অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি বলতে কি বুঝায়?
উত্তর: সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে এমন একটি
পরিস্থিতি যখন দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে
থাকে অতপর অর্থের মূল্য ক্রমাগত হ্রাস
পেতে থাকে।
অর্থনীতিবিদের সংজ্ঞা :
অধ্যাপক কুলবর্ন এর মতে, “মুদ্রাস্ফীতি হলো
এরূপ একটি পরিস্থিতি, যেখানে অধিক পরিমাণ অর্থ
স্বল্প পরিমাণ দ্রব্যের পিছনে ধাবিত হয়।”
অর্থনীতিবিদ ক্রাউথার এরমতে ,“ মুদ্রাস্ফীতি
এরূপ একটি পরিস্থিতি যখন অর্থের মূল্য ক্রমাগত
হ্রাস পায়, অর্থাৎ দ্রব্যের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পায়।”
অধ্যাপক লর্ড কেইন্সের মতে,“ পূর্ণ নিয়োগ
ক্ষেত্রে উৎপাদনের পরিমাণ স্থির থেকে
মোট চাহিদা বৃদ্ধির দ্বারা যদি দামস্তর বাড়ে, তবে
তাই হবে প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি।”
এসব সংজ্ঞার আলোকে বলা যায়, সমাজে দ্রব্য
সামগ্রীর যোগানের তুল নায় অর্থের যোগান
বেশী হলে যদি দামস্তর বৃদ্ধি অর্থাৎ অর্থের
মূল্য হ্রাস পেতে থাকে তাকে মুদ্রাস্ফীতি
বলে।
কিভাবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রন করা যায় এবং
সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে:
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মুদ্রাস্ফীতি একটি
গুরূত্বপূর্ণ উপাদান তবে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির হার এর
তুলনায় উৎপাদনের বৃদ্ধির হার কম হলে সেই
মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
মুদ্রাস্ফীতি তখনি কাম্য হবে যখন মুদ্রাস্ফীতির
সাথে উৎপাদনও একই হারে বৃদ্ধি পায় এবং
কর্মসংসস্থানও প্রকৃত চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর প্রায়
৮০% দেশ হলো উন্ন্য়নশীল এবং অনুন্নত
দেশ যার মধ্যে অধিকাংশ দেশের বড় সমস্যা
হলো মুদ্রাস্ফীতি যা উৎপাদন কর্মসংস্থানের
সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলোকে প্রদানত দুইভাগে
ভাগ করা যায়ঃ-
১। চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি
২। খরচ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি
সরকারী ব্যয় হ্রাস: চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি
সময়ে সরকার ব্যয়ের পরিমান হ্রাস করতে পারে।
বিশেষ করে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বন্ধ
করে দিতে পারে এর ফলে আর্থিক আয় প্রভাহ
কমে যায়। আয় কমলে সামগ্রকি চাহিদা হ্রাস পায়, দাম
এস্তর কমে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে থাকে।
এখানে বলা হয়েছে যে সরকার অনুৎপাদনশীল
খাতে ব্যয় বন্ধ করে দিবে আমাদের জানতে
হবে অনুৎপাদনশীল খাত গুলো কি কি যেমন-
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ব্যয়, চিকৎিসা ব্যয়, এই
সব ব্যয় বন্ধ করে দিলে হয়তবা দেখা যাবে
মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে তবে এই
নীতির ভবিষ্যৎ ফলাফল দুঃখ জনক কারন বয়স্ক ভাতা,
বিধবা ভাতা যদি ব›ধ করে দেয়া হয় তাহলে এই
দেশের দরিদ্র জনগণের উপর অমানবিক আচরন
হবে এবং এই ব্যয় বাজেটের একটি নুন্যতম অংশ
মাত্র এবং সরকার যদি শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে ব্যয়
বন্ধ করে দেয় তবে উন্ন্য়নশীল বা অনুন্নত
দেশ হিসাবে ভবিষ্যৎ দেশ আরো পিছনের
দিকে এগুতে থাকবে এবং সরকারী ব্যয় বন্ধ
হয়ে গেলে দেশের দরিদ্র জনগণ আরো
দরিদ্র হবে যা অর্থনীতির জন্য কাম্য নয়।
প্রতক্ষ্য কর হার বৃদ্ধি : চাহিদা বৃদ্ধিজনিত
মুদ্রাস্ফীতির সময়ে সরকার প্রতক্ষ্য কর হার বৃদ্ধি
করতে পারে কর হার বৃদ্ধি পেলে ব্যয়যোগ্য
আয় কমে এর ফলে বাজারে পণ্য সামগ্রী ও
সেবার চাহিদা কমে সামগ্রীক চাহিদা কমে দাম
এস্তর হ্রাস পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে
থাকে।
যদিও এটি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনের বড় হাতিয়ার কিন্তু
বিভিন্ন কারণে এবং ভিন্ন পন্থা অবলম্বনের কারণে
নীতিটি সফল হয়ে উঠেনি। ফলে বাজারে
কালো টাকার ছড়াছড়ি দেখা যায় এবং তা সরকারের
মনে করেন কালো টাকা বাজারে প্রবেশ
করলে তা অর্থনীতিতে যুক্ত হয়ে যায় এবং তা
উৎপাদন ও কর্মসংস্থাপনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
কিন্তু এই কালো টাকা অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত
হয়ে কতটুকু উৎপাদন ও কর্মসংস্থাপন বৃদ্ধিতে
সহায়তা করবে তাতে সন্দেহ থেকে যায়। আর
এই অর্থের মালিক হলো সরকার আর এই অর্থ
সরকার উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করবে এতে
সন্দেহ নেই এতে করে দেশের অর্থনীতি
সমৃদ্ধি হবে যার পলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং
সম্পদের কাম্য বন্টন নিশ্চিত হবে অতএব
ব্যক্তিগত পর্যেিয় কালো টাকা কখনো
অর্থনীতিতেম্মৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করতে
পারেনা। যেখানে কালো টাকার পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে এবং তা যদি বাজেট এর অর্থের তুলনায়
বেশি হয়ে থাকে তা হলে সেখানে বাজারকে
বাধাহীন /মসৃন করতে কিবা কর্মসূচী থাকবে?
ভর্তুকি প্রদানঃ অর্থনীতিতে খরচ বৃদ্ধিজনিত
মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে সরকার উৎপাদন
ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করতে পারে এর
ফলে উৎপাদন খরচ কমে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়
সামগ্রীক যোগান বাড়ে দাম এস্তর কমে এবং
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে থাকে।
কিন্তু উন্ন্য়নশীল বা অনুন্নত দেশের সরকার
দরিদ্র বলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভর্তুকি প্রদান করতে
পারেনা যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে তেমন
