Site icon Trickbd.com

নিয়নবাতি [পর্ব-৬০] :: ইলেকট্রনিক্সের প্রেমে পড়ার মতোন কিছু মজার সার্কিট!!!

আজকের এই আধুনিক যুগের পিছে ইলেকট্রনিক্সের অবদান সবচেয়ে বেশী; আপনার হাতের ইন্টারনেট হতে ভাতের প্লেটের রান্না ইন্ডাকশন চুলার ভাত পর্যন্ত সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইলেকট্রনিক্সের একটি উপহার।
অপরদিক ইলেকট্রনিক্স হলো এমন একটা গার্ল ফেন্ড যার সাথে একবার চুটিয়ে প্রেম করতে পারলে ভবিষ্যত নিয়ে আর চিন্তা নেই কেননা কাগজে-কলমে সার্টিফিকেট না হলেও কর্ম আর দক্ষতায় আপনার পেটের ভাতের চাহিদা ইলেকট্রনিক্স মেটাতে পারে বিভিন্নভাবে….আর ইন্টারনেট একটি ওপেন ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম তাই এখানে নিজের ক্রিয়েটিভির ক্রেডিট নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

আজ আমরা সরল এবং সহজ কিছু ইলেকট্রনিক্স সার্কিট নিয়ে আলোচনা করবো; এগুলি চাইলে আপনি ঘরে বসেই তৈরী করতে পারবেন ইলেক্ট্রনিক্স সম্পর্কে বেসিক নলেজ থাকলেই; সো লেটস গো…….

মোবাইল জ্যামার সার্কিট:

মোবাইল ফোন ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তথা ফ্রিকুয়েন্সির ট্রান্সমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়। যেমন GSM (2G) এর জন্য 900MHz,1800Mz।
এখন এই ফ্রিকুয়েন্সির মতোই সেইম ভ্যালুর একটি ডিফারেন্ট ফ্রিকুয়েন্সি যদি আপনি তৈরী করতে পারেন তাহলে আপনার হাতের মোবাইল ফোনটি সঠিকভাবে বুঝতে পারেনা যে কোন সিগন্যাল সে গ্রহণ করবে, ফলে নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়ে যায়।
বিষয়টা বুঝতে মনে করুন একটি চোর সাদা প্রাইভেট গাড়ীতে করে পালাচ্ছে এখন আপনি চোরটিকে তাড়া করতে করতে রাস্তাতে দেখলেন ১০০ টি সাদা প্রাইভেট গাড়ীর ভেতর চোর হারিয়ে গিয়েছে….. নিশ্চয়ই তখন আপনি চোরকে আর খুজে পাবেন না; এটাও অনেকটা তেমনি।
তবে এটাও বলে রাখা দরকার এক একটি নেটওয়ার্ক তাদের জন্য স্পেসিফিক স্প্রেকটামে ফ্রিকুয়েন্সি ট্রান্সমিট হয় তাই একই ফ্রুকুয়েন্সির জ্যামার সকল সিগন্যাল আটকাতে পারে না; এর জন্যই পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিটর তথা ট্রিমার ব্যবহার করা আবশ্যক হয়।
উপরের সার্কিট খুবই সহজ সরল ৫৫৫ টাইমার আইসি দ্বারা তৈরী হয়েছে ( কম্পোনেন্টের মান চিত্রেই দেওয়া আছে তাই আলাদা করে বলা হয়নি)।

অন্ধকার হলেই অটোমেটিক লাইট জ্বলবে

এটাকে ডার্ক এক্টিভেটেড সুইচ বলে; এটা এক প্রকার সেন্সর যা অন্ধকার এবং আলোক বুঝতে পারে। মনে করুন সন্ধ্যা হয়ে আসছে এখনই আপনার রুমের লাইট জ্বালানোর করার দরকার আবার সকালবেলা যখন লাইট বন্ধ করার দরকার ; এই কাজটা অটোমেটিক করতে পারে এই ডিভাইস (অবশ্য ২২০ ভোল্ট এসি নিয়ে কাজ করতে রিলে ব্যবহার করতে হবে) এছাড়াও রোড লাইট অটো অন-অফ করাতে বিদ্যুৎ অপচয় রোধে এটা কাজে দিতে পারে।
চিত্রের ফটোরেজিস্টার বাজারে LDR বললেই চিনতে পারবেন; এটা আসলে এমন একটা সেন্সর যাতে আলোক রশ্মী পড়লে সেটার রেজিস্ট্যন্স কমে যায় এবং সুপরিবাহী পদার্থরে মতোই বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।

উপরের সার্কিট’টি ব্যাটারি ছাড়া ২০ টাকার ভেতরেই তৈরী করা সম্ভব বটে।

এফএম সিগন্যাল বুস্টার

ঘরে বসে এফএম রেডিও শুনতে ঝিরিঝিরি নয়েজের বিরক্তি আর সিগন্যাল পেতে সমস্যা হলে কেমন লাগে বলুন তো?
বিশেষত ভূত এফএম শুনতে ঐ রাতে তো আর ছাদে যাওয়া চলে না তাইনা?
এমন বিরক্তি কাটাতে লো সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করে এফএম বুস্টার বানানো যেতে পারে। মূলত এফএম বুস্টার বাইরের লো-এসি কারেন্ট (ফ্রিকোয়েন্সি) ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে তাকে বিবর্ধিত কাটেন্ট হিসেবে আউটপুটে বেস কারেন্ট হিসেবে স্প্রেড আউট করে দেয়।

টিভি রিমোট জ্যামার:

টিভির রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম চলে আইআর সিগন্যাল ট্রান্সমিশন হতে; যেটা আপনার আমার চোখ দেখতে পায় না। আপনি যদি একটি মোবাইলের ক্যামেরার লেন্সের পিছে রিমোটের বাটন চাপের তবে নিয়ত কম্পমান আলোকছটা দেখতে পারবেন।
এখন এমনি যদি টিভি আর রিমোটের মাঝে একটি জ্যামার সার্কিট রাখা হয় তবে সেই নির্দিষ্ট সিগন্যাল( রিমোট ও টিভির মাঝের সিগন্যাল) ব্লক বা জ্যাম হয়ে যাবে, এক্ষেত্রে IR LED হতে সিগন্যাল নির্গত হয়।

WiFi জ্যামার সার্কিট

ওয়াইফাই হলো ওয়্যারলেস রেডিও সিগন্যাল (ফ্রিকুয়েন্সি) ট্রান্সমিশনের একটি অনন্য প্রমান। এখন রাউটার এবং রিসিভারের মাঝে যদি এমন একটি ডিভাইস রাখা হয় যা ঐ নির্দিষ্ট ভ্যালুর ফ্রিকুয়েন্সির মতোই নয়েজি ফ্রিকুয়েন্সি তৈরী করে তাহলে রিসিভার সঠিক সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারে না এবং ওয়াইফাই সিগন্যাল জ্যাম হয়ে যাবে। যদিও সার্কিট’টি একটু জটিল তথাপি রাসবেরি পাই ছাড়াই শুধুমাত্র কমন ইলেক্ট্রনিকস ইলিমেন্ট দিয়ে তৈরী এমন সার্কটি নিশ্চয়ই মন্দ নয়!!

ভূত ধরার মেশিন:

জগতে ভূত আছে কিনা এটার প্রমাণ নেই তবে ভয় যে আছে এটা সাক্ষাত প্রমানিত সত্য। প্যারানরমাল সায়েন্স কিংবা ইসলামের জ্বীন বিষয়ক যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে শক্তির একটি বিষয় স্পষ্ট (যেমন জ্বীনেরা ধুমাহীন অগ্নিশিখা হতে তৈরী এটার দ্বারা বোঝা যায় যে তাদের গাঠনিক উপাদানে অগ্নি শক্তির প্রভাব নিশ্চয় আছে)। এখন শক্তির উপস্থিতে তার চারিপাশে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এরিয়া তৈরী হয় যেমনটা একটা সলিনয়েড কয়েলের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
এখন উপরের সার্কিটের এন্টেনা’টি উক্ত শক্তির উপস্থিতি’তে তার LED জ্বলে উঠবে। এখানে আপনি চাইলে আরও সেন্সিটিভ করতে ট্রানজিস্টার এর সংখ্যা অনুরূপভাবে বাড়াতে পারেন(তবে ডানদিক হতে রেজিস্টেন্স সঠিকভাবে কমাতে হবে)।

মূলত এটি একটি ওয়্যারলেস ভোল্টেজ ডিটেক্টর, যেটা ইলেকট্রিক টেস্টার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

আসলে আমেরিকার মতোন দেশে প্যারানরমাল বিষয় নিয়ে যারা রিসার্চ করেন তারা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জির উপস্থিতি প্রমাণে এভিডিয়েন্স হিসেবে এমন ডিভাইস (গোস্ট ডিটেক্টর এর অংশ বিশেষ) ব্যবহার করেন।

আমি জানি উপরের এতো অল্প অলোচনা’তে এতো সার্কিট সম্পর্কে আলোচনা’তে মাথা ঘুরে যেতে পারে এবং বোঝার জন্য সমস্যাও হতে পারে (বিশেষত যারা একদম নিয়োফাইট)। কিন্তু আপনি যদি শুধুমাত্র কমন বিষয়গুলি জানেন (যেমন কোনটা ট্রানজিস্টারের ইমিটর-বেস-কালেক্টর, ডায়োডের কোনটা n পোল আর কোনটা p পোল, রেজিস্টার এর কালার কোড হতে মান নির্ণন, ক্যাপাসিটরের পোলারিটি বা নন-পোরালিটি ইত্যাদি) তাহলে উপরের সার্কিট মতো ইলিমেন্ট সংযুক্ত করলেই তৈরী হয়ে যাবে আপনার ড্রিম ডিভাইস!!!
তথাপি যদি কারো কোন বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হয় তবে অনুগ্রহ করে একটু কমেন্টে জানাবেন…ইনশাল্লাহ আমি বোঝানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

ভালো থাকুন, ভালো রাখুন আপনার প্রিয়জনকে…

ফেসবুকে আমি→নিশান আহম্মেদ নিয়ন

আল্লাহ হাফেজ