গত পোস্টে আমি আপনাদের সাথে ব্লগিং করলে যেসব বিষয় জানতে হবে এমন টাইটেল দিয়ে ১০টি ধাপ শেয়ার করেছিলাম।যেগুলো আমাদের ব্লগিং করার জন্য প্রয়োজন।এর প্রত্যেকটির ধাপ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।যেমন ধরুন, আমি দ্বিতীয় ধাপে বলেছি নিশ সিলেক্ট করা।এখন যদি কেউ বলে যে,আমি নিশ সিলেক্ট না করে ব্লগিং করতে পারবো?উত্তর দিবো পারবেন।কিন্তু লাভ কি?আমরা যদি কোনো একটি উদ্দেশ্য নিয়ে ব্লগিং না করি,তবে তো সেটি সফল করা সম্ভব না।একটি ব্লগে টেকনোলজি এবং রান্না উভয় নিশ নিয়ে কাজ করলে কেমন জগাখিচুড়ি ব্যাপার হয়ে যায় না?
আমার ওয়েবসাইটের ভিজিটর হলো ওয়েবসাইটের প্রাণ।ভিজিটর ছাড়া সব কাজ করাই সময় নষ্ট।আর সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলার হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।যেটি আমাদের ওয়েবসাইটে না আসলে কোনো পোস্ট ইনডেক্স ই হবে না। তাই,ভিজিটর এবং এই ক্রলার ২টি জিনিসের আমাদের ওয়েবসাইটে আসা যাওয়া চলমান রাখতে নির্দিষ্ট নিশে কাজ করা উচিত।নয়তো উভয়ই কনফিউজ হয়ে যাবে আমাদের ব্লগের টপিক নিয়ে।
যাই হোক,আজকের এই পোস্টটিতে আমি গত পোস্টে উল্লেখ করা ১০টি ধাপের ২য় এবং ৩য় ধাপ নিয়ে আলোচনা করবো।গত পোস্টে একদম বিস্তারিত আলোচনা করতে পারিনি।তবে এই পোস্টে সেটি সুদে আসলে তুলতে পারবো বলে ধারণা করছি।পোস্টের মূল বিষয় বস্তুতে ফিরে যাই।
নিশ কি?
নিশ কি সেটা আগের পোস্টেও উল্লেখ করেছি।নিশ হলো একটি বিষয়।অর্থাৎ,আমরা যে বিষয়ে ব্লগিং করবো, সেটিই আমাদের ব্লগের নিশ।নিশ কিন্তু অনেক ধরনের রয়েছে।একটি উদাহরণ দেই,আমরা স্কুল,কলেজে পড়ি।স্কুল এবং কলেজের কিন্তু ধরুন আছে।যেমন, English Version স্কুলে সবকিছুই ইংলিশে পড়ানো হয়,আবার অন্যদিকে বাংলা ভার্সনে শুধু ইংলিশ বই ছাড়া সবকিছুই বাঙলাতেই পড়ানো হয়।এছাড়াও,স্কুলের ধরন রয়েছে।অর্থাৎ,আর্ট স্কুল,যেখানে শুধু আর্ট শেখানো হয়।আবার রয়েছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।যেখানে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পড়ালেখা করানো হয়।
ঠিক তেমনি, আমরা যখন ব্লগিং করবো,তখন ভিজিটররা আমাদের ওয়েবসাইটে কিছু পড়তে আসবে।এখন ইউটিউবে সবকিছুর টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়।তবু কিন্তু অনেক সংখ্যক মানুষ আছে,যারা পড়তে ভালোবাসে।তারা কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন থেকে আমাদের ওয়েবসাইটে কোনো বিষয়ে আর্টিকেল পড়তে আসে।তাই তারা যখন আমাদের ওয়েবসাইটে ঢুকবে,তখন যেনো তাদের একটি ধারণা হয়ে যায় যে আমাদের ব্লগটি কি সম্পর্কে।অর্থাৎ,আমরা আমদের ব্লগে কোন টপিকে পোস্ট করে থাকি।
ধরুন, কোনো ভিজিটর একটি টেকনোলজি সম্পর্কিত কীওয়ার্ড সার্চ করে আমাদের ওয়েবসাইটে আসলো,তারপর দেখলো আমাদের ওয়েবসাইটে একটি টেকনোলজি সম্পর্কিত পোস্ট আছে ঠিকই,কিন্তু বাকি সব রান্না বিষয়ক পোস্ট।সেই ভিজিটর কিন্তু দ্বিতীয়বার আমাদের ওয়েবসাইট ম্যানুয়ালি ভিজিট করবে না।যদি আমাদের পুরো ওয়েবসাইটটি টেকনোলজি নিয়ে হতো,তবে সেই ভিজিটরের কাছে আমাদের ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ভালো লাগলে দ্বিতীয়বার আবার ভিজিট করতো।
