আসসালামু আলাইকুম, সকলের সুস্থতা কামনা করে এবং সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের আর্টিকেল শুরু করছি। আশা করি সকলেই অনেক ভাল অাছেন। আজকে আপনাদের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের তড়িৎ বিভব নিয়ে আলোচনা করবো।
তড়িৎক্ষেত্রের কোন বিন্দুর বিভবঃ যে কোন
আহিত বস্তু তড়িৎক্ষেত্র তৈরি করে। আহিত বস্তুর
তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে একটি আধানকে এক বিন্দু
থেকে অন্য বিন্দুতে সরাতে হলে কাজ সম্পন্ন
করতে হয়। এর উপরে ভিত্তি করে বলা যায় অসীম
বা শূণ্য বিভবের কোন স্থান থেকে একক ধনাত্মক
আধানকে পরিবাহকের নিকটে কোন বিন্দুতে
আনতে তড়িৎবলের দিকে বা বিপক্ষে যে পরিমাণ
কাজ সম্পন্ন করতে হয় তাকে ঐ বিন্দুর বিভব বলে।
বিভব একটি অদিক রাশি। এস আই এককে বিভবের
একক হচ্ছে ভোল্ট। ১ ভোল্ট = ১ জুল / ১ কুলম্ব, বৈজ্ঞানিক সঙ্গা ছিলো এটাই।
এবার আসুন জেনেনি তড়িৎ বিভব জিনিসটা কি ? তড়িৎ প্রবাহের দিক কেন উল্টা ? এ প্রশ্ন দুটির সহজে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আজ । প্রথমেই বলে নেই আমি কোন তত্ত্ব বুঝাবো না । বুঝানোর যোগ্যতাও নেই । শুধু উদাহরণ দিয়ে সহজে মনে রাখার কৌশলটা ব্যাখ্যা করব । দেখো প্রথমেই বিভব শব্দটা আমাদের ফিলিংস এ আনতে চাই । ‘বিভব’ আসলে কি ? সহজ কথায় বিভব হল কাজ করার ‘অ্যাবিলিটি’ বা সক্ষমতা’ । কেন এরকম হলো তা বুঝতে গেলে প্রচলিত
কিছু উদাহরণ ব্যাখ্যা করি চলো ।
যা মাথা ফাটাতে পারে । এই কিছু একটা জিনিসই হলো ইটের বিভব ।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে তাহলে বিভব পার্থক্য কি করে ?
হ্যাঁ, বিভব পার্থক্যই কাজ করায় । বিভব
পার্থক্য যত বেশি কাজ করানোর সক্ষমতা তত বেশি । তড়িৎ বিভব ঠিক এরূপ চার্জ এর প্রবাহ ঘটায় । বিভব পার্থক্য না থাকলে চার্জ এর প্রবাহ হয় না । আর নেগেটিভ চার্জ অর্থাৎ ইলেক্ট্রনের প্রবাহই হলো বিদ্যুৎ !
এবার আরেকটা উদাহরণ দেবোঃ
একটা এক ফুট উচ্চতার চোঙ পানি দিয়ে পূর্ণ করো । এবার বড় একটা গামলাতে পানি পূর্ণ করো যার উচ্চতা চোঙের চেয়ে কম কিন্তু পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি । ধরো উচ্চতা ৬ ইঞ্চি । গামলা এবং চোঙ কে একই সমতলে রেখে যদি দুটোকে পাশাপাশি একটা
নল দ্বারা যুক্ত করে দেই তাহলে পানির প্রবাহ
কিন্তু চোঙ থেকে গামলাতে যাবে যদিও গামলাতে পানি বেশি । চোঙ এর পানির বিভব বেশি থাকায় তা থেকে গামলাতে পানি যাবে । অর্থাৎ চোঙ আর গামলার মধ্যে বিভব পার্থক্য রয়েছে । আর যদি সমান উচ্চতা পর্যন্ত পূর্ণ পানির চোঙ যদি পাশাপাশি যুক্ত করি তবে কি পানির প্রবাহ হবে ?? না । এখানে পানির প্রবাহকে যদি বিদ্যুৎ কল্পনা করি তবে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিতে পারিঃ
# বিদ্যুৎ উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে প্রবাহিত হয় ।
# বিদ্যুতের প্রবাহ বিদ্যুতের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না । নির্ভর করে বিভব এর পরিমাণের উপর ।
# বিভব পার্থক্য শুণ্য হলে কোন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না । এখন একটু বিদ্যুতের দিক নিয়ে বলি এইটুকুতে একটু মন দাওঃ
ইলেকট্রিসিটিতে বিভব বলতে আসলে পজিটিভ চার্জকে বুঝায় । হ্যাঁ, পজিটিভ চার্জ । যখন বলি পরিবাহীর এক প্রান্তের বিভব বেশি তখন বুঝায় যে ঐ প্রান্তে পজিটিভ চার্জের পরিমাণ বেশি । আর যে প্রান্তে বিভব কম সেই প্রান্তে পজিটিভ চার্জ কম ।
প্রথমদিকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন
যে বিদ্যুৎ প্রবাহ হলো পজিটিভ চার্জের প্রবাহ । তাই তারা দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন যে বিদ্যুৎ উচ্চ বিভব (বেশি পজিটিভ চার্জ) থেকে নিম্ন বিভবের (কম পজিটিভ চার্জ) দিকে প্রবাহিত হয় । পরবর্তীতে যখন আবিষ্কার হলো যে ইলেক্ট্রন তথা নেগেটিভ চার্জের প্রবাহই বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণ
তখন বিদ্যুতের প্রবাহের দিক নিয়ে বাধলো
গন্ডগোল । কিন্তু ততদিনে বহুল প্রচলিত হয়ে গেছে যে বিদ্যুৎ উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে যায় । তখন বিজ্ঞানীরা বললেন যে বিদ্যুৎ এর প্রচলিত দিক ঠিকই থাকবে শুধু বলবো যে যে দিকে ইলেকট্রন তথা নেগেটিভ চার্জ যায় তার বিপরীত
দিকে বিদ্যুৎ যায় । এভাবে প্রচলিত দিক এবং প্রকৃত দিকের মধ্যে সমন্বয় করা হলো ।
চলোঃ ধরো একটা ছোট ছেলে স্কুলে ক্লাশ করছে । এখন ছাত্রের জ্ঞান অবশ্যই তার শিক্ষকের জ্ঞানের চেয়ে কম হবে । জ্ঞান না বলে আমরা বিভব শব্দটি প্রতিস্থাপন করি । তাহলে বলা যায় যে শিক্ষকের বিভব ছাত্রের চেয়ে বেশি । এখন ক্লাশে পাঠদানের সময় শিক্ষক যে তথ্য ছাত্রকে দিবেন তাকে বিদ্যুৎ মনে করি । কিন্তু এই তথ্য (বিদ্যুৎ) ছাত্র নেবে কি করে ?? হ্যাঁ প্রশ্ন করে । প্রশ্নটাকে কল্পনা করো “ইলেকট্রন” হিসেবে ।
প্রক্রিয়াটা তাহলে দাঁড়াচ্ছে- “ছাত্র প্রশ্ন করবে শিক্ষককে আর শিক্ষক ছাত্রকে তথ্য দেবে । ”
অন্যভাবে বলি, ছাত্র তার নিম্নবিভব থেকে
ইলেকট্রন শিক্ষককে দেবে বিপরীতে শিক্ষক তার উচ্চবিভব থেকে বিদ্যুৎ ছাত্রকে দেবে ।
আজ এ পর্যন্তই, আসাকরি সকলে বুঝতে পারছেন। ধন্যবাদ