অ্যাপস তো আমরা সবাই চিনি এবং প্রত্যেকদিনই ব্যবহার করি। অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কল্পনাই করা যায়না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে অ্যাপসই হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ। একটি অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস থাকে। নেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস, ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর অ্যাপস এবং এমন শত শত কাজের জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি অপারেটিং সিস্টেমে। আর অপারেটিং সিস্টেমটি যদি হয় অ্যান্ড্রোয়েড, তাহলে তো কথাই নেই, প্লে স্টোরে একই কাজের জন্য কমপক্ষে ১০০ রকমের অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপস পাবেন। যাইহোক, আর বেশি ভূমিকা না করে কাজের কথায় আসি। আজকে আমাদের ফিরে দেখুন [Android Apps] এর পঞ্চম পর্বে আরো ৫ টি এমন অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার বা আমার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।
Tide
আমাদের প্রতিদিনের শত ব্যাস্ততার মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার বিকল্প নেই। Tide এমনই একটি অ্যাপ যেটি আপনাকে বিশ্রাম নিতে এবং ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। এবং আপনি যদি এমন ধরনের মানুষ হয়ে থাকেন, যে খুব সহজেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন এবং আপনি যদি আপনার কোন একটি কাজে ফোকাস করতে চান তাহলে Tide অ্যাপটি আপনার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অ্যাপ হবে। এই অ্যাপে আপনি মুলত কিছু সাউন্ড ইফেক্ট পাবেন যেগুলো আপনার কাজের জায়গায় খুব লো ভলিউমে প্লে করে রাখলে এগুলো আপনাকে অন্যমনস্ক হওয়া থেকে বিরত রাখবে এবং আপনার কাজে আপনাকে আরও বেশি ফোকাস করতে সাহায্য করবে।
এখানে আপনি হালকা বৃষ্টির শব্দ, বাতাসের শব্দ, রাতের ঝিঝি পোকার শব্দ, সমুদ্রের পানির শব্দ ইত্যাদি সাউন্ড ইফেক্ট পাবেন এবং প্রত্যেকটি সাউন্ড খুবই ক্লিয়ার এবং রিল্যাক্সিং। আপনি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী এই সাউন্ডগুলো প্লে করে রাখতে পারবেন। এছাড়াও এই অ্যাপটিকে আপনি একটি অ্যালার্ম ক্লক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। রাতে ঘুমানোর সময় আপনি অ্যালার্ম সেট করে দিলে এটি সেই সময় পর্যন্ত লো ভলিউমে এমন একটি রিল্যাক্সিং সাউন্ড প্লে করবে যা আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে। এই অ্যাপটিকে আপনি আরও অনেক কাজেই ব্যবহার করতে পারেন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী। এই অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসটিও অসাধারন এবং এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি।
VPN Hub
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটি একটি ভিপিএন অ্যাপ। আর নাম শুনে ও লোগো দেখে যদি এটা না বুঝে থাকেন যে এই নতুন ভিপিএন অ্যাপটি কার তৈরি, তাহলে আপনাকে বুঝতেও হবেনা। এই ভিপিএন অ্যাপটি প্লে স্টোরের অন্যান্য প্রিমিয়াম ভিপিএন অ্যাপেরই মতো, তবে এটিকে এখানে ফিচার করলাম, কারন এই ভিপিএন অ্যাপটি ফ্রি সার্ভিসেই ইউএস এর সার্ভার দিয়ে থাকে যা প্লে স্টোরের খুব কম ভিপিএন অ্যাপই দেয়। অন্যান্য অধিকাংশ ভিপিএন অ্যাপের প্রিমিয়াম সাবসক্রিপশন না নেওয়া পর্যন্ত আপনাকে নিজের ইচ্ছামত সার্ভারে কানেক্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়না। এখানেও আপনাকে দেওয়া হবেনা, তবে আপনাকে এখানে ভিপিএন প্রোভাইডারের ইচ্ছামতো অপটিমাল লোকেশনও নিতে হবেনা। ফ্রি ভার্সনে আপনি একটি সার্ভারই পাবেন এবং সেটি ইউএস সার্ভার।
অ্যাপটি প্রথমবার ইন্সটল করলে আপনাকে ৭ দিনের জন্য প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনও দেওয়া হবে বিনামুল্যে যার সাহায্যে আপনি ৭ দিনের জন্য ওই ভিপিএন অ্যাপে এভেইলেবল সবগুলো সার্ভার ব্যবহার করতে পারবেন। স্পিড এবং লেটেন্সির দিক থেকে এটি অন্যান্য অধিকাংশ ফ্রি ভিপিএন অ্যাপের থেকে অনেক বেটার। আপনি চাইলে এটির প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনও নিতে পারবেন যার জন্য আপনাকে প্রতি মাসে প্রায় ৮০০ টাকার মতো খরচ করতে হবে। তবে অধিকাংশ মানুষের জন্য ফ্রি ভার্সনের ইউএস সার্ভারটিই যথেষ্ট হবে বলে আমি মনে করি। কারন, ভিপিএন আমরা অনেকে ব্যবহার করি শুধুমাত্র ইউএস সার্ভারের জন্যই।