প্রভাব ফেলতে পারেনা এবং এখানে অনেক
অনিয়মও দেখা যায়।
খোলাবাজার নীতিঃ খোলাবাজারে ঋণপত্র
সঞ্চয়পত্র বিক্রয় এর মাধ্যমে সরকার ব্যক্তি ও
বানিজ্যিক ব্যংক এর কাছ থেকে নগদ অর্থ
কেন্দ্রিয় ব্যংক এর ঘরে জমা করতে পারে এর
ফলে বাজারে অর্থের যোগান কমে অন্য্ন্য
অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে অর্থের যোগান
কমলে দাম স্তর হ্রাস পায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে
থাকে।
কিন্তু ভবিষতে সরকারকে ছড়া সুদে এবং আসলে
ফেরত দিতে হবে এর ফলে তখন মুদ্রাস্ফীতি
আরো প্রকট হতে পারে এবং আয় বৈষম্য
বৃদ্ধিতে সহায়ক যা অর্থনীতিতে গ্রহণ ওযাগ্য
নয়।
ব্যাংক হার বৃদ্ধি ঃ ঋণের পরিমান সংকোচনের জন্য
তথা অর্থের যোগান কমানোর জন্য কেন্দ্রিয়
ব্যাংক ব্যাংক হার বৃদ্ধি করে থাকে এর ফলে
বানিজ্যিক ব্যাংক এর সুদের হার বাড়ে সুদের হার
বাড়লে ঋণের দাম বাড়ে। ঋণের পরিমান কমে
বাজারে অর্থের যোগান কমে দাম স্তর হ্রাস পায়
এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে থাকে।
কিন্তু ব্যংক হার বৃদ্ধির মাধ্যমে শুধু ঋণের পরিমান
কমে তার সাথে বিনিয়োগ হ্রাস পায় উৎপাদন হ্রাস
পায় দেশে মন্দা দেখা দেয় যা কাম্য নয়।
সংরক্ষন হার বৃদ্ধি: কেন্দ্রিয় ব্যাংক সংরক্ষন হার
বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে করতে
পারে কিন্তু এর ফলে বানিজ্যিক ব্যাংক এর ঋণ
প্রদান ক্ষমতা কমে এবং দেশের বিনিয়োগ মন্ধা
দেখা দেয়।
এসকল কারনে এখন উন্নয়নশীল এর
অনুন্নতদেশে মুদ্রাস্ফীতি অভিশাপ থেকে
মুক্ত হতে পারেনি এখন উন্নয়নশীল এবং
অনুন্নত দেশকে এমন একটি পদ্ধতি অবলম্বন
করতে হবে যাতে করে চাহিদা ও খরচ বৃদ্ধিজনিত
মুদ্রাস্ফীতি রোধ করবে এবং পরোক্ষ ভাবে
কালোটাকা এবং অবৈধ উপার্জনের টাকার উপর প্রভাব
বিস্তারে সহায়তা করবে ও সমাজে বা দেশে আয়
বন্টনে সমতা আনতে সহায়তা করবে যা
অর্থনীতিতে উন্নয়নমুখী প্রভাব ফেলবে
আর এটি হলো গতিশীল অর্থনীতি দাবি কেননা
অর্থনৈতিক সমস্যা নিরসনের জন্য অর্থনীতির
জন্ম।
পদ্ধতিাট হলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে বাজারে
প্রচলিত নোট ও মুদ্রা নির্দিষ্ট সময় পর প্রত্যাহার
করে বিনিময় মুল্যে নতুন নোট বাজারে ছাড়া এই
বিনিময় মুল্যে মুদ্রাস্ফীতির উপর নির্ভর করবে।
যেমন- বাংলাদেশকে যদি উদাহরন হিসাবে নিয়ে
থাকি তাহলে বাংলাদেশী বিশেষ নোট যেমন
শতকরা হারে বিনিময় মুল্যে এই সকল নোট নতুন
রূপে ছাড়া। এর ফলে বাজারে নগদ অর্থের পরিমান
হ্রাস পাবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে আসতে
সহায়তা করবে বাজার থেকে যে পরিমান নগদ
অর্থ উঠে বাসবে সেই অর্থ যদি সরকার শিল্পে
বা কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রদান বা প্রনোদন প্রদান
করে তা হলে দেশেশিল্প এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি
পাবে এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে এর ফলে
দ্রব্য মুল্য ও হ্রাস পাবে বাজারে মুদ্রাস্ফীতির হার
হ্রাস পাবে। উৎপাদন বৃদ্ধি কিন্তু আবার কর্মসংস্থান
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে অথবা এই অর্থ যদি দরিদ্র
হ্রাসের জন্য ব্যয় করা হয় তাহলে দেশে আয়
বৈষম্য অনেক অংশে হ্রাস পাবে। উদাহরন সরুপ
সরকার দরিদ্র লোকদের কর্মসংস্থানের জন্য বা
দরিদ্র লোকদের অবকাঠামো উন্নয়নের
জন্যইে অর্থ ব্যয় করতে পারে তাহলে আয়
বন্টন সমতা আসতে সহায়তা করবে এবং দারিদ্র
বিসোচন সহায়তা করবে। আবার যদি কোন অসাধু
ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য পণ্য মজুদ
করে থাকে তাহলেও নির্দিস্ট পণ্যের মুল্য বৃদ্ধি
পাবে তাই সরকার এই অর্থের মাধ্যমে ঐ সকল
দ্রব্য আমদানি করে খোলা বাজারে নেয়াজ্য
মুল্যে বাজারে ছেড়ে দ্রব্য মুল্য
স্থীতিশীল রাথা সম্ভব।
এই নীতি প্রয়োগের ফলে অর্থনীতিতে
যে প্রভাব পড়বে তা একটি চিত্রের মাধ্যমে
দেখানো হলো। চিত্রে oy অক্ষে দাম
ox অক্ষে উৎপাদন কর্মসংস্থান এবং আয় বন্টনের
ব্যবধান দেখানো হলো দাম যখন op1 উৎপাদন
ও কর্মসংস্থান oq1 এবং আয় বন্টনের ব্যবধান q1x
যা অর্থনীতির জন্য কাম্য নয় কারন এখানে মুদ্রা
সংকোচন বিরাজমান। দাম যখন op2 উৎপাদন ও
কর্মসংস্থান oq2 এবং আয় বন্টনের ব্যবধান q2x
এটা হলো সেই দাম বা সল্প মাত্রার মুদ্রাস্ফীতি যা
উৎপাদনের উপর অনুকুল প্রভাব ফেলে।
কিন্তু বাজারে যদি উপকরনের মুল্য বৃদ্ধি, অবৈধ
কালো টাকার প্রভাব, চাহিদা বৃদ্ধি এবং অন্য কোন
প্রভাব যখন দাম বা মুদ্রাস্ফীতি op3এস্তরে পৌছে
তখন পণ্যের যোগান কমে এবং যোগান রেখা
বামে স্থান পরিবর্তন করে তখন উৎপাদন ও
কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়ে oq1 এ আবস্থান করে
এবং আয় বন্টনের ব্যবধান বৃদ্ধি পেয়ে q1x
পরিনত হয়। যাহা উৎপাদনের উপর অনুকুল প্রভাব
ফেলেনা যাহা অর্থনীতির জন্য বা একটি দেশের
জন্য কাম্য নয় কিন্তু এই নীতি প্রয়োগের
ফলে দাম বা মুদ্রাস্ফীতি অনেক অংশে op2
এস্তরে নেমে আসবে এবং অর্থনীতিকে
পুণরায় গতিশীল করবে।
যদিও এই নিিতটি পুঁজিপতিদের অর্থনৈতিক ও মানসিক
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে তবুও দেশের
অর্খনৈতিক সার্থে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে
স্বাধীনতা অর্জনের স্বার্থে দেশের পুঁজিপতি
ব্যক্তি কিছুকাল ত্যাগ স্বীকার করলে দেশের
অর্থনৈতিক কাঠামো মজবুত হবে এবং এতে করে
সাধারন জনগণ প্রত্যক্ষ ভাবে যতটুকু সুবিধা পাবে
তার চাইতে ভবিষ্যতে বেশি সুবিধা পাবে পুঁজিপতিরা
এবং তখন তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আরো
গতিশীল হবে আর নীতি নমনীয় প্রকৃতির কারন
মৃদ্রাস্ফীতির প্রকৃতির উপরেই এর মেয়াদকাল এবং
ফি নির্ধারিত হবে প্রয়োজনে ফি শুণ্য হতে
পারে।
ধন্যবাদ
ভালো লাগ্লে আমার সাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন
www.gbwap.tk