ট্রিকবিডিতে আমার আরেকটি পোস্টে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।আশা করি আপনারা ভালো আছেন। আজকে হাজির হয়েছি এডুকেশনাল গাইডলাইন নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুতি নিয়ে আপনারা অনেক ধরনের পোস্টই দেখে থাকবেন। ইউটিউবে সার্চ করলে এ বিষয়ক অনেক ভিডিও পাবেন।এসব পোস্টে ঘুরেফিরে একই কথায় বলা হয়।কিন্তু আজকের পোস্টে আমি সেসব বিষয়ে আলোচনা করতে চলেছি যেগুলো আপনারা ইউটিউবে বা কোন আর্টিকেলে গুছানোভাবে পাওয়া যায়না। আমি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরছি সেসব বিষয়গুলো যেগুলো আমি নিজে ফেস করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যারা প্রস্তুতি নিতে চাচ্ছেন আমি নিশ্চিত এই আর্টিকেলের প্রতিটা বিষয় যদি ভালোভাবে মাথায় রাখেন তাহলে আপনাদের উচ্চ শিক্ষার প্রস্ততিতে অনেক অনেক বেশি উপকার হবে।
আমাদের সমাজব্যাবস্থায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক বড় কিছু হিসেবে দেখা হয়।এ দেশের কিছু অভিভাবক ভুলে যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট প্রচন্ড প্রচন্ডরকম প্রতিযোগিতা পূর্ন। বর্তমানে এক শ্রেণীর মানুষ জন পাবলিকিয়ান হওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেন না মোটিভেশন দিয়ে দিয়ে।এসকল মানুষজন থেকে সাবধান থাকায় শ্রেয়
“একজন পাবলিকিয়ান হওয়া কোন সাধারন বিষয় নয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট নিশ্চিত করতে প্রচন্ড রকম প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়”
আপনি যতই মোটিভেশনের উৎসাহে বলেন পাবলিকে চান্স না পেলে তেমন কিছু হবে না ভুল! আমাদের সমাজব্যাবস্থা এখনো সেই পর্যায়ে পৌছাই নাই যে যারা পাবলিকে চান্স পায়নি তাদের ভালো নজরে দেখতে পারে।
একথা অবশ্যই ঠিক পাবলিকে চান্স না পেলে জীবন থমকে যাবে না কিন্তু চান্স না হওয়ার পর আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশীদের চোখে নিচু হতে হয় এটাই বাস্তবতা। সস্তা মোটিভেশনের মধ্যে না পরে বাস্তবিকতা চিন্তা করাই এখন একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুর মেইন টার্গেট হওয়া উচিত। কিন্তু এটাই সত্যি অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পাবে না কারন জনসংখ্যার প্রেক্ষাপটে সিট খুবই লিমিটেড। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর যতটা না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পড়া উচিত তার চেয়ে বেশি উচিত নিজের ভিতরের সেরাটুকু নিংড়ে নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া যাতে পরে আফসোস না করতে হয়।
অনেক কথাই বললাম। এবার আলোচনা করা যাক যেসব বিষয় এখনকার অ্যাডমিশন ক্যান্ডিডেটদের খেয়াল রাখতে হবে১.আর্থিক ম্যানেজমেন্টের চিন্তা করা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্ততি অনেক খরূচে একটা বিষয় হতে পারে। এ ব্যাপারে আগেই পরিবারের সাথে আলোচনা করতে হবে বাজেট নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়পড়তা খরচ কেমন হতে পারে?
এ প্রশ্নটির উত্তর বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে যারা বিজ্ঞান বিভাগের তাদের জন্য আমি একটু কথা বলি। একজন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে ইন জেনারেল যদি চিন্তা করা হয় তাহলে মাথায় আসে
•বুয়েট
•ঢাবি
•মেডিকেল
•চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
•রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
• গুচ্ছ অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
• বিএসসি নার্সিং
• জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
• স্কলারশিপ
• জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
• প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম গড়ে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকার আশেপাশে আসে। কিন্তু যাদের জিপিএ কম কিন্তু ফর্ম তুলার যোগ্যতা আছে তাদের চান্স না পাওয়ার ভীতি কিন্তু কাজ করে। এর জন্য আরো অন্যান্য ইউনিটের ফরম ও তুলতে হয়।ফলে খরচ আরও বেড়ে যায়।
এখন যাদের পরিবারের সামর্থ্য ভালো আছে তাদের এসবে কোনপ্রকার সমস্যা হয়না। কিন্তু আপনি যদি নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে থাকেন আপনার প্রধান কর্তব্য বা উচিত খরচের চিন্তা করা। এ ব্যাপারে পরিবারে আগাম কথা বলতে হবে। স্বচ্ছ ধারনা দিতে হবে পরিবারকে এত এত খরচ করতে হবে।
•অন্য জেলায় যাতায়তের যানবাহন খরচ (যেহেতু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অন ক্যাম্পাস পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে)
•বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী প্রশ্নব্যাংক কেনার খরচ
•অন্য জেলায় যে থাকবেন সেটির রেসিডেনসিয়াল খরচ
•অ্যাডমিশন চলাকালীন ৩ বেলা খাবার খরচ
এরপর যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যান তাহলে যেগুলো দরকার হবে
•বিশ্ববিদ্যালয় ভাইবার জন্য যাতায়তসহ রেসিডেনসিয়াল খরচ
•সার্টিফিকেট সত্যায়িত,ফটোকপি,ফটোগ্রাফ খরচ
•বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি খরচ যেটি এভারেজ ৮-৯ হাজার টাকার কাছাকাছি হয়ে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
সুতরাং এখন থেকেই টাকার চিন্তা করতে হবে। মিতব্যয়ী অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
তবে এসকল খরচ চাইলেই কমানো যায়।এর কয়েকটি ট্রিকস জানিয়ে দিলাম১.প্রথমে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় টার্গেট না করে ৩ টি বা এর কাছাকাছি ৪ বা এরকম টার্গেট করে নিলে ফরম তুলার খরচ কমে যাবে। চাইলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন ইউনিটের ফরমও নেয়া যায়।
২.যদি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য ইউনিটের ফর্ম নেন তাহলে যাতায়ত খরচও কমে যাবে। কারন সব ইউনিটের পরীক্ষা ৩/৫-৮ দিন ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে বারবার আপডাউন করতে হবে না।
৩.প্রশ্নব্যাংক এখন গুগলে সার্চ দিলেই পাওয়া যায় পূরনো এডিশনের চাইলে সেগুলো ডাউনলোড করে নিয়ে পড়তে পারেন।কিংবা যারা কিনেছে তাদের বই ১-২ ঘন্টার জন্য ধার নিয়ে মোবাইল ফটো তুলে pdf ফাইলে কনভার্ট করে রাখা যায়। এতে বেশ ভালোরকম সেভিংস হবে।গাদা গাদা প্রশ্নব্যাংক কেনার খরচ থেকে বেঁচে যাবেন।
৪.যতটুকু সম্ভব বাড়ি থেকে কাছে হয় এমন পরীক্ষার কেন্দ্র সিলেক্ট করতে হবে। কেবল ঢাকা শহরে পরীক্ষা দিলেই পরীক্ষা ভালো হবে এমন নয়। নিজের বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা দেয়ার অপশন থাকলে উচিত সেখানেই পরীক্ষা দেয়া।
