আস-সালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বিগত কয়েক বছরের রকমারি বেস্টসেলার প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ সিরিজের প্রথম বই প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-১ এর রিভিউ এবং pdf ডাউনলোড লিঙ্ক।
শুরু করার আগে আপনাদের কাছে ছোট্ট একটি অনুরোধ, চেষ্টা করবেন বইটি কিনে পড়ার জন্য। তবে আপনি যদি কিনতে না পারেন তবে ডাউনলোড করে নিবেন। নিচে রকমারি বাই লিঙ্ক এবং পিডিএফ ডাউনলোড লিঙ্ক দুটোই দেয়া আছে। উল্লেখ্য, রকমারিতে এফিলিয়েট সিস্টেম নেই। তাই নিচের দেয়া লিঙ্কটাও এফিলিয়েট লিঙ্ক না।
সূচিপত্র:
– একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাস
– তকদির বনাম স্বাধীন ইচ্ছা
– স্রষ্টা কেন মন্দ কাজের দায় নেন না
– শূন্যস্থান থেকে স্রষ্টার দূরত্ব
– তাদের অন্তরে আল্লাহ্ মোহর মেরে দেন
– মুশরিকদের যেখানেই পাও হত্যা কর….. অতঃপর
– স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?
– একটি সাম্প্রদায়িক আয়াত এবং…..
– কোরআন কি সূর্যকে পানির নিচে ডুবে যাওয়ার কথা বলে?
– মুসলমানদের কুরবানী ঈদ এবং একজন মাতব্বরের মাতব্বরি
– আল কোরআন কি মানবরচিত?
– রিলেটিভিটির গল্প
– কোরআন, আকাশ, ছাদ এবং একজন ব্যক্তির মিথ্যাচার
– আয়শা(রাঃ) ও মোহাম্মদ(সাঃ) এর বিয়ে এবং কথিত নাস্তিকদের কানাঘুষা
– কোরআন কি মোহাম্মদ(সাঃ) এর নিজের কথা?
– স্রষ্টা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেন?
– কোরআন মতে পৃথিবী সমতল নাকি গোলাকার?
– একটি ডিএনএ’র জবানবন্দি
– কোরআনে বিজ্ঞান – কাকতালীয় নাকি বাস্তবতা?
– স্রষ্টা কি এমন কিছু বানাতে পারবেন, যেটা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না?
– ভেল্কিবাজির সাতকাহন
বই পর্যালোচনা: প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-১
বিশ্বাসের কথা কতটা শক্ত করে বলা যায়? বিশ্বাসী প্রাণের সুর কতটা অনুপম হতে পারে? বিশ্বাসকে যুক্তির দাঁড়িপাল্লায় মাপা কি খুব সহজ?অবিশ্বাসীকে কতটা মায়াভরা স্পর্শে বিশ্বাসের শীতল পরশ দেয়া যায়? যুক্তিই মুক্তি নাকি বিশ্বাসের যুক্তিতে মুক্তি? এমন কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েই বইটি পড়তে শুরু করলাম । তবে আগেই বলে রাখি আমি আমার ধর্মকে পুর্নাঙ্গভাবেই বিশ্বাস করি । আমি শুধু বইয়ের সারমর্ম তুলে ধরছি এবং এর মৌলিক ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে কোন রকম ভুল হলে অবশ্যই সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ঠিক করে দিবেন আশা করি।
বইটির লেখক আরিফ আজাদ । প্রথমেই বুখারী শরীফের একটি হাদিসের মাধ্যমে বই শুরু করেছেন, এ থেকেই বুঝা যায় এর ভিতরে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কিছু একটা হবে।
বইটি বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়েছে । প্রথমেই শুরু করা হয়েছে “একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাস’’ অধ্যায় দিয়ে। দুই বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়লোজিতে পড়াশোনা করে। এদের মধ্যে সাজিদ নিজেকে নাস্তিক দাবি করে। স্রষ্টাকে না দেখে সে বিশ্বাস করবেই না। কিন্তু তাঁর বন্ধু যুক্তিশীল এবং সঠিক চিন্তাধরার মানুষ। সাজিদের বন্ধু বিভিন্ন বৈঙ্গানীক যুক্তির মাধ্যমে সাজিদকে বুঝাতে চেষ্টা করে কিন্তু সাজিদের অট্টহাসির মাধ্যমে সবকিছু উড়িয়ে দেয়, তবুও সাজিদের বন্ধু থামেনি। এক পর্যায়ে সাজিদ তাঁর ভুল বুঝতে পারে এবং তাঁর বন্ধুর সাথে ফজরের নামাজে শামিল হয়। তখনই বুঝতে পারলাম নাস্তিকদের লাত্থি মেরেছে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ । তাঁরপর আরো দ্বিগুন আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম ।
