শিক্ষাজীবনে শুধু অন্ধের মত পড়ালেখা করলে যে খুব বেশি দূর যাওয়া যায় না, সেটি আমরা সবাই জানি। পড়ালেখা করে অনেকেই, কিন্তু জীবনে সফলতা পেতে হলে এর পাশাপাশি বেশ কিছু কৌশল জানতে হয়, কিছু কাজে পারদর্শী হতে হয়। তবেই না সফল একজন ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা যায়!
এমন কিছু কাজ আছে, যেগুলো শিক্ষাজীবনের এই দীর্ঘ সময়টায় না করলে বলা যায় শিক্ষাজীবনই বৃথা! এই কাজগুলোয় নিজেকে পারদর্শী করে তুললে শিক্ষা-পরবর্তী জীবনে সাফল্য পেতে কোন সমস্যাই হবে না। কারণ এগুলো তোমাকে গড়ে তুলবে একজন অভিজ্ঞ কুশলী হিসেবে, আর চাকুরিদাতাদের তো এমন একজনকেই দরকার!
আজ এমনই ১০টি কাজের কথা বলবো, যেগুলো করলে তুমি খুশি মনে বলতে পারবে, “যাক, শিক্ষাজীবনটা বৃথা গেলো না তাহলে!”
১০. সফটওয়্যারে পারদর্শী হও!
সফটওয়্যার নিয়ে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। দক্ষ হতে হবে PowerPoint, Excel ও Word এ। শিক্ষাজীবন থেকে বের হয়ে চাকুরির প্রায় সব সেক্টরে এই দক্ষতাটি দারুণ কাজে দেবে। হাজারো চাকুরিপ্রার্থীর সাথে তোমার পার্থক্য গড়ে দেবে এই একটি কাজে দক্ষতাই!
৯.খুঁজে নাও নিজের মেন্টর!
নিজের একজন মেন্টর বা গুরু খুঁজে নিতে হবে যিনি তোমাকে সাফল্যের পথ দেখাবেন, যার কাজে তুমি হবে অনুপ্রাণিত। এই মেন্টর হতে পারেন এলাকার বড়ভাই, যিনি পরিশ্রম করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। হতে পারেন কোন ইন্টারনেট সেলিব্রিটি, যার ভিডিও দেখে তাঁর মতো করে জীবন ধারণের চেষ্টা করছো তুমি! যে-ই হোক, নিজের গুরুকে নিজেই খুঁজে নিতে হবে!
৮. অংশ নাও সহশিক্ষা কার্যক্রমে
সহশিক্ষা বা এক্সট্রা কারিকুলার কাজ করতে হবে। সেটি হতে পারে কোন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, হতে পারে কোন বিজনেস কম্পিটিশন কিংবা MUN। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করতে চাইলে এগুলোর ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে পারো তুমি। এছাড়া নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে, তবেই না নিজেকে আদর্শ একজন ছাত্র হিসেবে দেখাতে পারবে!
৭. শিক্ষাজীবনে মনোযোগ দাও কর্পোরেট গ্রুমিং এ:
কর্পোরেট জগতটা খুব সহজ কোন জায়গা না। তুমি কাজ করতে না জানলে, পরিস্থিতির সাথে না মানাতে পারলে এখানে আর তোমার জায়গা হবে না। তাই এই জগতের একজন হতে চাইলে আশেপাশের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। এই পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে মানিয়ে নেয়াটাই হলো গ্রুমিং। কর্পোরেট জগতে টিকে থাকার জন্যে তাই এই কর্পোরেট গ্রুমিং অতি দরকারি।
৬. নিজের সিভি নিজেই লিখে ফেল:
আমাদের সমস্যাটা হলো যে, আমরা মনে করি সিভি জিনিসটা পড়ালেখার পাট চুকিয়ে, চাকুরিতে ঢোকার সময় লিখলেই হয়। এটি একটি ভুল ধারণা। পড়ালেখা শেষ করে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই সিভি লেখার অভ্যাস করতে হবে। এবং প্রতি সেমিস্টার শেষে নিজের সিভি আপডেট করতে হবে। এতে যে লাভটা হয়, পুরো সেমিস্টারে কোন কাজের কাজ করেছো কি না সেটির প্রমাণ পাবে সিভি আপডেট করার সময়। এভাবে পুরো সেমিস্টারে তোমার কৃত কাজের একটা প্রতিফলন পাবে! তাই আর দেরি না করে ঝটপট শুরু করে দাও সিভি লেখা!
