Site icon Trickbd.com

ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায়

ছাত্র জীবনে উন্নতি

বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। তাদের নিজেদের মধ্যে চিন্তাভাবনার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ : আমরা সবাই কিন্তু সারাদিন মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি । বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা গেছে , এই মোবাইল যন্ত্রটি ছাড়া প্রতি পাঁচজনে একজন কিশোর থাকতে পারে না। যদিও আমরা সবাই ধনী নয় তবে আমরা সবাই ধনী প্রজন্মের মানুষ।

আপনি একবার চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবেন আগের মানুষের জীবনযাত্রার মানের সাথে বর্তমান সময়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানের পার্থক্যটা। অনেক আগে এখনকার মতো ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি কোনটাই তাদের ছিল না। দিনবদলের সাথে সাথে বিশ্বের অনেক কিছুই পরিবর্তন হলেও কিছুটা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আপনি অনেক দক্ষতা নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন, যেমন: গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের কৌশল এবং টিম হয়ে কাজ করা ইত্যাদি।

অনেক বছর আগেও এই দক্ষতাগুলো লাগতো ছাত্র জীবনে সফল হতে। এই জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ এখন সফল হচ্ছে। ইন্টারনেটের কারনে এখন আমাদের অনেক কিছু জানতে সুবিধা হয়। নিজেকে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখতেই দক্ষতার কোন বিকল্প নেই।

পড়াশোনা শেষ করে সবার একটা লক্ষ্য থাকে ভালো মানের কোন সরকারি চাকরি নেওয়া। চাকরি নিতে হলে অবশ্যই আপনার কিছু দক্ষতা প্রয়োজন যেগুলোর কারণে আপনি চাকরি পেতে সক্ষম হবেন। যে দক্ষতাগুলো আপনার মধ্যে থাকলে ছাত্র জীবনে সফল হবেন সেই তথ্যগুলো আপনার সামনে আজকে আমি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায়। ছাত্র জীবনে যেসব দক্ষতা আপনার মধ্যে থাকলে ছাত্র জীবনে সফল হতে পারবেন সেগুলো নিয়ে এখন বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি।

ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায়

১. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা যে কোন কাজে সফল হওয়ার প্রথম ধাপ। লক্ষ করে রাস্তার সাথে তুলনা করা যায় যেটার মাধ্যমে এগিয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য পাওয়া যাবে। আমাদের বেশির ভাগ মানুষই জানে না তার জীবনের লক্ষ্য কি! জানলেও এটা বলতে পারবে না কেন তার জীবনের লক্ষ্য?

আপনি যদি লক্ষ স্থির করতে গরমিল করে ফেলেন তাহলে জীবনে হোঁচট খেতে পারেন খুব সহজেই। এজন্য আপনার সুবিধা হবে লক্ষ স্থির করে সেটাকে মনে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া উচিত। তাই আমরা সবাই আমাদের জীবনের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে নেব প্রথমে।

২. যোগাযোগ দক্ষতা

আপনার মাঝে তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক সেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো শোনা বলা ও লেখা। একজন মানুষের এই তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক হিসেবে ধরা হয়।

শুধু ছাত্র জীবন অথবা চাকরি জীবনের মানে আপনি প্রতিনিয়ত মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে এই তিনটা গুণ থাকতে হবে। কারণ প্রতিনিধি আপনার বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।

যেমন কাউকে ফোন দিয়ে কথা বলা এবং কাউকে ইমেইল পাঠানো ইত্যাদি। আপনার জীবনে চলার পথে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে এই গুনগুলো। সুতরাং এখন থেকে আপনি চেষ্টা করবেন আপনার মাঝে যেন এই গুণগুলো দক্ষতা হিসেবে তৈরি করতে পারেন।

এই তিনটি গুণে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। নতুবা জীবনে চলার পথে বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হবেন। যেগুলো আপনার ছাত্র জীবন অথবা তাঁকে জীবনকে সফল করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।

৩. স্বপ্ন দেখা

সত্যি কথা বলতে স্বপ্ন ছাড়া কোনো মানুষই বেঁচে থাকতে পারে না। স্বপ্ন আমাদের বেঁচে থাকার শেষ প্রেরণা। স্বপ্ন আমাদের জীবনের কাঠামো তৈরি করে দেয়।

এ কারণে বলা হয় জীবনে জ্ঞানের চেয়ে কল্পনার দাম অনেক বেশি। স্বপ্নকে আমাদের মনের একটা নির্দিষ্ট স্থানে স্পষ্ট করে তুলতে হবে। আপনার দেখা স্বপ্নকে লক্ষ্যে পরিণত করে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম, কষ্ট ওধৈর্য ধারণ করতে হবে। কারণ স্বপ্ন দেখে শুধু বসে থাকলে চলবে না।

সমাজবিজ্ঞান সাবজেক্ট রিভিউ 

৪. অনুধাবন ও বিশ্লেষণ দক্ষতা

যে কোন কাজ করার পূর্বে ভেবে করা উচিত। তবে চাকরি সাক্ষাৎকারের সময় সেই ভাবার সময়টা খুব বেশি থাকে না। তবে এক্ষেত্রে আপনার যদি অনুরোধ আবন ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা ভালো থাকে তাহলে আপনি সৌভাগ্যবান।