ঠিক তেমনি,সার্চ ইঞ্জিন এর ক্রলার যখন আমাদের ওয়েবসাইটের একটি টেকনোলজি সম্পর্কিত পোস্ট সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক করাবে,এবং পরবর্তীতে দেখবে আমাদের ওয়েবসাইটে রান্নার পোস্ট হচ্ছে,তখন কিন্তু আমরা দ্বিতীয়বার টেকনোলজি নিয়ে পোস্ট করলে সেই পোস্টটি আর র্যাঙ্ক করবে না।কারণ,সার্চ ইঞ্জিন ক্রলার বুঝে যাবে যে আমাদের ওয়েবসাইটি টেকনোলজি সম্পর্কিত না।আর র্যাঙ্ক না করলে তেমন ভালো পরিমাণ ভিজিটর পাবো না আমরা।যারা টেকনোলজি নিয়ে পোস্ট লেখে,তাদের ওয়েবসাইট র্যাঙ্ক বা করিয়ে আমাদের ওয়েবসাইট র্যাঙ্ক করাতে যাবে কেনো?
উপরের এতগুলো লেখা লিখলাম আপনাকে এটা বুঝানোর জন্য যে আমাদের ওয়েবসাইটের একটি প্রাইমারি নিশ থাকা প্রয়োজন।তাই আমদের নিশ সিলেক্ট করতে হবে ব্লগিং করতে গেলে।নিশ এর মাঝে আপনি টেকনোলজি, রান্না, সাইন্স , গল্প , মুভি রিভিউ, নিউজ, ইত্যাদি সিলেক্ট করতে পারেন।তবে,আপনার যে নিশে অনেকদিন যাবত ব্লগিং করার সক্ষমতা আছে,সেটি সিলেক্ট করবেন।নিশ সিলেক্ট করার সময় অবশ্যই ভাবনা চিন্তা করে নিশ সিলেক্ট করবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস নাকি ব্লগার?
গত পোস্টে আমি এইটা নিয়ে একটু আলোচনা করেছিলাম।ব্লগার কেনো ব্যবহার করবো,এবং এর উপকারিতা কি? আর ওয়ার্ডপ্রেস এর উপকারিতা কি?চলুন এই বিষয়গুলো নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোকপাত করা যাক।
Google Blogger সিএমএস
Blogger হলো গুগলের নিজস্ব একটি ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম।গুগলের অন্যান্য সেবার মত এটিও ফ্রী।আপনি যদি ব্লগিং সেক্টরে বিগীনার হয়ে থাকেন,তবে গুগল ব্লগার দিয়ে ব্লগিং শুরু করতে পারেন।আপনি চাইলে গুগল ব্লগার দিয়ে ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।এতে আপনাকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।আপনি যদি চান তবে ডোমেইন কিনে ব্লগিং শুরু করতে পারেন।নয়তো ব্লগারের সাবডোমেইন দিয়েও ব্লগিং করতে পারেন।যদি ডোমেইন কিনেন তবে বছরে আপনার খরচ হবে মাত্র ৮০০-১০০০ টাকা।
আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি ব্লগ খুলতে পারবেন।এজন্য আপনাকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।শুধু একটি গুগল একাউন্ট থাকলেই হবে।আপনাকে হোস্টিং কিনতে হবে না।অনেকেই সাবডোমেইন দিয়েও অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল নিয়েছে।আপনি চাইলে ব্লগারের সাবডোমেইন দিয়েও ব্লগিং করতে পারবেন।এজন্য আপনাকে শুধু পোস্ট লিখতে হবে এবং এই পোস্টগুলো অবশ্যই এসইও ফ্রেন্ডলী করতে হবে।অতঃপর পোস্টগুলো সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করাতে হবে।
WordPress সিএমএস
WordPress একটি থার্ড পার্টি ব্লগিং সেক্টর বা CMS। CMS মানে Content Management System । ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে কিছু টাকা খরচ করতে হবে।আলাদা করে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে হবে।তাছাড়া এখানে আপনি অনেক ধরনের বাড়তি ফিচার পাবেন।তাই যারা প্রফেশনাল ভাবে ব্লগিং শুরু করবেন বা করতে চাচ্ছেন তাদের ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আরও পড়ুন — রোল নাম্বার দিয়ে এসএসসি রেজাল্ট