৫.যারা অন্য শহরে পরীক্ষা দিতে যাবেন তারা খাবারের খরচও কম্প্রোমাইশ করে নিতে পারেন। সাধারনত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোতে খাবার অন্যান্য জায়গার তুলনায় খানিকটা সস্তা হয়ে থাকে।ঐখানে ট্রাই করতে পারেন।আবার ফাস্টফুড এড়িয়ে চললেও অনেক সেভিংস হতে পারে।
২.জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে
যেসব কলেজে অনার্স চালু আছে সেসকল কলেজসমূহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন বেশ আগেই শুরু হয়ে থাকে। কলেজ সিলেকশন বেশ ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কলেজে দিলে প্রথম মেরিটে আসতে পারে।এজন্য প্রথম চয়েসে পছন্দের কলেজটি সবার উপরে রাখা উচিত। প্রথম মেরিট আসলে ভালোই নাহলে পরবর্তীতে ৫ টি কলেজ চয়েস দেয়া যায়। তাই খুব বেশি চিন্তা না করে পছন্দের কলেজটি সবার উপরে দেয়াই ভালো।
•নিজের ফলাফল চিন্তা করে প্রথমবারে যে ১ টি চয়েস দিতে হয় সেটি চিন্তা করতে হবে
•পছন্দের সাবজেক্ট ভালোভাবে সিলেক্ট করে নিতে হবে। যে সাবজেক্ট পছন্দ সেটি সবার উপরের দিকে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোন সাবজেক্ট বাদ দেয়া যাবে না। কারন পছন্দমতো সাবজেক্ট না আসলে পরে আরও ৫ টি কলেজে সিট খালি থাকা সাপেক্ষে আবেদন করা যায়।
“জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনেক বড় ডার্ক সাইড আছে”
যতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে সবার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে থাকে। সেখানে বেশ ভালো খরচ করতে হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যদি আপনি কোন পাবলিকে চান্স পেয়ে যান তাহলে পরবর্তী সময় মাস্ট ভর্তি বাতিল করতেই হবে কারন ভর্তির সময় জমা দেয়া নাম্বারপত্র তুলে নিতে হবে। ভর্তি বাতিলে বেশ বড়রকম খরচ হতে পারে। গড়পড়তা ৫-৮ হাজার খরচ হয়। কাজেই সতর্কভাবে এগোতে হবে।
৩.ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে হবে
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বাতন্ত্র্য ভাবে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। প্রতিটা প্রশ্নের গঠনকাঠামো ভিন্ন হয়।এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন প্যাটার্ন নিয়ে একদম ক্লিয়ারভাবে ধারনা রাখতে হবে।কারন কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে mcq পদ্ধতি নিলেও নাম্বার বন্টন ভিন্ন ভিন্ন হয়।আবার ঢাবি,বুয়েটে রয়েছে লিখিত পরীক্ষাও। কাজেই বুঝতে পারছ এসব বিষয় সম্পর্কে জানা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফলের জন্য বিগত সালের প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। জানতে হবে কোন কোন অধ্যায় থেকে বেশ ভালোরকম প্রশ্ন আসে।ঐসকল বিষয়ে জোর দিতে হবে।এজন্য প্রশ্নব্যাংক বলা চলে অপরিহার্য জিনিস।
“কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নব্যাংক পড়া ছাড়া পরীক্ষা দিতে যাওয়া অনেকটা আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে কাঠের লাঠি হাতে যাওয়ার সমান”
এজন্য প্রশ্নব্যাংক কিনতে গড়িমসি করা উচিত নয়। পরীক্ষায় রিপিট প্রশ্নও হয়। কাজেই বুঝতে পারছ প্রশ্নব্যাংক কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ!
ভর্তি পরীক্ষা ডেট অনুযায়ী পড়াশোনা গোছাতে হবে
প্রশ্নব্যাংক অ্যানালাইসিস করার পরের ধাপ হচ্ছে পড়াশোনা গুছিয়ে নেয়া। এটি কিভাবে করলে ভালো হয় তার একটা উদাহরণ দেই।
ধরা যাক ৭ তারিখ বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা আবার ৯ তারিখ বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটের পরীক্ষা। এই সময় কিভাবে পড়া উচিত?
