পৃথিবীর ব্যাসার্থ সর্বপ্রথম মেপেছিলেন এরাতোস্থেনেস(খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৬) নামক গ্রিক বিজ্ঞানী। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো সেই অতো আগেও তার পরিমাপ প্রায় নির্ভুল ছিলো। এবং তিনি পরিমাপ করতে খুবই সহজ একটি ফর্মুলা ব্যবহার করেছিলেন, সেই ফর্মুলা বর্তমানে ক্লাস সিক্সের বাচ্চারাও জানে।
এটা নিয়ে মজার একটি গল্প রয়েছে, সেটিই শোনাবো। তবে চলুন শুরু করে ঘটনাটিঃ
আমরা জানি, পৃথিবী গোলাকার, এবং এই পৃথিবীর একটি কেন্দ্রও আছে। ইরাটোস্থিনিস খ্রিষ্টপূর্ব ২৩৬ সনে একদিন লক্ষ করলেন যে, বছরের নির্দিষ্ট একটা দিনে সূর্য লিবিয়ার সাইরিন শহরের ঠিক মাথার উপর থাকে, সেইদিনটা হচ্ছে ২১শে জুন। এই দিনটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দিন, কারণ এইদিনে সূর্য একদম আমাদের মাথার উপর দিয়ে যায়, এইজন্য সূর্যকে খানিকটা পথ বেশী অতিক্রম করতে হয়।
তো এইদিনে বিষুবরেখা (পৃথিবীর মধ্য রেখা, রেখাটির মান ০ ডিগ্রি) অঞ্চলে অবস্থিত এলাকাগুলোতে ঠিক দুপুরে খাড়াভাবে পুঁতে রাখা লাঠির কোনো ছায়া দেখা যাবে না। তিনি সাইরিন শহরের একটি কুয়ার পাশে লাঠি পুতে এই পরীক্ষা করেছিলেন।
তো এরাতোস্থেনেস আলেকজান্দ্রিয়া শহরের টলেমির বিশাল লাইব্রেরীতে চাকুরী করতেন। তিনি সেখানে গিয়ে ঐ একই দিনে ২১ জুনে এই পরীক্ষা করে দেখলেন, এখানে ছায়া পরছে, তখন তার মাথায় একটি অভিনব বুদ্ধি এলো।
চিত্রঃ এরাতোস্থেনেসের পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ের উপায়, চিত্রসুত্রঃ খান একাডেমী
তিনি জানতেন, সূর্যের তুলনায় এতই ছোট যে, সূর্যের সকল আলো পৃথিবীতে সমান্তরাল ভাবে আপতিত হয়। এখানে AB ও CD আলোক রশ্মি পৃথিবীতে সমান্তরালে পরছে, এবং আলেকজান্দ্রিয়া শহরে একটি ∠ACD কোণে ৭.২ ডিগ্রি কোন তৈরি করেছে। এখানে একান্তর কোনের সূত্র মতে, ∠ACD= ∠CAB= ৭.২ ডিগ্রি।
সাইরিন ও আলেকজান্দ্রিয়া শহরের দূরত্ব ছিলো ৫০০০ স্টেডিয়া, তখন দূরত্ব পরিমাপে এই একক ব্যবহার করা হতো
তাহলে ঐকিক নিয়মেঃ
৭.২ ডিগ্রির জন্য দূরত্ব পাই ৫০০০ স্টেডিয়া
১ ডিগ্রির জন্য দূরত্ব পাই = 50007.2 স্টেডিয়া
৩৬০ ডিগ্রির জন্য দূরত্ব পাই = 50007.2∗360 স্টেডিয়া
= ২,৫০,০০০ স্টেডিয়া
= ৪৬,২৫০,০০০ মিটার (যেহেতু ১ স্টেডিয়া= ১৮৫ মিটার)
= ৪৬,২৫০ কিলোমিটার (যেহেতু ১ কিলোমিটার = ১০০০ মিটার)
আমরা বর্তমান হিসাবমতে জানি, ৪০,০৭০ কিলোমিটার,এরাতোস্থেনেস হিসাবের অনেকটাই নিকটবর্তী, কতক বইতে ১ স্টেডিয়া= ১৫৭ বা ১৬০ মিটার পাওয়া যায়, এই হিসাবমতে এরাতোস্থেনেস আরো নির্ভুল প্রমাণিত হয়। তবে এই হিসাবগুলো এরাতোস্থেনেসএর বইতে পাওয়া যায়নি, তার বই হারিয়ে গিয়েছে, ক্লিওমিডস তার রেফারেন্স দিয়ে তার বইয়ে উল্লেখ করেন।
আর বৃত্তের পরিধির সঙ্গে ব্যাসার্থের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বৃত্তের পরিধি= ২π* বৃত্তের ব্যাসার্ধ্য
তাহলে বৃত্তের ব্যাসার্ধ্য= 46,250Km2∗3.14159
= 7360 কিমিঃ
বর্তমানে আমরা জানি পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য ৬৩৭৮ কিমিঃ, যা বহু আগে আবিষ্কার হিসাবে অত্যন্ত আশ্চর্য মেধার পরিচায়ক।
এছাড়াও ইরাটোস্থিনিস এই একই পদ্ধতিতে পৃথিবী থেকে চাঁদ এবং পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব বের করেছিলেন। এমনকি সূর্যের পরিধি পৃথিবীর পরিধির প্রায় ২৭ গুন এটাও তিনি বের করেছিলেন কিন্তু দুঃখজনকভাবে আসল হিসেবে সূর্যের পরিধি পৃথিবীর ১০৯ গুন বড়।
বিজ্ঞানীর পরিচয়ঃ
এরাতোস্থেনেসকে ডাকা হতো গ্রীক বর্ণের দ্বিতীয় অক্ষর বিটা(β) নামে কারন তিনি সবখানে দেরি করে আসতেন। তিনি একজন শখের কবিও ছিলেন। সেই “ইউরেকা ইউরেকা” বলে চিৎকার করে উঠা আর্কিমিডিসর, টলেমি ও সমসামিয়িক সকল বিজ্ঞানীর সাথে তার ভালো বন্ধুত্বও ছিলো।
চিত্রঃ এরাতোস্থেনেসিস মিশরে তার ছাত্রকে পড়াচ্ছেন, চিত্রঃ উইকিমিডিয়া
এই মহান জ্ঞানী গণিতবিদ খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৪ সনে ৮২ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু আমাদের মাঝে রেখে যান তার অসামান্য গানিতিক দক্ষতার প্রমাণ।
সুত্রঃ Aristarchus and Eratosthenes
যদি পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে আমার সাইটটি ঘুরে দেখুন একবার ☞ hmvai.com