[h1 style=”font-size:50vw;”]বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আকারে যেমন বিস্তর ফারাক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির দিক দিয়ে ব্যবধান তার চেয়েও হয়তো বেশি। পারমাণবিক শক্তিধর বিশাল এই প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশ নীরবে পথ চলে অনেক বিষয়ে ভারতের কাছে ঈর্ষার পাত্র হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সূচক বলছে, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ভারতের চেয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহৎ দেশ ভারত। দেশটির অর্থনীতির আকারও বিশাল । তবে বৃহৎ এই অর্থনীতিতে এখন মন্দা চলছে। নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতিতে ভালো কোন সুখবর নেই ভারতের জন্য। বিশ্ব বলছে মন্থর হয়ে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি।
অপরদিকে, গত দশবছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নতিতে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে । দেশটির গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি 7 শতাংশেরও বেশি। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতকেও টক্কর দিচ্ছে। যাতে তকমা মিলেছে দক্ষিণ এশিয়ার নয়া টাইগার হিসেবে।
বাংলাদেশ বনাম ভারত | অর্থনীতিতে কোন দেশ শক্তিশালী ? Bangladesh vs India Economy comparison.
হ্যালো বন্ধুরা, আজকে এই পোস্টটিতে আমরা বাংলাদেশ বনাম ভারতের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ তুলে ধরব যার মধ্যে GDP, মাথাপিছু আয়,কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ, সহজ ব্যবসা সূচক পরিস্থিতি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য থাকবে তাই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
এবার দেখে নেব বাংলাদেশ বনাম ভারতের অর্থনৈতিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ।
ভারতের জনসংখ্যা প্রায় 133 কোটি আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় 16 কোটি।
ভারতের কাগজী মুদ্রা কে বলা হয় রুপি আর বাংলাদেশের এটা টাকা নামে পরিচিত।
ভারতের জিডিপি প্রায় 2.7 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, অপরদিকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় 314 বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
2019 সালে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার 4.3 শতাংশ অপরদিকে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার 8.13 শতাংশ।
নমিনাল জিডিপির ভিত্তিতে ভারতের বর্তমান অর্থনীতি বিশ্বের 5 তম অপরদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে 39 তম।
আবার purchase power parity (PPP) ক্রয় ক্ষমতা সূচকে ভারতের অর্থনীতি বিশ্বে 3 তম অপরদিকে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান 29 তম।
2019 সালের প্রাক্কলিত হিসেব অনুযায়ী ভারতের গড় মাথাপিছু আয় 2172 মার্কিন ডলার অপরদিকে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় হাজার 1909 মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।
ভারতের মোট এক্সটার্নাল ঋণের পরিমাণ 543 বিলিয়ন মার্কিন ডলার অপরদিকে বাংলাদেশের এক্সটার্নাল ঋণের পরিমাণ 33 বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভারতের গড় মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় 1350 ডলার অপরদিকে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় 600 ডলার।
ভারতের মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় 3.1 শতাংশ অপরদিকে 2019 সালের প্রাক্কলন হিসাবে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় 5.56 শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংক ease of doing business লিস্টে ভারতের অবস্থান 63 তম অপরদিকে বাংলাদেশের অবস্থান 168 তম। অর্থাৎ বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।
ভারতের মানুষের গড় আয়ু 68.70 বছর অপরদিকে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু 72.5 বছর।
ভারতের প্রায় 21.9 শতাংশ মানুষ দরিদ্র অপরদিকে বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় 18.5 শতাংশ।
ভারত মানব উন্নয়ন সূচকে 189 দেশের মধ্যে 130 তম অপরদিকে বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সূচকে 136 তম অবস্থানে আছে।
নারী-পুরুষ সমতায়নে বিশ্বের 149 দেশের মধ্যে ভারত 108 তম অপরদিকে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান 48 তম।
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (ILO) এশিয়া প্যাসিফিক এম্প্লয়মেন্ট এবং সোশ্যাল আউট লুক 2018 তে উল্লেখ করা হয় ভারতের বেকারত্বের সংখ্যা 6.1 শতাংশ অপরদিকে বাংলাদেশের বেকারত্বের সংখ্যা 4.29 শতাংশ।
2019 সালে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ 330 বিলিয়ন মার্কিন ডলার একই সময় ভারত মোট আমদানি করেছে 514 বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর পণ্য। অর্থাৎ ভারতের প্রায় 148 বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি আছে। অপরদিকে 2018-19 অর্থবছরের 55.44 বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ একই সময় রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে 39.94 বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় 15 বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় 448 বিলিয়ন মার্কিন ডলার অপরদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় 30 বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
2019 সালে ভারতের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ 64 বিলিয়ন ডলার অপরদিকে বাংলাদেশের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ 3.61 বিলিয়ন ডলার।
ভারতের যে অর্থনীতি নিয়ে এত গর্ব করা হয় তা দেশটির মানুষের জীবন মানের সত্যিকার উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির বিরাট অর্জন বলে ভারতের গণমাধ্যমে ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের যে ঢাক পেটানো হয় তা মোটেও পক্ষপাতিহীন নয় বড় অনেকখানি সন্দেহজনক। ভারতের গণমাধ্যমে সেদেশের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রায়শই চীনের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়। এতেও ফাঁকি আছে বলে মনে করেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
অপরদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্রতা, দুর্বল অবকাঠামো, অদক্ষতা, দুর্নীতি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঋণখেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি, ধনী গরিবের বৈষম্যতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
কিন্তু বাংলাদেশ তাদের ভবিষ্যৎ দেখে মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে। দেশটির রপ্তানি বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস, স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন, ঋণ ও সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস, ক্ষুদ্রঋণের আলো ছড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি লক্ষ্যবস্তু ঠিক করেছে। যার সফলতা আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পারছি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম। বিশ্বের অন্যতম শিপিং রুট এবং ক্রমবর্ধমান তরুণ প্রজন্মের কারণে দিনদিনই এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে ভিয়েতনাম। বর্তমানে কৃষিনির্ভর এ দেশটির মূল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হতে যাচ্ছে উৎপাদন খাত। আর উন্নয়নশীল প্রযুক্তিখাতের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি এশিয়ার পরবর্তী ‘টাইগার ইকোনমি’ হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।
পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
আর পরবর্তী পোস্টে আপনারা কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখতে চান তা কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন।
ধন্যবাদ। [/h1]