এটা নির্ভর করছে আপনি কি ধরনের ফ্রিল্যান্সিং করবেন। মনে করুণ, আপনি যদি ডাটা এন্ট্রি, এসইও, অথবা কনটেন্ট রাইটিং এর কাজ করেন, তার জন্য একটা সাধারন ডেস্কটপ ই যথেষ্ঠ। কেউ যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন করে তার জন্য গ্রাফিক্স কার্ড সহ ডেস্কটপ প্রয়োজন। কেউ প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি এনিমেশন নিয়ে কাজ করলে তার জন্য খুব ভালো গ্রাফিক্স সহ দামি ডেস্কটপ এর প্রয়োজন। আপনার কাজের ধরন বুঝে প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে হবে ।
ধরুণ, আপনি কখনো হাইএন্ড গ্রাফিক্স কাজ করবেন না। তো কোর আই সেভেন আর ১০৫০টিআই সহ দামি ল্যাপটপ না নিয়ে একটা গ্রাফিক্সসহ ভালো বেজ ক্লকস্পিডের ল্যাপটপ নিয়ে একটা এম.২ এসএসডি লাগিয়ে নেন। এটাই আপনার জন্য ভালো হবে।
আবার যদি মোশন গ্রাফিক, এনিমেশন জাতীয় কাজ করেন তো ভাই আপনার জন্য একটা হাইকনফিগ ডেস্কটপ মাস্ট। এর বিকল্প নেই।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য ভাল কম্পিউটার কনফিগারেশন কি? ল্যাপটপ নাকি ডেক্সটপ কিনবো? কত দামি কম্পিউটার লাগবে গ্রাফিক ডিজাইন করতে? গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্যে কেমন ধরনের কম্পিউটার কিনলে ভালো হবে? যা দিয়ে গ্রাফিক্সের সকল কাজ করা যাবে। বাজেট কত হলে ভালো হবে? কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ নিলে ভালো হবে মুটামটি কম দামের ভিতরে? ডেস্কটপ হলে ভাল হবে নাকি ল্যাপটপ? আর কি কি কনফিগারেশন বা স্পেসিফিকেশন থাকলে ভাল হয়?
বর্তমানে যারা গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে ফ্রিল্যান্সিং করছেন বা করতে চান তাদের কয়েকটি কমন প্রশ্ন এগুলো।
গ্রাফিক ডিজাইন যারা শিখছেন, অথবা শিখার পর কাজ করার চেষ্টা করছেন, তারা অনেকেই দ্বিধার মধ্যে থাকে যে কি ধরনের কম্পিউটার দিয়ে কাজ করলে ভাল হয়, যাদের কম্পিউটার নেই যারা কম্পিউটার কিনবে তারাও হয়ত বুঝতে পারে না, কি রকম কম্পিউটার কিনলে আসলে ভাল হয়। কত দামের কম্পিউটার কিনলে প্রোফেসনাল গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করা যাবে। অনেকেই পুরাতন কম্পিউটার আপগ্রেড করতে চান। আশা করছি এই লেখাটা তাদের উপকারে আসবে।
নিচে গ্রাফিক ডিজাইন কাজের জন্য উপযুক্ত কম্পিউটার এর বিভিন্ন পার্টস এর মান এবং মূল্য এর একটি ধারনা দেয়া হল:
মাদারবোর্ডঃ
অনেক কোম্পানির মাদারবোর্ড রয়েছে তবে এর মধ্যে গিগাবাইট এর মাদারবোর্ড অপেক্ষাকৃত ভাল। গিগাবাইটের ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০০ টাকার মাদারবোর্ড রয়েছে। আপনি যেহেতু 2D গ্রাফিক্স এর কাজ করবেন, তাই সাধারণত ৭০০০ থেকে ১৫০০০ এর মধে ভাল মানের মাদার বোর্ড পেয়ে যাবেন। আর 3D গ্রাফিক্স এনিমেশনের কাজ করলে আরো দামী মাদারবোর্ড নিতে পারেন। মাদার বোর্ড আপনাকে প্রসেসর এর সাথে মিল রেখে কিনতে হবে, আপনি যদি ইন্টেল এর প্রসেসর ব্যবহার করেন তাহলে ইন্টেল এর মাদার বোর্ড ব্যবহার করবেন।