এর সঠিক উত্তর হচ্ছে শুরুতেই মাসখানেক সময় নিয়ে গুছিয়ে নেয়া।ধরা যাক বিজ্ঞান ইউনিটে ইংলিশ দাগাবে আবার বিভাগ পরিবর্তনেও দাগাবে। সুতরাং ইংলিশ আগে আগে শেষ করতে হবে।যাতে কম সময়ে দ্রুত রিভিশন দিতে পারো। এ ক্ষেত্রে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারো
১.যে সাবজেক্টটি অন্য ইউনিটে পরীক্ষা দিতেও লাগবে সেটি আগে আগে সিলেবাস শেষ করে নিতে পারো। এতে এক ইউনিটের পরীক্ষা দিয়ে পরের ইউনিটের পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে পড়ে দ্রুত রিভিশন দেয়া যায়।
২.কঠিন বিষয়গুলো বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে পড়তে হবে। এগুলোর রুটিন করে এমনভাবে পড়াশোনা করতে হবে যাতে পরীক্ষার কাছাকাছি সময়ে মেজর মেজর টপিক কিংবা অধ্যায় কম্প্লিট হয়ে যায়।
৩.বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটের চেয়ে নিজের ইউনিটকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।কারন ৪ বছর ধরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার পর অনার্সে বাংলা কিংবা সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে নিশ্চয়ই ভালো লাগবেনা।
৪.অগ্রিম যাতায়ত ও বাসস্থানের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে
যদি অন্য শহরে পরীক্ষা দিতে যেতে হয় তাহলে ন্যুনতম ১ সপ্তাহ আগেই যাতায়ত ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় বাস,ট্রেনের টিকিটে বেশ ভালোরকম ভিড় থাকে। বলা যায়না যদি সব টিকেট বুক হয়ে যায়! তাই আগে আগেই টিকেট বুকিং দিয়ে রাখতে হবে।
বাসস্থানের জায়গাও ঠিক করে রাখতে হবে। যদি আত্মীয় স্বজনদের বাসায় উঠা যায় তো ভালো না থাকলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। এসময় হোটেল,গেস্টহাউজেও বেশ চাপ থাকে। যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ভাই-বোন আছে তারা বিশ্ববিদ্যালয় হলেও থাকতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। ফেসবুকে এদের ভর্তি পরীক্ষার সময় বেশ সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা দেয়। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা নিজেরাও বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকার ব্যাবস্থা করে দেয়।
তাছাড়া প্রয়োজনীয় টুকটাক সাহায্যেও তাদের পাশে পাওয়া যায়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক গ্রুপে নজর রাখতে পারো। অ্যাডমিশন সিজনে হোটেল, মোটেলের দামও বেশ চড়া থাকে। এজন্য ভেবেচিন্তে বাছাই করতে হবে। এমন কোন হোটেলে উঠা যাবেনা যেখানে গাড়ির জ্যাম প্রচন্ড হয় কিংবা জেলা শহর থেকে দূরে। তাছাড়া নিরাপত্তার কথাও মাথায় রাখতে হবে।
অনলাইন ওয়েবসাইট চেক করলেই বিভিন্ন হোটেলের রিভিউ রেটিং দেয়া থাকে। সেগুলো থেকে ভালোটুকু ছেঁকে নিতে হবে।
৫.গুগল ম্যাপের পূর্নাঙ্গ ব্যবহার জানতে হবে
নতুন শহর মানে নতুন অচেনা জায়গা। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাসও বিশাল বিশাল হয়ে থাকে। এজন্য এখন থেকেই গুগল ম্যাপ নেভিগেশন করার দক্ষতা থাকতে হবে।
