স্মার্ট ভাবে পড়ালেখা করার ৭টি উপায়

রাতদিন বাবা মা বলেই যান, “বেশি করে পড়াশোনা কর! রেজাল্ট ভাল হতে হবে এবার!” আমরাও ভাল রেজাল্টের জন্য অথবা ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার আশায় নাকমুখ গুঁজে ডুবে থাকি পড়ালেখায়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এত পরিশ্রমের পরও ফলাফল মনমতো হচ্ছে না।

অথচ পাশের বাড়ির ছেলেটাই সারাদিন খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকার পরও পরীক্ষায় অনেক ভাল ফল করছে। এর কারণ কি শুধুই মেধার তারতম্য? কখনোই নয়! স্রষ্টা সবাইকেই সমান মেধা দিয়ে পাঠিয়েছেন, কিন্তু মেধার সঠিক ব্যবহারই ক্লাসের ফার্স্ট বয় আর লাস্ট বয়ের ব্যবধান তৈরী করে দেয়।

সমাজে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী আমরা অনেকেই “স্টাডি হার্ড” অর্থাৎ “বেশি বেশি পড়লেই ফল ভাল হবে”- এমন ধারণা পোষণ করি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে “স্টাডি হার্ড” এর চেয়ে “স্টাডি স্মার্ট” বা “সঠিক নিয়মে পড়াশোনা” অনেক বেশি ফলপ্রসূ।

দৈনন্দিন পড়াশোনা পদ্ধতিতে ছোট্ট ছোট্ট কিছু পরিবর্তন জাদুকরী এক ভূমিকা রাখবে তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল করার পেছনে। চলো, ঝটপট দেখে নেওয়া যাক ৭টি “স্টাডি স্মার্ট” টিপস!

পড়াশোনা করার নিয়মঃ

১। একনাগাড়ে বেশিক্ষণ পড়াশোনা নয়

বিজ্ঞানীরা বলেন, মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা টানা ২৫-৩০ মিনিট পরিশ্রমের পর হ্রাস পেতে শুরু করে। সুতরাং, একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা বই নিয়ে পড়ে থাকার অভ্যাস বন্ধ করো। পড়ার সময়টুকুকে ছোট্ট ছোট্ট ভাগে আলাদা করে সাজিয়ে নাও।

প্রত্যেকটা ভাগ শেষ হওয়ার পর পাঁচ মিনিট ব্রেক নিবে। এই সময়টুকু একদম chill! তোমার যা করতে ভাল লাগে (কিছু খাওয়া, গান শোনা, ফেসবুকে একবার ঢুঁ মেরে আসা) এই সময়টুকুতে করবে, তারপর সতেজ মনে আবার পড়াশোনা করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

২। মুখস্থ নয়, বুঝে পড়ো

ছোটবেলা থেকে আমাদের ছড়া, কবিতা প্রভৃতি দাঁড়িকমা সহ মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় সবকিছু মুখস্থ করে ফেলার। এটি খুব ভুল একটি পদ্ধতি। অনেকেই আছে, যাদের কোন কিছুর সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে হুবুহু বই এর সংজ্ঞা গড়গড় করে বলে দিতে পারবে, কিন্তু ব্যাখ্যা করতে বললেই নিশ্চুপ!

Don’t just study hard, study ‘smart’বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় এই মুখস্থবিদ্যা নির্ভরতা তোমাকে একদমই সাহায্য করবে না ভালো ফল করতে। সুতরাং বই এর সংজ্ঞা মুখস্থ করা বন্ধ করে মূল টপিকটা বুঝতে চেষ্টা করো। কেননা, মুখস্থ দশবার করলে দশবার ভুলবে, কিন্তু একবার ভালভাবে বুঝে নিতে পারলে কোনদিনও ভুলার চান্স নেই!

