনার জন্য প্রায় সবই ফ্রি হয়ে যাবে!

২। ধরুন, আপনি আপনার কয়েক বছরের পুরাতন এন্ডয়েড ফোনটা চেঞ্জ করে নতুন একটা স্মার্টফোন কিনবেন। কিন্তু সমস্যা হল নতুন ফোন কিনলে সবকিছু আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। পুরাতন স্মার্টফোনে আপনার যত এপ্লিকেশন, গেমস ইত্যাদি ছিল তা আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি রুট ইউজার হন তাহলে আপনার ঝামেলা ৯৯% কমে যাবে! আপনার পুরাতন ফোনটাতে যা যা ছিল- যে অবস্থায় ছিল সবকিছু নতুন ফোনে কপি করে নিতে পারবেন- একদম হুবহু। এমনকি ফোনবুক এবং এসএমএস পর্যন্ত হুবহু কপি হয়ে যাবে।

৩। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল- বিশেষ উপায়ে আপনি আপনার ফোনের র‍্যাম এবং রম দুটোই বৃদ্ধি করতে পারবেন। তাছাড়া র‍্যাম এবং রমের ব্যবহার কন্ট্রোল করে ফোনের স্পিড অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

৪। ফোনের সাথে অনেক অপ্রয়োজনীয় এপস দেয়া থাকে- যেগুলা ব্যাকগ্রাউন্ডে সবসময় একটিভ থাকে। ফলে ব্যাটারীর উপর সবসময় একটা চাপ থাকে এবং ব্যাটারী দ্রুত ডিসচার্য হয়ে যায়। তাছাড়া এসব এপস ফোনের মূল্যবান স্টোরেজ স্পেস এবং র‍্যাম দখল করে রাখে। রুট করলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

৫। ফোনের ডিফল্ট বুট লোগো, বুট এনিমেশন, ওয়ালপেপার, রিংটোন, বাংলা এবং ইংরেজী ফন্ট ইত্যাদি পরিবর্তন করা যায়। ধরুন, আপনি ওয়ালটন কোম্পানীর একটা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ফোনটি চালু করার সময় যে বুট এনিমেশন দেখা যায় এবং লগ ইন সাউন্ড শুনা যায় তা আপনার পছন্দ না। আপনি রুট ইউজার হলে ওয়ালটনের এনিমেশন/সাউন্ড পরিবর্তন করে অন্য যে কোন ব্র্যান্ড এর এনিমেশন/সাউন্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

৬। কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড এপস আছে যেগুলো আপনার অজান্তেই আপনার মূল্যবান ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করে আপনাকে ফতুর করে দেয়!! এই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান রুট। রুট করলে কোন এপস ইন্টারনেট এক্সেস পাবে আর কোনটা পাবে না তা আপনি নিজেই ঠিক করে দেবেন।

৭। অনেক এপস আছে যেগুলো ব্যবহার করলে কিছুক্ষণ পরপর বিজ্ঞাপন দেখায়। এটি খুবই বিরক্তিকর লাগে। ফোন রুট করলে বিজ্ঞাপনের এই যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।

৮। রুট করার পর নিজের বিভিন্ন কাষ্টম রম ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। এন্ড্রয়েডের লেটেস্ট ভার্শন আপডেট দেয়া যায়।

৯। এর বাইরেও আরো হাজারটা সুবিধা আছে- যা বলে শেষ করা যাবে না। এক কথায় বলতে গেলে, লবন ছাড়া তরকারী খেতে যেমন লাগে- রুট না করে এন্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করলে তেমনটাই লাগে!!

রুট করার ঝুকিঃ বর্তমানে অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি রুট এপ থাকার কারনে রুট করাটা সহজ এবং নিরাপদ হয়ে গেছে। খুব সহজেই এখন যে কোন ব্র্যান্ড এবং নন-ব্র্যান্ড ফোন রুট করা যায়। কিন্তু সমস্যাটা দেখা দেয় রুট করার পর। রুট করার পর আপনি যদি না বুঝে ফোনের গুরুত্বপুর্ণ কোন এপস/ফাইল ডিলিট অথবা মডিফাই করে দেন তাহলেই সমস্যা। নইলে রুট করার ক্ষেত্রে তেমন কোন ঝুকি নেই।

রুটের এত সুবিধা তাহলে আন্ড্রয়েড মোবাইলে কেন রুট করা থাকে না ?

