এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমও পেছাবে

ছবির ক্যাপশান,এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমও পেছাবে

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে সব ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ে এবছরের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবং কর্তৃপক্ষ এখনও পরীক্ষার সময়সূচী ঘোষণা না করায় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, এরপর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম। তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষা হওয়া এবং পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

কবে নাগাদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে সেসম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও সরকার বলছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে পরীক্ষা নেয়ার মত সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না।

তবে কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা বললেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাটা কতটা নিরাপদ হবে, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এইচএসসি পরীক্ষার্থী সালমান রাফিদ ঢাকার আরমানিটোলার বাসিন্দা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের কথা বললেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে খুব একটা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না তিনি।

সালমান রাফিদ বলেন, “বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আসল চিত্রটা কেমন, তা নিয়েই তো সন্দেহের শেষ নেই। সরকারের বিরুদ্ধে তো সেই প্রথম থেকেই তথ্য গোপন করার অভিযোগ আছে। দায়িত্বশীলরা বারবার কথা পাল্টেছেন। এরপর যখন বলবে যে পরিস্থিতি পরীক্ষা দেয়ার জন্য নিরাপদ, তখন সেটাই বা বিশ্বাস করবো কীভাবে?”

ময়মনসিংহের পরীক্ষার্থী সামিহার অভিভাবক রুবি আক্তারেরও শঙ্কাও একই ধরণের।

পরীক্ষায় পাশের ফল পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের উৎসব, ঢাকা, ১৯-০৭-২০২০।

ছবির ক্যাপশান,এই দৃশ্য এ’বছর দেখা যাবে না: এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের ফল পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের উৎসব, ২০১৬ সাল থেকে।

তিনি বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এই করোনাভাইরাস অনেকদিন থাকবে মানুষের সাথে। তাহলে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার মত বড় আয়োজন করা হলে সেটি কি আমাদের সন্তানদের এবং আমাদের জন্য নিরাপদ হবে?”

অনেক অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী মনে করেন আগামী দুই এক মাসের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে।

অধিকাংশ অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকলেও অনেকেই আবার মনে করেন পরীক্ষা আয়োজন করা হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা খুব একটা বাড়বে না।

সাভারের পরীক্ষার্থী সুদীপা সরকার বলছিলেন, “প্রথম কয়েকমাস স্বাভাবিকভাবে জীবন না চললেও গত কিছুদিন ধরে তো সব স্বাভাবিকভাবেই চলছে। বাসায় বাবা, বড় বোন নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন, আমরাও প্রয়োজনে বাইরে বা বাজারে যাচ্ছি, তাহলে পরীক্ষা দিতে সমস্যা কোথায়?”

তিনি মনে করেন, এতদিন সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা ছিল, সে সব নির্দেশনা মানলে এইচএসসি পরীক্ষার সময়ও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে না।

‘জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না’

এইচএসসি পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হতে পারে সেসম্পর্কে মন্তব্য না করলেও বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

মি. চৌধুরী বলেন, “এখন এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণই নেই, কারণ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে এখনই এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করছি না। আর এই সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যার ফলে জনস্বাস্থ্যের হানি ঘটে।”

“এখনও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ আমরা দিতে পারছি না কারণ এখনও আমরা নিশ্চিত না যে এখন পরীক্ষা আয়োজন করলে সংক্রমণ সীমিত মাত্রায় হবে।”

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার পর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ছাত্রীদের আনন্দ, ১৮-০৮-২০২০।

ছবির উৎস,NURPHOTO ছবির ক্যাপশান, পরীক্ষার ফল ভাল হলে সবাই মিলে আনন্দ উৎসব এখন শুধু মাত্র অতীতের স্মৃতি।

 

এছাড়া অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় পরীক্ষা পরিচালনা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “পরীক্ষা পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট সব দিক বিবেচনা করে, বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেই পরীক্ষার সময়সূচি দেয়া হবে। সুতরাং পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগের কিছু নাই।”

তবে পরীক্ষা দেরিতে হলেও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে ‘নো একজামিনেশন অ্যাসেসমেন্ট’ অর্থাৎ পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পর্যায়ে উত্তীর্ণ করে দেয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।

“আমাদের যেহেতু ‘কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্ট’ (ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন) প্রক্রিয়া এখনো প্রস্তুত নয়, তাই পরীক্ষা না নিয়ে গ্রেড দিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমরা এখন চিন্তা করছি না।”

পরীক্ষার কতদিন আগে পরীক্ষার্থীদের সময়সূচি জানানো হবে – এই প্রশ্নের উত্তরে মি. চৌধুরী শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, “পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১৫ দিন আগে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।”

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা ৷

যদি পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে আমার সাইটটি ঘুরে দেখুন একবার ☞ hmvai.com

ধন্যবাদ ৷

2 thoughts on "করোনা ভাইরাস: বাংলাদেশে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কী ভাবছে কর্তৃপক্ষ?"

  1. MD FAYSAL Contributor says:
    আমি একজন HSC পরিক্ষাতী আমি জানি আমি যে কি প্যারায় আছি, auto pass না দিলে আমার মতো বহু ছাত্র ফেল করবে???

Leave a Reply