৫. নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে শেখো:
আমাদের আরেকটা সাধারণ অভ্যাস হচ্ছে যে কোন সমস্যায় পড়লে সেটির সমাধান না করে সমস্যাটি কে করেছে, কেন হয়েছে এরকম নানাবিধ প্রশ্ন করতে থাকি। কিন্তু কথা হলো যে, সমস্যা যেটাই হোক, যেভাবেই হোক- সমাধান করতে হবে তোমাকেই। সমস্যা দেখে সেটি নিয়ে প্রশ্ন না করে বুদ্ধিমানের মতো সেটির সমাধান করে ফেললেই জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়।
৪. শিক্ষাজীবনেই প্রেজেন্টেশনের সাথে অভ্যস্ত হও:
প্রেজেন্টেশন নিয়ে আমাদের ভয়টা পুরনো। ডায়াসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে শখানেক প্রেজেন্টেশান দেয়া মানুষটিরও গলা শুকিয়ে যায়, বুক কাঁপে একটু হলেও। এটি থাকবেই। কিন্তু তাই বলে প্রেজেন্টেশান তো খারাপ করা যাবে না! একটি ভালো প্রেজেন্টেশন চাকুরিজীবনে সাফল্য পেতে বেশ কাজে দেবে! এজন্যে এটিকে ভয় না পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে চললে প্রেজেন্টেশনের ভয়টা আর থাকবে না!
ছাত্রজীবন থেকেই নেটওয়ার্কিংটা বজায় রাখতে হবে
৩. শিক্ষাজীবনে শেখো নতুন কোন ভাষা:
আধুনিক বিশ্বে সফলতার সূত্র হলো পুরো বিশ্বের সাথে কানেক্টেড থাকা। আর সেটি করতে হলে নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি বিদেশি এক দুইটা ভাষা শিখতেই হবে। ইংরেজি তো আবশ্যক, পাশাপাশি তোমার কার্যক্ষেত্র অনুযায়ী আরেকটা ভাষার বেসিক জ্ঞান নিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে তা দারুণ কাজে লাগতে পারে! আর কিছু না হোক, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতেই হবে এই ছাত্রজীবনে!
২. নিজের ডিজিটাল প্রোফাইলের সর্বোচ্চ ব্যবহার কর!
আমাদের সবারই একটা ডিজিটাল প্রোফাইল আছে। সেটি অযথা সেলফি তুলে নষ্ট না করে কাজে লাগাতে হবে। তোমার প্রোফাইল যেন তোমার হয়ে কথা বলে, সেভাবেই সাজাতে হবে সেটি। ধরো, তুমি খুব ভালো এনিমেশনের কাজ পারো। তোমার সেরা কিছু কাজ যদি তোমার ডিজিটাল প্রোফাইলে থাকে, তাহলে যে কোন প্রতিষ্ঠান যারা ভালো এনিমেটর খুঁজছে, তোমার প্রোফাইল দেখেই তোমাকে পছন্দ করে ফেলতে পারে! এভাবে ভবিষ্যতে এই প্রোফাইলই তোমাকে তোমার কর্পোরেট জীবনে সহায়তা করবে।
১. নেটওয়ার্কিং শুরু হোক শিক্ষাজীবনে!
নেটওয়ার্কিং বলতে বোঝানো হচ্ছে তুমি যেই ক্ষেত্রে কাজ করবে, সেই ক্ষেত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচয় রাখা। এতে করে যেকোন দরকারে তাদের কাছ থেকে সহায়তা পেতে পারো তুমি, পরামর্শ পেলে সেটিই বা কম কিসে? ছাত্রজীবন থেকেই নেটওয়ার্কিংটা বজায় রাখতে হবে। তুমি যে বিষয়ে কাজ করতে চাও, সেই বিষয়ের এক্সপার্টদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করবে। তাহলেই না এগিয়ে যাওয়া যাবে সাফল্যের অভিযাত্রায়!Student Life Skill Development
আমাদের ক্ষুদ্র এ জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটে যায় ছাত্রাবস্থায়। এই সময়টাকে কাজে না লাগাতে পারলে বাকি জীবনে হতাশা আর আক্ষেপে কেটে যাবে। সাফল্যের আশাটা ঢেকে যাবে সংশয়ের দোলাচলে। তাই সময় থাকতেই তোমাদের উচিত এই দশটি কাজ সেরে ফেলা। সুন্দর একটি ভবিষ্যতের জন্যে এইটুকু তো করাই যায়, তাই না?