Hey Trickbd, সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও ভালো আছি।
নতুন একটি দিনে নতুন আরেকটি বিষয় এর উপর আলোচনা করতে চলে এলাম। মনযোগ সহকারে পড়বেন আশা করি কিছুটা হলেও জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে পারবেন। আলোচনার বিষয় সময় পরিমাপের ক্ষেত্রে ৬০ এবং ১২ ব্যবহার করা হ’ল কেন? ১০ অথবা ১০০ ও তো ব্যবহার করা যেত।
প্রাচীনকালে সময়ের পরিমাপের জন্য সবাই সূর্যৈর উপর নির্ভর ছিল। ওই সময়ে সময়ের ধারণা বলতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের প্রভাব 200 শতাংশ। তারপর আসে চাঁদ এবং নক্ষত্ররা। ব্যাবিলন এবং মিশরে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলি নীচে আলোচনা করলাম।
ব্যাবিলনিয়ান পদ্ধতি:
প্রথমত, 60 সেকেন্ডের বিভাজনটি ব্যাবিলনিয়ানরা এনেছিল যারা গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যার জন্য ডুওডেসিমাল(12) সেক্সেজিসিমাল (60) ব্যবহার করত। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ মিলেনিয়ামের শেষে পাওয়া প্রোটো-কিউনিফর্ম লিপিতে দেখা যায় 60-কে বেস হিসেবে ব্যবহার করে 1,10,60,600,3600… ইত্যাদি সংখ্যার ব্যবহার এবং অবশ্যই সেটি ভাষা-সংকেত ব্যবহার করে। কারণ প্রাচীন মেসোপোটেমিয়ায় সুমেরীয়দের ব্যবহার্য ভাষাই ছিল কিউনিফর্ম। তারা 60 সংখ্যাটিকে সর্বপ্রথম গুরুত্ব দেয়। 60-কে বেস ধরে হিসেব করা হত। আসলে এই সংখ্যা ব্যবস্থাটি সুমেরীয়দের কাছ থেকে ধার নেওয়া যারা খ্রিস্টপূর্ব 3500 সাল নাগাদ এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করত শুধুমাত্র গাণিতিক বিভাজনের উপর ভিত্তি ক’রে। 12 ধরে নেওয়া 10 এবং 100 এর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। 12 নিজেই 2,3,4,6, এবং 12 দ্বারা বিভাজ্য। যেখানে 10-এর ক্ষেত্রে কেবল তিনটি বিভাজক 2,5,10 পাওয়া যায়। সময়কে ছোট হিসাবে ভাঙতে গেলে 10 ধরলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কারণ আমাদের ব্যবাহার্য সময় সর্বদাই পূর্ণসংখ্যা হওয়া প্রয়োজন। আরো বেশি ভাল হয় যদি 5,10,15..ইত্যাদি সংখ্যায় ভেঙে নেওয়া যায়। ঠিক এখানেই প্রয়োজন বড় সংখ্যার। অতঃপর 60-এর আগমন যার বিভাজকের সেটে 10 রয়েছে। এরকম 6-টি 10 পাওয়া গেলে 60-কে সহজেই ছয়টি সিমেট্রিক ভাগে ভাগ করা সম্ভব।
60 ধরলে 12টি বিভাজক পাওয়া যায় এবং 60 = 5 x 12। 60-কে 10 এবং 12 উভয় দিয়েই ভাগ করা যায়।
তবে সুমেরীয়দের ব্যবহার করা 60-বেস সিস্টেমকে Pure 60 Base বা খাঁটি পদ্ধতি বলা যায় না। কারণ 60টি আলাদা সংকেত ছিল না কিউনিফর্মে। তারা 10-কে Sub-base হিসেবে ব্যবহার করে 10-এর জন্য আলাদা চিহ্ন ব্যবহার করত। এগুলি হল Sign-Value Notation বা সাংকেতিক হরফ। 1 থেকে 9 অব্দি সংখ্যাকে প্রকাশ করার জন্য তিনকোণা হরফ ব্যবহার করা হত এবং 10-এর জন্য দুইদিকে বর্ধিত দাগযুক্ত তিনকোণা হরফ।
দ্বিতীয়ত, ব্যাবিলনিয়ানদের ক্ষেত্রে, একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধকে ছয়টি অন্তর্লিখিত ত্রিভুজের একটি ষড়ভুজ ধরা হত কারণ ওদের হিসেবে 360দিনে এক বছর হত। এইভাবে একটি বৃত্তের মাধ্যমে ছ’টি কোণ দ্বারা এক একটি “প্রাকৃতিক কোণ” পরিমাপ করা হত, অর্থাৎ পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার 1/6 সময়। সুমেরীয়দের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এটিও।
মিশরীয় পদ্ধতিঃ
