আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ্ আপনাদের দোয়ায় আমিও অনেক ভাল আছি। ভাল আছি বলেই আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম নতুন একটি টিউটোরিয়াল। টাইটেল দেখে নিশ্চয় বুঝে গেছেন আজকে টপিক কি। বুঝে যখন গেছেন তাহলে চলুন মূল টপিকে ফিরে যায়।
‘মাছ‘ এমন একটি শব্দ যা বাঙালির রক্তের সাথে মিশে আছে। তাই তো বিদেশিরা বাংলাদেশীদের মাছে ভাতে বাঙালি বলে অভিহিত করেন। যদিও এই কারণে তারা মাছে ভাতে বাঙালি বলে না। এক সময় বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল বা বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। ফলে আমাদের বাপ দাদারা তিন বেলায় মাছ দিয়ে ভাত খেত। যা পৃথিবীতে খুব সংখ্যক জাতিই খেতে পারত৷ তাই তারা বাংলাদেশিদের মাছে ভাতে বাঙালি বলে অভিহিত করত। বর্তমানে কিছু অসাধু জেলেদের অবৈধ ভাবে মাছ শিকার করার কারণে মাছের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ফলে এখন গ্রামে গঞ্জে ছাড়া তেমন মাছ পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা চড়া মূল্য দিয়ে কিনতে হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে সকল মাছ পাওয়া যায় তার সব মাছ সমান সুস্বাদু নয়। তবে এমন কিছু মাছ আছে যে মাছ গুলো খেতে খুবই মজাদার। আজ আমি আপনাদের সাথে পরিচিত করে দিব এমন কিছু মজাদার মাছ যেগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু। তাহলে দেখে নিন আপনার পছন্দের মাছও আছে কিনা এই তালিকায়। সবার মুখের রুচি এক না হওয়ার কারণে মাছের তালিকার মধ্যে আপনার কোন একটি মাছ পছন্দ নাও হতে পারে তবে মাছ গুলো দামের দিক দিয়ে সস্তা নয়।
(১) চিংড়ি মাছ (Shrimp Fish)
তালিকার শুরুতে যে মাছটির ছবি দেখতে পাচ্ছেন তার নাম চিংড়ি মাছ। বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় এই মাছটি পাওয়া যায়। খেতে সুস্বাদু হওয়ার কারণে এই মাছের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে চিংড়ির প্রচুর চাহিদা থাকার কারণে বর্তমানে প্রচুর চিংড়ি মাছের চাষ করা হচ্ছে। আপনারও যদি নিজে কিছু করার ইচ্ছা থাকে তাহলে এই সম্ভাবনামত খাতটি বাছাই করে নিতে পারেন। তবে তার জন্য আপনার কিছ টাকা খরচ করতে হতে পারে।
(২) ইলিশ মাছ (Hilsha Fish)
ইলিশ মাছ এমন একটি মাছ যা খেতে খুবই সুস্বাদু। আর যদি সেটা হয় পদ্মার ইলিশ তাহলে তো কথাই নাই। খেতে খুবই সুস্বাদু হওয়ার কারণে ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ ইলিশ মাছ সাগরের মাছ হলেও ডিম ছাড়ার সময় তা মিটা পানিতে চলে আসে। কারণ সাগরের অতিরিক্ত লবণাক্ততা ডিম গুলো নষ্ট করে ফেলে। ফলে মাছটি ডিম ছাড়ার সময় হলেই প্রাকৃতিক ভাবে মিটা পানিতে চলে আসে। বর্তমানে ইলিশ মাছের সংখ্যা খুবই কমে যাওয়ায় সরকার মাছটি রক্ষা করার জন্য অনেক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে৷ বাজারে বড় ইলিশ মাছ প্রতি কেজিতে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।
(৩) বাইম মাছ (Eel Fish)
দেখতে সাপ বা কুইচার মত লাগলেও আসলে এটি একটি মজাদার মাছ। কারও কাছে এটি বাইন মাছ নামে পরিচিত আবার কারও কাছে বাইম মাছ বলে পরিচিত। এই মাছটি সাধারণত পানির তলদেশে থাকা কাঁদা মাটিতে বাস করে। পানি শুকিয়ে ফেলা ছাড়া এই মাছ শিকার করা অনেক কঠিন। কারণ এই মাছ এতটাই পিচ্ছিল যে হাতে ধরে রাখা যায় না। মজার ব্যাপার হল এই মাছটি কাঁদা মাটিতে বাস করলেও মাছের শরীরে এক ফোঁটা কাদা লাগে না। মাছটি দেখতে অদ্ভুত হলেও খেতে খুবই মজাদার। তাই এই মাছটি বাজারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা অঞ্চল ভেদে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে।
(৪) পাবদা মাছ (Butter Fish)