অ্যাডমিশন সিজনে যানবাহনের মালিকরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেয়। কাছাকাছি জায়গায় ন্যায্য ভাড়া থেকে ৩-৪ গুন বেশি দাবি করে বসে। এজন্য গুগল ম্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুগল ম্যাপের সাহায্যে কাছাকাছি জায়গায় সহজেই যাওয়া যায়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রুম খুজে পেতেও এটি সাহায্য করে থাকে।
“রুম খুজে বের করার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পরীক্ষার আগের দিনই একবার ঘুরে আসতে হবে। যারা গ্রামে থাকে তাদের অনেকেই ফ্লোর কি জানেনা।”
সবচেয়ে নিচেরটিকে বলা হয় গ্রাউন্ড ফ্লোর। এরপরে ১ম, দ্বিতীয় এভাবে কাউন্ট হয়। যেমন
১ তলা = গ্রাউন্ড ফ্লোর
২ তলা = ফার্স্ট বা ১ নং ফ্লোর
আরেকটি বিষয় যেটি কোথাও উল্লেখ করে না সেটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোন গাড়ি চলেনা।(যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)
কাজেই আগে থেকে রূম খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ।কারন বিশাল ক্যাম্পাসে রুম খুজে পেতে যেন প্যানিক করতে না হয়। যেহেতু গাড়ি চলে না বুঝতেই পারছ হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হতে হবে।
৬.ফ্রড,টাউট লোকদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে
অ্যাডমিশন সিজন মানে অনেক লোকদের আনাগোনা। একইসাথে বেড়ে যায় টাউট মানুষজনের আনাগোনাও।
এসব মানুষদের থেকে অতীব সতর্ক থাকতে হবে। কি কি ধরনের টাউট দেখা যায় তার কিছু উদাহরন দেই
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এদের প্রচন্ডরকম দেখা যায়। এরা সাধারনত পানি বিক্রি করে অধিক দামে। কিন্তু সমস্যা সে জায়গায় না। সমস্যা হলো এসব বোতলের অধিকাংশই ইন্টেক হয় না। এরা ফেলে দেয়া বোতল কুড়িয়ে পানি ভরে আবার সেই বোতল বিক্রি করে। অর্থাৎ একটি বোতলই বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ বার। পানির উৎস ভালো না হলে যেমন ডায়রিয়ার আশংকা দেখা দেয় আবার টাকা দিয়ে ইন্টেক পানিও পাওয়া যায়না। কাজেই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। খালি বোতল দুমড়ে মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে যাতে সেই একই বোতলে টিউবওয়েল কিংবা টাংকির পানি ভরে এরা অন্যদের বিক্রি করতে না পারে। একইসাথে পানির বোতল সিল দেখে কিনে নিতে হবে। নিরাপদ পানি এসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীর খারাপ হলে পরীক্ষায়ও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
২.ছিনতাইকারি থেকে সাবধানএরা সাধারনত গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে মোবাইল,মানিব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যায়। কাজেই নিরিবিলি জায়গা এভয়েড করে চলতে হবে।কারো সাথে তর্ক,ঝগড়া করা যাবেনা।
তাছাড়াও রয়েছে অজ্ঞান পার্টি,মলম পার্টিদের আনাগোনা। এগুলো একটু সতর্ক থাকলেই এনকাউন্টার করা করা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় বন্ধুদের সাথে একসাথে থাকা। এতে করে বিপদে হেল্পও নেয়া যাবেআরেকটি বিষয় যেটি অনেকে জানেনা সেটি হলো ভর্তি পরীক্ষায় মোবাইল এলাউ না হলেও সুন্দর ভাবে শিক্ষকদের টেবিলে মোবাইল জমা রেখে পরীক্ষা দেয়া যায়।কাজেই বাইরের মানুষ বা সংগঠনের নিকট না রেখে শিক্ষকদের কাছে রাখাই অধিক পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ। পকেটমার থেকেও পাবলিক প্লেসে খুব সাবধান থাকতে হবে। বাসের জানালার পাশে মোবাইল ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৭.পরীক্ষা হলে নার্ভ ধরে রাখতে হবে