Android Messages
এই অ্যাপটি গুগলের তৈরি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ যেটিকে অনেকেই হয়তো চেনেন এবং ব্যবহারও করেন। গুগলের পিক্সেল ফোনগুলোতে ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে এই অ্যাপটিই দেওয়া হয়। তবে এই অ্যাপটি প্লে স্টোরেও আছে, যার ফলে যেকোনো মডার্ন অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই এই অ্যাপটি ইন্সটল এবং ব্যবহার করা সম্ভব। ফোনের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপটি যদি আপনার ভালো না লাগে এবং থার্ড পার্টি কোন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে চান, তাহলে আমার মতে এটিই বেস্ট থার্ড পার্টি মেসেজিং অ্যাপ। গুগলের খুবই সুন্দর ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন, রেসপনসিভ ইউজার ইন্টারফেস তো আছেই, এছাড়া আরেকটি দরকারি ফিচার হচ্ছে, আপনি জিমেইল অ্যাপ থেকে সোয়াইপ করে ইমেইল ডিলিট করার মতো এই অ্যাপে লেফট/রাইট সোয়াইপ করে মেসেজ আর্কাইভ এবং ডিলিটও করতে পারবেন।
এছাড়া এই মেসেজিং অ্যাপে খুব সহজে এক ক্লিকেই যেকোনো OTP বা টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কোড কপি করতে পারবেন যা একটি মেসেজিং অ্যাপের জন্য সবথেকে দরকারি ফিচার বলে আমি মনে করি। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবের মতো মোবাইল থেকে কিউআর কোড স্ক্যান করে পিসির সাহায্যে মেসেজ চেক করা এবং মেসেজ সেন্ড করার সুবিধাও আছে এই অ্যাপটিতে। এর ফলে যাদের মোবাইলের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপে মানুষের সাথে শর্ট চ্যাট করার অভ্যাস আছে, তাদের আরও একটু সুবিধা হবে। থার্ড পার্টি মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই গুগলের এই মেসেজিং অ্যাপটি ট্রাই করে দেখবেন।
Clipboard Manager
এমন অনেকসময়ই হয়ে থাকে যে আমরা কোন লিংক বা কোন টেক্সট কাউকে সেন্ড করার জন্য ফোনের ক্লিপবোর্ডে কপি করে রেখে দেই এবং কিছুক্ষন পরেই ভুলে যাই। এরপরে যখন মনে পড়ে সেন্ড করার কথা, তখন আর সেটি পেস্ট করতে পারিনা কারন ততক্ষনে ফোনের ক্লিপবোর্ড হিস্টোরি ক্লিয়ার হয়ে যায়। আপনি স্মার্টফোন ইউজার হয়ে থাকলে কখনো না কখনো এই সমস্যায় পড়েছেন এবং বিরক্ত হয়েছেন। তবে Clipboard Manager অ্যাপটি আপনাকে এই ঝামেলার থেকে মুক্তি দিতে পারে।
এই অ্যাপটি ইন্সটল করা থাকলে, নেক্সট টাইম থেকে যতবার আপনি ফোনে কোন লিংক বা কোন টেক্সট কপি করবেন, সবগুলো এই অ্যাপে অটোমেটিক পেস্ট হয়ে যাবে এবং সবগুলো ছোট ছোট নোট আকারে লিস্টের মতো জমা হবে। তাই আপনার ক্লিপবোর্ড ক্লিয়ার হয়ে গেলেও আপনি জাস্ট এই অ্যাপটি ওপেন করে আপনার কাঙ্খিত টেক্সটটি আবারও কপি করতে পারবেন কিংবা চাইলে সেখান থেকেই শেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া আপনি এই অ্যাপটি নোট লেখার কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। এই অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস যথেষ্ট ক্লিন এবং একইসাথে সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি।
Color Phone Flash
নাম শুনেই নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে এটি একটি কলিং অ্যাপ। যারা স্টাইলিস ফোনের ফোনে নানা চেঞ্জ এর মাধ্যমে মজা অনুভব করেন তাদের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি অ্যাপ হতে পারে এটি। এই অ্যাপটি একটিভ করলে আপনি কল দেওয়া থেকে শুরু করে রিসিভ করার সময় নানা ইফেক্ট দেখতে পারবেন। প্রত্যেকটি ইফেক্ট হাই রেজুলেশনের সম্পন্ন।অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি অবশ্যই মজা পাবেন এবং অন্যদের চমকে দিতে পারবেন।
আপনি চাইলে অ্যাপটির মাধ্যমে আপনাদের বন্ধুদের সারপ্রাইজ দিতে পারেন।যারা এ পর্যন্ত অ্যাপটি ব্যবহার করেছেন তাদের মতামত থেকে জানা যায় যে অ্যাপটি খুবই ভাল আসলে এখানে সবকিছু বলা সম্ভব নয়।আপনাদের ভালো লাগলে অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন।