অ্যাঞ্জেলিনা অভিনীত হ্যাকার ছবিটির কথা মনে আছে? যেখানে অপরাধীরা এক নাম না জানা নেটওয়ার্কের ভিতরে নানা অপরাধ করতো।
যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাক গলাতে পারত না। আপাতত দৃষ্টিতে রুপালি পর্দার এসব মুভি গুলো শুধু কেচ্ছা মনে হলেও, এসব মুভির অজানা নেটওয়ার্কের মতই আমাদের অতি চেনা ইন্টারনেটের আছে। এক অন্ধকার জগত।
আর এটিই হচ্ছে ডার্ক ওয়েব যেখানে আপনি যেটাই করুন না কেন সেটার কোনো তথ্য বা হদিস কেই পাবে না।
আমাদের আজকের এপিসোড ডার্ক ওয়েব নিয়ে। ডার্ক ওয়েব কি এবং সেখানে কিভাবে প্রবেশ করবেন এবং ডার্ক ওয়েবে কোন ধরনের কর্মকান্ড হয়। এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো এই আর্টিকেলটি।
ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে বিস্তারিত করতে শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
আপনি জেনে অবাক হয়ে যাবেন যে আপনি যদি কোন বিষয়ে গুগলে সার্চ দেন, আর google তার লক্ষ লক্ষ ফলাফল আপনার সামনে নিয়ে আসে তা ইন্টারনেটে থাকা মোট তথ্যের মাত্র ১০% থেকে প্রাপ্ত। অর্থাৎ গুগল অনলাইনের মট তথ্যের ৯০% জানে না।
এলেমে থাকা মাত্র দশ শতাংশের মধ্যেই সার্চ দিয়ে তার ফলাফল আপনাদের সামনে নিয়ে হাজির করে। বাকি ৯০% আপনার এবং google এর চিরকালই অজানায় থেকে যায়।
প্রকৃতপক্ষে এই দৃশ্যমান নেট হল মহাসাগরে ভেসে থাকা একখণ্ড বরফ কণা, আর ডিপ ওয়েব হল মহাসাগর খোদ নিজেই। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় দুইটা হিডেন ওয়েবসাইট ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব নিয়ে।
Deep Web
প্রথমে জেনে নিই ডিপ ওয়েব কি?
ডিপ ওয়েব হলো ইন্টারনেটের ওই সমস্ত অংশ যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন কখনোই খুঁজে পায় না, কিন্তু আপনি যদি এগুলোর ঠিকানা জানেন তবে আপনি এই অংশে যেতে পারবেন।
এক্সাম্পল আপনি আপনার ফাইল গুগল ড্রাইভে রাখছেন, কিন্তু সেগুলো গুগলে সার্চ দিয়ে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। শুধু আপনি যখন লিংক শেয়ার করবেন ঠিক তখনই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব।
আর এই গুগল ড্রাইভও এক ধরনের ডিপ ওয়েব, প্রকৃতপক্ষে আপনি বা আমি কেও ইন্টারনেটে একা নই আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ প্রতিটি ডাউনলোড নজরে রাখছে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। তাদের কাছে আপনার পুরো লক থাকে আর যে কোন প্রয়োজনে তারা তা সরবরাহ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে, তার মানে হলো আপনার চলাচলের কোন স্বাধীনতা নেই।
নানা সময়ে বিশ্ব ইন্টারনেটে নানা ব্রো এমন একটা ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। যেখানে তারা খুব গোপনে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবে। সামরিক বাহিনী বিপ্লবে হ্যাকার এমনকি খোদ প্রশাসনিক এমন এমন ব্যবস্থা চেয়েছে যেখানে গোয়েন্দারা খুব গোপনে নিজেদের ভিতর তথ্য আদান প্রদান করতে পারবে।
তাছাড়া বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানকার অনলাইন সেন্সর শিপ খুবই কড়া, ফলাফল স্বরূপ ভিন্ন মোতাবললামবিদের এমন এক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হয়েছে যেখানে সরকার চাইলেও তদারকি করতে পারবে না। আর ঠিক এভাবেই উৎপত্তি হয়েছে ডিপ ওয়েবের।
সাথে সাথে এটা প্রলুদ্ধ করেছে ওই সমস্ত অপরাধীদের যারা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে মূল ওয়েবে আলোচনা করতে সাহস পায় না।
Dark web
এবার আসি সবচেয়ে মজার অংশে তথা ডার্ক ওয়েবে।
আপনার প্রচলিত ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে এসব ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন না। এরা ইন্টারনেটের সমস্ত প্রথার বাইরে অবস্থান করে গ্রাহ্য করতে চাই না কোন নিয়ম-কানুন।
আর এদের ঠিকানাও থাকে এতটাই উদ্ভট যে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এগুলো মনে রাখা ভীষণ কঠিন।
এই অংশটি ইন্টারনেটের প্রকৃত অদৃশ্য অংশ বিশেষ করে জ্ঞান যেমন প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, প্রক্সি না থাকলে আপনি এই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এই অংশের আরেকটি বিশেষত্ব হল এরা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর সাইট গুলোর মত টপ লেভেল ডোমেইন যেমন- ডটকম ব্যবহার না করে, সি ইউ টপ লেভেল ডোমাইন ব্যবহার করে।
যা কিনা মূল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওয়ার্কের অধীনে থাকে।
এ ধরোনের ডোমাইনের ভিতরে রয়েছে বিটনেট , অনিয়ন, ফ্রিনেট প্রভৃতি, ডার্ক ওয়েব দুনিয়া টি সম্পূর্ণ আলাদা আপনি জীবনে যা কখনো কল্পনা করেননি সেগুলোই পাবেন এই ডার্ক ওয়েব এর মধ্যে।
হয়তো কখনো কল্পনা করেননি কোন একাউন্টে পাসওয়ার্ড বাদে ঢোকা সম্ভব? দেখবেন সেটিই এখানে অহরহ হচ্ছে।
এমন এমন বিষয় দেখতে পারবেন যা আপনার মাথা গুলিয়ে দিতে পারে, উইকিলিক্স ঘোষণা করেছে যে এ বছর তারা আরও নতুন ডেটা প্রকাশ করবে। কিন্তু আপনি হয়তো ডার্ক ওয়েব দেখতে পারবেন উইকিলিক্সের এ সমস্ত ডাটা ডার্ক ওয়েবে আছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই।
যেকোনো বইয়ের একদম লেটেস্ট এডিশন যাকে না সারফেস ওয়েবে কপিরাইটের কারণে নেই সেগুলো দেখবেন ডার্ক ওয়েব এ দেদারস এ আদান-প্রদান হচ্ছে।
Dark web unligal
আরো আছে বিকৃত রুচির বিনোদন।
শিশু পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে নানা ধরনের জেনেটার মাটি লোশন এর ভিডিও যা কিনা সারফেস ওয়েবে নেই। আর সেগুলো ডার্ক ওয়েব এর হট টপিক্স।
এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে মারচুআনা হিরোইন থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদক হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়।
ডার্ক ওয়েব এর মূল ব্যবহারকারী মূলত মাদকাসক্তি রাই আবার কিছু সাইট আছে ওই সমস্ত গ্রুপগুলো শিক্ষা দিচ্ছে কিভাবে গোলা বারুদ বানাতে হয়।
কিছু কিছু সাইট তো রেডিমেড অস্ত্র বিক্রি করে। একে ৪৭ থেকে শুরু করে রকেট লাঞ্চার মর্টানের মত অস্ত্র কিনতে পারবেন এই ডার্ক ওয়েব থেকে।
আরো বসন্তর সময় বিপ্লব কারীরা এই ডার্ক ওয়েবে যোগাযোগ করত, ডার্ক ওয়েবে নানা ধরনের মেইল সার্ভিস বা চ্যাট সার্ভিস আছে। যেখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন।
বিষয় আরো আছে এখানে এমন কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড সাইট আছে যেখানে টাকার বিনিময়ে কিলার ভাড়া পাওয়া যায় কি ভয়ংকর। কি আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? না হবারই কথা।
দেখা গেল এমন একটা সাইটে আপনি প্রবেশ করলেন সেখানে গিয়ে দেখতে পারলেন কিলার তার নিজের সম্পর্কে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছে- আমাকে তুমি স্মার্ট নামে ডাকতে পারো-আমি তোমার শত্রুকে প্রফেশনাল ওয়েতে শেষ করে দিতে পারব, আমি তার সাথে তোমার সমস্যা জানতে আগ্রহী নয়, তুমি শুধু আমাকে টাকা দিবে আর আমি তাকে শেষ করে দিবো টার্গেটের বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে, টার্গেট পুরুষ না মেয়ে তাতে আমার কিছু আসে যায় না, আমি গর্ভবতী মহিলাকে টার্গেট হিসেবে নিই না, আমি টার্গেট কে অত্যাচার করিনা, টার্গেট যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হয় তাহলে বাড়তি চার্জ লাগবে।
আর বাড়তি চার্জের বিনিময়ে আমি পুরো ঘটনাকে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনার মত করে সাজাতে পারব, ডাউন পেমেন্টের চার সপ্তাহের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর টার্গেটের জন্য বাড়তি ৫০০০ ডলার চার্জ লাগবে, কাজ হয়ে গেলে আমি তোমাকে টার্গেটের ছবি তুলে পাঠাবো।
মোটকথা আপনি এমনই এক ব্ল্যাক ফরেস্টে প্রবেশ করবেন যেখানে আপনাকে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে দুইবার ভেবে নিতে হবে।
সারফেস ওয়েবে যেসব হ্যাকিং তথ্য দেখতে পান তা হল এই ডার্ক ওয়েব থেকে লিক হওয়া ১ পার্সেন্ট তথ্যর অংশবিশেষ।
এখানকার হ্যাকাররা খুবই ভয়ংকর এবং প্রোগ্রামিং এ তাদের কোন জুড়ি নেই, সাবধান আপনার মেইল হ্যাক হয়ে যেতে পারে তাছাড়া সরকারের এজেন্টগুলো তো আছেই।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এসব নেটওয়ার্ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নাকের ডগা দিয়ে কিভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে?