ভর্তি পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীরা প্রথম যে ভুলটি করে থাকে সেটি হচ্ছে নার্ভ ধরে রাখতে পারেনা।
“বিশাল মানুষের আনাগোনা দেখে কখনো বিচলিত হওয়া যাবে না”
অনেক শিক্ষার্থীই এটি করে থাকে । যারফলে অনেকে জানা প্রশ্ন ভুলে যায় আবার অনেকে omr সিটে বাংলা উত্তর করার জায়গায় ইংরেজি, ইংরেজির জায়গায় বাংলা উত্তর করে বসে থাকে। ঠান্ডা মাথায় প্রশ্নের উত্তর করতে হবে
“ভর্তি পরীক্ষায় রোল, রেজিস্ট্রেশন ভুল করা অমার্জনীয় পাপ”
ভর্তি জালিয়াতি এড়াতে একদম কাটায় কাটায় প্রশ্নপত্র দেয়া হয়। ফলে একবার ভুল করলে সেটি অনেক গুরুতর একটি অপরাধ। কোনভাবেই ভুল করা যাবেনা। কারন এতে খুব বেশি Rare case না হলে উত্তরপত্র বাতিল হয়ে যায়।
যদি কেউ ভুল করে থাকে তাহলে শিক্ষককে জানাতে হবে। ভাগ্য ভালো হলে শিক্ষকরা সেটি আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে। তবে জেনারেলভাবে সেটি বাতিল বলেই গন্য হয়।কাজেই খুবই সাবধান
৮.পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার পর করনীয়
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় কেউই সবগুলো উত্তরের সঠিক উত্তর দিতে পারে না।
কাজেই প্রশ্ন পাওয়ার পর সময়ের খুবই সৎব্যবহার করতে হবে। একবার উপরে উপরে পড়েই দাগানো শুরু করতে হবে।
“প্রশ্নের উত্তর দিতে মেইন টার্গেট থাকা উচিত পাশ করার মতো নাম্বার আগে নিশ্চিত করা”
এরপর ধীরে ধীরে সঠিক জানা উত্তরগুলো বৃত্তভরাট করতে হবে। কখনোই শতভাগ উত্তর দিতে জোর করবে না।
“সাইকোলজিক্যাল ট্রিক: পরীক্ষার OMR শিট এমন হয় যেন 60-70% দাগানোর পরও খালি খালি লাগে”
কিন্তু ফাঁদে পড়া যাবেনা। শুধু এবং শুধুমাত্র জানা উত্তরই দাগাতে হবে। 65-75% নিশ্চিত করলেই চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি। কাজেই আন্দাজে দাগানো যাবে না।
ভুল উত্তরে নেগেটিভ মার্কিং অনেক ভয়ংকরদ্বিতীয় কথা হচ্ছে যদি দেখা যায় অনেক বেশি উত্তর শুরুর দিকে পারছ না তাহলে সবার নিচ থেকে শুরু করতে হবে। অনেক প্রশ্নেই শুরুর দিকে কঠিন কঠিন প্রশ্ন থাকে শিক্ষার্থীদের চাপে ফেলার জন্য। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালেই সেটি ওভারকাম করা যায়।
৯.স্কলারশিপের পোর্টফোলিও তৈরিতে সতর্ক থাকতে হবে
অনেকের সার্টিফিকেটের সাথে বাবা-মার নামের কোন মিল থাকে না। স্কলারশিপ আবেদনে শুরুতেই এসব সংশোধন করতে হবে।
পাসপোর্ট স্কলারশিপ আবেদন শুরুর আগেই করে রাখতে হবে। কারন স্কলারশিপের জন্য পাসপোর্ট একটি মাস্ট মাস্ট জিনিস।একই সাথে রিকমেন্ডেশন লেটার,সিভি সময় নিয়ে প্রফেশনালভাবে তৈরি করে নিতে হবে। এক্সট্রা কারিকুলামে অবশ্যই সার্টিফিকেট কিংবা এ রিলেটেড প্রমান দেখাতে হবে।
দ্বিতীয় বিষয় সার্টিফিকেট ভালোভাবে গুছানো। অরিজিনাল সার্টিফিকেট আর ফটোকপি আলাদা আলাদা ফাইলে রাখলে অনেক সুবিধা। এতে করে দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজ হাতের নাগালে পাওয়া যায়।
তৃতীয়ত সবগুলোর স্ক্যান কপি মোবাইলে খুব সুন্দরভাবে একটা ফাইলে রাখতে হবে। কারন বেশিরভাগ স্কলারশিপ আবেদনে Scan copy আপলোড করতে হয়।
চতুর্থত স্কলারশিপ আবেদনে যদি bank statement দেখাতে হয় তাহলে খুবই ভালোভাবে সেটি পড়ে নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূরনো একাউন্ট দিতে হবে। সাথে ভালোরকম ট্রানজিকশন হিস্টরি থাকতে হবে।এসব করলে স্কলারশিপের acception এর সম্ভাবনা যেমন বেড়ে যায় তেমনি visa করার সযয়ও ঝামেলা পোহাতে হয়না।
পঞ্চমত acception letter এ ভালোমতো পড়ে দেখতে হবে সেটি Full free scholarship অফার করছে নাকি একটি নির্দিষ্ট লেভেলের টিউশন ফি waiver দিচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিবারের ইনকামের দিকে খেয়াল রাখতে হবে tution fee কভার করার মতো অ্যাবিলিটি আছে কিনা অন্তত প্রথম বছরের জন্য।কারন নতুন দেশে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগবে বেশ।
১০.এখন থেকেই নিজের ভিতর রিয়েল লাইফ স্কিল গড়ে তুলতে হবে
উচ্চ শিক্ষার সাথে সাথে নিজেকেও প্রস্ততি নিতে হবে। এখন থেকে যেসব বিষয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে হবে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো
১.কুকিং দক্ষতা ঝালাই করে নিতে হবে। বাড়ি থেকে রান্না বান্না শিখে নিতে হবে। উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেককে বাড়ি ছাড়তে হবে। সর্বপ্রথম যেটি দেখা যায় সেটি হচ্ছে রান্নার সমস্যা। কাজেই এখন থেকে রান্নার কাজ শিখে নিতে হবে।
২.বার্গেনিং দক্ষতা থাকতে হবে। এখন থেকে নিয়মিত বাজারে সাহায্য করতে হবে। ছাত্রবস্থায় টাকা পয়সার টানাটানি থাকলে কিভাবে bargaining করে জিনিসপত্রের দাম কমাতে হয় সেটি করার দক্ষতা থাকতে হবে।কারন উচ্চ শিক্ষার সময় টাকা পয়সার টানাটানি থাকে। যত ভালো দামাদামি করার দক্ষতা থাকবে তত বেশি খরচ কমাতে পারবেন।
৩.কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করতে হবে।
ইন্ট্রোভার্ট আর কমিউনিকেশনের স্কিলের অভাব এক না।কাজেই যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। যত বেশি নেটওয়ার্কিং করা যায় তত ভালো পরবর্তী জীবনে চাকরিক্ষেত্রে বেশ কাজে দিবে।একইসাথে কোথায় না বলতে হবে সেটি জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশাল জ্ঞান অর্জনের জায়গা। এসময় যত বেশি মানুষদের সাথে পরিচয় হওয়া যায় তত বেশি ভালো।
সংগঠনে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে। সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠনের সাথে পরিচিত হতে হবে। তাছাড়া রক্তদাতা সংস্থার সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ রাখতে হবে। পরবর্তীতে যাতে কোন সমস্যা না হয়।
৪.নিজের আর্নিং করার দিকে ফোকাস দিতে হবে। এসময় থেকেই কিভাবে নিজের খরচ নিজে বহন করা যায় সেটির চিন্তা করতে হবে।
আজ এ পর্যন্তই।পুরো আর্টিকেলটি সম্ভবত একটু বড় হয়ে গেছে।তবে আমি চেষ্টা করেছি ভালোভাবে বোঝানোর জন্য
আশা করি এগুলো আপনাদের যথেষ্ট উপকারে আসবে। ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। আজ এই পর্যন্তই। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে।
ট্রিকবিডিতে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।