Site icon Trickbd.com

আইন জানুন আইন মানুন পর্ব ২৪: মানব পাচার প্রতিরোধে আইন

Unnamed

২০১২ সালে প্রণীত মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে বলা হয়েছে, মানব পাচার অর্থ কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করে বা প্রতারণা করে বা উক্ত ব্যক্তির আর্থসামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোনো অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে বা অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা লেনদেন-পূর্বক উক্ত ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করে; বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেওয়াকে বোঝাবে।

শাস্তি : মানব পাচার অপরাধ সংঘটনকারী কোনো ব্যক্তি অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি এই আইনের আওতাধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহযোগী হলে উক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য ধার্যকৃত দণ্ডের সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করালে অথবা শ্রম বা সেবা প্রদান করতে বাধ্য করিলে বা ঋণ-দাস করে রাখলে বা বলপ্রয়োগ বা যেকোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ অথবা হুমকি প্রদর্শন করে শ্রম বা সেবা আদায় করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১২ (বারো) বছর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি মানব পাচারের অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ে বা যৌন শোষণ বা নিপীড়নসহ এই আইনের ধারা ২(১৫) এ বর্ণিত অন্য কোনো শোষণের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অপহরণ, গোপন অথবা আটক করে রাখলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১০ (দশ) বছর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। মানব পাচারের অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ে কোনো ব্যক্তি কোনো নবজাতক শিশুকে কোনো হাসপাতাল, সেবা-সদন, মাতৃ-সদন, শিশু-সদন, বা উক্ত নবজাতক শিশুর পিতামাতার হেফাজত থেকে চুরি করলে বা অপহরণ করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি জবরদস্তি বা প্রতারণা করে বা প্রলোভন দেখিয়ে কোনো ব্যক্তিকে পতিতাবৃত্তি অথবা অন্য কোনো প্রকারের যৌন শোষণ বা নিপীড়নমূলক কাজে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে বিদেশ হতে বাংলাদেশে আনয়ন করলে বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বছর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 
কোনো ব্যক্তি মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা মামলার সাক্ষীকে বা তার পরিবারের কোনো সদস্যকে হুমকি প্রদান, ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করে এই আইনের অধীন রুজুকৃত কোনো মামলার তদন্ত বা বিচারকার্যে কোনোরূপ গুরুতর বিঘ্ন সৃষ্টি করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বছর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অভিযোগ দায়ের ও বিচার : এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে কোনো ব্যক্তি পুলিশ অথবা ট্রাইব্যুনালের নিকট উক্ত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ দায়ের করতে পারবে এবং পুলিশ এই ধরনের অভিযোগ আনয়নকারী ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করবে এবং আইনি কার্যধারার কারণে অন্যরূপ প্রয়োজন না হলে, তার নাম পরিচয় গোপন রাখবে। পুলিশের নিকট এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের সংবাদ আসলে বা ট্রাইব্যুনাল কোনো অপরাধের তদন্তের নির্দেশ দিলে সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শকের নিম্ন পদমর্যাদার নন- এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এই আইনের অধীন তদন্তকার্য সম্পাদন করবেন। এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোনো জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ বা ক্ষমতায়িত করতে পারবে। এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের বিচার কেবল এই আইনের অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হবে। এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ (একশত আশি) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকার্য সম্পন্ন করবে। ট্রাইব্যুনালের কোনো আদেশ, রায় বা দণ্ডের বিরুদ্ধে রায় প্রদান অথবা আদেশ বা দণ্ড ঘোষণার ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাবে।