অ্যাপস তো আমরা সবাই চিনি এবং প্রত্যেকদিনই ব্যবহার করি। অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কল্পনাই করা যায় না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে অ্যাপসই হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ। একটি অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস থাকে। নেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস, ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর অ্যাপস এবং এমন শত শত কাজের জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি অপারেটিং সিস্টেমে। আর অপারেটিং সিস্টেমটি যদি হয় অ্যান্ড্রোয়েড, তাহলে তো কথাই নেই, প্লে স্টোরে একই কাজের জন্য কমপক্ষে ১০০ রকমের অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপস পাবেন। যাইহোক, আর বেশি ভূমিকা না করে কাজের কথায় আসি। আজকে আমাদের ফিরে দেখুন [Android Apps] এর দ্বিতীয় পর্বে আরো ৫ টি এমন অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার বা আমার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।
১. Canva
এই অ্যাপটি মূলত শুধুমাত্র একটি অ্যাপ নয়। এটি একটি অনলাইন সার্ভিস। অনলাইনে সহজে ইলাস্ট্রেশন ডিজাইন বা যেকোনো রকমের ডিজাইন করার জন্য Canva ওয়েবসাইটটি বেশ জনপ্রিয়। আপনি হয়তো চিনেও থাকবেন এই ওয়েবসাইটটি। কিন্তু আগে এই ডিজাইনিং সার্ভিসটি বা ওয়েব অ্যাপটি শুধুমাত্র পিসি/কম্পিউটার এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ইন্টারনেট কানেকশন এবং পিসি ব্রাউজার ছাড়া এই ওয়েব অ্যাপটি এক্সেস এবং ব্যবহার করা যেত না। তবে কিছুদিন আগেই Canva তাদের অ্যান্ড্রোয়েড এবং আইওএস অ্যাপ রিলিজ করেছে। আর এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি আমার মতে স্মার্টফোনের জন্য বেস্ট এবং সবথেকে সহজ ইলাস্ট্রেশন ডিজাইনিং অ্যাপ। ইলাস্ট্রেশন এর কথা বললাম বলে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে এই অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর এর মত হাই কোয়ালিটি ইলাস্ট্রেশন তৈরী করতে পারবেন। কারণ, এই অ্যাপটি কোনোরকম প্রফেশনাল কাজ করার জন্য ফোকাস করা নয়। তবে খুব দ্রুত একটি বেসিক ডিজাইন বা কোনো টাইপোগ্রাফি তৈরী করার জন্য আমার মতে এর থেকে ভালো অ্যাপ আপনি প্লে স্টোরে পাবেন না। এখানে আপনি হাজারো রকমের প্রি বিল্ট টেমপ্লেট পাবেন যেগুলো নিজের ইচ্ছামতো এডিট করে আপনি আপনার মনের মতো ডিজাইন তৈরী করতে পারবেন। এখানে আপনি আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের জন্য কভার ইমেজ, আপনার ব্লগের জন্য ব্যানার, পোস্ট ইমেজ, আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কভার আর্ট, ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জন্য টাইপোগ্রাফি বা ইমেজ ইত্যাদি প্রায় সব রকম ইমেজ কন্টেন্ট খুবই সহজে তৈরী করতে পারবেন। সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, এই অ্যাপটির কয়েকটি প্রিমিয়াম ফিচার এর জন্য পে করতে হলেও অধিকাংশ ফিচারই সম্পূর্ণ ফ্রি এবং এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ অ্যাড ফ্রি। আমার মতে স্মার্টফোনে সবসময় ইনস্টল করে রাখার মতো অ্যাপ এটি।
