আমরা আমাদের ফোনের ব্যাটারি নিয়ে ঠিক কতটা চিন্তা করি? যে ব্যাটারিই কিনা আমাদের ফোনের মূল চাবি কাঠি, যে কিনা নির্বিঘ্নে আমাদের ফোনকে সচল করে রাখছে কোনো প্রকার বিশ্রাম ছাড়াই, তাকে নিয়ে তো আমাদের কিছুটা হলেও চিন্তা করার দরকার আছে! তাই নয় কি? বলতে গেলে এই ব্যটারিই হচ্ছে আমাদের ফোনের মূল স্বাস্থ্য। ব্যাটারি মারা গেলে মহা বিপদে পড়তে হয়। ব্যাটারি ব্যাক-আপ বাড়ানোর মতো ব্যাপার গুলোর সাথে আমরা অধিকাংশই পরিচিত, তবে ওগুলো হচ্ছে সফ্টওয়্যারিক্যলি(বিভিন্ন এ্যাপস-এর ব্যাকগ্রাউন্ড রানিং, ব্যাটারি ড্রেইনেজ), তবে আমরা জানবো ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে physically কি করণীয় বা বর্জনীয়। সত্যি কথা কি জানেন? স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি গুলো আসলে কখোনই ফোনের ব্যাটারির ব্যাপারে ইউজারদের সহজ এক্সেস নিয়ে মাথা ঘামায় না। এজন্য অনেক সময়ই দেখা যায় যে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে গোটা নতুন একটা স্মার্টফোন কিনতে হচ্ছে। তাই নষ্ট হবার আগেই সতর্ক হওয়া উচিত।
যেকোনো ব্যাটারি আসলে কখনোই চিরস্থায়ী নয় বা হতে পারে না! তবে ব্যাটারির সঠিক হায়াৎ ধরে রাখার জন্য উপযুক্ত করণীয় বিষয় গুলো অনুসরণ করতেই পারি। যাতে অন্তত তার থেকে সর্বোচ্চটা পেতে পারি! হায়াৎ বলতে এখানে মূলত ব্যাটারির দীর্ঘ-স্থায়ীত্বের মেয়াদ বোঝানো হয়েছে; ব্যাটারির লাইফ-টাইম বা একবার চার্জে ব্যাটারি কতক্ষন যাবে তা কিন্তু বোঝানো হয়নি!
করণীয় ও বর্জনীয়:
- সঠিক সকেট ব্যাবহার করুন: এই ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের মূলত খুব একটা চিন্তা না করলেও চলবে, কারণ আমাদের দেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতে চার্জারের জন্য উপযোগী ভোল্টেজই(100-300v) সরবরাহ করা হয়। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে multi-plug! কখনোই মাল্টিপ্লাগে ফোন চার্জ করবেন না! অবশ্যই সরাসরি ও সঠিক soket ব্যাবহার করুন। চার্জার গুলো সাধারণত দুই পিনের সকেট ব্যাবহার করে থাকে।
- সঠিক চার্জার ব্যাবহার করুন: সর্বদাই ফোনের সাথে সরবরাহকৃত চার্জার ব্যাবহার করবেন। কারণ, সেই চার্জারটি আপনার ফোনের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য একেবারে সঠিক আউট-পুট প্রদান করে থাকে। যদি নিতান্তই অন্য কোনো চার্জার ব্যবহার করতে হয়, তাহলে এমন চার্জার ব্যাবহার করতে হবে যেটি মূল চার্জারের আউট-পুট মানের সমান পরিমাণ আউট-পুট প্রদান করে। এই আউটপুট মানটি চার্জারের গায়ে লিখা থাকে। (যেমন:output=5v) কখনো ডিফল্ট আউট-পুট মানের বাইরের out-put মান বিশিষ্ট চার্জার ব্যাবহার করবেন না। কারণ, একেক ফোনের চার্জারে এই মানটি একেক রকম হতে পারে; যা ঐ ফোনের ব্যাটারির ধরনের উপর নির্ভর করে থাকে।
- চার্জ দেবার নিয়ম: আপনার ফোনের চার্জ লেভেল ২০% বা -এর নিচে না নামা পর্যন্ত ফোন চার্জ দিবেন না। আর, চার্জ দেবার সময় ৮০% বা এর বেশি না হওয়া পর্যন্ত চার্জ থেকে খুলবেন না। চার্জিং-এর সময় ফোন ব্যাবহার না করাটাই ভালো! অবশ্যই ১০০% হলে সাথে সাথে চার্জিং বন্ধ করে দিতে হবে(সম্ভব হলে)। ১০০%-এর পর থেকে ব্যাটারি যে ভোল্টেজ গ্রহন করে, তা অনেকটে এরকম: ব্যাটারির চার্জ ১০০%-এ ধরে রাখার জন্য ঐ সময় প্রতিবার ১০০%-এর কিছুটা নিচে নামার সাথে সাথেই আবার ভোল্টেজ গ্রহন করা শুরু করে দেয়, এভাবে চলতেই থাকার ফলে বিচ্ছিন্ন ভাবে ভোল্টেজ গ্রহন করায় battery-র উপর স্ট্রেইন পড়ে, যার ফলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিভিন্ন গবেষনা বলছে, চার্জ exact ৮০%-এ রাখাই সর্বোত্তোম!