প্রসেসরঃ
গ্রাফিক্সের কাজের জন্য প্রসেসর ও হতে হবে ভাল মানের। সাধারনত বাংলাদেশে মানুষজন Intel অথবা AMD প্রসেসর ব্যবহার করে। এর মধ্যে Intel ভাল, আপনি Intel core i5 / Intel core i7 প্রসেসর কিনতে পারেন। প্রসেসর কেনার ক্ষেত্রে Processor Generation & GHz দেখে কিনবেন। যখন পিসি কিনবেন তখনকার সময়ের Generation বা তার কাছাকাছি জেনারেশন এর প্রসেসর কিনবেন। যেমন বর্তমানে 7th Generation এর প্রসেসর পাওয়া যায়। গ্রাফিক ডিজাইন করার জন্য প্রসেসর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্রসেসর কম্পিউটার এর বেশির ভাগ কাজ পরিচালনা করে। আপনার কম্পিউটারের প্রসেসর যদি কম হয় তাহলে আপনি যখন অনেকগুলি ফাইল বা প্রোগ্রাম একসাথে ওপেন করে কাজ করতে চান তাহলে কম্পিউটার এর গতি কমে আসবে, এবং কম্পিউটার হ্যাং ও করতে পারে তবে মনে রাখবেন অনেক ভাল প্রসেসর অনেক দাম পড়ে যাবে তাই প্রথমে র্যাম এর ব্যাপারটি নিশ্চিত করে প্রসেসর এর ব্যাপার এ সিদ্ধান্ত নিন।
র্যামঃ
র্যামকে গুরুত্ব দিন প্রসেসর এর থেকেও বেশি। তবে ভাল মানের প্রসেসর এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে তার প্রধান মেমরী বা র্যাম যত বেশি হবে তত কম সময়ে প্রসেসিং হবে। গ্রাফিক ডিজাইন এ ফটোশপ অনেক জনপ্রিয় একটা সফটওয়্যার আর ফটোশপ চালাতে মেমরি বেশি প্রয়োজন হয়। তাই আপনি যদি বেশি করে র্যাম নিয়ে লাগান তাহলে খরচ কম পড়বে। ফটোশপ সব সময় অনেক ডাটা নিয়ে কাজ করে আর এই ডাটাগুলো কম্পিউটার র্যাম এ জমা থাকে তাই র্যাম এর স্পেস বেশি থাকা প্রয়োজন। আপনি যখন অনেক বড় বড় ফাইল নিয়ে কাজ করবেন যেমন আপনার বায়ার আপনাকে এমন ও ছবি দিবে যেগুলির এক একটার সাইজ ৫০ মেগা থেকে শুরু করে ১৫০ মেগাবাইট পর্যন্ত অথবা তার ও বেশি হতে পারে, তারপর আপনি যখন সেই ছবি এডিটিং করা শুরু করবেন সেখানে আরও কিছু উপাদান যোগ হলে আপনার মেগা বাইট এর পরিমান আরও বেড়ে যাবে আর আপনার র্যাম যদি কম হয় তাহলে প্রোগ্রাম হয়ে যাবে স্লো, সেটা আপনার এবং বায়ার কারো জন্য ভাল হবে না। তাই আমি বলবো কাজের উপর নির্ভর করে আপনার র্যাম ৮-১৬ গিগাবাইট এর মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করেন।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি যদি উইন্ডোজ এর ৬৪ বিট ব্যবহার করেন আর ফটোশপ ও ৬৪ বিট এ ইন্সটল না করেন তাহলে বেশি র্যাম আপনার কম্পিউটারে কোন কাজে আসবে না। ৮ GB র্যাম 4000-4500 মধ্যে ভাল ব্রান্ড এর র্যাম পাবেন আপনি যদি মনে করেন আপনি ১৬ গিগাবাইট ব্যবহার করবেন সে ক্ষেত্রে আপনি ৮ গিগাবাইট এর দুইটি র্যাম একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। কোর সিরিজের প্রসেসর আর ৪ জিবির উপর র্যাম থাকলে কাজে দারুন গতি আসে।