অ্যাপটি পাবেন : এখানে
২. TickTick
এটি একটি টাস্ক ম্যানেজার অ্যাপ। আপনার ফোনের টাস্ক ম্যানেজার নয়, বরং আপনার নিজের টাস্ক ম্যানেজার। আমার মতো যাদের সবকিছু ভুলে যাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের জন্য এটি অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি অ্যাপ। এটি মূলত আপনাকে আপনার কাজগুলোকে মনে করিয়ে দিতে সাহায্য করবে। আপনাকে শুধুমাত্র প্রত্যেকদিন সকালে উঠে এই অ্যাপটি ওপেন করে Add Task অপশন থেকে আপনার ঐদিনের সকল কাজ পরপর অ্যাড করতে হবে কাজটির টাইটেল এবং যে সময় আপনি কাজটি করতে চান সেই সময়ের সাথে। তাহলে এই অ্যাপটি আপনাকে আপনার প্রত্যেকটি কাজের নির্ধারিত সময়ে আপনাকে নোটিফিকেশন দিয়ে কাজটি করতে রিমাইন্ড করবে। এবং আপনি চাইলে কাজটির জন্য অ্যালার্মও সেট করে রাখতে পারেন। এছাড়া এই অ্যাপটির একটি ওয়েব ক্লায়েন্টও আছে। আপনি https://ticktick.com এ গিয়েও আপনার সব টাস্ক অ্যাড/রিমুভ/এডিট করতে পারবেন এবং চাইলে আপনার কাজের রিমাইন্ডার এর জন্য ব্রাউজার নোটিফিকেশনও ও করে নিতে পারবেন যাতে আপনি কোনোভাবেই আপনার কাজের রিমাইন্ডার মিস না করে যান। এই অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসটিও অনেক সুন্দর এবং আগের অ্যাপটির মতো এই অ্যাপটিও সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি।
অ্যাপটি পাবেন : এখানে
৩. Tapet
এটি একটি ওয়ালপেপার অ্যাপ। কিন্তু অ্যান্ড্রোয়েড এর অন্যান্য ওয়ালপেপার অ্যাপগুলোর সাথে এই অ্যাপটির কিছুটা পার্থক্য আছে। অন্যান্য ওয়ালপেপার অ্যাপগুলোতে ওয়ালপেপার তাদের অনলাইন সার্ভার থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে হয়। তাই সেই ওয়ালপেপার অ্যাপগুলো অফলাইনে ব্যবহার করা যায়না বললেই চলে। তবে এই ওয়ালপেপার অ্যাপটিতে কোনো ওয়ালপেপার আপনাকে অনলাইন থেকে ডাউনলোড করতে হবেনা। এখানে সব ধরণের ওয়ালপেপার আপনার স্মার্টফোনেই জেনারেট হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরণের ডেটা কানেকশন দরকার হবেনা। বিভিন্ন কালার, প্যাটার্ন, ইফেক্ট এবং প্যাটার্ন কম্পিনেশনের মাধ্যমে আপনার ফোনে অটো জেনারেট হবে এই হাই কোয়ালিটি ওয়ালপেপারগুলো। আপনি এখানে রাইট সোয়াইপ করে নতুন নতুন ওয়ালপেপার জেনারেট করতে পারবেন, লেফট সোয়াইপ করে জেনারেট হওয়া ওয়ালপেপারগুলোতে বিভিন্ন ধরণের কালার কম্বিনেশন এপলাই করতে পারবেন এবং একই কালার কম্বিনেশন ব্যবহার করে নতুন নতুন প্যাটার্ন এর সাহায্যেও নতুন ওয়ালপেপার তৈরী করতে পারবেন এবং হোমস্ক্রিন এবং লকস্ক্রিনে সহজেই সেট করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি কোন কোন প্যাটার্ন এবং কোন কোন কালার কম্বিনেশনের ওয়ালপেপার বেশি দেখতে চান এবং কোন কোন কালার দেখতে চান না সেটাও নিজের ইচ্ছামতো সেট করতে পারবেন। আর হ্যা, এই অ্যাপটিও সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি।
অ্যাপটি পাবেন : এখানে
৪. MEGA