বাংলাদেশের যে সব সুস্বাদু মাছ আছে তার মধ্যে পাবদা মাছ অন্যতম। যদিও আগের মত জলাশয়ে পাবদা মাছ পাওয়া না গেলেও বর্তমানে পাবদা মাছের চাষ করে হচ্ছে। বাজারে মাছটির চাহিদা বেশি থাকার কারণে চাষিরা লাভবানও হচ্ছে বেশি। আপনি যদি মজাদার মাছটির স্বাদ গ্রহণ করতে চান আজই বাজার থেকে কিনে নিতে পারেন। তবে তার জন্য আপনাকে একটু চড়া দামে মাছটি কিনতে হবে। কথায় আছে না, ভাল জিনিসের দাম একটু বেশিই হয়।
(৫) রুপচাঁদা মাছ (Pomfret Fish)
বাংলাদেশে সাগরের মাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম মজাদার মাছটির নাম হল রুপচাঁদা মাছ। দেখতে মাছটি যেমন সুন্দর খেতে এর কোন জুড়ি নাই। মজাদার এই মাছটি বাজারে পাওয়া গেলেও দাম কিন্তু আকাশ চুম্বি। একেক জায়গায় একেক রকম দামে মাছটি বিক্রি করা হয়। আপনি যদি সুস্বাদু মাছ খেতে বেশি পছন্দ করেন তাহলে এই মাছটি রান্না করে খেয়ে দেখতে পারেন। পিরানহা নামে এক প্রজাতির মাছ দেখতে রুপচাঁদা মাছের মত হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রুপচাঁদা মাছ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। যা খুবই দণ্ডনীয় অপরাধ মাছ কেনার সময় এই বিষয়টি সতর্কতার সাথে ক্রয় করবেন।
(৬) কাতল মাছ (Catla/Carp Fish)
বাংলাদেশের মজাদার মাছ গুলোর মধ্যে আরেকটি মজাদার রাজকীয় মাছের নাম কাতল। সাধারণত পুকুর বা ডোবায় এই মাছটি চাষ করা হয়। দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও মাছটি খুবই সুস্বাদু হয়। কাতল মাছটি আয়তনে খুবই বড় হয়ে থাকে।বাজারে সাধারণত মাঝারি সাইজের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মত বিক্রি করা হয়। তবে মাছের সাইজ যদি আকারে বড় হয় তাহলে মাছের দাম তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি হয়ে থাকে।
(৭) বোয়াল মাছ (Trout Fish)
বোয়াল মাছকে রাক্ষুসে মাছ নামে ডাকা হয়। কারণ এই মাছ গুলো খাদ্য হিসেবে ছোট ছোট মাছ গুলোকে খেয়ে ফেলে। যে পুকুরে বোয়াল মাছ থাকে সেই পুকুরে ছোট ছোট মাছ থাকে না বললেই চলে। বোয়াল মাছ সাধারণত বড় আকারের হয়। বোয়াল এমন এটি মাছ যা দ্রুত বড় হয়ে যায়। সাধারণত ২-৩ কেজির ওপরের বোয়াল গুলো বাজারে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বোয়াল মাছের ওজন যত বেশি হয় তার দামও তত বেশি হয়।
(৮) শিং মাছ (Barbel Fish)
বাংলাদেশের খাল বিলের অতি পরিচিত একটি নাম শিং মাছ। খাল বিল পুকুরের তলদেশে কাঁদা মাটিতে শিং মাছ থাকতে বেশি পছন্দ করে। শিং মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর কাঁটার বিষাক্ততা। শিং মাছ ধরার সময় যদি একবার কাঁটা ফুটিয়ে দেয় তাহলে আপনার শরীরে জ্বর পর্যন্ত চলে আসতে পারে। শিং মাছটি খেতে সুস্বাদু বলে বাজারে এই মাছটির দামও একটু বেশি হয়।
(৯) সুরমা মাছ (Tuna Fish)
বঙ্গোপসাগরে পাওয়া মাছের মধ্যে আরেকটি মজার মাছের নাম সুরমা মাছ। আমাদের দেশে ২ প্রকারের সুরমা মাছ পাওয়া যায় পাতা সুরমা ও রকেট সুরমা। তবে পাতা সুরমা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। পাতা সুরমা নামে খ্যাত মাছ গুলো একটু ছোট প্রজাতির হয়। পাতা সুরমা ছোট হলেও মাছটির মজাই আলাদা।
(১০) বাটা মাছ (Mackerel)
এই তালিকায় সবার শেষের মাছটির নাম বাটা মাছ। সাধারণত সামুদ্রিক এই মাছটি আকারে ছোট হলেও খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকার কারণে বর্তমানে এটি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হচ্ছে। আপনার যদি সুস্বাদু মাছ খুবই পছন্দ হয় তাহলে বাটা মাছটি দেখতে পারেন।
আর্টিকেলের শেষে কিছু কথা
আজকের আর্টিকেলে উল্লেখ করা মাছ গুলো সবার কাছে সমান মজাদার নাও হতে পারে। আপনার যদি ভিন্ন স্বাদের কোন মাছ পছন্দ থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।আশা করি আর্টিকেলের কোন জায়গায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আর্টিকেলটি ভাল লাগলে আমার ব্লগার সাইটটি ভিজিট করার অনুরোধ রইল।
আমার সাইট: TripsNet.Xyz