৩। বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়ো

বুঝে বুঝে পড়ার একটি চমৎকার উপায় হচ্ছে একই টপিক বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়া। অন্ধের হাতি দেখার গল্প মনে আছে তো? শুধুমাত্র একটি বই থেকে পড়তে গেলে তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। সুতরাং সম্ভাব্য সবরকম সোর্স থেকে শেখার চেষ্টা করো। বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করো, বিভিন্ন লেখকের বই থেকে পড়ো, বড় ভাই/আপুদের সাহায্য নাও। ইন্টারনেটে একটু খুঁজলেই চমৎকার সব শিক্ষামূলক সাইট পেয়ে যাবে তোমার টপিকের উপর।

৪। কাউকে শেখাও

আইনস্টাইন বলেন, “একটা বিষয় তোমার পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত হবে তখনই, যখন বিষয়টি তুমি কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবে।” পড়ালেখাকে যদি একটি গাড়ির সাথে তুলনা করো, তাহলে তুমি যখন একটি টপিক পড়লে, তখন সেটি হচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন। কিন্তু শুধু এটুকু দিয়েই তুমি কাউকে ঠিকভাবে বুঝাতে পারবে না টপিকটা।

আরও পড়ুন — আজকে চার্জার ফ্যান এর দাম কত টাকা

কেননা, কেবল ইঞ্জিন থাকলেই তো গাড়ি চলে না! গাড়ির অন্যান্য যন্ত্রাংশ – চেসিস, টায়ার ইত্যাদি সব মিলে যুক্ত হয়েই তৈরী হয় একটি গাড়ি।যখন কাউকে বুঝাতে যাবে একটি টপিক, তখন লক্ষ্য করবে শুধু বইপড়া জ্ঞান দিয়ে কাজ হচ্ছে না। ঠিক গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মতো, সবগুলো ঠিকমতো জোড়া দিলে তবেই চলবে গাড়ি, সেরকম তোমার টপিকটার বিভিন্ন আঙ্গিকের উপর সার্বিক একটা ধারণা থাকতে হবে, এবং সেটা গড়ে উঠবে কাউকে শেখাতে গেলেই, টপিকটার উপর তোমার জ্ঞান অনেক গভীরে পৌঁছাবে তখন।

৫। নিবিড় মনোনিবেশ

একবার ভেবে দেখো তো, দিনে গড়ে কত ঘন্টা তুমি বইয়ের সামনে বসে কাটাও? এর মধ্যে কতটুকু সময় তোমার অখন্ড মনোযোগের সাথে পড়া হয়? খেয়াল করলে দেখবে, প্রচুর সময় হেলাফেলা করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। “জাস্ট ২ মিনিটের জন্য ফেসবুকে ঢুকবো!” “খেলার স্কোরটা দেখেই টিভি বন্ধ করে দিবো!” পড়তে বসলেই এমন অনেক ইচ্ছা কিলবিল করতে থাকে মাথার ভেতর। এই ইচ্ছাগুলো ঝেড়ে ফেলে দাও এখনই।

একই সাথে একাধিক কাজ করতে গেলে কোনটিই ভালভাবে করা হয়না। যখন পড়তে বসবে, তখন সম্পুর্ণ মনোযোগ থাকবে বইয়ের পাতায়। মনোযোগ বিঘ্ন করার মত যা কিছু আছে, সবকিছু দূরে সরিয়ে রাখবে এই সময়টুকুতে। অল্প সময় পড়বে, কিন্তু ১১০% মনোযোগের সাথে পড়বে। আর বিনোদনের জন্য স্টেপ ওয়ানে বলা পাঁচ মিনিটের ব্রেক তো আছেই!