২৪ ঘন্টার দিনটি প্রাচীন মিশরীয়দের কাছ থেকে এসেছিল যারা দিনের সময়টিকে সূর্যঘড়ির মতো ডিভাইস দিয়ে 10 ঘন্টার হিসাবে বিভক্ত করেছিল এবং দিনের শুরুতে একটি Starting Hour বা শুরুর ঘন্টা এবং দিনের শেষে একটি Ending Hour বা শেষের ঘন্টা অর্থাৎ মোট 12টি সমান ভাগে দিনকে (বা সূর্য যতটুকু সময় দেখা যায় সেই সময়কে) ভাগ করা হয়েছিল।
মিশরীয়রা 12টি নক্ষত্রের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে রাতের 12 ঘন্টা হিসেব করত। প্রাকৃতিকভাবেই তাদের মধ্যে এই বোধের সঞ্চার হয় যে সূর্য যতক্ষণ আকাশে থাকে ঠিক ততক্ষণই আকাশের নীচে থাকে। অর্থা সমান সময়। তখন নক্ষত্রগুলির পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে 12 ঘন্টায় বিভক্ত করা হয় রাতের সময়কে। আরও বলতে গেলে, মিশরীয়দের ‘ডেকানস’ নামে 36 টি তারকাগোষ্ঠীর একটি সিস্টেম ছিল – এটি বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ নির্দিষ্ট সময় পরে একটি করে তারা আবির্ভূত হ’ত প্রত্যেক ঘন্টার শুরুতে। এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে 10 দিন পরে প্রথম তারাটি আবার ফিরে আসে। এভাবে 36×10=360 দিয়ে বছরের হিসেব রাখা সুবিধাজনক ছিল। এটি ছিল ওদের Star System of Time measurement, পরবর্তীতে যা আরো উন্নত হয়েছিল বলে মিশরীয় লিপিতে জানা যায়। সজ্জাগুলি পর্যবেক্ষণ করে রাতের বেলা মানুষকে সময় নির্ধারণে সাহায্য করার জন্য টেবিলগুলি তৈরি করা হয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে এই জাতীয় টেবিলগুলি সার্কোফেগাস (মমির কফিন) ভিতরেও পাওয়া গেছে, সম্ভবত মৃতের সময় নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করা হত। এখানেও সেই 60 এবং 12-সংখ্যার পদ্ধতি।
সমস্ত প্রাচীন সভ্যতাই আকাশে সূর্য, চাঁদ এবং নক্ষত্রের অবস্থানের উপর ভিত্তি ক’রে সময়ের প্রাথমিক গণনা করত।
আরেকটি মত অনুসারে, সুমেরীয় এবং পরে মিশরীয়দের কাছে 12 একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা ছিল। উদাহরণস্বরূপ,এক বছরে চন্দ্রচক্রের সংখ্যা এবং রাশিচক্রের নক্ষত্রগুলির সংখ্যা। দিন এবং রাত প্রত্যেকটিকে 12 পিরিয়ডে বিভক্ত করা হয়েছিল, এবং 24 ঘন্টার সূত্রপাত। পরবর্তীতে মধ্যযুগে প্রচুর নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটে এবং বিভিন্ন সভ্যতায় প্রাপ্ত সময় গণনাপদ্ধতির ব্যাপক সংযুক্তিকরণ ঘটে বিশাল বিশাল “ক্যালেন্ডার ঘড়ি”-র মাধ্যমে। সমস্ত কিছুর মধ্যেই কমন ছিল 60-এর ব্যাপারটি।
তাছাড়াও প্রচুর রকম ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। যেমন- হাতের আঙুলের হিসাবে 12 সংখ্যাটি দ্বারা সময় গণনার উদ্ভব।
রোমান পদ্ধতিঃ
তখনকার ব্যবহৃত সূর্যঘড়ি গ্রীকরা পরিমার্জন করেছিল এবং কয়েক শতাব্দী পরে রোমানরা আরও উন্নতি ঘটিয়ে জলঘড়িকে সূর্যঘড়ির সাথে সমানভাবে মিলিয়ে দিয়েছিল অর্থাৎ Sync করেছিল। রাতে বা কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে সময় নির্ধারণ করার জন্যই এটি করা হয়েছিল। ক্লিপসিড্রা (Clepsydra) হিসাবে পরিচিত ছিল এই যন্ত্র এবং পদ্ধতি দুটোই। সময় পরিমাপ করতে জলের প্রবাহ ব্যবহার করা হত প্রাচীন রোমে। অর্থাৎ চলতি পদ্ধতিকেই রোমানরা বেছে নিয়েছিল।
কিছু বই:
Simon Garfield -এর “Timekeepers”, Georges Ifrah -এর “The Universal History of Numbers”, Toby Wilkinson -এর ” The Dictionary of Ancient Egypt”, Sir EA Walis Budge -এর লেখা “Egyptian Magic” বইগুলি পড়লে বেশ কিছুটা জানা যাবে বা ধারণা পাওয়া যাবে।
আশা করি আমি আপনাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য।
Bye