আমাদের এই মহাবিশ্ব খুবই রহস্যময়। আমাদের এই মহাবিশ্ব এতটাই বিশাল যে, এটা যদি আমরা আমাদের কল্পনার দ্বারা পরিমাপ করতে যাই তারপরও এ মহাবিশ্বের শেষ হয় না। এখানে রয়েছে অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র, নেবুলা, অ্যাস্ট্রয়েড গ্যালাক্সি, লোকাল গ্রুপ, ব্ল্যাকহোল সহ অনেক কিছু, যেগুলো কোনোটি পৃথিবীর চেয়ে কয়েকশো কোটি গুণ বড়, এবং যেগুলো হাজার হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের এক অণু পরমাণু সম্পর্কেও জানতে পারেনি। যদিও আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে অনেকটাই এখন ধারণা করতে পারি। এই মহাবিশ্বের এতগুলো রহস্যের মধ্যে নীহারিকাও একটি অন্যতম রহস্য। আজকে আমরা কথা বলবো এই নীহারিকাকে নিয়ে। আমরা জানার চেষ্টা করব নীহারিকা কি এবং এর গঠন এবং এর সৃষ্টি নিয়ে।
রাতের আকাশ দেখেছে কিন্তু অবাক হয় নি, এমন মানুষ দুনিয়াতে একটিও হয়তো নেই। বহু আলোকবর্ষ দুরের মিটিমিটি করে জ্বলা নক্ষত্র প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে। মানুষ দেখেছে অনেক ধরনের জ্যোতিষ্কই। কিছু স্হির আলোকবিন্দু(নক্ষত্র) কিছু স্হানপরিবর্তনশীল আলোকবিন্দু (গ্রহ), আবার এই বুঝিকোন নক্ষত্র মাটিতে খসে পড়ছে (উল্কা), আবার কিছু হয়তোবা কুয়াশার মতো ছোট স্হানজুড়ে বিস্তৃত। এই ছোট স্হানজুড়ে বিস্তৃত অংশ গুলোই মুলত নীহারিকা ব নেবুলা। ব্যাতিক্রম হচ্ছে, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। কারন, একে দেখতে অনেকটা নীহারিকার মতোই আবছা জ্যোতিষ্কের মতো লাগে। এমনকি আগে অ্যান্ড্রোমিডাকে নীহারিকাই মনে করা হতো, নাম দেয়াছিলো অ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকা। প্রযুক্তির উন্নতিতে আজ আমরা জানতে পেরেছি তা নীহারিকা নয়, গ্যালাক্সি। আজকে জেনে নেয়া যাক, নীহারিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য।
নীহারিকা কি?
– নেবুলা মুলত গ্যাস ও ধূলার সমন্বয়ে সৃষ্ট এক সুবিশাল মহাজাগতিক মেঘ। নেবুলার নির্দিষ্ট কোন আকৃতি নেই। শুন্য মাধ্যমের তুলনায় এ অন্ঞ্চলের ঘনত্ব বেশি। নেবুলার তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি। কারন, এদের ভেতরে ও আশেপাশে থাকা নক্ষত্র থেকে বিকিরিত তাপেই এরা উত্তপ্ত হয়। যদি নেবুলার আশেপাশে নক্ষত্র না থাকতো তবে এরা ঠান্ডা থাকতো, খুবই ঠান্ডা। নীহারিকার রং হয় অনক ধরনের তবে লক্ষনীয় রং হলো, লাল, নীল, কমলা, সবুজ। মহাশুণ্যের সবচেয়ে সুন্দর জ্যোতিষ্ক এরা৷
নীহারিকার গঠন উপাদান
নীহারিকা প্রধানত গ্যাস, ধুলা ও প্লাজমা দ্বারা গঠিত। অধিকাংশ নেবুলা ই ৯০% হাইড্রোজেন, ৯% হিলিয়াম, এছাড়া বাকি ১% হিসেবে রয়েছে কার্বন, নাইট্রোজেন, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার,ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম। নীহারিকাগুলো মুলত অবস্হিত আন্তঃনাক্ষত্রিক শুন্যস্হানে। তাহলে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম বা ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম কি সে বিষয়ে আগে একটু দেখা যাক।
নেবুলার সৃষ্টি হয় কিভাবে?
আগেই দেখেছি আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে থাকে অনেক গ্যাস ও ধুলা। কোন ভাবে মহাকর্ষ টানের মাধ্যমে যখন সেগুলো কাছাকাছি আসে তখন কাছাকাছি আসা সেসব গ্যাসের সম্মিলিত আকর্ষন আরো শক্তিশালী হয়। ফলে সেগুলো আরো বেশি পরিমান পদার্থকে আকর্ষন করতে থাকে, সংকুচিত করতে থাকে। এভাবো পদার্থ যতো কাছাকাছি আসে, আকর্ষন কতোই বাড়ে, এভাবে বাড়তে বাড়তে অনেক বিশাল পরিমান গ্যাসীয় অন্ঞ্চলের সৃষ্টি হয় যাকে নেবুলা বলে৷ আবার, নক্ষত্রের বিস্ফোরনে এর পৃষ্ঠের সকল পদার্থ মহাশুন্যে নিক্ষিপ্ত হয়েও নেবুলার সৃষ্টি করে। নীহারিকাই হলো নক্ষত্রের একমাত্র জন্মস্হান৷ নীহারিকার গ্যাস ও ধুলাই মহাকর্ষীয় টানে সংকুচিত হয়ে নক্ষত্রের জন্ম দেয়। আবার সেই নক্ষত্রই মৃত্যুর সময় নেবুলা সৃষ্টি করে, আবার সেই নেবুলা থেকেও আবার সৃষ্টি হয় নক্ষত্র। এভাবেই নীহারিকার জগতে চলতে থাকে ভাঙ্গা গড়ার খেলা।
নীহারিকা অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। কিছু নীহারিকা নিজস্ব আলো দেয়, কিছু নীহারিকাকে অন্ধকার দেখায়, কিছু বা আবার গোলাকৃতি। প্রধানত নীহারিকে চারভাগে ভাগ করা যায়। এদের সম্পর্কে নিচে জেনে নেয়া যাকঃ