এটি মূলত একটি ক্লাউড স্টোরেজ অ্যাপ। অ্যাপ বা বলে এটিকে সার্ভিস বলতে হবে। এই সার্ভিসটির অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে এখানে। MEGA ক্লাউড স্টোরেজ হিসেবে অনেক জনপ্রিয় এবং অনেকে সেকেন্ডারি ক্লাউড স্টোরেজ হিসেবে মেগাকেই বেশি প্রিফার করেন। কারণ, ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসগুলোর মধ্যে একমাত্র এটিই ফ্রি ভার্সনে প্রত্যেকটি ইউজারকে ৫০ জিবি স্টোরেজ দেয়। কোনো ফ্রি ক্লাউড সার্ভিসে আপনি এমনা প্রাইমারিলি ৫০ জিবি স্টোরেজ পাবেন না। মাইক্রোসফট ওয়ান ড্রাইভে আপনি পাবেন ৫ জিবি ফ্রি স্টোরেজ। গুগল ড্রাইভে পাবেন ১৫ জিবি এবং ড্রপবক্সে পাবেন মাত্র ২ জিবি। একমাত্র মেগাতেই আপনি ৫০ জিবি ফ্রি স্টোরেজ পাবেন। ক্লাউড স্টোরেজ কি এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, আশা করি এটা আপনারা সবাই খুব ভালো করেই জানেন। তাই আমার আর বিশেষভাবে বলার দরকার হবেনা। অন্যান্য ক্লাউড সার্ভিসের প্রায় ৮০% ফিচারসই আপনি মেগাতে পাবেন। যেমন, পিসি সিংক, ক্যামেরা আপলোড, রিসাইকেল বিন ইত্যাদি প্রায় সব মেজর ফিচারসই এখানে পাবেন। এই অ্যাপটিকে মূলত এই লিস্টে ইনক্লুড করলাম শুধুমাত্র এর ফ্রি ৫০ জিবি স্টোরেজ সুবিধার কারণে। আর হ্যা, এটিও সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি।
অ্যাপটি পাবেন : এখানে
৫. Appsales
লিস্টের অন্যান্য অ্যাপগুলোর থেকে এই অ্যাপটি একটু ভিন্ন। এই অ্যাপটিকে মূলত ব্যবহার করতে হবে অন্য অ্যাপ ডাউনলোড করার কাজে। অনেক অ্যাপস এবং গেমের ডেভেলপাররা অনেকসময় তাদের পেইড অ্যাপটি বা প্রিমিয়াম অ্যাপটি লিমিটেড সময়ের জন্য প্লে স্টোরে ফ্রি করে দেয়। কিন্তু অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করার অফারটি লিমিটেড টাইম যেমন ২ দিন বা ৩ দিন এমন অল্প সময়ের হয় বলে বেশি মানুষ অ্যাপগুলোর ব্যাপারে জানতে পারেনা এবং ডাউনলোড করতে পারেনা। Appsales মূলত এই ধরণের লিমিটেড সময়ের জন্য ফ্রি অ্যাপগুলোকে খুঁজে এনে দেয় আপনার সামনে। এই অ্যাপটি ওপেন করলেই আপনি দেখবেন সেই সকল পেইড অ্যাপগুলোর লিস্ট যেগুলো ঠিক ওই সময়ে প্লে স্টোরে ফ্রি আছে। এরপর আপনি সেখান থেকে আপনার পছন্দের কোনো একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে পারবেন প্লে স্টোর থেকে। এছাড়া আপনি এখানে সেই সকল পেইড অ্যাপগুলোও দেখতে পাবেন যেগুলোর প্রাইস কমানো হয়েছে লিমিটেড সময়ের জন্য। আপনি চাইলে সেখান থেকে কম দামে অ্যাপ কিনতেও পারবেন। আপনি চাইলে উইশলিস্টেও পেইড অ্যাপ অ্যাড করে রাখতে পারবেন যেগুলো কোনো একদিন প্লে স্টোরে ফ্রি করে দেওয়া হলে সাথে সাথেই যেনো আপনি নোটিফিকেশন পান অ্যাপটি ডাউনলোড করার জন্য। মনে রাখবেন, এগুলো কোনোভাবেই কোনো ক্র্যাক অ্যাপস বা অবৈধ অ্যাপ নয়। কারণ, অ্যাপগুলো ফ্রি থাকলেও আপনাকে প্লে স্টোর থেকেই ডাউনলোড করতে হবে।
অ্যাপটি পাবেন : এখানে
এই ছিল আজকের ৫ টি অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ যেগুলো আপনার কাছে প্রয়োজনীয় হতে পারে।
পোস্টের মাধ্যমে যদি সামান্য উপকৃত ও কিছু জানতে ও শিখতে পারেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।