Site icon Trickbd.com

[Carnivorous plants] বিস্ময়কর ৩টি মাংসাশী উদ্ভিদ। সৃষ্টিকর্তার সেরা নিদর্শন যা আপনার কল্পনাইও আসেনি।

Unnamed

[Carnivorous plants] বিস্ময়কর ৩টি মাংসাশী উদ্ভিদ। সৃষ্টিকর্তার সেরা নিদর্শন যা আপনার কল্পনাইও আসেনি।

 

প্রাণীখেকো (Carnivorous plants) বা মাংসাশী উদ্ভিদ এর বিষয় অনেকের কাছেই খুব আকর্ষনীয় বিষয়| জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ যখন জীবন ভক্ষন করে সত্যিই তা বিস্ময়ের কারন|

কার্টুন বা কোনো‌ মুভিতে হয়তো দেখেছেন , একটি গাছ একটি মানুষকে তার দুই চোয়াল দিয়ে ফাঁদে ফেলে গিলে ফেলে| আপনারা কেউ হয়তো বিশ্বাস ও করে ফেলেছেন এমন গাছও আছে যা মানুষ গিলে ফেলে |
তবে আপনার জন্য আনন্দের বিষয় এই যে এমন কোনো উদ্ভিদ বা গাছ বাস্তবে নেই| তবে এমন কিছু গাছ পৃথীবিতে রয়েছে, যা পোকামাকড়কে নিজেদের খাবারে পরিণত করতে পারে খুবই অদ্ভুদ নিয়মে|
পৃথীবিতে রয়েছে প্রায় ৬০০ টির‌ও অধিক প্রাণীখেকো বা মাংশাসী উদ্ভীদ|
আজ আপনাদের জানাতে চাই এমনই ৩ টি প্রাণীখেকো গাছ বা উদ্ভিদ, যা হয়তো আপনার ধারনারই‌ বাইরে| এদের শিকারের ধরন এক একটি থেকে আলাদা এবং অদ্ভুত!!!

১/কলস উদ্ভিদ বা কলসী উদ্ভিদ (PITCHER PLANTS):

 

এই উদ্ভিদটি হচ্ছে কতিপয় আলাদা প্রকারের মাংসাশী উদ্ভিদ যেগুলোর পরিবর্তিত পাতাগুলো একধরনের বিপদের ফাঁদ হিসেবে কাজ করে । এই বিপদের ফাঁদগুলো শিকার ধরার ফাঁদ‌ বা কৌশলী বৈশিষ্ট্য হিসেবে কলস উদ্ভিদের পাতাগুলোর গভীর গহ্বরটি তে বৃষ্টির সময় পানি এসে জমা হয় | এসব উদ্ভিদের কলসির মুখে এক ধরনের মধু উৎপন্ন হয়। মূলত এই মধুর লোভেই পোকামাকড় কলসির ভেতর প্রবেশ করে। কলসির ভেতরের দেয়ালটি বরফের মতো মসৃণ ও পিচ্ছিল হওয়ার কারনে এর তলদেশের শূঙ্গের পানিতে পতিত হয় এবং এর থেকে বের হওয়া ঐসব প্রাণীর জন্য সত্যিই অসম্ভব কেননা বের হওয়ার আর কোনো পথ নেই| তখন কলসি উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসগুলো কলসির তলদেশে বেরিয়ে আসে। ফলে পোকার দেহের নরম অংশগুলো পরিপাক হয়ে কলসি উদ্ভিদের দেহে শোষিত হয়। আর শক্ত অংশগুলো কলসির তলদেশে জমা থাকে।

এই কলসি উদ্ভিদকে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী উদ্ভিদ হিসেবে মনে করা হয়, কেননা এদের মধ্যে বড় আকারের উদ্ভিদগুলো, ছোটো ব্যাঙ ও‌ ইঁদুর ও শিকার করে|

 

প্রায় ৮০ প্রকারের কলসী উদ্ভিদ এই পৃথিবীতে রয়েছে|
দক্ষিন আমেরিকা, মাদাগাস্কার, মালেশিয়া, ভারত ও শ্রীলঙ্কার গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলাভূমিতেও বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ দেখা যায়।

২/ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ(VENUS FLYTRAP):

ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ একটি দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ, তবে এর কিছু প্রজাতি একবীজপত্রীও হয়|

পৃথিবীতে এদের ৯ টি গোত্রের মোট ৫৯৫ টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে|

ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ এর শিকার করার ফাঁদ :

এদের পাতা সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত-

এখানে লোব সদৃশ দুটি পাতা একসাথে মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ পাতা গঠিত হয়। লোবের ভেতরের পৃষ্ঠে এন্থোস্যায়ানিন নামক এক প্রকারের পিগমেন্ট থাকে যার ফলে সে অংশটি লাল বর্ণ ধারণ করে এবং এই পৃষ্ঠ মিউসিলেজ নিঃসরণ করে। লোব দুটির মাঝে একটি ভাঁজ থাকে এবং এদের কিনারা জুড়ে থাকে ট্রিগার নামক সুতাসদৃশ ও সংবেদনশীল অংশ। এসব ট্রিগার পাতার ফাঁদে আটকা পড়া শিকারকে পালিয়ে যেতে বাঁধা প্রদান করে।

মাংসাশী উদ্ভিদ ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ এর প্রজনন পদ্ধতি:

এদের প্রজনন পদ্ধতি হতবাক করার মতো| পরাগায়ন করার জন্য আসা প্রাণীরা যেনো ফাঁদে আটকা না পড়ে, তাই এসব উদ্ভিদ পাতার বেশ কিছু উপরে লম্বা ডাঁটাযুক্ত ফুল ধারণ করে| এই‌ ফুলগুলো থেকে ক্ষুদ্র কিছু বীজ উৎপন্ন হয়, যা থেকে নতুন ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ জন্ম নেয় | আবার রাইজোম হতেও নতুন উদ্ভিদ জন্ম নেয়|

ফ্লাই ট্র্যাপের শিকার করার প্রক্রিয়া:

মাংসাশী উদ্ভিদ  ফ্লাই ট্র্যাপের শিকার করার প্রক্রিয়াটি খুবই মজার। পতঙ্গকে আকৃষ্ট করার জন্য এরা একপ্রকার সুগন্ধী রস উৎপাদন করে আর এই সুগন্ধের প্রলোভনে পতঙ্গ এগিয়ে যায় তার অনাকাঙ্ক্ষিত ও অজানা পরিণতির দিকে। যখন কোনো ছোটো প্রাণী একের অধিক ট্রিগার স্পর্শ করে বা একটি ট্রিগারে একাধিকবার স্পর্শ করে, তখন আকস্মিকভাবে লোব দুটি ভাঁজ হয়ে যায় আর সেই অজানা পরিণতি শুরু হয়ে যায়| ভেতরে থাকা পতঙ্গ লোবের এই ফাঁদে সহজেই আটকা পড়ে।

এই লোবের ট্রিগার এতই সংবেদনশীল যে, স্পর্শ করার মাত্র এক সেকেন্ডের দশ ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যেই লোবের এই ফাঁদ বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু উদ্ভিদের পুষ্টি সচেতনতা এখানে অসাধারনভাবে প্রকাশ পায়। অর্থাৎ যদি পতঙ্গটি খুব ছোট হয় তখন লোব দুটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয় ,যেনো পতঙ্গটি বেরিয়ে যেতে পারে। এর কারণ হলো, ক্ষুদ্র পতঙ্গ থেকে খুব অল্প পরিমাণ পুষ্টিই পাওয়া যায়।

আর যদি এর ভেতর কোনো জড় বস্ত প্রবেশ করানো হয় তবে ফাঁদ ১২ ঘন্টার ভেতর আপনাআপনি খুলে যাবে|
যখন খাদ্যবস্তু হিসেবে কোনো পতঙ্গ ফাঁদের ভেতর বন্দী হয় তখন লোবের গায়ে অবস্থিত সিলিয়া নামক আঙ্গুলসদৃশ অভিক্ষেপগুলো পতঙ্গকে আটকে রাখে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফাঁদটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ফাঁদটি একটি বায়ুরোধী প্রকোষ্ঠের মতো কাজ করে যা ব্যাকটেরিয়াকে ভেতরে ঢুকতে দেয় না।

আবার যদি পতঙ্গ আকারে বড় হয়ে যায়, তখন ফাঁদ সহজে এবং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে পারে না। যার ফলে পতঙ্গটি বেরিয়ে আসতে পারে। এতে করে ব্যাকটেরিয়া ভেতরে প্রবেশ করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো সিলিয়াকে আক্রমণ করে এবং পাতাকে পঁচিয়ে ফেলে। পরিশেষে আক্রান্ত পাতাটি ঝরে যায়।

ফ্লাইট্র্যাপ কোথায় পাওয়া যায়?:

আমেরিকার উত্তর এ দক্ষিন ক্যারোলাইনায় স্যাঁতসেঁতে জলাভূমিতে এবং যে পরিবেশে ফসফরাস ও নাইট্রোজেনের পরিমান কম সেসব স্থানে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়|

৩/সূর্যশিশির (Sundew):

সূর্যশিশির নামের উদ্ভিদটির খোঁজ মিলেছে ইংল্যান্ডের একটি এলাকায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানীদের অনেক আগে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যেত এই সূর্যশিশির। আদ্র ভূমি হ্রাস পাওয়ার দরুন অনেক এলাকায় উদ্ভিদটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। এদের বিলুপ্তি রোধ করতে পুনরুৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে বিজ্ঞানীরা।

সূর্যশিশির কিভাবে প্রাণী শিকার করে?:

Sundew দেখতে আকর্ষণীয় ও সুন্দর। তবে এটি একটি ভয়ঙ্কর মাংসাশী উদ্ভিদ । আর এ জন্যই বুঝি পোকামাকর সহজেই এর গায়ে বসে এবং এর আঠালো ফাঁদে আটকে পড়ে। এরপর উদ্ভিদটি তার ট্রাইকোম থেকে এনজাইম নিঃসরণ করে মৌমাছি বা প্রজাপতিটিকে হজম করতে সমর্থ হয়। এ যেন প্রকৃতির উল্টো নিয়ম। বাস্তবিকপক্ষে এর মাঝে রয়েছে সৃষ্টিকর্তার নিদর্শন মূলত থেকে উদ্ধৃতি শক্তি সঞ্চয় করে না , বরঞ্চ মাটির পুষ্টি কম থাকায় এর ঘাটতি মেটানোই শিকারের উদ্দেশ্য। এটা অভিযোজনের একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদাহরণ।

সূর্যশিশির উদ্ভিদের আকৃতি কেমন?:

উদ্ভিদটির পাতা গুলো সুসজ্জিত থাকে। আর এর বাঁকানো পাতাগুলো সাধারণত মূল পাতা থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার উঁচু থাকে। এর পাতাগুলি গোলাপের পাপড়ির মতন সজ্জিত হতে পারে যার ব্যস মোটামুটি ২.৫ সেন্টিমিটার এর মতন।

সূর্যশিশির উদ্ভিদের কয়টা প্রজাতি হতে পারে?:

মোটামুটি প্রায় ১৫০ টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে কয়েকটি Drosera rotundifolia, D.capensis, D. Katangensis and D. insolita উল্লেখযোগ্য প্রজাতি।

*ইংল্যান্ডের চেশায়ারের বাসিন্দা যশুয়া স্টাইল সানডিউ (সূর্যশিশির) সহ বিরল সব উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য গড়ে তুলেছেন নর্থ-ওয়েস্ট রেয়ার প্লান্ট ইনিশিয়েটিভ নামের একটি সংগঠন।

আসলে চোখ মেলে দেখার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে না পারলে অনেক কিছু না দেখেই বিদায় নিতে হবে নিদর্শনে ভরপুর এই সৃষ্টিভূমি থেকে। তাই এখন থেকেই আবিষ্কারের নেশায় জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তবেই উন্মোচিত হবে রহস্যেঘেরা সৃষ্টি বৈচিত্রের অবারিত দ্বার।