এটি বুঝতে হলে আমাদের এরকম একটি নেটওয়ার্ক নিয়ে একটু চিন্তা করতে হবে, ডার্ক ওয়েব এর ব্যবহৃত নেটওয়ার্কের মধ্যে সারফেস ওয়েবে জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে এমনই এক নেটওয়ার্ক হলো অনিয়ন নেটওয়ার্ক
অনিয়নের টপ লেভেলের ডোমেন হলো ডট ওনিয়ন আর এর সাইটগুলোর ঠিকানাও ভুতুড়ে। মূলত মার্কিন নেভির জন্য তৈরি করা হলেও এই নেটওয়ার্ক আজ বিশ্বব্যাপী ছদ্মবেশে নেট ব্যবহারকারীদের প্রথম পছন্দ।
অনিয়নে আপনার ব্রাউজার দিয়ে ঢুকতে পারবেন না, এজন্য আপনাকে ডাউনলোড করতে হবে *টোর ব্রাউজার*
Tor Browser আপনার পরিচয় কে লুকিয়ে ফেলবে! আর এর ফলে আপনার অবস্থানকে মনিকার করা কারো পক্ষে একেবারে অসম্ভব।
আপনি যখন টর ব্রাউজার দিয়ে কোন ওয়েবসাইটে ঢুকতে যাবেন, তখন টর ব্রাউজার আপনার এই রিকোয়েস্ট কঠিন ইনফেকশন এর মধ্য দিয়ে অনিয়ন প্রক্সিতে পাঠাবে।
অনিয়ন প্রক্সিতে আপনার পাঠানো ডেটা আর ডেটা থাকে না সেটা দুর্বোধ্য একটা স্ক্রিপ্টে পরিণত হয়ে যায়। এ ধরনের দুর্বোধ্য সিস্টেমের কারণে এই সমস্ত নেটওয়ার্ক সব সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাই।
অনিয়র নেটওয়ার্ক গুলোর মধ্যে থাকা ব্লাক মারকেট দের ভেতর সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো সিল্ক রোড, ফোর্স এর হিসাবে এখানে গত বছর ২২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বেচাকেনা হয়েছিল। আর এখানে প্রচলিত মুদ্রায় বেচাকেনা হয় না। বেচাকেনা হয় বিটকয়েন নামক ভার্চুয়াল মুদ্রা তে,
Microsoft অ্যাপেল এর প্রোডাক্ট এখানে ৮০ পারসেন্ট ডিসকাউন্টে পাওয়া যায়। এতসব অনিয়মের ভিতরেও এ ধরনের ব্যবস্থাকে সমর্থন করি কেন?
একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম থাকা আসলেই প্রয়োজন যে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি করে সে এই নেটওয়ার্ক বন্ধ করলে আরেকভাবে তার কাজ করবে। তখন দেখা গেল এই পর্নোগ্রাফি সবার জন্য আরো সহজলভ্য হয়ে গেছে, আর তাছাড়া চিরকালই চাইবার সন্ত্রাসীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকে।
যে যেহেতু ইন্টারনেটের ও মানুষের বাকি সকল সৃষ্টির মত খারাপ দিক আছে তাই এটার সঙ্গেই মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।
তো ভিউয়ার্স বিশেষজ্ঞরা জীবনে একবার হলেও ডার্ক ওয়েবে ঘুরে আসার পরামর্শ দেন, তা না হলে বরফখন্ডে আশ্রিত শীলের মত মহাসাগরের সাদ মিস করবেন। এসব শুনে আপনার ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার ইচ্ছা জাগলে কমেন্ট সেকশনে ইয়েস লিখুন আর না করলে নো লিখে জানিয়ে দিন, ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আপনার কথা।
আরো পড়ুন
Yamaha R15 V4 Border Cross Bike Bangladesh Price