Site icon Trickbd.com

জেনে নিন বাংলাদেশ সংবিধানের নাড়ি ভুড়ি শেষ পর্ব সকলকে দেখার অনুরোধ রইলো

Unnamed

সংবিধানের সব সংশোধনী:
●● বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা সংসদের হাতে
ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল
পাস হল বুধবার। ১৯৭২ সালে সংবিধান গৃহীত হওয়ার
পর থেকে এর আগে ১৫ বার সংশোধন হয়
বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে।
দেখে নেওয়া যাক আগের সংশোধনীগুলো।
∎ প্রথম সংশোধনী: সংবিধানের প্রথম সংশোধনী
আনা হয় ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে। এ সংশোধনীর
মাধ্যমে ৪৭ অনুচ্ছেদে দুটি নতুন উপধারা সংযোজন
করা হয়।এ সংশোধনীর মূল কারণ ছিল গণহত্যাজনিত
অপরাধ,মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ
ওআন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের
জন্য আইন তৈরি এবং তা কার্যকর করা।
∎ দ্বিতীয় সংশোধনী: ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয়। এতে সংবিধানের
কয়েকটি অনুচ্ছেদে (২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২) সংশোধন আনা
হয়।নিবর্তনমূলক আটক,জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও এ সময়
মৌলিক
অধিকারগুলো স্থগিতকরণ সম্পর্কে প্রথমদিকে
সংবিধানে কোনো বিধান ছিল না। এ সংশোধনীর
মাধ্যমে বিধানগুলো সংযোজন করা হয়।
∎ তৃতীয় সংশোধনী: মূলত ভারত ও বাংলাদেশের
সীমানা নির্ধারণী একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করার
জন্য ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর এ সংশোধনী আনা হয়।
ভারতের কিছু অংশ বাংলাদেশে আসবে এবং
বাংলাদেশের কিছু অংশ ভারতে আসবে- এ
চুক্তি বাস্তবায়নের জন্যই তৃতীয় সংশোধনী আনা হয়
∎ চতুর্থ সংশোধনী: ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ
সংশোধনীর মাধ্যমেইবাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার
পরিবর্তন ঘটানো হয়।চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে
সংসদীয় পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত
সরকার ব্যবস্থা চালু করা; একদলীয় শাসন
ব্যবস্থার প্রবর্তন করা; রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ
বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রপতি অপসারণ পদ্ধতি জটিল
করা;সংসদকে একটি ক্ষমতাহীন বিভাগে পরিণত
করা; মৌলিক অধিকার বলবৎ করার অধিকার বাতিল
করা; বিচার বিভাগের
স্বাধীনতাকে খর্ব করা ও উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি
করা হয়।১৯৯১সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর
মাধ্যমে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাতিল হয়ে
যায়।
∎ পঞ্চম সংশোধনী: জাতীয় সংসদে এ সংশোধনী
আনা হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। পঞ্চম সংশোধনী
সংবিধানে কোনো বিধান সংশোধন করেনি।এ
সংশোধনী ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টে সামরিক শাসন
জারির পর
থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত সামরিক শাসনামলের
সব আদেশ, ঘোষণা ও দণ্ডাদেশ বৈধ বলে অনুমোদন
করে।এ সংশোধনীটি উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল
হয়।
∎ ষষ্ঠ সংশোধনী: ১৯৮১ সালের ১০ জুলাই এ
সংশোধনী আনা হয়।ষষ্ঠ সংশোধনী কোনো

রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণে করা হয়নি।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি
আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করেছিলেন। তৎকালীন বিএনপি রাষ্ট্রপতি পদে
তাদের প্রার্থী হিসেবে আব্দুস সাত্তারকে মনোনয়ন
দেয়।এ সংশোধনীর মাধ্যমে বলা হয়,রাষ্ট্রপতি,
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী,উপমন্ত্রী পদকে
প্রজাতন্ত্রেরকোনো লাভজনক পদ বলে গণ্য করা হবে
না
∎ সপ্তম সংশোধনী: ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে
১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সামরিক
শাসন বহাল ছিল।১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয়
সংসদে সপ্তম সংশোধনী আনা হয়।এ
সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসনামলে জারি
করা সব আদেশ, আইন ও নির্দেশকে বৈধতা দেওয়া হয়
এবং আদালতে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না
করার বিধান করা হয়। এ
সংশোধনীতে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬২
থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়।২০১০ সালের ২৬ আগস্ট এ
সংশোধনী আদালতে কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়।
∎ অষ্টম সংশোধনী: ১৯৮৮ সালের ৯ জুন সংবিধানে
অষ্টম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে (২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০)
পরিবর্তন আনা হয়।এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম
ইসলাম বলে ঘোষণা করা হয়, ঢাকার
বাইরে হাই কোর্ট বিভাগের ৬টি স্থায়ী বেঞ্চ
স্থাপন করা হয়, বাঙালীকে বাংলাদেশী এবং
ডেক্কা-কে ঢাকা করা হয়।তবে হাই কোর্টের বেঞ্চ
গঠনের বিষয়টি বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত।
∎ নবম সংশোধনী: নবম সংশোধনী আনা হয় ১৯৮৯
সালের ১১ জুলাই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি
ও উপরাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কিছু বিধান সংযোজন
করা হয়।এ সংশোধনীর আগে রাষ্ট্রপতি ও
উপরাষ্ট্রপতি যতবার ইচ্ছা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য
নির্বাচন
করতে পারতেন। এ সংশোধনীর পরঅবস্থার পরিবর্তন
হয়েছে।
∎ দশম সংশোধনী: ১৯৯০ সালের ১২ জুন দশম
সংশোধনী বিল পাস হয়। নারীদের জন্য সংসদে আসন
১৫ থেকে ৩০ এ বাড়ানো হয়।
∎ একাদশ সংশোধনী: গণঅভ্যুত্থানে এইচ এম
এরশাদের পতনের পর বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
দায়িত্ব গ্রহণনিয়ে ১৯৯১ সালে এ সংশোধনী পাস
হয়। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন
আহমেদের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগদান বৈধ
ঘোষণা করা হয়। এতে আরো বলা হয়, নতুন রাষ্ট্রপতি
নির্বাচিত হওয়ার পর এ উপরাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান
বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করতে পারবেন
এবং উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে তার কর্মকাল
বিচারপতি হিসেবে হিসেবে গণ্য হবে।
∎ দ্বাদশ সংশোধনী: ১৯৯১ সালের এ সংশোধনীর
মাধ্যমে ১৭ বছর পর দেশে পুনরায় সংসদীয় সরকার
প্রতিষ্ঠিত হয়।
∎ ত্রয়োদশ সংশোধনী: ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ এ
সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নির্দলীয়
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়।
∎ চতুর্দশ সংশোধনী: ২০০৪ সালের ১৬ মে এ
সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে
সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে ৪৫ করা হয়। সুপ্রিম
কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫
থেকে ৬৭ বছর করা হয়।এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি ও
প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং সরকারি ও আধা সরকারি,
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে বাংলাদেশ
মিশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি বা ছবি প্রদর্শনের
বিধান করা হয়।
∎ পঞ্চদশ সংশোধনী: ২০১১ সালের ৩০ জুন এ
সংশোধনী আনা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
বিলোপের পাশাপাশি অসাংবিধানিকভাবে
ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ
বিবেচনায় সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখা হয় এ
সংশোধনীতে। এছাড়া এ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২’র
সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ,
সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে
আনা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র এই
সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী
উত্থাপনকারী- ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংসদে
গৃহীত- ৩০ জুন, ২০১১
রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বাক্ষর- ৩ জুলাই, ২০১১
সংশোধনীসমূহ
৭২-র সংবিধানের চার মূলনীতি পুনর্বহাল
(জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও
ধর্মনিরপেক্ষতা)
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ
রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন
অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বহাল, অন্যান্য
ধর্মের সমমর্যাদা
আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বহাল
শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন
জাতির পিতা, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা
ও ঘোষণাপত্র যুক্তকরণ
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বীকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও
সুযোগের সমতা
সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি (বর্তমানে- ৫০টি; পূর্বে
ছিল- ৪৫টি)
মৌলিক বিধান সংশোধন-অযোগ্য
জরুরি অবস্থার মেয়াদ নির্দিষ্টকরণ
দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীরা নির্বাচনে অযোগ্য
সংবিধান (ষোড়শ সংশোধনী) আইন ২০১৪
বাহাত্তরের
তথ্য সুএ ইন্টারনেট