একটা বেশী আরেকটা কম হলে কাজ ঠিকমত হবে না, কাজের জন্য দুটোর মিলবন্ধন দরকার। আর গ্রাফিক্স কার্ড(জিপিইউ) খুব গুরুত্বপুর্ণ যদি থ্রিডি বা অন্য কোন চাপের কাজ করতে চান। মনে রাখবেন CORE i3 +8GB RAM is surely better than CORE i7+4 GB RAM। সবসময় RAM বেশি নেওয়ার চেষ্টা করবেন সম্পূর্ণ configuration অনুযায়ী।
বাজারে অনেক কোম্পানির র্যাম পাওয়া যায় আপনি Gskill/ Twinmos / Apacer / A Data কোম্পানির DDR3/DDR4 ভার্সনের ৮ জিবি র্যাম নিতে পারেন।
হার্ডডিস্কঃ
1TB Harddisk নিতে পারেন। আপনি হার্ডডিস্ক যতই নেন না কেন C ড্রাইভের জন্য ১২০/১২৮ GB SSD হার্ডডিস্ক নিবেন, কম্পিউটার কয়েক গুন বেশী ফাস্টার/দ্রতগতী হবে।
মনিটরঃ
মনিটর 22″ হলে ভাল হবে। Dell/HP/Asus ব্রান্ড মনিটর নিলে ভাল হবে। বর্তমানের বেশিরভাগ গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা Dell S2218H 21.5 Inch Full HD LED Borderless ব্যবহার করে। এটি ১০, ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
গ্রাফিক্স কার্ডঃ
আপনার বাজেট ভাল হলে আপনি আলাদা ভাবে গ্রাফিক কার্ড লাগাতে পারেন কিন্তু গ্রাফিক্স কার্ড বেশ দামি তাই আমি বলবো আপনি থ্রিডি এনিমেশন অথবা ভিডিও এডিটিং এর দিকে না গেলে মাদার বোর্ড এর সাথে যে গ্রাফিক কার্ড থাকে সেটাই যথেষ্ট। তবে আপনি যদি আলাদা গ্রাফিক কার্ড লাগাতে চান তাহলে বলবো আপনি OpenCL capable GPU, CUDA cores দরকারি নয়। অ্যাডোব CS6 Mercury ইঞ্জিন নিয়ে এসছে যেটা OpenGL and OpenCL এর কাজ করে। তাই nVidia কার্ড সাথে CUDA cores দরকার নেই।
কম্পিউটর মনিটর:
আপনি বেশি স্পেস এর র্যাম নিলেন, ভাল মানের প্রসেসর নিলেন, ভাল মানের গ্রাফিক কার্ড নিলেন কিন্তু দেখা গেল আপনার মনিটর এর মান ভাল না তাহলে আসলে কোন লাভ নেই। তাই ভাল কালার সিস্টেম এর মনিটর মিনিমাম ১৯২০x১২০০ পিক্সেল ডাইমেনশন। ২১-২৪ ইঞ্চি সাইজ। কালার কেলিব্রাটর সেট আপ করে নিন যদি আপনি প্রিন্ট ডিজাইন এর কাজ করেন, কারন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আপনি মনিটর এ যে কালার দেখছেন প্রিন্ট করার পর সে রকম কালার পাওয়া যায় না। আপনি মার্কেট এ অনেক ব্রান্ড ই মনিটর পাবেন, ভাল হয় ২১-২৪ ইঞ্চি এর মধ্যে মনিটর ব্যবহার করলে কিন্তু সাইজ এর থেকে ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কালার এর ব্যাপারটি। আপনি Samsang অথবা Dell এর মধ্যে ১০-১২ হাজার টাকায় চমৎকার HD monitor পেয়ে যাবেন।
কিবোর্ড/মাউস:
লংটাইম ব্যবহারের জন্য A4 Tech কিবোর্ড ও মাউস ভাল হবে।