তারপর শুরু হলো “তাকবির বনাম স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি” -স্রষ্টা এখানে বিতর্কিত, তারপর স্রষ্টা কেনো মন্দ কাজের দায় নেন না, তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন, স্রষ্টা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেনো? — এভাবে আগ্রহ এবং আবেগ উভয় যোগ হলেই বোধহয় বইয়ের জগতে প্রবেশ করা যায়। এমন যুক্তিশীলভাবে সকল প্রশ্নের উত্তর সাজানো।
বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা আমাদের জীবন যাত্রায় বহুল পরিবর্তন সাধিত করেছে সন্দেহ নেই। পাশাপাশি বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ কিছু মানুষকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে যার বুদ্ধিভিত্তিক জবাব বাংলা ভাষায় কমই আছে বলা যায়। যে গুলো পাওয়া যায় তা সহজ পাঠ্য নয়। এখানেই প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর স্বার্থকতা।
রাসূল (সা.) আয়েশা (রা.) কে ৯ বছর বয়সে বিবাহের প্রসঙ্গ নিয়ে নাস্তিকদের কানাঘুষার এক চমকপ্রদ জবাব দেয়া হয়েছে বইটিতে। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিয়ে করার সময় স্ত্রীর বয়স ছিল ৮ বছর। কিন্তু কই? এটা নিয়ে তো মুক্তমনার কোন মুক্তচিন্তক এখন পর্যন্ত আওয়াজ তোলেনি! তাহলে রাসূল (সা.)’র বিবাহ নিয়ে নাস্তিকদের এতো কানাঘুষা কেন? কেনই বা একজন রাসূলের পবিত্র চরিত্রে কালিমা লেপনের হীন চেষ্টা করে নিজেদের ঠেলে দিচ্ছে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে!
আসলে নাস্তিকরা যেহেতু ধর্ম মানে না, তাই সকল ধর্মে আঘাত করাই ওদের ধর্ম। কিন্তু আমাদের দেশের নাস্তিকরা শুধু আমাদের ধর্মে আঘাত করে কেন? হয়তো এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! এতে হয়তো কোন কুচক্রিমহলের উপসর্পণ লুকায়িত।
আমার সবচাইতে মজা লেগেছে যেই বিজ্ঞানের দোহাই বা যুক্তি দিয়ে সব সময় ধর্ম তথা কোরআনের বিভিন্ন ভুল ধরবার চেষ্টা করা হয়, সেই বিজ্ঞান যে ক্ষণেক্ষণে পরিবর্তিত হয়, থিউরি গুলি ভুল প্রমানিত হয়, ধারণা পাল্টে যায় সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। চোখের পরেই এটা সব সময় ছিলো, কিন্তু কখনও সেভাবে চিন্তা করি নাই।
বইটির মুলনায়ক সাজিদ প্রথম দিকে নামাজ রোযা পড়া একজন ধার্মিক মুসলামান থাকলেও পরে সে একজন নাস্তিকে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার সে আস্তিক হয়ে নাস্তিকদের বিরূদ্ধেই যুক্তি খাড়া করে।
উপন্যাসের আদলে গড়া এই বইটির পদে পদে রয়েছে যুক্তি এবং বিজ্ঞানের অভিনব সব কথা। এর একদিকে যেমন রয়েছে সাহিত্যরস অন্য দিকে রয়েছে সাজিদ নামক ব্যক্তিটির জীবনসংগ্রামের কঠিন বাস্তবতা।
আমি মনে করি যারা বিজ্ঞান ও ধর্মকে গুলিয়ে নানান সন্দেহে দিনানিপাত করেন এই বইটা তাঁদের অবশ্যপাঠ্য। সকল পাঠকের মনেই বিশ্বাসকে আরো যৌক্তিক করে তুলবে এই বই।
পিডিএফ ডাউনলোড লিঙ্ক: Google Drive
অনলাইন অর্ডার লিঙ্ক: Rokomari.com
আজ এই পর্যন্তই, কথা হবে পরবর্তী কোনো লেখায়। ততক্ষণ ভালো থাকুন, সুখে থাকুন, আল্লাহ্ হাফেজ।