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করার সময় আমাদের নিজস্ব হোস্টিং ব্যবহার করতে হয়।তাই সকল তথ্যের উপর আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা থাকে।যদি কখনো ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে যায়,বা ডাটা লস হয়,তবে সহজেই রিস্টোর করে সবকিছু আবার আগের মত করা যায়।তাই প্রায় সব বড় বড় ব্লগার ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করে থাকে।ওয়ার্ডপ্রেসকে আপনি একটি পারফেক্ট সিএমএস বলতে পারেন।যেখানে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন।শুধু আপনাকে মাসিক অথবা বাৎসরিক ভিত্তিতে কিছু টাকা ব্যয় করতে হবে।
প্লাগিন ব্যবহার করার সুবিধা।ওয়ার্ডপ্রেসে আমরা অনেক ধরনের প্লাগিন দেখতে পাই।এই প্লাগিন গুলো ব্যবহার করে আমাদের ব্লগকে ইচ্ছেমত কাস্টোমাইজ করে নিতে পারি।এসইও কিংবা পেজ স্পীড বৃদ্ধি করতে এসব প্লাগিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।কন্টেন্ট রাইটিং কিংবা পাবলিশ উভয় ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস অন্যতম।ওয়ার্ডপ্রেসে অনেক সুবিধা রয়েছে , যা দিয়ে প্রফেশনাল ভাবে ব্লগিং করা সম্ভব।অনেকেই প্রফেসনাল ভাবে ব্লগিং করছে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে।মাসে হাজার ডলার ইনকাম করছে এমন ব্লগার আছে আমাদের দেশে।সেটাও আবার বাংলাতে ব্লগিং করে।
আরও পড়ুন – ওয়ালটন ফ্রিজ দাম ২০২৪
নতুনদের জন্য গুগল ব্লগার দিয়ে ব্লগিং করা অনেক সহজ।কেউ নতুন ব্লগিং শুরু করলে সহজেই তার ওয়েবসাইট কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।তাছাড়া গুগল ব্লগার এর ইউজার ইন্টারফেস ইউজার ফ্রেন্ডলি।একজন বিগীনার সহজেই সবকিছু আয়ত্ত করতে পারবেন।কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করতে গেলে আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা অর্জন করতে হয়।ওয়ার্ডপ্রেস শেখার জন্য আপনি বিভিন্ন টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন ইউটিউবে।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার উপর।আপনি ব্লগিং কতদিনের জন্য করতে চাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে কম সিএমএস দিয়ে ব্লগিং করবেন।অনেকেই অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল নিয়েই ওয়েবসাইট সেল করে দেয়,তাদের জন্য ব্লগার ভালো বলে মনে করি।কারণ,শুধু একটি ডোমেইন কিনলেই হয়ে যায়।বেশি ঝামেলা নেই।একবার সবকিছু সেটআপ করলেই হয়।তবে আপনি যদি এমন অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল নিয়ে ওয়েবসাইট সেল করতে চান,তবে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েও করতে পারবেন।কারণ,এখানে সবকিছু আপনার নখদর্পণে থাকবে।
হোস্টিং না দিয়েও ওয়েবসাইট সেল করা যায়।এছাড়া আপনি যদি নিজের জন্য একটি ব্লগ সাইট চান,বা প্রফেশনাল ভাবে ব্লগিং করতে চান,তবে অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস নির্বাচন করার পরামর্শ দিবো।একটি কাজ করতে যদি আমাদের ১মিনিট সময় লাগে,সেই কাজটি করতে আমরা ৩০মিনিট সময় কেনো নষ্ট করবো?তাই ব্লগার কিংবা ওয়ার্ডপ্রেস যেকোনো একটি সিলেক্ট করার আগে অবশ্যই একটু সময় নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবেন।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্টাটাস পড়তে ভিজিট করুন –
উপসংহার
এই পোস্টে আমি ব্লগিং এর গুরুত্বপূর্ণ ২টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।একটি হলো নিশ এবং অপরটি হলো ব্লগিং এর প্ল্যাটফর্ম।নিশ এবং ব্লগিং সিএমএস উভয়ই আমাদের সময় নিয়ে নির্বাচন করা উচিত।যদি কোনো প্রশ্ন থাকে,মন্তব্য করবেন।