মোবাইল প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান যখন তাদের মোবাইল গুলো বাজারজাত করে তখন মোবাইল গুলোতে রুট পারমিশন দেওয়া হয় না । কারন হল রুট পারমিট করা থাকলে আপনি তখন আপনার মোবাইলে যে কোন কিছু করতে পারবেন । আপনি মোবাইলের রুট ফোল্ডাররে যেতে পারবেন ( মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম ফোল্ডার ) । আপনি যে কোন ফাইল ডিলিট , এডিট করতে পারবেন । আপনার মোবাইলে যখন রুট পারমিট করা থাকবে তখন আপনি কোন ফাইল ডিলিট বা সরিয়ে নিলে আপনাকে কোন ওয়ার্নিং দিবে না । আপনি হয়ত মনে করছেন এই ফাইল গুলো আপনার কোন প্রয়োজনে আসবে না আর তাই আপনি ফাইল গুলো ডিলিট করে দিয়েছেন । হয়তো আপনি কাস্টমাইজ করতে গিয়ে বা রম ইন্সটল করতে গিয়ে ভুল করে ফোন ব্রিক করে ফেলেছেন । এতে কিছুক্ষণ পর দেখতে পারলেন যে আপনার মোবাইল আর চালু হচ্ছে না । আপনি তখন আপনার মোবাইল প্রস্তুত কারকে দোষারোপ করতে থাকবেন । যদি রুট না থাকতো তাহলে আপনি ফাইল গুলো ডিলিট এডিট তো দুরের কথা আপনি আই ফোল্ডারটি খুজে পেতেন না । ফোন প্রস্তুতকারক আপনাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিলেও এই সব পারমিশন তারা তাদের সুবিধার্থে দেয় না । এটা করা হয় আপনার ভালোর জন্যই ।

রুট করার পর করণীয়ঃ রুট করার পর সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে জরুরী কাজ ‘কাষ্টম রিকোভারী’ ফ্লাশ করা। রিকোভারী মড ফ্লাশ করে স্টক রমের ব্যাকআপ নেয়া যায়। আর স্টক রমের ব্যাকআপ নেয়ার পর আপনার আর কোন ভয় থাকবে না। এবার আপনি ফোনটা দিয়ে নিশ্চিন্তে যা খুশি তাই করতে পারেন। যত ইচ্ছা ডিলিট করেন, মডিফাই করেন- কোন ভয় নাই!! তবে অবশ্যই আপনার ফোনেটির জন্য নির্ধারিত ‘রিকোভারী’ ফাইলটি ফ্লাশ করবেন। ভূল ফাইল ফ্লাশ করলে ফোন ব্রিক হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯৯%।

রুট তো করলেন। কাষ্টম রিকোভারীও সম্পন্ন এখন???
আপনার ফোন তার সর্বোচ্চ সার্ভিস দেয়ার জন্য প্রস্তুত! কিন্তু এজন্য আপনার বেশ কিছু এপস প্রয়োজন হবে। যেসব দূর্দান্ত এপস রুট করার আগে আপনি ব্যবহার করতে পারতেন না এখন সেসব এপস ব্যবহার করে আপনি স্মার্টফোনের আসল মজা খুজে পাবেন। রুট করার পর যে ১২ টি এপস না হলেই নয় সেগুলো হল-

রুট করার পর রুটের সুবিধা পেতে যেসব এপস আপনার দরকার হবে সেগুলোর লিস্ট:

১। Greenify
২। adaway
৩। titanium backup
৪। link2sd
৫। root browser
৬। droidwall
৭। busybox

৮। system file uninstaller
৯। rom manazer/mobileuncletools
১০। boot animation changer
১১। fonter
১২। Lucky Patcher ইত্যাদি…
শেষেরটি ছাড়া প্রায় সবগুলোই প্লে স্টোরে পাবেন। আর শেষেরটির জন্য গুগল মামা তো আছেই ।
বিশেষ নির্দেশনাঃ প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডের প্রত্যেকটি মডেলের জন্য আলাদা রুটিং মেথোড থাকে, আলাদা কাষ্টম রিকোভারী ফাইল থাকে। তাই আপনার ফোনের রুট করার পদ্ধতি জানার জন্য এবং কাষ্টম রিকোভারীর জন্য গুগলের সাহায্য নিন। সার্চ করুন এভাবে- প্রথমে আপনার স্মার্টফোনের মডেল লিখে তারপর ‘রুট’ শব্দটি লিখুন। যেমন ধরা যাক, আপনি Samsung Galaxy S5 ব্যবহার করেন। তাহলে এই ফোনটি রুট করার পদ্ধতি জানার জন্য আপনি গুগলে সার্চ দিন এইভাবে- “samsung galaxy s5 রুট”। যদি বাংলা কোন টিউটোরিয়াল ইন্টারনেটে থাকে তাহলে সেটা পেয়ে যাবেন। আর যদি না পান তাহলে “samsung galaxy s5 root method” লিখে সার্চ দিন। ইংরেজী টিউটেরিয়াল অবশ্যই পাবেন। এছাড়া ফেসবুকে প্রায় প্রত্যেকটা ব্র্যান্ডের প্রত্যেকটা মডেলের আলাদা আলাদা গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপে রুট করার বিস্তারিত পদ্ধতি দেয়া থাকে। একটু খুজলেই পেয়ে যাবেন আশা করি লেখাটি পড়ে নবীন এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা দিকনির্দেশনা পাবেন এবং উপকৃত হবেন ।

আমার একটি ছোট্ট ইউটিউব চ্যানেল আছে ইচ্ছা হলে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন