Site icon Trickbd.com

আইন জানুন আইন মানুন পর্ব ১৩: পুলিশি তল্লাশি, গ্রেপ্তার ও নাগরিক অধিকার

Unnamed

দেশে বর্তমানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতা ঠেকাতে তথা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে পুলিশি তল্লাশি ও গ্রেপ্তার বেড়েছে। ঠিক তেমনি বেড়েছে পুলিশি হয়রানি ও জনমনে আতঙ্ক। কিন্তু সাধারণ মানুষ বিষয়টি জানে না যে, পুলিশ ইচ্ছে করলেই যাকে-তাকে যখন-তখন তল্লাশি বা গ্রেপ্তার করতে পারেন না। আইনে এর বিধি-নিষেধ রয়েছে। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০২ ও ১০৩- এ পুলিশের তল্লাশির দায়িত্ব এবং নাগরিকের অধিকার স্পষ্ট করা হয়েছে।

কোনো স্থান বা বাড়ি তল্লাশির ক্ষেত্রে :যদি পুলিশ কোনো স্থান বা বাড়িতে তল্লাশি করতে আসে, তাহলে তল্লাশির পূর্বে পুলিশ ওই এলাকার গণ্যমান্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে ডাকবেন এবং উক্ত তল্লাশিতে সাক্ষী হতে বলবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাদের একজনের প্রতি লিখিত আদেশ দিতে পারবেন। এরপর সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুলিশ ওই বাড়ি বা স্থানটি তল্লাশি করবেন। তল্লাাশি শেষে আটক জিনিসগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবেন এবং তালিকাটিতে সাক্ষীদের স্বাক্ষর নেবেন। তবে এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, তল্লাশিতে সাক্ষীদেরকে যদি আদালত বিশেষভাবে সমন দিয়ে তলব না করে, তাহলে উক্ত সাক্ষীদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া যাবে না। এছাড়াও তল্লাশিকৃত স্থানের দখলকারী ব্যক্তি অথবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিকে তল্লাশির সময় উপস্থিত থাকার অনুমতি দিবে পুলিশ। উক্ত দখলকারী ব্যক্তি বা তার পক্ষে প্রতিনিধি অনুরোধ করলে সাক্ষীদের স্বাক্ষরযুক্ত আটককৃত মালামালের তালিকার একটি নকল দিতে হবে। যদি তল্লাশিযোগ্য কোনো স্থান বন্ধ থাকে বা মুক্তভাবে প্রবেশ করা না যায়, তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা পুলিশ ভেতরের বা বাইরের দরজা-জানালা ভেঙে প্রবেশ করতে পারবেন। ওই জায়গায় যদি কোনো ব্যক্তি থাকে তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

কোনো ব্যক্তির তল্লাশির ক্ষেত্রে : বর্তমানে আমাদের দেশে যেভাবে ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধিতে এ ধরনের তল্লাশির সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩(৪) ধারায় বলা হয়েছে, কার্যবিধি ১০২(৩) ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করা যাবে। ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে বস্তু সম্পর্কে তল্লাশি হওয়া উচিত, উক্ত স্থানে বা স্থানের নিকট কোনো ব্যক্তি উক্ত বস্তু তাহার দেহে লুকাইয়া রাখিতেছে বলিয়া যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যায়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করা যাইতে পারে।’ অর্থাৎ, যে জিনিসটি পুলিশ তল্লাশি করছে তা যদি ওই ব্যক্তির শরীরের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে বলে সন্দেহ হয়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ সন্দেহ করতে পারবে। উক্ত ধারায় এটাও বলা হয়েছে, সন্দিগ্ধ ব্যক্তি যদি মহিলা হয়, তাহলে অন্য আরেকজন মহিলা দ্বারা কঠোর শালীনতার মধ্য দিয়ে তল্লাশি করতে হবে। সন্দিগ্ধ কোনো স্থান বা বাড়ির তল্লাশির জন্য যেমন দুই বা ততোধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি সাক্ষী হিসেবে থাকতে হয়, ঠিক তেমনি ব্যক্তির তল্লাশির ক্ষেত্রেও তা অবশ্যই পালনযোগ্য। ব্যক্তির কাছ থেকে আটককৃত জিনিসের তালিকা করবে পুলিশ এবং ওই ব্যক্তি চাইলেই একটি নকল তাকে দিতে হবে। ১০৩ ধারায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, লিখিত আদেশ দ্বারা আহ্বান জানানো সত্ত্বেও যে ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তল্লাশিতে উপস্থিত না হয় ও সাক্ষী হতে অস্বীকার বা অবহেলা করেন, তিনি দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারায় বর্ণিত অপরাধ করেছেন বলে ধরা হবে। কিন্তু বর্তমানে রাস্তায় মোটরসাইকেল বা গাড়ি আটকিয়ে জনগণকে যেভাবে তল্লাশি করা হয়, তা আদৌতে কতটুকু আইনসিদ্ধ তা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এই প্রক্রিয়ায় পুলিশি তল্লাশির ক্ষেত্রে বেড়ে গেছে দুর্নীতি এবং মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে মানবাধিকার।

Exit mobile version