সব মিলিয়ে বলা যায় আপনি যদি ৩০-৩৫ হাজার টাকার মধ্যে গ্রাফিক ডিজাইন এর জন্য পারফেক্ট একটা পরিপূর্ণ কম্পিউটার পেতে পারেন। আর আপনি যদি আপগ্রেড করতে চান তাহলে ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে আপনি আপগ্রেড করাতে পারবেন।
কম্পিউটার কেনার আগে ঠিক করে নিন আপনার কাজের ক্ষেত্র আপনি যখন নতুন কম্পিউটার কিনবেন অথবা কম্পিউটার আপগ্রেড করবেন আমার মতে আপনি আগে বের করুন আপনি গ্রাফিক ডিজাইন কোন কাজ এর জন্য করবেন। আপনি যদি মাত্র গ্রাফিক ডিজাইন শুরু করে থাকেন অথবা শুরু করবেন ভাবছেন তাহলে আপনার যদি কম্পিউটার থাকে তাহলে যেটা আছে সেটা দিয়ে এই শুরু করতে পারবেন সেটা একদম সাধারন কম্পিউটার হলে ও সম্ভব। আপনি যখন সম্পূর্ণভাবে প্রফেশনালি শুরু করবেন তখন আপনাকে কম্পিউটার আপগ্রেড করতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে এমন ও না আপনার খুব উচ্চমানের কম্পিউটার লাগবে। আপনি ঠিক করেন আপনি কোন কাজটি করবেন আপনি যদি ফটোশপ এর কাজ করেন তাহলে আপনাকে ফটো এডিটিং এর কাজগুলি বেশি করতে হবে আর সে ক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার এর মান অনেক ভাল হতে হবে আর আপনি যদি লোগো ডিজাইন, প্রিন্ট ডিজাইন এর কাজের কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে Adobe Illustrator অথবা Corel draw এর কাজ বেশি করতে হবে যার জন্য খুব উচ্চমানের কম্পিউটার প্রয়োজনীয় নয়।
ল্যাপটপ না ডেক্সটপ কিনবেন?
অনেকেই বলেন গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য ডেক্সটপ ভাল, আসলে এমন কোন কথা নেই যে ডেক্সটপ গ্রাফিক্স ডিজাইনের ল্যাপটপ ভাল না। আমার আসলে কম বাজেটের মধ্যে অনেক ভাল ডেক্সটপ কনফিগারেশন পেয়ে যাই তাই বলে থাকি ডেক্সটপ ভাল। যেমন একটি ভাল মানের ডেক্সটপ ৪০-৫০ হাজার দিয়ে নেয়া সম্ভব কিন্তু আমি যদি সেমই কনফিগারেশন ল্যাপটপ কিনতে চাই তাহলে ১ লাখের কাছাকাছি খরচ হবে, তাই আমরা এই মানের ল্যাপটপ না কিনে ডেস্কটপ কিনি তাই বলে থাকি গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য ডেক্সটপ ভাল।
আসলে দুটোরই অনেক ভালো-মন্দ বিষয় আছে। তবে আমার মতে গ্রাফিক্স ডিজাইনে স্পিডে কাজ করতে চাইলে ৬০ হাজার ৮০ হাজার বা এক লাখের মধ্যে ল্যাপটপ কেনেন বাজেট ৫০ হাজারের নিচে হলে ডেক্সটপ কেনেন। আপনি এই ডেস্কটপ দিয়ে ১ লাখ টাকার ল্যাপটপ এর স্পিড পাবেন। অনেক ফ্রিল্যান্স গ্রফিক্স ডিজাইনাররা MacBook Pro ব্যবহার করেন, আপনার বাজেট ভালো থাকলে অ্যাপল এর MacBook Pro কিনতে পারেন। এটা জেনারেল ডেস্কটপ থেকে বেশি ভাল পারফরম্যান্স দেয়। তার মানে আসল বিষয় হচ্ছে কনফিগারেশন।
দ্রঃ পোস্ট অনেক আগে লেখা । করোনা টাইমে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। অইসময়কার হিসেব করে লেখা ছিলো । ধন্যবাদ।
রিসার্চ এবং লেখাঃ Shishir Chowdhury.