জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর মরণদশা ঘনিয়ে আসছে আর এমন কথাই ঘুরে ফিরে শোনা হচ্ছে গত কয়েক দশকজুড়ে। বিজ্ঞান এর ভাষায় পৃথিবীতে সবকিছুই নশ্বর। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কেবল ভারসাম্য রক্ষায়। কিন্তু এই অস্তিত্ব যে একেবারেই যে ধ্বংস প্রাপ্ত হবেনা তা কিন্তু নয়, বর্তমানে যা কিছুর প্রাণ আছে তাদের অস্তিত্ব টলায়মান। পরিবেশ, প্রকৃতি, সূর্য এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিষয় আছে তা কেবল প্রাণ রক্ষার জন্যই সৃষ্ট নয়, এগুলো কখনো কখনো ধ্বংসের কারণও হতে পারে। মানুষের এই যে বেঁচে থাকা তা কোনো অসাধারণ বা অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা নয়। সবকিছুই শেষ হয়ে যেতে পারে নিমিষেই।
আর্থ বা পৃথিবী নামক এই গ্রহটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ৮টি কারণে। বেশ চমকে উঠার মত খবর তাইনা? ৮টি কারনের যেকোন একটির ব্যত্তয় ঘটলে ধ্বংস হয়ে যাবে গোটা পৃথিবী। চলুন জেনে নিই কি সে কারন?
পৃথিবীর অভ্যন্তরের উত্তপ্ত যে অংশটি আছে তা শীতল হয়ে যেতে পারে। এই গ্রহের চারিপাশে রয়েছে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নামক চৌম্বক ক্ষেত্র। আর এই চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয় পৃথিবীর ঘূর্ণন এর ফলে। ম্যাগনেটোস্ফিয়ার থেকে শক্তিশালী কণা বেরিয়ে আসার ফলে ঠিক থাকে পৃথিবীর আকৃতি। উত্তপ্ত ভেতরের অংশটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার হারাবে পৃথিবী আর বায়ুমণ্ডর বিস্ফোরণ ঘটবে মহাশূন্যে। একসময় মঙ্গলেও প্রাণ ছিল কিন্তু বিলিয়ন বছর আগে এমন ঘটনার অবতারণায় মৃতপ্রায় হয়ে গেছে মঙ্গল।
সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু এই সূর্য যেকোন মুহূর্তে মরে যেতে পারে অথবা এর বিস্তৃতিও ঘটতে পারে। বিস্তৃতি ঘটলে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বায়ু মণ্ডল আর তাতে প্রাণের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। প্রাণের এই অস্তিত্বের পেছনে পৃথিবী গ্রহের সঙ্গে সূর্যের দূরত্ব ও অস্তিত্ব পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। সূর্য উদিত হলে নক্ষত্র আর এরা মারা যায়। ধারণা করা হয় বর্তমানে সূর্য তার মধ্যবয়সে রয়েছে। যা ফিউসনের মাধ্যমে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তরিত করছে। বিলিয়ন বছর পর হয়ত এমনটা আর থাকবে না এবং তখন সূর্যের মৃত্যু ঘটবে। হতে পারে সূর্যের বাইরের অংশের বিস্তৃতি ঘটবে এবং পৃথিবীকে তার দিকে টেনে নিতে পারে। এমনও হতে পারে যে সূর্যের বিস্তৃতির কারণে পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে ছিটকে যাবে। পৃথিবীর অবস্থান একটা মৃত কক্ষে আবদ্ধ হতে পারে। বিজ্ঞান বলে, অনেক সময় গ্রহ তার সৌরজগতের কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে আসে। আর এক হিসাবে বলা হয়, কাছাকাছি গ্রহের আকর্ষণ বা বিকর্ষণের ফলে মিল্কিওয়ের প্রতি ১ লাখ গ্রহের মধ্যে একটি গ্রহ কক্ষচ্যুত হয়। আর কক্ষচ্যুত কোনো গ্রহ সৌরজগৎ এর কক্ষপথ থেকে বেড়িয়ে আসার সময় পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে। অথবা পাশ দিয়ে গেলেও পৃথিবীর কক্ষপথ নষ্ট করে দিয়ে গতির পরিবর্তন করে দিতে পারে। বিজ্ঞানের গবেষণা মোতাবেক ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে এমনই দুই গ্রহের সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী এবং চাঁদের সৃষ্টি হয়।
গ্রহাণু কর্তৃকও এই পৃথিবীকে ধ্বংস হতে পারে। মহাশূন্য থেকে প্রবল বেগে ছুটে আসা অসংখ্য পাথরখণ্ড মারাত্মক ধ্বংসলীলা ঘটিয়ে দিতে সক্ষম। আর এমনই ঘটনায় পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় ডাইনোসর। এর চেয়ে আরো বড় কিছু হামলে পড়লে গোটা পৃথিবীটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানের ভাষ্য, পৃথিবী গঠনের শত শত হাজার বছর পর গ্রহাণু কর্তৃক আঘাত প্রাপ্ত হয় পৃথিবী। যখন সাগর প্রায় এক বছর পর্যন্ত ফুটন্ত অবস্থায় উত্তপ্ত ছিল। ফলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব হুমকি প্রাপ্ত হয় এবং শত শত প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়।
পৃথিবী কোনো ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। এ গ্রহের মৃত্যুর জন্য দ্বিতীয় কারণ হিসাবে উঠে আসে ব্ল্যাক হোল কিংবা কৃষ্ণগহ্বরের কথা। এর সম্পর্কে খুব বেশি জানা না গেলেও এতটুকু ধারণা পাওয়া যায় যে ব্ল্যাক হোলে হারিয়ে যায় সবকিছু। আর ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি পৃথিবী চলে আসলে, এই গ্রহে ঘটে যেতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর মতন নানান মারাত্মক মহামারী।
যেকোনো গামা রশ্মির বিস্ফোরণেও ধ্বংস হতে পারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। এ পর্যন্ত মহাশূন্যের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্যোগের একটি হল গামা রশ্মির বিস্ফোরণ। ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে এমন একটি বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পৃথিবী। আর এমন বিস্ফোরণ পুনরায় সংঘটিত হলে সূর্যের কার্যক্রম পুরোপুরি পাল্টে যেতে পারে আজীবনের জন্য। ফলে পৃথিবী নামক গ্রহটি চিরতরে হারিয়ে যাবে সৌরজগৎ থেকে।
সবচেয়ে ভয়ংকর ধারণা হচ্ছে গোটা মহাশূন্যই বিধ্বস্ত হতে পারে। শুধু যে পৃথিবী তা কিন্তু নয়, গোটা ব্রহ্মাণ্ড শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সৌরজগৎ ও মহাশূন্য নিয়ে গবেষণাকারীদের তথ্য মতে, ডার্ক এনার্জি নামের এক বিশেষ সৌর শক্তি গোটা ব্রহ্মাণ্ডকে দ্রুততার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করতে তৎপর। আর তা যদি সফল হয় তবে আনুমানিক ২২ বিলিয়ন বছর পর ব্রহ্মাণ্ডের সব বস্তু ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।