৬। ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরী করোঃ

আমরা সবাই বছরের শুরুতে লক্ষ্য ঠিক করি, “এইবছর ফাটায়ে পড়াশোনা করবো!” এবং বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা “লক্ষ্য” হয়েই থেকে যায়, কার্যকরী আদৌ হয়ে উঠেনা! কেন এমনটি হয় কখনো ভেবে দেখেছো? আমরা ছোট থাকতে গুরুজনেরা আমাদের খাইয়ে পরিয়ে দিতেন, নিয়মিত পড়া আদায় করাতেন। এখন তুমি বড় হয়েছো, এখন আর কেউ প্রতিদিন তোমার পড়া ধরতে আসে না।

তোমার সাফল্য ব্যর্থতার দায়ভার তোমার নিজের হাতেই।প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করো। “আমি এই টার্মে ফার্স্ট হতে চাই!” এত দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যানে না গিয়ে “আমি আজকে ম্যাথ অমুক চ্যাপ্টার কমপ্লিট করবো” এরকম একদিনের প্ল্যান ঠিক করো। এবং সেটা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত হাল ছেড়ো না। প্রতিদিন এরকম ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করতে করতে বছরের শেষে গিয়ে দেখবে সত্যিই বছরজুড়ে ফাটাফাটি পড়াশোনা হয়েছে!

৭। পড়াশোনা হোক গল্পের, আনন্দের!

তুমি একদিন বাসে উঠে তোমার বন্ধুকে বললে, “এই জানিস! গতকাল কলেজের সামনে রাস্তায় কি কাহিনী ঘটেছে!” আমি বাজি ধরে বলতে পারি, বাসের সবাই সাথেসাথে কান খাড়া করে ফেলবে “কি কাহিনী ঘটেছে” সেটা শোনার জন্য! কারণটা খুব সোজা, আমরা সবাই গল্প শুনতে ভীষণ ভালবাসি!

পড়াশোনাকে যখন সংজ্ঞা/ফর্মুলার নীরস জায়গা থেকে গল্পের ছাঁচে ফেলতে পারবে, দেখবে জিনিসটা আসলে কত মজার! গণিতের “x=?” এর সমাধান যেন গোয়েন্দা কাহিনীর “কে সেই কালপ্রিট?” বের করার মতোই! “ব্রেকিং ব্যাড” এর কল্যাণে রসায়নের ফর্মূলাগুলো তো এখন সবাই আগ্রহ নিয়েই শিখে!ফিজিক্সের প্লবতার “ইউরেকা!” থেকে শুরু করে আতশ কাঁচের সাহায্যে আর্কিমিডিস কিভাবে রোমান যুদ্ধতরী পুড়িয়ে দিলেন সমুদ্রে -এরকম অজস্র ইন্টারেস্টিং গল্প আছে।

এরকম সব সাবজেক্টেই অনেক মজার মজার গল্প, ঘটনা জড়িয়ে আছে। বাস্তব জীবনে চারপাশের উপকরণের সাথে যখন পাঠ্যবই এর টপিকগুলো মিলিয়ে গল্প তৈরী করতে শিখবে, দেখবে পড়ালেখার চেয়ে মজার আর কিছুই হতে পারে না!সুতরাং আর নয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঢুলে ঢুলে বই মুখস্থ করা! এখন থেকে পড়ালেখা হবে আনন্দের উপকরণ, দারুণ ইন্টারেস্টিং একটি বিষয়। Don’t study “hard”, study “smart”!

 


ই-সার্ভিস বিষয়ক তথ্য জানতে ভিজিট করুন – NID Check

আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে জয়েন করুন টেলিগ্রাম গ্রুপ এবং নিত্যনতুন আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল।

8 thoughts on "স্মার্ট ভাবে পড়ালেখা করার ৭টি উপায়"

    1. Levi Author Post Creator says:
      ??
  1. Fazle Rabby Contributor says:
    Oshadharon likhesen vai… Sotti onek onek upokar Holo…. Aro chai emon study plan
    1. Levi Author Post Creator says:
      ??
    1. Levi Author Post Creator says:
      ❤️
  2. noyonxd Contributor says:
    অসাধারণ ব্যাখ্যা।
    1. Levi Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ ভাইয়া।

Leave a Reply