- ফোন সংরক্ষন: আপনার ফোন কখনোই বদ্ধ স্থানে রাখবেন না। এতে ব্যাটারির উপর বিরুপ প্রভাব পরতে পারে। কারণ, আপনার battery থেকে প্রতিনিয়তই তাপ নির্গত হচ্ছে। আর সেই তাপ বায়ু মন্ডলে ছড়িয়ে যাবার সুযোগ না দিলে ব্যাটারি বেশি উত্তপ্ত হলে এর উপর strain পড়ে, ফলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। ফোন কখনো অতি ঠান্ডা বা গরম স্থানে রখবেন না। আপনার ফোনটির যদি চার্জিংয়ের সময় গরম হয়ে যাবার মতো প্রবণতা থাকে, তাহলে ব্যাক-কভার খুলে চার্জ দিন। দ্রুত চার্জ দিতে চাইলে ফোন switch-off করে চার্জ দিতে পারেন, তবে অন্য কোনো fast-charging এর পাল্লায় পরবেন না!
- কিছু লক্ষ্যনীয় বিষয়: কখনোই চার্জ ০%-এ নামতে দিবেন না। ব্যাটারি ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি গুলো আমাদের পরিষ্কার জানায় যে, বর্তমান সময়ের ফোনে ব্যাবহৃত ব্যাটারি গুলির চার্জ ২০% থেকে ৯০% এর মধ্যে চার্জ থাকা অবস্থায় এরা আদর্শ পর্যায়ে থাকে। এ সময় ব্যাটারি গুলি stress-free থাকে। আর ৫০%-এ সবচেয়ে বেশি stable থাকে। সুতরাং, চার্জ highest ৯০% পর্যন্তই হতে দেয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ! আপনার শুনতে মজার মনে হলেও এটা সত্যি যে বর্তমান জেনারেশন এর ব্যাটারি গুলো তত বেশি ভালো থাকবে যতো বেশি আপনি ফোন ব্যাবহার করবেন। তবে আপনি যদি কোনো কারণে আপনার ফোনটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য(সর্বোচ্চ এক মাস) হাইবারনেশনে পাঠাতে চান, তাহলে exact ৫০% চার্জ দিয়ে switch-off করে সংরক্ষন করুন, আর এটাই আপনার জন্য বেস্ট হবে! তবে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মাথায় ফোনটি আপনার একবার হলেও ব্যাবহার করতেই হবে।
দীর্ঘক্ষন যদি ফোন ব্যাবহারের প্রয়োজন না পড়ে, তাহলে সম্ভব হলে ফোনটি switch-off করে রেখে দিবেন; যেমন:- রাতে ঘুমানোর আগে। এভাবে একই নিয়মে আপনি যদি চালিয়ে যেতে থাকেন, তবে এক সময় আপনি অবশ্যই আপনার ফোনের ব্যাটারি পারফরম্যান্সে অনেকটা উন্নতি লক্ষ্য করবেন। তবে এতো কিছুর পরেও দিন শেষে সত্যি একটাই, সেট হলো: ব্যাটারি একদিন মারা যাবেই; কারণ মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিবার ব্যাটারি ফুল চার্জ(০-১০০%)-এর ফলে ব্যাটারির grade কিছুটা কমে যায়, ফলে দিন দিন ব্যাটারির আয়ন গুলো নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। তো, যাই হোক আর উপরোক্ত ডায়েট গুলো ফলো না করলে হয়তো ব্যাটারি মোটাও(ফুলে যাওয়া) হয়ে যেতে পারে। তাছারা ব্যাটারি ব্লাস্ট হওয়ার মতো ঘটনাও কম ঘটেনি, এসব ব্যাপারে আসলে সত্যি বলতে আমাদের কিছুই করার নেই! ?
ভালো থাকুন! ?