চাকরি বা শিক্ষাজীবনের সাক্ষাৎকারে আপনাকে কোন প্রশ্ন করা হলে সেই প্রশ্নটা আপনি নিজে নিজেই আগে নিবেন তারপর ধীরে সুস্থে সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন। প্রথমে আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনাকে কি প্রশ্ন করা হয়েছে এবং কি উত্তর দিবেন।

আপনি যত বেশি অনুধাবন ও গবেষণা করতে পারবেন ততবেশি আপনি জানতে পারবেন। কারণ এই গবেষণার ফলে আপনি সবার চেয়ে আলাদা হবেন।

৫. নিজেকে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা

আপনি আপনার আশেপাশের পরিবেশের রকম পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলে সেটা হবে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা। এই দক্ষতা আপনার ব্যক্তি জীবনে অনেক বেশি প্রভাব ফেলবে।

এ দক্ষতা অর্জন করার জন্য আপনি ছাত্রশিবিরের যেকোনো একটা সংঘের সাথে যুক্ত হয়ে এই দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এটা কথার ফলে যে কোন খারাপ পরিস্থিতি আপনি নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।

৬. মেধা যাচাই করা

এই দক্ষতা যেকোনো ছাত্রের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকে ক্ষণস্থায়ী কোন বিষয়ে সাফল্য লাভ করে নিজেকে বড় মনে থাকে। আপনি যদি আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন তাহলে মনে রাখবেন এখানে আপনার শেষ না।

কারণ আপনার কোন সীমানা নেই। তাই সাফল্যের সিঁড়ি দিয়ে আপনাকে শুধু উপরের দিকে উঠতে হবে। নিজের জীবনে অহংকার কে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজের মেধাকে শান দিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যান তাহলে একদিন আপনি সফল হবেনই।

৭. অন্যদের মানসিকতার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানো

আপনি কোন একটা কাজ দলগতভাবে করতে গেলে সবার সাথে আপনার মানসিকতার মিল খুঁজে পাবেন না। কারণ মানুষের মন একরকম হয় না।

একেকজনের একেক রকম হয়ে থাকে তাই কারো মনে কষ্ট না দেয় সবার মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

এই দক্ষতা অর্জন করতে হলে আপনার ছোটবেলা থেকেই ছাত্রজীবনে যে কোন একটা ক্লাবের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারেন।

৮. সিদ্ধান্ত ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা

আপনাকে যেকোন খারাপ পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি যেই সমস্যায় পড়ুন না কেন আপনাকে সেই সমস্যা সমাধানের সঠিক উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

আপনি চাইলে কোনো নতুন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সেই সমস্যার সঠিক সমাধান বের করে তার সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেন। এ কাজটি করার জন্য আপনি কোন ক্লাবের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

৯. ভুল স্বীকার করা এবং ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া

মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক তাই যেকোনো সময় আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতেই পারি। তাই কোনো ভুল হলে সেটাকে স্বীকার করে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

এটা সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষরা করে থাকে। আপনি যদি জেনে শুনে ভুল করে থাকেন তবে সেটা স্বীকার করা বুদ্ধিমানের কাজ । কারণ ভুল স্বীকার না করলে আপনার নিজের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে । সেইসঙ্গে আপনি নতুন কোনো জিনিস শেখা থেকে বিরত হবেন।

ইংরেজি শব্দার্থ মনে রাখার কৌশল

১০. আত্মবিশ্বাস ও জনসম্মুক্ষে কথা বলা

আপনি আত্মবিশ্বাসের জোড়ে অনেক কঠিন কাজকে খুব সহজে করে ফেলতে পারবেন। একজন বিজ্ঞানী বলেছিলেন আত্মবিশ্বাস পোশাক থেকে আসে না আত্মবিশ্বাসে আমার কর্ম থেকে। আত্মবিশ্বাস ছাত্রজীবনে খুব বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। জীবনে যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তারা সবাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।

আত্মবিশ্বাসী মানুষ জীবনে খুব সহজে সফলতার মুখ দেখতে পারে। কোন একটা বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে সে বিষয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেরিয়ে যাবে। এজন্য সেই বিষয় সম্পর্কে আপনার গবেষণা করতে হবে। এছাড়া আপনাকে জনসম্মুখে কথা বলার মত একটা গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

কারণ জীবনের নানা ক্ষেত্রে দেখতে পাবেন আপনাকে বিভিন্ন জায়গায় জনসম্মুখে কথা বলার প্রয়োজন হয়েছে। সুতরাং আপনার উচিত হবে পাবলিক স্পিকিং দক্ষতা বাড়ানো।

সারকথা

তো এই ছিল শিক্ষার্থী বন্ধুরা, ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় অথবা ছাত্রজীবনের যেসব দক্ষতা থাকা প্রয়োজন তার সম্পর্কে বিস্তারিত একটি লেখা। আশা করি তোমাদের সবার আর্টিকেলটা অনেক ভাল লেগেছে। উপরের দক্ষতাগুলো তুমি অর্জন করতে পারলে খুব সহজে জীবনে সফল হতে পারবে। উক্ত দক্ষতা অর্জন ছাড়া ছাত্র জীবনকে সফল করা সম্ভব নয়।