লোকে বলে- প্রেম করলে
ম্যানিব্যাগের টাকা কমে। কিন্তু
উল্টো চিত্র আশরাফুলের ক্ষেত্রে।
৩০ বছরের জীবনে তিনি অন্তত ২৪
জনের সঙ্গে প্রেম করেছেন। কিন্তু
তার গাঁটের পয়সা একটুও কমেনি,
বরং
বেড়েছে বহুগুণ! ছলে-বলে-কৌশলে
প্রেমিকাদের কাছ থেকে টাকা
হাতিয়ে নিয়ে তিনি এখন
কোটিপতি!
আশরাফুল ইসলামের বাড়ি
রাজশাহীর গোদাগাড়ী
পৌরসভার
সুলতানগঞ্জ মেলাপাড়া এলাকায়।
তার বাবার নাম শাহজাহান আলী।
অল্প পড়াশোনা জানা আশরাফুল
পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি।
কবিরাজিও করেন গ্রামে গ্রামে
ঘুরে। কিন্তু তার চলন-বলন মোটেও
ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিংবা গ্রাম
কবিরাজের মতো নয়। ফিটফাট
আশরাফুল ঘোরেন দামি
মোটরসাইকেলে। পরেন দামি সব
পোশাক। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-
পেশার মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক।
কয়েক বছর আগেও আশরাফুল ছিলেন
গ্রামের সাধারণ ভবঘুরে যুবক। কিন্তু
কয়েক বছরের মধ্যেই আশরাফুল হয়ে
উঠেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এখন
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে
মুরব্বিরা পর্যন্ত তাকে সমীহ করে
চলেন। কারণ আশরাফুল গত কয়েক বছরে
বিপুল টাকার মালিকও হয়েছেন। আর
এই অর্থের উৎস প্রতারণা।
এলাকাবাসীর কয়েকজন জানান,
আশরাফুল গ্রাম কবিরাজির আড়ালে
গ্রামের কিংবা শহরের শিক্ষিত
সুন্দরী মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে
ফেলে টাকা-পয়সা হাতিয়েছেন।
একটার পর একটা মেয়েকে ফাঁদে
ফেলেছেন তিনি। কিন্তু একজন স্কুল
শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেমের
সম্পর্কের
কারণে থলের বিড়াল বেরিয়ে
আসে। সম্প্রতি আশরাফুল প্রেমের
ফাঁদে ফেলে এক প্রবাসীর
স্ত্রীকে
ভাগিয়ে বিয়ে করে ফেলেন। আর
তার এই বিয়ের খবর জানাজানি
হলে ২৪ এপ্রিল গোদাগাড়ীর ওই স্কুল
শিক্ষিকা সকাল সকাল গিয়ে
আশরাফুলের বউ দেখে স্কুল
শিক্ষিকা
তার বাড়িতেই আত্মহত্যার জন্য
বিষপান করে বসেন। দ্রুত এলাকার
মানুষ শিক্ষিকাকে হাসপাতালে
নিয়ে যান।
জানা যায়, আশরাফুল অন্তত দু’ডজন
মেয়ের সঙ্গে প্রেম করলেও
উপজেলার কাচারিপাড়া গ্রামের
প্রবাসী রহমত আলীর স্ত্রীর সঙ্গে
প্রেমের অভিনয় করতে গিয়ে
জালে
আটকা পড়ে যান। প্রবাসী রহমত
আলীর
স্ত্রীর কাছ থেকে আশরাফুল আগেই
হাতিয়ে নেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
শেষে কেটে পড়ার বিষয়টি টের
পেলে প্রবাসীর স্ত্রী পপি বেগম
তাকে ধরে নিয়ে সোজা কাজি
অফিসে হাজির হন। নিজের
স্বামীকে তালাক দিয়ে পপি
বিয়ে করেন আশরাফুলকে। পপি
ওইদিনই গিয়ে ওঠেন আশরাফুলের
বাড়িতে। এবার আর পালানোর
সুযোগ পাননি এই মহাপ্রেমিক।
প্রবাসী রহমত আলীর পরিবারের
দাবি- পপি ও আশরাফুল প্রায় ৫০ লাখ
টাকা ও বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার
নিয়ে পালিয়েছেন। এসব এখন
আশরাফুলের কাছে। প্রবাসী দেশে
ফিরলে মামলা করবেন।
এদিকে প্রতারণার শিকার স্কুল
শিক্ষিকা পুলিশের কাছে
আশরাফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
দিয়েছেন। শিক্ষিকা জানান, ৭
বছর
ধরে আশরাফুলের সঙ্গে তার
প্রেমের
সম্পর্ক। এই ৭ বছরে তিনি আশরাফুলকে
অন্তত ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন।
কিনে দিয়েছেন একটি
মোটরসাইকেলও। তিনি জানান,
বিভিন্ন প্রয়োজন দেখিয়ে
আশরাফুল
তার কাছ থেকে টাকা নিতেন।
স্কুল শিক্ষিকা থানায় দেয়া
অভিযোগে বলেছেন, আশরাফুল
একটা
প্রতারক। সম্পর্ক গড়ে মেয়েদের কাছ
থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে
নেয়া
হচ্ছে তার নেশা ও পেশা। তিনি
বলেন, আশরাফুল এ পর্যন্ত ২৪ জন
মেয়ের
সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে তাদের
নাসরিন, জান্নাতুন, লিপি, পপি ও
আয়েশাসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ
করেছেন তিনি। এসব মেয়ের
অনেকেই সামাজিক মান-মর্যাদার
ভয়ে অভিযোগ করেননি।
এদিকে আশরাফুলের বিয়ের বিষয়ে
জানতে চাইলে স্থানীয় নিকাহ
রেজিস্ট্রার ও গোদাগাড়ী
মহিলা
ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবদুল
জব্বার
বলেন, আশরাফুলের ব্যাপারে তো
এখন এলাকা সরগরম। শুনেছিলাম,
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর অনুপনগরে
আশরাফুল একটা বিয়ে করেছিল।
হড়মা
চরেও তার আরেকটি বিয়ে হওয়ার
খবর পাওয়া যায়। সম্প্রতি এক
প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে
যান আশরাফুল। এরপর আরেক
শিক্ষিকা
তার বাড়িতে বিষপানে
আত্মহত্যার
চেষ্টা চালান। এখন আরও অনেক কিছু
বেরিয়ে আসছে।’
কয়েকজন এলাকাবাসী জানান,
স্থানীয় এক প্রভাবশালী আ’লীগ
নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এখন
বেপরোয়া
আশরাফুল। একের পর এক প্রেমিকার
টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে টাকা
দিয়েই তিনি এখন ব্যবসা করছেন।
এখন
আর কবিরাজি করছেন না।
এদিকে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে
উড়িয়ে দিয়েছেন আশরাফুল। তিনি
যুগান্তরকে বলেন, ‘কোনোদিনই
কারও
সঙ্গে প্রতারণা করিনি। শুধু এক
প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করেছি।’
তার দাবি পপি বেগম তার আগের
স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ঘর
ছেড়েছেন। আর স্কুল শিক্ষিকাই
তাকে জোর করে বিয়ে করতে চান।
অামার সাইট থেকে ১বার ঘুরে অাসুন Roton24.com