Site icon Trickbd.com

Facebook নিষিদ্ধ যে দেশেগুলোতে

Unnamed

বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশে প্রায়ই বন্ধ করা হয় সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। কোনো কোনো দেশ একদিনের মাথায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও কোনো কোনো দেশে চিরস্থায়ীভাবেই বন্ধ করে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমকে। আবার চীনের মতো জনবহুল এবং প্রযুক্তিবান্ধব দেশ ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে চালু করেছে নিজস্ব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট।

নানা দেশে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইনডেক্স অন সেন্সরশিপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে বিভিন্ন দেশে ফেসবুক বন্ধের কারণ এবং সময়সীমা তুলে ধরা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমনিতেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে দেশটির। কখনো কখনো এই দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে সাইবার যুদ্ধে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিম জং উন তার দেশে সব সময়ই ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত রেখেছেন। বিভিন্ন সময় আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
মজার বিষয় হচ্ছে উত্তর কোরীয় নাগরিকরা সীমিতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেলেও উত্তর কোরিয়ার অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরা থ্রিজি ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের সুযোগ পান। উত্তর কোরিয়ায় আন্তযোগাযোগের জন্য সীমিত আকারে কোয়াংমিয়ং (Kwangmyong) নামের ইন্ট্রানেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। যদিও সেখানে শুধুমাত্র জন্মদিনের শুভেচ্ছা ছাড়া অন্য কিছু পোস্ট করার সুযোগ কম!
পিয়ংইয়ং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কিছু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা তাঁদের বিশেষায়িত ল্যাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধের কারণে সহসা কেউ সে সুযোগ কাজে লাগাতে চান না। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়া গবেষক রামেস্ট শ্রিনিবাসন জানিয়েছেন, ‘উত্তর কোরিয়া হচ্ছে এমন একটা দেশ যেখানে প্রত্যেকটি কম্পিউটার বা প্রযুক্তিতে সরকারি নজরদারি রয়েছে। সফটওয়্যার থেকে হার্ডওয়্যার সবকিছুতেই সরকারি বিধিনিষেধ জারি আছে’।
ইরান
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিপক্ষ শক্তি ইরান। এই দেশেও বন্ধ রয়েছে ফেসবুক। তবে মজার বিষয় হচ্ছে সাধারণ জনগণের ফেসবুকে প্রবেশাধিকার না থাকলেও রাজনৈতিক নেতাদের ফেসবুক এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রয়েছে। ইরানের সপ্তম এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ক্ষমতায় আসেন ২০১৩ সালে। নির্বাচনী প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেছিলেন রুহানি। এমনকি তাঁর ফেসবুক এবং টুইটার দুটি অ্যাকাউন্ট এখনো সক্রিয়। সেখান থেকে ইরানি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক খবরাখবর প্রচার করা হয়।
যেহেতু দেশটিতে ফেসবুক এবং টুইটার বন্ধ রয়েছে, তাই রুহানিকে এসব সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করতে হয় প্রক্সি সার্ভার দিয়ে। ২০০৯ সালে নির্বাচনের সময় প্রথম বিরোধী দলের প্রচারণা ঠেকাতে ইরানে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এ বছরের মে মাসে ইরান সরকার সর্বশেষ ঘোষণা দেয় যে, সহসা সোশ্যাল মিডিয়া খুলে দেওয়া হবে না।
চীন
‘দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ নামে ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরশিপ এবং নজরদারি বজায় রেখেছে চীনা সরকার। ২০০৯ সালে ‘উরুমকি দাঙ্গা’র পর ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয় চীনে। মুসলিম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত চীনের স্বায়ত্তশাসিত উইঘুর অঞ্চলের রাজধানী উরুমকিতে ২০০৯ সালের ৫ জুলাই ছড়িয়ে পড়েছিল দাঙ্গা। বিচ্ছিন্নভাবে চলা সে দাঙ্গায় প্রাণ হারায় ১৯৭ জন।
দাঙ্গার পরিকল্পনা এবং যোগাযোগে ফেসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় সারা দেশে ফেসবুক বন্ধ করে দেয় চীনা সরকার। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটের ওপর আরো কড়াকড়ি আরোপ করে চীনা সরকার। ২০১৩ সালে সীমিত আকারে সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছিল চীনা সরকার। যদিও তা সাংহাইয়ের মুক্তবাণিজ্য এলাকার মাত্র ১৭ বর্গমাইলের মধ্যে।
তবে বিদেশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বন্ধ থাকলেও উইবো, রেনরেন, উইচ্যাটের মতো চীনা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এবং অ্যাপগুলো এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চীনে। আর তাই ফেসবুক বা টুইটারের অভাব এখন আর তেমন বোধ করেন না চীনারা।
কিউবা
লাতিন আমেরিকার দেশ কিউবাতে সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে ফেসবুক বন্ধ করা হয়নি। তবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সেখানে বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক এবং মেডিকেলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে বৈধভাবে কিউবায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এর বাইরে সবাইকেই নির্ভর করতে হয় সাইবার ক্যাফের ওপর।
সেখানে এক ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য গুনতে হয় ৬ থেকে ১০ ডলার। কিন্তু কিউবার মানুষের গড় আয় ২০ ডলার। তাই এত দাম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার সেখানে বিলাসিতা হিসেবেই গণ্য করা হয়। আর এত টাকা খরচ করে সাইবার ক্যাফেতে বসলেও ধীরগতির সংযোগের কারণে পুরো টাকাটাই জলে যায় ব্যবহারকারীদের। আর এভাবেই ইন্টারনেট-বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছেন কিউবানরা।
মিসর
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পদত্যাগ