ব্লাকহোল হল মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং আকর্ষণীয় বস্তুগুলির মধ্যে একটি। এগুলি এতটাই ঘন যে মহাকর্ষ এতই শক্তিশালী যে আলোও এখান থেকে পালাতে পারে না। ব্ল্যাকহোলগুলি কীভাবে গঠিত হয় এবং কীভাবে তারা কাজ করে তা আমরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। কিন্তু আমরা তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি, এবং তারা আমাদের মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুকে প্রভাবিত করে।
What is a black hole?
একটি ব্ল্যাকহোল হল একটি মহাজাগতিক বস্তু যার গ্রাভিটি এতই শক্তিশালী যে আলোও এখান থেকে পালাতে পারে না। এটিকে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, যা মহাকর্ষকে বর্ণনা করে। ব্ল্যাকহোলের চারপাশে একটি সীমানা থাকে, যাকে ইভেন্ট হরিজন বলে। Event horizon ভিতর থেকে কোনও বস্তু বা আলো পালাতে পারে না বা বের হয়ে আসতে পারেনা।
How do black holes form?
ব্ল্যাকহোলগুলি যখন একটি তারা মারা যায় তখন গঠিত হয়। যখন একটি তারা তার সমস্ত জ্বালানী ব্যবহার করে, তখন এটি একটি ক্রমবর্ধমান মহাকর্ষীয় আকর্ষণ দ্বারা সংকুচিত হয়। যদি তারা একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে, তারা একটি ব্ল্যাকহোল হয়ে যাবে।
How do black holes work?
ব্ল্যাকহোলগুলি মহাকর্ষের মাধ্যমে তাদের চারপাশের বস্তুগুলিকে আকর্ষণ করে। যখন কোনও বস্তুর ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরিজনে পৌঁছায়, তখন এটি আর সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারেনা। ইভেন্ট হরিজন হলো ব্ল্যাকহোলের চারপাশের সীমানা যেখানে থেকে কোনও আলো বা অন্য কোনও তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ পালাতে পারে না।
What are the dangers of black holes?
ব্ল্যাকহোলগুলির গ্রাভিটি অত্যন্ত শক্তিশালী, তাই তারা চারপাশের সকল বস্তু কে আকর্ষণ করে নিজের দিকে টেনে নিয়ে যায় । যদি একটি ব্ল্যাকহোল আমাদের সৌরজগতের কাছাকাছি আসে, তাহলে এটি আমাদের গ্রহগুলিকে তার চারপাশে আকর্ষণ করবে এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলিকে গ্রাস করে নিবে
Classification of Black Holes
ব্ল্যাক হোল হল মহাবিশ্বের এমন একটি স্থান যেখান থেকে কোনো কিছুই পালাতে পারে না, এমনকি আলোও। ব্ল্যাক হোলের ভর বিভিন্ন রকম হতে পারে। ক্ষুদ্রতম ব্ল্যাক হোল একটি পরমাণুর সমানও হতে পারে, আবার বৃহত্তম ব্ল্যাক হোলের ভর আমাদের সূর্যের ভরের কয়েক হাজার কোটি গুণ বেশি হতে পারে।
ব্ল্যাক হোলকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়:
- মাইক্রো ব্ল্যাক হোল
- স্টেলার ব্ল্যাক হোল
- ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল
- সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল
মাইক্রো ব্ল্যাক হোল
মাইক্রো ব্ল্যাক হোল হল সবচেয়ে ক্ষুদ্র ব্ল্যাক হোল। এদের ভর একটি পরমাণুর থেকে শুরু করে একটি পর্বতের সমানও হতে পারে। মাইক্রো ব্ল্যাক হোল কীভাবে গঠিত হয় তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময় মহাবিশ্বের অতি ঘন অংশ থেকে মাইক্রো ব্ল্যাক হোল গঠিত হতে পারে।
স্টেলার ব্ল্যাক হোল
স্টেলার ব্ল্যাক হোল হল মধ্যম আকারের ব্ল্যাক হোল। এদের ভর আমাদের সূর্যের ভরের ৫ থেকে ১০০ গুণ বেশি হতে পারে। স্টেলার ব্ল্যাক হোল গঠিত হয় একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর সময়। যখন একটি নক্ষত্রের জীবন শেষ হয়ে যায়, তখন নক্ষত্রটি একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে নক্ষত্রের কেন্দ্রস্থলের যে অংশটি অবশিষ্ট থাকে সেটি একটি স্টেলার ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।
ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল
ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল হল স্টেলার ব্ল্যাক হোল এবং সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মধ্যবর্তী আকারের ব্ল্যাক হোল। এদের ভর আমাদের সূর্যের ভরের ১০০ থেকে ১ লক্ষ্য গুণ বেশি হতে পারে। ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল কীভাবে গঠিত হয় তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্টেলার ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের ফলে ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল গঠিত হতে পারে।
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল হল সবচেয়ে বৃহত্তম ব্ল্যাক হোল। এদের ভর আমাদের সূর্যের ভরের কয়েক হাজার কোটি গুণ বেশি হতে পারে। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা তারা, গ্রহ, ধূমকেতু ইত্যাদি সবই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের চারপাশে ঘুরছে।
ব্ল্যাক হোলের প্রকারভেদ ঘূর্ণনের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
- ঘূর্ণনরত ব্ল্যাক হোল
- ঘূর্ণনহীন ব্ল্যাক হোল
ঘূর্ণনরত ব্ল্যাক হোল
ঘূর্ণনরত ব্ল্যাক হোল হল সেইসব ব্ল্যাক হোল যাদের কৌণিক ভরবেগ বা এংগুলার মোমেন্টাম রয়েছে। অর্থাৎ, এরা নিজ অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণায়মান। ঘূর্ণনরত ব্ল্যাক হোলের চারপাশে একটি ঘূর্ণন বলয় বা রিং তৈরি হয়। এই ঘূর্ণন বলয়ের বা রিং এর কারণে ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি আসা বস্তুগুলির উপর একটি শক্তিশালী আকর্ষণ বল কাজ করে।
ঘূর্ণনহীন ব্ল্যাক হোল
ঘূর্ণনহীন ব্ল্যাক হোল হল সেইসব ব্ল্যাক হোল যাদের কৌণিক ভরবেগ বা এংগুলার মোমেন্টাম নেই। অর্থাৎ, এরা নিজ অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণায়মান নয়। ঘূর্ণনহীন ব্ল্যাক হোল খুবই বিরল।
ব্ল্যাক হোলের অবস্থান
মহাবিশ্বের যেকোনো স্থানে থাকতে পারে ব্ল্যাক হোল ।
তবে, আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতে লক্ষ লক্ষ স্টেলার ব্ল্যাক হোল এবং একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে।
আমাদের সূর্যের ভরের প্রায় ৪ মিলিয়ন গুণ বেশি ভরের এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটি আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত।
ব্ল্যাক হোলের ধ্বংস
হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ব্ল্যাক হোল বা সহজ করে বললে মার্স এবং এনার্জী হারাচ্ছে।
এই হকিং রেডিয়েশন ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরিজন এর কাছাকাছি উৎপন্ন হয়।
এই রেডিয়েশনের ফলে ধীরে ধীরে ব্ল্যাক হোলের শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। তবে এটি খুবই ধীর প্রক্রিয়া।
একটি ব্ল্যাক হোলের জীবনকাল সর্বোচ্চ কত হতে পারে?
ব্ল্যাক হোলের জীবনকাল এর ভরের উপর নির্ভর করে।
যার ভর যত বেশি হবে সেই ব্ল্যাক হোলটি মহাবিশ্বে তত বেশি কাল ধরে টিকে থাকবে।
সূর্যের ভরের সমান একটি ব্ল্যাক হোল ক্ষয় হতে প্রায় 10^67 বছর সময় নেয়।
মিল্কিওয়ে কেন্দ্রের ব্ল্যাক হোলটির ক্ষয় হতে 10^87 বছর সময় লাগবে।
আবার মহাবিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তর ব্ল্যাক হোল টি সময় নেবে প্রায় 10^100 বছর।
ব্ল্যাক হোলের প্রথম চিত্র ধারন
২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল, আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী দল Event Horizon Telescope (EHT) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত আটটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত Sgr A* ব্ল্যাক হোলের প্রথম চিত্র ধারণ করে। এই চিত্রে ব্ল্যাক হোলের চারপাশে একটি আলোর বলয় দেখা যায়।
সবশেষে:
ব্ল্যাকহোলগুলি মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং আকর্ষণীয় বস্তুগুলির মধ্যে একটি।
তারা আমাদের মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুকে প্রভাবিত করে, এমনকি আমাদের নিজেদেরও।
আমরা এখনও তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারিনি, কিন্তু আমরা তাদের অধ্যয়ন চালিয়ে যাচ্ছি এবং তাদের সম্পর্কে আরও জানতে চাই।
তাহলে আজকের মত বিদায় দেখা হচ্ছে অন্য কোন দিন নতুন কিছু নিয়ে।
চাইলে আমার ট্রিকবিডি প্রোফাইল থেকে আরো আর্টিকেল দেখে আসতে পারেন
লেখকঃ Cyber Prince